মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৮

আলোর হোলিঃ অনাক ০৬/১১/২০১৮

আলোর হোলি দীপাবলী মনে দেয় না তো সুখ
বারুদের ধোঁয়ায় শ্মশানের শবদাহের  গন্ধ পাই
বারুদ বিহীন দগ্ধতাহীন হাজার আলোর বন্যা
পৃথিবী ভাসাক, আনন্দে সবাই হাবুডুবু খাক।

রবিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৮

চেয়ারহীন শ্রেণিকক্ষের প্রাসঙ্গিকতা



চেয়ারহীন শ্রেণিকক্ষের প্রাসঙ্গিকতা 

                                                                            অ.না.ক. ২৮/১০/২০১৮



ক্লাসরুমে এখন থেকে শিক্ষকের জন্য কোন চেয়ার থাকবে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা দপ্তরের সাম্প্রতিক এই নির্দেশিকাকে কেন্দ্র ক’রে শিক্ষা মহলে নানান বিতর্ক শুরু হয়েছে। শিক্ষকের দাঁড়িয়ে পড়ানোর স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তির ঝড় উঠতে শুরু করেছে শিক্ষক মহলে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ক্লাসে শিক্ষকের জন্য চেয়ার না রাখার পেছনে কি যুক্তি আছে আবার এর বিপক্ষের যুক্তিই বা কি।
প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা হয়ত জানেন চেয়ারে ব’সে পড়ানোর সময় ক্লাসের বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষকের পড়ানোর প্রতি মনোযোগ আকর্ষণের কৌশল।  কিন্তু একথা ঠিক যে চেয়ারে ব’সে পড়ানোর সময় পেছনের দিকের বা কোন এক বা একাধিক বিশেষ অঞ্চলে উপবিষ্ট ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষকের দৃষ্টিগোচর না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বলতে বাধা নেই, পড়া না করা, ফাঁকিবাজ, দুষ্টুমিতে সিদ্ধহস্ত ছেলেমেয়েদের মধ্যেই পেছনের বেঞ্চে বা শিক্ষকের দৃষ্টির আড়ালে বসার প্রবণতার সেই ট্র্যাডিশন আজও সমানে চলেছে। উদ্দেশ্য অবশ্যই শিক্ষকের চোখকে ফাঁকি দিয়ে শিক্ষকের পড়ানোকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দুষ্টুমি করা বা পড়ায় ফাঁকি দেওয়া। সুতরাং ক্লাসে শিক্ষকের বসার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা না থাকলে পড়ানোর সময় শিক্ষকের দৃষ্টি সমস্ত ক্লাসের ওপর নিবদ্ধ থাকতে বাধ্য এবং হাঁটা-চলার মাধ্যমে শিক্ষক প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর একেবারে কাছে পৌঁছে যেতে পারেন যার ফলশ্রুতিতে শিক্ষকের পড়ানোর প্রতি ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ আকর্ষণ করানোর সুযোগ বাড়ে।  আরোও বড় ব্যাপার হ’ল মনস্তত্বের বিচারে, দাঁড়িয়ে কথা বললে শরীরী ভাষার সঙ্গে বক্তব্যের সাবলীলতা বাড়ে যা শ্রোতার দৃষ্টি আকর্ষণ করার কাজে বেশি কার্যকরি হয়। সম্ভবত সেই কারনেই কোন আলোচনা সভায়, বক্তৃতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখার রীতি প্রচলিত। এমনিতেই অনেক শিক্ষক আছেন যাঁরা পড়ানোর সময় ক্লাসে একটুও বসেন না, দাঁড়িয়ে বা ধীর পদক্ষেপে ক্লাসময় পায়চারী করতে করতে শিক্ষাদানে অভ্যস্ত। আমাদের সময় কোন কোন শিক্ষককে দেখেছি ক্লাসে এসে পড়ানো বাদ দিয়ে চেয়ারে ব’সে আরাম ক’রে ঘুমিয়ে নিতেন। এমনকি কাউকে দিয়ে ঘাড় মাথা টিপিয়ে নিতেন। ততক্ষণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চলত নিচু স্বরে গল্প, আড্ডা, দুষ্টুমি। এখনকার স্কুলগুলিতে এরকম শিক্ষক থাকাটাও অসম্ভব নয়। ক্লাসে চেয়ার না থাকলে শিক্ষকের এই ধরনের প্রবনতা থেকে ১০০ শতাংশ মুক্তি মিলবে।
দাঁড়িয়ে পড়ানোর যথেষ্ট সঙ্গত বিপক্ষ যুক্তিও রয়েছে। শিক্ষক দির্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে পড়ানোর পর ক্লান্ত বোধ করতেই পারেন, বিশেষ ক’রে বয়স্ক শিক্ষক বা গর্ভবতী শিক্ষিকার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটা আদৌ অস্বাভাবিক নয়। কিংবা কিছুক্ষণ পড়ানোর পরে শিক্ষক ছাত্রদেরকে কিছু কাজ দিলেন ক্লাসে করার জন্য। সেই সময়টুকু শিক্ষক সম্পূর্ণ দাঁড়িয়ে বা চলালচল ক’রে কাটাবেন তার যৌক্তিকতা কোথায় ? সে্ক্ষেত্রে শিক্ষক তাঁর চেয়ার সরিয়ে সুবিধামত জায়গায় ব’সে নজরদারী করতেই পারেন। কিন্তু ক্লাসে যদি চেয়ারই না থাকে তাহলে শিক্ষকের কাছে এ এক বড় বিপদের কারন। তাহলে কি হাঁটুর সমস্যা আছে বা বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে শারীরিক অসুবিধা বোধ করেন এমন শিক্ষকদের শিক্ষকতা ছেড়ে দেওয়ার দিন আসন্ন ? আমাদের রাজ্যে একজন শিক্ষককে প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ টি ক্লাস নিতে হয় এবং বিরতিহীন ভাবে ৩-৪টি ক্লাস অনেক শিক্ষককেই নিতে হয়। সুতরাং এতটা দীর্ঘ সময় একটানা দাঁড়িয়ে পড়ানো একজন সুস্থ শিক্ষকের পক্ষেও কতটা সম্ভবপর তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নচিহ্ন আছে। আরোও একটি আপাত গুরুত্বহীন কথাও বলা জরুরী। একজন পুরুষ শিক্ষক পড়ানোর সময় যদি ক্রমাগত ছাত্রীদের কাছে দাঁড়ান তাহলে ছাত্রীদের কাছে তা অস্বস্তির কারন হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয় মোটেই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্রবহমান প্রথাকে রাতারাতি পাল্টে ফেলার আকষ্মিক নির্দেশে শিক্ষক মহলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠাটা স্বাভাবিক। নিঃসন্দেহে শিক্ষাব্যবস্থায় আধুনিকতা এসেছে, এসেছে শিক্ষণের বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি, অনেক প্রগতিশীল দেশে তার প্রয়োগও হচ্ছে। ক্লাসে শিক্ষকের জন্য চেয়ার না রাখার যৌক্তিকতা হয়ত এই কারনেই প্রাসঙ্গিক। কিন্ত আমাদের দেশে তা প্রয়োগের হটকারী সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিসঙ্গত তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
ক্লাস থেকে শিক্ষকের চেয়ারকে রাতারাতি নির্বাসনে না পাঠিয়ে চেয়ার রেখেই শিক্ষককে দাঁড়িয়ে পড়ানোর নির্দেশ জারি করলে হয়ত সাপও মরে লাঠিও ভাঙে না। প্রয়োজনে শিক্ষক বসবেন, কিন্তু সাধারণভাবে তাকে দাঁড়িয়েই পড়াতে হবে এবং তা নজরদারী করবেন প্রধান শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্ত কেউ, প্রাথমিকভাবে এমন নিয়ম চালু করলে হয়ত পদক্ষেপটা হবে অনেকটা মসৃণ।    

অমরনাথ কর্মকার

সোমবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৮

মরু প্রেমিকা

সহকর্মী প্রিয় মানসের (মানস নন্দী) মিশর ভ্রমনকে উদ্দেশ্য ক'রে লেখাঃ

মরু প্রেমিকাঃ অ.না.ক.২৩/১০/২০১৮

তবুও মেলে জলজ্যান্ত জীবন চারপাশে।
তপ্ত বালির ক্রুদ্ধ তাপ, নেই এতটুকু ছায়া,
পিরামিডের মৃত্যুপুরী ঠাসা মমির লাশে,
বেদুইনকে বিভ্রান্ত করে মরীচিকার মায়া।

তবুও মেলে জলজ্যান্ত জীবন চারপাশে।
মরীচিকার দর্পণে জলের অলীক আভাস,
দুস্তর, দুর্গম, তবুও আমার প্রেমিকা সে
কাঁটা আছে,তবু আছে জলভরা ক্যাকটাস।

বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৮

নবমীতে মন খারাপঃ অ.না.ক. ১৮/১০/২০১৮

আজ সারাদিন সর্বত্র যেন মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ির পরিবেশ। বরং বলা ভাল, পাত্রীপক্ষের বাড়ির পরিবেশ ব’লে মনে হ’ল। কারন মাইকে বাজতে শুরু করেছে সানাই-এর সুর। কারনটা সহজেই অনুমেয়। আজ নবমী। আমার মন খারাপের মাত্রা ক্রম হ্রাসমান। সুর ব্যপারটা আজ সকাল থেকেই আমাকে খুব ভাবাচ্ছে। সুর কখনো মন ভালো করছে, কখনো কাঁদাচ্ছে, হাসাচ্ছে। কি অদ্ভুত! আরও অদ্ভুত সানাই নামক সঙ্গীতের যন্ত্রটা। কে জানে কার মাথা থেকে কিভাবে বেরিয়েছিল এই যন্ত্র সৃষ্টির ভাবনাটা। মন অবশ করা আওয়াজ। পূজোর আনন্দ অবসানের প্রাকমুহূর্তে, নবমী নিশি অতিক্রান্ত না হওয়ার আকুতি জানিয়ে সকলেরই বাসনা উৎসবের আনন্দ আরও একটু স্থায়ী হোক । আজ তাই সবার মন খারাপ । আর আমার তো এমনিতেই মন খারাপ হয়েই আছে । মন খারাপ দিয়ে শুরু করেছিলাম ষষ্ঠী থেকে – সেই মনখারাপ প্রবহমান নবমীর রাত পর্যন্তও । আজ বোধ হয় সকলেরই মন খারাপ । তাদের মন খারাপের নির্দিষ্ট কারন আছে – দেবী দুর্গার ‘অদ্য শেষ রজনী’র বিহ্বলতা । ওসবে আমার মন নেই । আমার মন খারাপের কারন হয়ত আছে কিন্তু শত অনুসন্ধানেও তার হদিশ পাচ্ছি না ।আজ নবমী – বাতাসে বিষাদ – সবার মন খারাপ । জীবনের উৎসবে যারা ব্রাত্য তাদের কথা ভেবে আজ সারাদিন মনের মধ্যে কেমন যেন লাগছে। অবশ্য এই ভাবনার আকষ্মিক উদয় হয়নি। এমনিতেই অকারন মন খারাপের বিষণ্ণতা, তার ওপর সকালে ঘটে গেল একটা ঘটনা। আসলে বিপদ আর বিভ্রান্তি পাশাপাশি চলে। পূজোর ছুটিতে সকালে ঘুম থেকে দেরি করে উঠি। কিন্তু আজ সকালে এক ব্যক্তি এসে হাজির বাড়ির চারদিকে গজিয়ে ওঠা জঙ্গল পরিস্কার করার কাজ করবে ব’লে। পূজোর মধ্যে এসব কাজ করানোর ইচ্ছে নেই। তবুও সে নাছোরবান্দা। অনেক অনুনয়, বিনয়। পূজোর মধ্যে সবাই যখন ছুটির আনন্দ উপভোগ করতে চায়, তখন ওর এই আবেদনে নিশ্চয়ই কোন কারন আছে। কথায় কথায় জানালো ‘পূজোর ক’দিন কাজ নেই ব’লে সংসারে বড্ড টানাটানি, তাই কাজ চাইছি। তাছাড়া মেয়েটার খুব অসুখ’। সামান্য সময় কাজ করিয়ে পুরো দিনের পারিশ্রমিক দিয়ে ওকে ছেড়ে দিলাম পূজোর পরে আবার কাজ করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে। সত্যিই তো এরকম দিন আনা দিন খাওয়া শ্রমিকদের কাছে পূজোর দীর্ঘ ছুটি আনন্দের চেয়ে বেশি দুঃখ বয়ে নিয়ে আসে। মন খারাপ হ’ল। তার চেয়েও বেশি রাগ হ’ল সামাজিক উন্নয়নের নামে সরকারী আষ্ফালনের বিজ্ঞাপনের ওপর। গণতন্ত্রের এই বেহাল দশার কথা বেশি না বলাই ভাল। এতে বিড়ম্বনা বাড়ার আশঙ্কা। আজকের মন খারাপের তীব্রতা কম ব’লে অনভ্যাস সত্ত্বেও দুপুরে একটু ঘুমিয়ে নিয়েছি। ঘুমানোর আগে ছোটোবেলার পূজোর দিনগুলোর স্মৃতি উঁকি মারছিল মনে। বোধ হয় তখন ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়ি। তিনজন বন্ধু মিলে ঠিক করেছিলাম সিগারেট খাব। সকাল থেকেই বুক দুরু দুরু। সিগারেট কিনে প্যান্টের পকেটে কাগজে মুড়ে রাখা আছে। পাছে কেউ দেখে ফেলে সেই আতঙ্কে ছিলাম। বিকেল হতেই বন্ধুর ডাক। বাবার পকেট থেকে দেশলাই-এর প্যাকেটটা নিয়ে চললাম নদীর ধারের এক নির্জন রাস্তায়। চারিদিকে দেখে শুনে ধরিয়ে ফেললাম সিগারেট তিনজনেই। একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা – এক অদ্ভুত শিহরন। সাথে কারো দেখে ফেলার ভয়। এবং ‘যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়’ এই প্রবাদকে সত্যি প্রমাণ ক’রে সেখানে অকস্মাৎ হাজির আমার বাবার অতি পরিচিত এক ভদ্রলোক এবং আমাকে সিগারেট মুখে দেখেই থমকে দাঁড়ালেন আমার সামনে। আমার তো তখন ভয়ে প্রায় জ্ঞান হারানোর মত অবস্থা। মুখ থেকে সিগারেট ফেলে ফ্যাল ফ্যাল ক’রে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ভদ্রলোকের দিকে। আমাদের কান ধরিয়ে উঠবোস করিয়ে ছেড়ে দিলেন। সে যাত্রায় মুক্তি পেলাম বটে কিন্তু বাবা জেনে গেলে কি হবে তার পরিণাম চিন্তা ক’রে হৃৎপিন্ডের স্পন্দন বেড়ে গেল। পরে বুঝেছি ভদ্রলোক বাবাকে জানাননি। তবে অনেক বড় হয়েও আমি সেই ভদ্রলোকের মুখোমুখি হবার সাহস পায়নি। আমি কিন্তু ধূমপানে আসক্ত নই। জানিনা সেই ঘটনার কোন প্রভাব এর মধ্যে আছে কি না। ঘুমের আগে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম বাবা-কাকার মুখগুলো যাঁদের হাত ধ’রে ছোটোবেলায় যেতাম পূজো দেখতে। একেই বোধ হয় বলে স্মৃতিবিলাস। এই বিলাসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙল সন্ধের সময়। মন খারাপটা অনুভূত হ’ল কিন্তু তীব্রতা কম। তবে সন্ধের পরে যে ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি তা হ্রাসমান অকারন মনখারাপকে টেক্কা দিয়ে গেছে। রাত্রে রাস্তায় বেরিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হতে ও আর আমি একসঙ্গে হাটতে বেরোলাম। উদ্দেশ্য একটু মনের কথা আদান-প্রদান। নবমীর ভিড়ে তখন রাস্তাঘাট সরগরম। একসময় বন্ধু বলল ‘চল আইসক্রীম খাই’। আমি সাধারণত আইসক্রীম খাই না। কিন্তু বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখতে না করলাম না। ওখানে অনেকগুলো আইসক্রীমের দোকান। কিন্তু বন্ধুকে দেখলাম অনেকটা ভেতরে গিয়ে একটি ছেলের কাছ থেকে আইসক্রীম নিল। জিজ্ঞেস করলাম ‘অত দূরে যাওয়ার দরকার কি ছিল ? সামনেই তো দোকান আছে অনেক’। বন্ধু বলল ‘খা। পরে বলছি’। গল্প করতে করতে আইসক্রীম শেষ করলাম। তারপর বন্ধুটি আমার প্রশ্নের জবাব দিতে শুরু করল বেশ গুরুত্ব সহকারে। আসলে ঐ আইসক্রীম বিক্রেতা ছেলেটি ওর পরিচিত। তার থেকেও বড় কথা ও নিজে উদ্যোগী হয়ে ওদের ক্লাব থেকে ওকে ওখানে বসার ব্যবস্থা ক’রে দিয়েছে। কারন ছেলেটি ক্যান্সারে আক্রান্ত। চিকিৎসার খরচ চালানোর জন্য ও ছেলেটাকে ক্লাবের সাহায্য নিয়ে সবরকম সহযোগিতা করে। শুনে ভীষণ খুশী হলাম। পিঠ চাপড়ে ধন্যবাদ জানালাম অজস্র। ছেলেটার কথা ভেবে মনটা খারাপ হ’ল খুব। রাত্রে বাড়ি ফিরে বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল ক্যান্সার আক্রান্ত সেই আইসক্রীম বিক্রেতার মুখ। নবমীর নিশাবসান আসন্ন ব’লে চারিদিকে মানুষের উদ্দীপনার মধ্যেও একটা বিষাদের মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। প্রতি বছর নবমীতে ‘যেওনা নবমী নিশি’র আকুতি দেখতে দেখতে চুলে শুভ্রতা আসতে শুরু ক’রে দিল। আজ আমার মনে যে বিষন্নতা তা নবমীর রাতের জন্য নয়, ছুটি শেষ হয়ে আসছে ব’লে। এবার বোধ হয় অকারন মন খারাপের দিন ফুরিয়ে আসছে। এবার যে মন খারাপ হবে তার মধ্যে কারন থাকবে। হ্যাঁ, সেই আইসক্রীম বিক্রেতা ছেলেটার মুখ এখনোও আমার সামনে ভাসছে। কিন্তু এইমাত্র একটা মস্ত ভুলের জন্য বড্ড আফসোস হচ্ছে। যে বন্ধুর সঙ্গে এত গল্প হ’ল, যার মহানুভবতা নিয়ে এত কথা লিখলাম এতক্ষণ, তার নিজের কথা তো জানা হ’ল না। বন্ধুটির নাম নিশিকান্ত। খুব ভাল ছিল পড়াশুনায়। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং করেছিল। এইমাত্র মনে পড়ল ক’দিন আগেই আমার এক বন্ধু জানিয়েছিল নিশিকান্ত’র নাকি মানসিক চিকিৎসা চলছে। আত্মহত্যার চেষ্টাও নাকি করেছিল কিছুদিন আগে – চাকরিটাও নেই। খুব খারাপ লাগছে, এত খবর নিলাম অথচ ওর দুর্দশার খবরটাই নিতে ভুলে গেলাম। এবার যে তীব্র মন খারাপ হতে শুরু করেছে তার পেছনে যথেষ্ট ও যথার্থ কারন আছে। সত্যিই কিছু ভালো লাগছে না এবার। লেখা থামালাম। শুভরাত্রি।

সেলফি-সুখ

যখন আয়নায় দেখি নিজের মুখ,
সে তো দেয় কেবল ক্ষণিকের সুখ
তাই সেলফি তুলি মোবাইল ক্যামে,
সুখ থেকে যায় স্মৃতির অ্যালবামে।

.......   অ.না.ক.  ১৮/১০/২০১৮

বুধবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৮

অষ্টমীতে মন খারাপ

অষ্টমীতে মন খারাপঃ অ.না.ক. ১৭/১০/২০১৮    

গতকাল উৎসবের সুর ছিল সপ্তমে। আজ একেবারে তুঙ্গে। কারন অষ্টমীতে আজ উৎসব মধ্যগগনে। সুতরাং চারিদিকে চূড়ান্ত মাদকতা। আর স্বাভাবিকভাবেই আমার মনখারাপের মাত্রাও বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই। সারাদিন যথাসম্ভব নিজেকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেছি মনখারাপটাকে ভুলে থাকার জন্য। হারমোনিকায় ‘জোনাকী কি সুখে ঐ ডানা দুটি মেলেছ...’ গানের সুরটি বাজিয়ে, রেকর্ডিং ক’রে বারবার শুনেছি। গানটার কথা আমি ষষ্ঠীতে লিখেছিলাম। গানের কথাগুলো আমাকে নতুন ক’রে মন্ত্রণা দিয়েছে। বলা যায় মনখারাপ থেকে মুক্তি পাবার জন্য এই গানের কথাগুলো, অন্ততঃ আমার জন্য, একেবারে টনিকের মত। এতকিছুর পরেও মনখারাপ আবার ফিরে এসেছে। বাড়িতে বসেই কানে আসছিল বিভিন্ন রকমের গান। লক্ষ্য করলাম আজকে প্যান্ডেল থেকে যে গানগুলো ভেসে আসছিল তা গত দু’দিনের থেকে একটু যেন ভিন্ন। আজ সারাদিনই রাস্তায় প্রচুর লোকের আনাগোনা। সবার মধ্যেই দুর্গোৎসবের ফুরফুরে মেজাজ। জানলা দিয়ে রাস্তা দেখছিলাম। মনে মনে ওদের আনন্দে নিজেকে মিলিয়ে দেবার আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। মনখারাপটা প্রায় জগদ্দল পাথরের মত মনের গভীরে জেঁকে ব’সে আছে – কিছুতেই টলানো গেল না। মন খারাপ এমন একটা ব্যাপার যে এই সময় মন খারাপ করার মত ঘটনা, স্মৃতিগুলো বেশি বেশি ক’রে ভিড় করে। অনেকটা ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতন। আগে অষ্টমীর রাত মানে ছিল আনন্দের নির্যাস নিংড়ে নেওয়ার সময়। তাই সারাদিনই চলত উৎসবের উন্মাদনা। এখনোও আছে। তবে হয়ত বয়সের কারনে উচ্ছ্বাসের ডানা মেলা সাজে না বলেই আমার মধ্যে পুজোর উচ্ছ্বাস থাকে না। কিন্তু মনখারাপ হবার কারন? আমি বলছি আমার মনখারাপের নির্দিষ্ট কারন খুঁজে পাই না অথচ মনস্তত্ত্ব বলছে মনখারাপের পেছনে অবধারিতভাবে কোন না কোন কারন বিদ্যমান। কেউ যদি সেটাকে অকারন ব’লে চালাতে চায়, তাহলে বুঝে নিতে হবে সে কারন বলতে নারাজ। আমার মনখারাপের পেছনে তাহলে নিশ্চয় কোন কারন আছে। মুশকিল হচ্ছে কারনটা আমি নিজেই বুঝতে পারি না। সন্ধ্যেবেলা আজ এসেছিলাম জয়নগরে। স্ত্রীর অনুরোধে (আদেশ বলাটাই বোধ হয় এক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত) একটা ভ্যান রিক্সা ভাড়া ক’রে বেরিয়েছিলাম ঠাকুর দেখতে। মানুষের ঠাসাঠাসি ভিড়ে পাঁচ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগছিল এক ঘন্টা। পুজোমন্ডপে ঢোকার আগে শম্বুক গতির বিরক্তিকর দীর্ঘ লাইন। প্রতিমা দর্শনের জন্য এতটা ধৈর্য আমার নেই, কিন্তু অধৈর্য প্রকাশের সাহসও আমার নেই। অতএব, মনপ্রাণ দিয়ে ঠাকুর ‘দেখলাম’। অষ্টমীর সন্ধ্যায় মানুষের ভিড়ে রাস্তা প্রায় স্তব্ধ। এর মধ্যেই পেছন থেকে শুনতে পেলাম অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ। অবাক হলাম অ্যাম্বুলেন্স কে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য অধিকাংশের মধ্যেই কোন তৎপরতা নেই। পূজো কমিটির সহৃদয় এক স্বেচ্ছাসেবককে দেখলাম আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন অ্যাম্বুলেন্সটাকে দ্রুত পার করিয়ে দেওয়ার জন্য। জানিনা কোন দুর্ভাগা এই অষ্টমীর আনন্দ থেকে বঞ্চিত হ’ল! সেই দুর্ভাগার কথা ভেবে কষ্ট লাগল। মনখারাপ তো আছেই। এই দৃশ্য ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে’র মত মনে হ’ল। জয়নগর বহু প্রাচিন এবং ঐতিহ্যশালী শহর । ব্রিটিশ আমলে তৈরি বাড়িঘরের মধ্যে প্রাচীনের গন্ধ। এখানে অনেক বিপ্লবীর জন্ম হয়েছে। সুতরাং এখানকার পুজোর মধ্যে বনেদিয়ানার লক্ষণ বেশ স্পষ্ট। তাই আগ্রহ নিয়ে এগুলো দেখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওই। মনের মধ্যে উৎফুল্লতা নেই। পুজোয় ঘুরতে বেরিয়ে আমার চোখ চলে যায় ছোট ছোট দৃশ্যের দিকে যার মধ্যে থাকে এক অদ্ভুত বৈপরিত্য।  আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সঙ্গের বাচ্চাটার জন্য বেলুন কিনতে গিয়ে যে দোকানীকে পেলাম সে আট ন’ বছরের একটি মেয়ে। প্রথমে ভেবেছিলাম তাকে বসিয়ে রেখে তার বাবা হয়ত কোথাও অন্য কাজে গেছে। কিন্তু দেখলাম তার বাবা অন্য দোকান দিয়েছে মেয়েকে বেলুন বিক্রির ভার দিয়ে। যার জন্য বেলুন কিনছি মেয়েটি তার থেকে হয়ত সামান্য কয়েক বছরের বড়। বেলুন বিক্রিতে তার মন নেই। চোখ পড়ে আছে পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া সুবেশী ছেলেমেয়েদের দিকে যারা মেতেছে পুজোর আনন্দে। মনে মনে কষ্ট হ’ল খুব। বেলুন কিনলাম। দামটা মিটিয়ে দিয়ে তার বাবাকে ডেকে অতিরিক্ত বেশ কিছু টাকা হাতে দিয়ে বললাম ‘এটা দিয়ে মেয়ের জন্য কিছু কিনে দেবেন’। আমার স্ত্রীর মানসিক কষ্টের বহিঃপ্রকাশ ঘটে গেল চোখের জলে। আমরা কষ্ট পেলাম বটে, কিন্তু কে জানে হয়ত ওদের দারিদ্র্যের কষ্ট, আমরা যা ভাবছি, তার থেকেও অনেক বেশি। মেয়েটির নাম দিয়েছি অষ্টমী। ওর একটা ছবিও তুলেছি যেখানে ওর মুখ আড়াল করা। এখন অনেক রাত। তবুও লিখছি। মন খারাপ তাতে কি। মন খারাপ মনে মনে রাখতে চাই না। তাই লিখছি। এবার বোধ হয় মনখারাপ ক্রমশ কমবে। কাল তো নবমী। প্যান্ডেলের দুর্গার বিদায় ক্রমশ কাছে আসছে। আর আমাদের দুর্গারা তো থাকবেই। শুভরাত্রি।   

মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৮

সপ্তমীতে মন খারাপ



সপ্তমীতে মন খারাপঃ অ.না.ক. ১৬/১০/২০১৮  

উৎসবের সুর আজ সপ্তমে। আমার মন খারাপের সুরও ক্রমশ চড়া হ’তে শুরু করেছে। সপ্তমীতে কথা দিয়েছিলাম পরিবারের লোকেদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরোব। সুতরাং নতুন জামা-জুতো পড়ে বেরিয়ে পড়লাম সদলবলে। প্রতিবারের মত এবারও পূজোয় আমার নতুন জামা প্যান্ট কেনা হয়েছে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এবং আমার অজান্তে। বিশেষ ক’রে পুজোর সময় নতুন জামা-প্যান্ট পড়তে আমার ভালো লাগে না। কিন্তু নিরুপায়। এক্ষেত্রে প্রচলিত বাংলা বাগধারার সামান্য পরিবর্তন ‘কর্ত্রীর ইচ্ছেয় কর্ম’। এখানে কর্তার ভূমিকা মূল্যহীন। পূজোয় নতুন জামা কাপড় উপহার দিতে আমার কার্পন্য নেই। কিন্তু সবাইকে দিই না। দিই বাচ্চাদের। আর আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয় তাদেরকে। যেহেতু উপহার প্রদানের পুরো নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ আমার হাতে থাকে না, তাই মাঝে মাঝে ব্যতিক্রমও ঘটে। আজ দুপুরে দেখছিলাম এবার পুজোয় আমার ছেলের পাওয়া জামা-প্যান্ট-জুতোর পসরা। অনেকগুলো। আমার এবং বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া। দেখছিলাম কিন্তু মন চলে গিয়েছিল আমার ছোটোবেলায়। বেশ মনে পড়ছে, পুজোর সময় আমাদের পাশের বাড়ির ছেলেদের সুন্দর ইস্ত্রী করা টেরিকটের ফুলপ্যান্ট দেখে আমার খুব ইচ্ছে হ’ত ওরকম প্যান্ট পড়তে। কিন্তু বাবার দেওয়া হাফ প্যান্ট ছাড়া কিছু জুটত না। আরোও একটা ব্যাপার আজও পর্যন্ত আমাকে অবাক করে। সত্যি বলতে কি আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে আমি কোনদিন পুজোয় জামা-প্যান্ট উপহার পেয়েছি কি না মনে করতে পারি না। এমনকি আজও পর্যন্ত সেই ট্র্যাডিশন চলছে। বলতে বাধা নেই, অর্থবান অনেক আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকেও পাইনি। আমার ঘনিষ্ট সহপাঠী দু’একজন জানে, আমি স্কুলে জামা ইন করে যেতাম না, কারন কোনোরকমে স্কুলের ইউনিফর্ম জোগাড় হলেও বেল্ট ছিল না ব’লে প্যান্টে দড়ি বেঁধে যেতাম। না, এসব আমার মন খারাপের আদৌ কোন কারন নয়। বরং এই কথা গুলো ভেবে আমি আনন্দ পাই, কারন এগুলো জীবনের ব্যতিক্রমী দিক যা সবার জীবনে আসে না।  এখন সত্যিকারের অসহায়কে সাহায্য করার খুব ইচ্ছে হয়, কিন্তু আর্থিক সামর্থ ততটা নেই ব’লে সাহস পাই না। পুজোর সময় এলে রাস্তা দিয়ে চলার সময় মানুষের পোশাকআশাকের বৈচিত্র আমি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখি, দেখতে ইচ্ছে হয়। আর মনে মনে মানুষের আর্থিক বৈষম্যের চিত্র কল্পনা করি। বাজারে চায়ের দোকানের হারুকে প্রতিদিন দেখি একটা ছেঁড়া গেঞ্জি গায়ে দিয়ে চা বানাতে, আজ সপ্তমীর সন্ধ্যায় ওর গায়ে যে নতুন জামাটা দেখলাম, আর পাশের বাড়ির ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া ঈমনের গায়ের নতুন জামার মধ্যে পার্থক্য করতে গিয়ে বুঝতে অসুবিধা হ’ল না  ঈমনের গায়ের জামার মূল্য আর হারুর জামার দামের বিস্তর ফারাক – প্রায় আকাশ পাতাল। কিন্ত হারুর মুখ থেকে ঠিকরে বেরনো আনন্দ ঈমনের চেয়ে ঢের বেশি। এত কিছু ভাবছি, দেখছি অথচ আমার মন খারাপের সঙ্গে এসব দৃশ্যের কোন প্রভাবই নেই। প্যান্ডেলের কারুকাজ দেখছি, অবাক হচ্ছি অথচ মন খারাপ কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাঝে মাঝে মন খারাপ করে দেয় স্বাভাবিকভাবেই।  কিন্তু তাতো যে কোন সময়ই হতে পারে। কিন্তু ঠিক পুজো এলেই অবধারিতভাবে মন খারাপ যে কেন হয় সেটাই আমাকে ভাবিয়ে তোলে। আজ বিকেলের দিকে রাস্তার ধারে এক বৃদ্ধাকে দেখলাম বাটি হাতে বসে ভিক্ষা চাইতে চাইতে পড়ে যাচ্ছেন, আবার সোজা হয়ে বসে ভিক্ষা চাইছেন। ওনাকে প্রায়ই ওখানে দেখি। কিন্তু এরকম অসংলগ্ন দেখিনি। কৌতুহলে কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম তিনি ভিক্ষা চাইতে চাইতে ঘুমিয়ে পড়ছেন – আবার জেগে উঠছেন। হাতে পঞ্চাশটা টাকা দিয়ে বললাম বাড়ি চলে যান, আজ আর ভিক্ষা করতে হবে না। আমি ওনাকে চিনি, ছেলে বড়লোক অথচ মাকে দেখে না। তাই বাধ্য হয়েই ভিক্ষা করেন। ইচ্ছে থাকলেও মানুষকে সাহায্য করাও আজকাল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কারন প্রায়শই ভিক্ষাবৃত্তির নামে অনেকক্ষেত্রে ভন্ডামি চলে। তাই সহজে কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায় না। ফলে সত্যিকারের অসহায়রা ভিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। এই ঘটনা দেখে মন খারাপ হওয়ারই কথা। হয়েওছিল। কিন্তু তার সঙ্গে উৎসবের তো কোন সম্পর্ক নেই ! ঠাকুর দেখে ফেরার সময় সর্টকাট করার জন্য একটা গলির পথ ধরেছিলাম। হঠাৎ পাশের বাগান থেকে শিউলি ফুলের সুগন্ধ ভেসে এল। মন ভ’রে গেল। আর ঠিক সেই সুগন্ধ পাওয়ার সাথে সাথে মনটা আরোও বিষণ্ণ হয়ে উঠল। কেন ? জানি না। নাগরিক জনারণ্যে থেকে এখন আর শরতের কাশফুল দেখা হয়ে ওঠে না। আগের মত শরতে আর শিউলির সুবাস নেওয়া হয় না। তাই আচমকা এই সৌরভ মনটাকে টাইম মেশিনে পৌঁছে দিল আমার শৈশবে – শিউলি ঝরা শরতের প্রভাতে। এমনিতেই মন খারাপ তার ওপর শিউলির ঘ্রান – দুয়ে মিলে চরম বিষন্নতা। কাল অষ্টমী। জানিনা কাল মনখারাপের পারদ কতটা চড়বে।  শুভরাত্রি।
  

সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৮

ষষ্ঠীতে মন খারাপ

ষষ্ঠীতে মন খারাপঃ অ.না.ক. ১৫/১০/২০১৮

একটা জরুরী দরকারে আজ ষষ্ঠীর সকালে বাজারে যেতে হয়েছিল। সাইকেলে যেতে যেতে রাস্তার ধারে লাগানো পূজো মন্ডপের মাইকে রবীন্দ্রসঙ্গীত ভেসে আসছিল। বরাবরই পূজো প্যান্ডেলের বিচিত্র গান শুনতে আমার খুব ভালো লাগে। বিশেষ ক’রে যখন আবেগভরা রবীন্দ্রনাথের গান ভেসে আসে আমি আপ্লুত হয়তে যাই। অজ্ঞাত কারনে হওয়া মন খারাপের সঙ্গে এ যেন ঘৃতাহুতি। গানগুলো শুনতে শুনতে কখনো কখনো চোখ ভিজে গিয়ে চশমার কাচ বাষ্পায়িত হয়ে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। এই সময় রবীন্দ্রনাথকে যেন আরোও বিষ্ময়কর লাগে। বাজার থেকে ফেরার পথে একটা গান মনকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। গানটি ইতিপূর্বে বহুবার শুনেছি অথচ আজ এই গানের কথাগুলো শুনে মনে মনে রবীন্দ্রনাথকে প্রনাম জানালাম – জোনাকি কি সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছ/ও জোনাকি কী সুখে ওই আঁধার সাঁঝে উল্লাসে প্রাণ ঢেলেছ/ তুমি নও তো সূর্য নওতো চন্দ্র/ তোমার তাই বলে কি কম আনন্দ ... শুনতে শুনতে ভুলেই গেলাম আমার মন খারাপের কথা। একটু আগেই একটা পূজো প্যান্ডেলের উদ্বোধন মঞ্চে দেখলাম আমার স্কুল জীবনের এক বন্ধু প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত ক’রে বসে আছে। সে এখন স্কুলের হেডমাস্টার। চারদিক থেকে ‘মাননীয়’, ‘মহাশয়’ ইত্যাদি সম্বোধন ভেসে আসছে। বেশ ভালই লাগছিল বন্ধুর সামাজিক মর্যাদার রমরমা দেখতে। কিন্তু গানটা শোনার পর আমার আর এক সহপাঠী বন্ধুর মুখ বার বার ভেসে উঠতে লাগল। গানের কথাগুলোর সঙ্গে আমি কোথায় যেন অম্লানের মিল পেলাম। ও থাকে ব্যারাকপুরে। ফোনে মাঝে মাঝে কথা হয়। ওর অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই ব’লে ফেসবুক/হোয়াটসঅ্যাপের মত সামাজিক মাধ্যমে ও অনুপস্থিত। অম্লান একটা প্রাইমারী স্কুলের সামান্য বেতনের পার্শ্বশিক্ষক। বহুদিন ওর সঙ্গে দেখা ছিল না। দু’দিন আগে অফিস ছুটি ছিল ব’লে দেখা করতে গিয়েছিলাম ওর সঙ্গে। গিয়ে দেখলাম ছোট্ট একটা ঘরে ও একাই থাকে। অকৃতদার । বাবা-মা অনেকদিন আগেই গত হয়েছেন। অগোছালো ঘরে শুধু বই আর বই। অনেক গল্প হ’ল। পুরোনো বন্ধুবান্ধবদের সম্বন্ধে কথা হ’ল। আমি একটা কথাই বলেছিলাম ‘তোর মত ছেলে আজ প্রাইমারী স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক একথা মেনে নিতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে’। প্রশ্নটা শুনে অম্লানের এতটুকু প্রতিক্রিয়া পেলাম না – একেবারে নির্বিকার। গতকাল, পঞ্চমীর দিনে, আমার অনুরোধ রাখতে অম্লান আমাদের বাড়িতে এসেছিল। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে বাইরে  অবাকই হলাম। অম্লান এসেছে। পড়নে পুরোনো পাজামা, পায়ে প্রায় ছেঁড়া চপ্পল। বেশ অবাকই হলাম। অবশ্য বন্ধুবান্ধবদের মুখে আগেই শুনেছি ও নাকি এভাবেই চলাফেরা করে। যথারীতি আপ্যায়ন, গল্পগুজব। এসবের পরে একবার লজ্জার মাথা খেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি রে পোশাক আসাক পালটা। পূজোর সময় এই পোশাকে রাস্তা ঘাটে চললে লোকে কি বলবে!’ অম্লান বদনে অম্লান আমায় পাল্টা প্রশ্ন করেছিল ‘পূজোতে অর্থাভাবে যারা নতুন জামাকাপড় কিনতে পারে না তাদের দেখে তোর কষ্ট হয় না ?’ আমি বলেছিলাম, ‘তা তো হয়, ভীষণ মন খারাপ হয়’। অম্লান অদ্ভুত ভাবে বলেছিল ‘আমাকে দেখে তুই কষ্ট পাচ্ছিস, কিন্তু ওরা আমাকে দেখে সান্ত্বনা পায়’। একথা শোনার পর আর কিছু বলতে পারিনি। অম্লান আমাদের ব্যাচের তুখোর ছাত্র ছিল। আজ যে বন্ধুকে পূজোর উদ্বোধন করতে দেখেছি অম্লানের কাছে সে ছিল নিতান্তই তুচ্ছ। অথচ অম্লান তার কেরিয়ার নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবেনি – এখনোও ভাবে না। শুধু পড়াশোনা করেছে, করেই চলেছে। পত্র-পত্রিকায় মাঝে মাঝেই লেখা বেরোয়। নিজেকে আড়াল করে রেখেছে অন্ধকারে। অথচ আমি, আমার মত ওর পরিচিতরা জানে অম্লান কি অসম্ভব প্রতিভাধারী। গানটা শুনে অম্লানকে মনে হল ও ‘জোনাকি’। গতকাল ফেসবুকে আমার এক সহকর্মী লিখেছিল পূজো এলে আমার মত তারও মন খারাপ হয়। এর কারন জানতে চেয়েছিল।  আমি বলেছিলাম, পুরোনো সুপ্ত দুঃখ, ক্ষোভ, ব্যথা এগুলো হয়ত এই উৎসবের আলোতে প্রাণ ফিরে পায়। তাই এই মন খারাপ। অবশ্য এর সঠিক ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই কারন আমার ক্ষেত্রে এই মন খারাপের কারন আজও পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারিনি। তবে একথা ঠিক যে উৎসবের এই আনন্দযজ্ঞে যখন চারদিক আলোকময় হয়ে ওঠে তহন অমলকান্তিদের কথা খুব মনে পড়ে যারা অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণের পথ খুঁজে পায়নি। জানিনা সেই কারনেই মন খারাপ হয় কি না। আবার অম্লানের ক্ষেত্রে ‘তুমি নও তো সুর্য নও তো চন্দ্র/ তোমার তাই বলে কি কম আনন্দ...... তোমার যা আছে তা তোমার আছে/ তুমি নও তো ঋণী কারো কাছে’ এই লাইনগুলো ভেবে আনন্দও পাই। ষষ্ঠীতে আজ বাড়িতেই ছিলাম। সপ্তমীতে একটু ঘুরে দেখার ইচ্ছে আছে। মন সত্যিই খারাপ। সে তো নিজের জন্য, নিজের মধ্যে। আনন্দের ভাগীদার যারা তাদের তো সঙ্গ দিতেই হবে। শুভ রাত্রি।

রবিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৮

রাতের ওপর রেগে আছি

রাতের ওপর রেগে আছি
তাই এত রাত জেগে আছি।
ভোরবেলা শেষ হ'লে রাত,
ঘুম এসে যাবে নির্ঘাত।
                               অ.না.ক. ১৫/১০/'১৮

রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৮

নস্টালজিয়ার মহালয়া রেডিওতে

নস্টালজিয়ার মহালয়া রেডিওতেঃ অ.না.ক. ০৭/১০/২০১৮

স্মৃতিগুলো অন্ধকার গহ্বরে জীবিত অথচ মৃতের মত পড়ে থাকে। একটু সুযোগ পেলেই প্রাণের উচ্ছ্বলতায় জেগে ওঠে।  আসলে কিছু মুহুর্ত, কিছু কিছু সময় স্মৃতিগুলোকে জেগে ওঠার রসদ জোগায়। যেমন  বৃষ্টি। বর্ষামুখরিত দিনে  জানলার পাশে বসে বাইরের অঝোর ধারাপাতে  দৃষ্টি মেললে মন উদাস হওয়া মূলত ফেলে আসা দিনের স্মৃতি রোমন্থনের কারনে। মনের মধ্যে থাকা সুপ্ত প্রেমের চনমনে চঞ্চলতা কিংবা বকুল, মানস, সুধীরের মত হারিয়ে যাওয়া  শৈশবের বন্ধুদের উদ্ভাসিত মুখগুলো। অতীত আর আধুনিকের ভাল-মন্দ বিচারের বিতর্কে খবরের কাগজে, টিভি চ্যানেলে, বই-এর পাতায় হাজার হাজার শব্দ ব্যয় হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ তার জীবদ্দশায় তার ফেলে আসা অতীত জীবনের সোন্দর্যে বেশি আকৃষ্ট। এ ব্যাপারে আকবর বাদশার সঙ্গে হরিপদ কেরাণীর কোন ভেদ নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও অতীতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নস্টালজিয়ার প্রতি দুর্বলতা বোধহয় মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরোনো ঘড়িও দিনে দুবার একেবারে নির্ভুল সময় দেয় যার কাছে আধুনিকতম ঘড়িও হার মানে। জানিনা অতীতের প্রতি মানুষের এই স্বভাবসিদ্ধ আসক্তি এই কারনেই কি না। সঙ্গীত, নাটক, সিনেমা, সাহিত্য সর্বক্ষেত্রে আধুনিকতার পাশাপাশি অতীতে উঁকি দিয়ে 'আহা' 'আহা' ক'রে নস্টালজিক হয়ে ওঠা এখনোও মানুষের প্রায় মজ্জাগত।
আগেই বলেছি কিছু কিছু মুহুর্ত, কিছু কিছু সময় স্ম্তি উসকে দেয়। আজ আমার ক্ষেত্রেও ঘটেছে এমন ঘটনা যার পরিপ্রেক্ষিতেই এতগুলো কথার অবতারণা। সকালে আলমারি থেকে ল্যাপটপ বের করতে গিয়ে আলমারির একটি কোনায় চোখ পড়ে যেতে থমকে গেলাম। একটা রেডিও। প্রায় বছর পনেরো আগে কেনা। যে উদ্দেশ্যে কেনা হয়েছিল (এফ.এম. শোনা) সে কাজ এখন মোবাইল ফোনেই অনায়াসে হয়ে যায়। তাই অব্যবহারে এখন অচল। আগামীকাল মহালয়া। চটপট নতুন ব্যাটারি লাগিয়ে প্রাণবন্ত ক'রে তুলেছি রেডিওটাকে। এবার আর টিভি দেখা নয়, ইচ্ছে রয়েছে এবার চলবে 'আকাশবাণী কলকাতা'র মহিষাসুরমর্দিনী। মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনব এবং আশপাশের মানুষদের শোনাব বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সেই দরাজ গলায় স্তোত্র পাঠ, সঙ্গে পঙ্কজ কুমার মল্লিক, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, সুপ্রীতি ঘোষ, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শিপ্রা বসুর এবং আরোও অনেকের কন্ঠে  শরীরে শিহরণ জাগানো গানে শরতের ভোর মুখরিত করা গান।
নস্টালজিয়ার মহালয়া রেডিওতেঃ অ.না.ক. ০৭/১০/২০১৮

স্মৃতিগুলো অন্ধকার গহ্বরে জীবিত অথচ মৃতের মত পড়ে থাকে। একটু সুযোগ পেলেই প্রাণের উচ্ছ্বলতায় জেগে ওঠে।  আসলে কিছু মুহুর্ত, কিছু কিছু সময় স্মৃতিগুলোকে জেগে ওঠার রসদ জোগায়। যেমন  বৃষ্টি। বর্ষামুখরিত দিনে  জানলার পাশে বসে বাইরের অঝোর ধারাপাতে  দৃষ্টি মেললে মন উদাস হওয়া মূলত ফেলে আসা দিনের স্মৃতি রোমন্থনের কারনে। মনের মধ্যে থাকা সুপ্ত প্রেমের চনমনে চঞ্চলতা কিংবা বকুল, মানস, সুধীরের মত হারিয়ে যাওয়া  শৈশবের বন্ধুদের উদ্ভাসিত মুখগুলো। অতীত আর আধুনিকের ভাল-মন্দ বিচারের বিতর্কে খবরের কাগজে, টিভি চ্যানেলে, বই-এর পাতায় হাজার হাজার শব্দ ব্যয় হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ তার জীবদ্দশায় তার ফেলে আসা অতীত জীবনের সোন্দর্যে বেশি আকৃষ্ট। এ ব্যাপারে আকবর বাদশার সঙ্গে হরিপদ কেরাণীর কোন ভেদ নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও অতীতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নস্টালজিয়ার প্রতি দুর্বলতা বোধহয় মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরোনো ঘড়িও দিনে দুবার একেবারে নির্ভুল সময় দেয় যার কাছে আধুনিকতম ঘড়িও হার মানে। জানিনা অতীতের প্রতি মানুষের এই স্বভাবসিদ্ধ আসক্তি এই কারনেই কি না। সঙ্গীত, নাটক, সিনেমা, সাহিত্য সর্বক্ষেত্রে আধুনিকতার পাশাপাশি অতীতে উঁকি দিয়ে 'আহা' 'আহা' ক'রে নস্টালজিক হয়ে ওঠা এখনোও মানুষের প্রায় মজ্জাগত।
আগেই বলেছি কিছু কিছু মুহুর্ত, কিছু কিছু সময় স্ম্তি উসকে দেয়। আজ আমার ক্ষেত্রেও ঘটেছে এমন ঘটনা যার পরিপ্রেক্ষিতেই এতগুলো কথার অবতারণা। সকালে আলমারি থেকে ল্যাপটপ বের করতে গিয়ে আলমারির একটি কোনায় চোখ পড়ে যেতে থমকে গেলাম। একটা রেডিও। প্রায় বছর পনেরো আগে কেনা। যে উদ্দেশ্যে কেনা হয়েছিল (এফ.এম. শোনা) সে কাজ এখন মোবাইল ফোনেই অনায়াসে হয়ে যায়। তাই অব্যবহারে এখন অচল। আগামীকাল মহালয়া। চটপট নতুন ব্যাটারি লাগিয়ে প্রাণবন্ত ক'রে তুলেছি রেডিওটাকে। এবার আর টিভি দেখা নয়, ইচ্ছে রয়েছে এবার চলবে 'আকাশবাণী কলকাতা'র মহিষাসুরমর্দিনী। মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনব এবং আশপাশের মানুষদের শোনাব বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সেই দরাজ গলায় স্তোত্র পাঠ, সঙ্গে পঙ্কজ কুমার মল্লিক, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, সুপ্রীতি ঘোষ, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শিপ্রা বসুর এবং আরোও অনেকের কন্ঠে  শরীরে শিহরণ জাগানো গানে শরতের ভোর মুখরিত করা গান।

মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর, ২০১৮

গঙ্গাসাগরের ডায়েরি - ২০১৮

অনেক দিন ধরেই ভাবছি গঙ্গাসাগরের ডায়েরি একসঙ্গে ক'রে রাখব। নিজের লেখা, তা। সে যেমনই হোক, নিজের কাছে অমূল্য সম্পদ। আজ সেই ভাবনার বাস্তব রুপ দিতে পারলাম শেষ পর্যন্ত।



গঙ্গাসাগরের ডাইরি: ৫ জানুয়ারি,২০১৮
এবারের ঘটনাটা অভূতপূর্ব।  বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল এবার নাকি গঙ্গাসাগর মেলায় আমাদের ডিউটির নির্দেশ আসবে। শুনে কিছুটা ভয়ই পেয়েছিলাম। কারন এখানে ডিউটি করতে আসা কয়েকজনের মুখে থাকা-খাওয়া নিয়ে যে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শুনেছি তাতে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। মেলার দিন ক্রমশ আসন্ন হ'তে শুরু করল, প্রতিদিনই অফিসের মেল দেখতে থাকলাম, কিন্তু ৪ তারিখ দুপুর পর‍্যন্তও যখন কোন নির্দেশ পেলাম না, তখন অনেকটাই আশ্বস্ত বোধ করলাম এবং প্রায় নিশ্চিত হলাম যে নির্দেশ আর আসবে না। আলিপুরে একটা ট্রেনিং-এ অংশ নিয়ে বাড়ি ফিরে যখন নিশ্চিন্তে শীতল পরিবেশে একটা বৈকালিক ঘুমের আয়োজন করছি তখন স্মার্ট ফোনের হোয়াটসঅ্যাপ নামক সামাজিক মাধ্যমে দু:সংবাদটি এল। মারাত্মক খবরটা প্রথমে দিনের, পরে রাতের ঘুমটাও কেড়ে নিল। নির্দেশ পালন করতে আজ খুব সকালে নামখানা লোকাল ধ'রে কাকদ্বীপ নেমে সেখান থেকে ভেসেলে বিপুলাকার নদী পেরিয়ে নামলাম কচুবেড়িয়ায়। এখান থেকে তীর্থযাত্রী বোঝাই বাসে চিড়েচ্যাপটা কোনোরকমে মেলা-প্রাঙ্গনে এসে হাজির হলান। তখন বেলা প্রায় দেড়টা-দুটো হবে।এসে দেখি আয়োজন অসম্পূর্ণ। ভেবেছিলাম লোটা-কম্বল রেখে বাড়ি ফিরে যায় এবং ৮ তারিখে এসে ডিউটি করব। কিন্তু সম্ভব হ'ল না। কারন নদীতে জোয়ার না থাকায় ভেসেল ছাড়তে দেরি হবে। অগত্যা ফিরে এলাম। রাতের আশ্রয়, খাবার সবই মিলল।  আবার আগামী কাল যুদ্ধ জয়ের জন্য  প্রস্তুত হবার পালা।

গঙ্গাসাগরের ডায়েরি: ০৬ জানুয়ারি,২০১৮
গতকাল বলেছিলাম আজ যুদ্ধ জয়ের প্রস্তুতি থাকবে। বাস্তবে দেখলাম প্রতিপক্ষই অনুপস্থিত।অর্থাৎ কোন কাজ তো হ'লই না উল্টে যা করতে বলা হ'ল তা কতটা কার‍্যকরি হবে তারও নিশ্চয়তা পাওয়া গেল না। যাক, সেটা গেল প্রফেসনাল দিক যা  নিয়ে বেশি না বলাটাই ভাল। বেশি রাতে শুয়ে দেরিতে ঘুম থেকে উঠে তাড়াহুড়ো ক'রে প্রায় মিস করতে করতে অফিসের ট্রেন ধরার অভ্যেস মজ্জাগত হয়ে যাওয়ার কারনে গত রাতে দেরি করে শুয়ে আজ ভেবেছিলাম দেরি ক'রে উঠব। কিন্তু একসঙ্গে তিরিশ জনের থাকার ঘরে সকালবেলার গল্পগুজবের আওয়াজে সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেল। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ফেললাম আজ। গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গনের খুব কাছেই আমাদের থাকার আয়োজন। বাড়ি থেকে বারবার অনুরোধ এসেছে এই সুযোগে কপিল মুনির মন্দিরে পূজো দেওয়ার জন্য। অতএব, বেরিয়ে পড়লাম মন্দিরের উদ্দেশ্যে। কিন্তু পূজো দেওয়ার চেয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম মন্দিরের ছবি তুলতে। মেলা প্রাঙ্গনে কিছু কিছু সাধুর দেখা মিলল, তাদের ছবি তুললাম, যদিও আমার শোনা বা ছবিতে দেখা অদ্ভুত বেশধারী (বা বেশহীন) সাধুদের সাথে এদের মিল পেলাম না। হয়ত তারা এখনও এসে পৌঁছয়নি। পূজো দেওয়ার কাজটা আগামীকালার জন্য বরাদ্দ রেখে ফিরে এলাম আশ্রয়স্থলে। প্রাত:রাশ সম্পূর্ণ  করার পর ডাক এল মিটিং-এ জরুরী অংশ নেওয়ার জন্য। সেটা শেষ ক'রে স্নান-খাওয়ার পর্ব সম্পূর্ণ করলাম। ইচ্ছে থাকলেও দ্বিপ্রাহরিক নিদ্রা বর্জন ক'রে চললাম জেটিগুলিতে সরজমিনে সি সি টিভি ক্যামেরার অবস্থান দেখতে। সারাদিন পর সন্ধ্যে নামার সঙ্গে উষ্ণতার পারদ ক্রমশ নামতে শুরু করল। সুতরাং সকাল সকাল নৈশ ভোজ সম্পূ র্ণ ক'রে ঘরে ঢুকে গেলাম। ইতিমধ্যে অনেকের সমবেত নাসিকাগর্জনে ঘর সরগরম (স্বরগ্রাম বোঝা আমার সাধ্য নয়)।  আর আমার তো সবে সন্ধ্যে। কালকের কর্ম পরিকল্পনা অনির্দিষ্ট।  অতএব, দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার আগাম পরিকল্পনা নেওয়া যেতেই পারে।

গঙ্গাসাগরের ডায়েরি: ৭ জানুয়ারি, ২০১৮
আজ সত্যি সত্যিই দেরি ক'রে ঘুম থেকে উঠেছি। আর যেমনটি বলেছিলাম তেমনই করেছি অর্থাৎ কপিল মুণির মন্দিরে পূজো দিতে ভুল করিনি। পূজো দেওয়ার আগে মন্দির পেরিয়ে সোজা চ'লে গিয়েছিলাম সমুদ্রের ধারে। কপিল মুণির মন্দির থেকে মাত্র কয়েকশ মিটার দূরেই সমুদ্রতট। না দীঘা, পুরীর মত সমুদ্র উপভোগ করার প্রত্যাশা করলে একদম ভুল হবে। দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি আছে, কিন্তু উত্তাল তরঙ্গ নেই - বলতে গেলে প্রায় নিস্তরঙ্গ, প্রশান্ত। তবে হাজারে হাজারে পুণ্যার্থী  এরই জলে পরম বিশ্বাসে খুঁজে পাচ্ছেন পুণ্যার্জনের উপাদান। দেখলাম রাজ্যের, ভিন-রাজ্যের কাতারে কাতারে মানুষ জলে নেমে পরম উদ্দীপনায়, অকৃত্রিম বিশ্বাসে সাগরের জলে পুণ্যস্নানে ব্যস্ত। কিছু কিছু তিলক-মালাধারী পুরুষ, মহিলাকে দেখলাম সমুদ্রতটে পূজোর উপকরণ সাজিয়ে ব'সে সাগরের উদ্দেশ্যে পূজো নিবেদন করতে। এখানেও চোখে পড়ল একদল স্থানীয় ছেলে-মেয়ে চুম্বক লাগানো জাল দিয়ে জল থেকে পুণ্যার্থীদের ফেলা পয়সা সংগ্রহ করছে। সমুদ্র দেখার সেই আনন্দ না পেলেও কাছে এসে না দেখে ফিরে যাব তাই বা হয় কি করে! সেখান থেকে ফিরে এসে সোজা ঢুকে পড়লাম মন্দির চত্বরে। পুজো দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে মন্দিরের উঁচু চাতালে ওঠার মুখেই সেনাবাহিনীর বদান্যতায় মিলে গেল বাংলা ভাষার শ্রীমদভগবতগীতা সংস্করণ, একেবারে বিনামূল্যে। মন্দিরের ভেতরে পূজারীর হাতে পূজোর উপকরণ দিয়ে দিতেই পূজো দিয়ে প্রসাদ হাতে পেয়ে গেলাম। কপালে সিঁদুরের রেখা নিয়ে একটা ছবিও তুলে ফেললাম চটপট - উদ্দেশ্য, সত্যি বলতে কি, বাড়ির লোকদের মনে আমার সত্যিকারের পূজো দেওয়ার প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে বিশ্বাস অর্জন। তা'হলে পূজো-আর্চার ব্যাপারে আমার প্রতি বিশ্বাসযগ্যতা যে কি মারাত্মক, তা এতক্ষনে নিশ্চয়ই বোঝা গেছে। যা হোক মন্দিরের ভেতর থেকে আর একটা গীতাও মিলে গেল বিনামূল্যে। এবার ফেরার পালা। ফেরার পথে আজ গত কালের তুলনায় সাধুর সংখ্যাধিক্য বুঝতে পারলাম। গায়ে ছাই-ভষ্ম মাখা এক সাধু নিজের ডেরা রঙ করতে ব্যস্ত। মনে হ' ল একটা ছবি তুলি। ক্যামেরা উঁচিয়ে ধরতেই বিপুলাকায় সাধুর ভয়ংকর ধমকানিও শুনতে হ'ল। কিন্তু নিরস্ত না হ'য়ে ছবিটা তুলেই ফেললাম। ঘরে ফিরে এসেই চ'লে যেতে হ'ল মেলা অফিসে - কম্পিউটারে ছোট্ট একটা কাজ করতে। দুপুরের খাওয়া সেরে ইচ্ছে ছিল একটু ঘুমাবো। কিন্তু কাউকেই দেখলাম না ঘুমাতে- সবাই হৈ হৈ ক'রে গল্প-গুজবে ব্যস্ত। অতএব, আমি ব্যতিক্রমী হই কি ক'রে। তাই সঙ্গে আনা পত্রিকা প'ড়ে আর মোবাইলে সোস্যাল মিডিয়ায় বিচরণ ক'রে সন্ধ্যে পর্যন্ত কাটিয়ে দিলাম অনায়াসে।  সন্ধ্যে বেলা আবার বেরিয়েছলাম কপিল মুনির আশ্রমে রাতের পরিবেশ আর আশ্রমের আলোকসজ্জা অবলোকন করতে। বিচিত্র আকর্ষনীয় আলোকসজ্জা সত্যিই মন ভরিয়ে দেয়। প্রায়ান্ধকার সমুদ্রতটের দৃশ্য দেখার লোভও সামলাতে পারলাম না। সেখানে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি, সমুদ্রতটে চা পান ক'রে সাধুদের নানান কর্মকান্ড দেখতে দেখতে ফিরে এলাম আমাদের ডেরায়। কাজ-কম্ম নেই। দশটা নাগাদ নৈশাহার সম্পূর্ণ  ক'রে একটু আগে বিছানায় লম্বা হয়েছি। পাশের খাটে গান চলছে।  হই হুল্লোড়ে ঘর এখন প্রায় জলসাঘরে পরিণত। আমি ততক্ষনে লিখে ফেললাম আজকের অভিজ্ঞতা। কাল কাজ শুরুর আগাম শতর্কতা জারি হয়েছে। জানিনা কতটা বাস্তবে পরিণত হবে। ঘুমানোর দেরি আছে। আপাতত থামলাম। শুভরাত্রি।

গঙ্গাসাগরের ডায়েরি: ৮ জানুয়ারি, ২০১৮
আজ আমার সকাল হয়েছে ন'টায়। অন্যদিন, আগেই বলেছি, অনেক মানুষের প্রভাতি আড্ডায় সকাল সকাল ঘুম ভেঙেছে। আজ ছিল তার ব্যতিক্রম। অবশ্য তার অন্যতম প্রধান কারন, গতকাল রাত্রে আমার পাশের খাটের সহকর্মী অভিনব শব্দে নাসিকাগর্জন করেছে সারারাত। তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় নাসিকাগর্জনের ভয়ঙ্কর, বিচিত্র এবং অশ্রুতপূর্ব শব্দে মাঝে মাঝেই ঘুম ভেঙে গেছে এবং আকষ্মিক ঘুম ভাঙার কারনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। ভোরবেলা থেকে বেলা ন'টা পর্যন্ত একটু ভাল ঘুম হয়েছে। বিছানা ছেড়েছি প্রাত:রাশ প্রস্তুত হওয়ার খবর শুনে। স্নান সেরে সকালের লুচি-তরকারি খেয়ে আজও বেরিয়েছিলাম আশপাশের অঞ্চল পরিক্রমা করতে। পরিস্কার ঝকঝকে রাস্তাঘাট। বেশ সাজানো-গোছানো। বিভিন্ন সরকারী দপ্তরগুলো সযত্নে সাজানো। কনকনে ঠান্ডা হাওয়ার আক্রমণ ঠেকাতে চাদরের বর্ম  বেশ সাহায্য করেছে। গতকাল রাত্রে ঘোরাঘুরির সময় রাতের সাগর দ্বীপ চমতকার লেগেছে। বিশেষ ক'রে মেলা প্রাঙ্গনের আশেপাশের বিস্তীর্ণ  এলাকা আলোয় আলোয় সাজানো। দিনের আলোর মত উজ্জ্বল লাগছিল গোটা এলাকা। আজও একবার কপিল মুনির মন্দির ঘুরে এসেছি। এরপর মেলা অফিসে সামান্য কাজ করে মধ্যাহ্ন ভোজনের পর্ব সম্পূর্ণ ক'রে আবার কাজে বসেছি। যে কাজের কথা বলছি তা কিন্তু যে কাজের উদ্দেশ্যে এখানে আসা তার সঙ্গে আদৌ সম্পর্কযুক্ত নয়। মূল কাজ এখন শুনছি আগামী কাল থেকে শুরু হবে। সেটা অবশ্য ঈশ্বরই জানেন। সন্ধ্যে বেলায় ঘরের উদ্দেশ্যে বাইরে বেরোনো মাত্রই শৈত্য প্রবাহের মাত্রার অনুভূতি টের পেলাম। দোকান থেকে এক কাপ চা খেয়ে সোজা চ'লে এসে ঘরের উষ্ণতায় প্রবেশ করলাম। এসেই কম্বল চাপা দিলাম একটু উষ্ণতার জন্য। পাশের খাটে বাজছে পুরোনো হিন্দি গান। ঢুলু ঢুলু চোখে আধো ঘুম আধো জাগরনে অনেকটা সময় অতিবাহিত ক'রে নৈশাহারের অপেক্ষায় সময় কাটাবো ভাবছি। কিন্তু চা-এর উষ্ণতা শিত কাটানোর প্রধান অস্ত্র এই কথা ভেবে কয়েকজন মিলে বেরিয়ে পড়লাম চা খেতে। রাস্তায় দেখলাম প্রচুর পুণ্যার্থী দলে দলে প্রবেশ করছে মেলা প্রাঙ্গনের উদ্দেশ্যে। চা খাওয়াও হ'ল আবার একটু সাধু দেখার চেষ্টাও করলাম। ফেরার পথে মন্দিরে সন্ধ্যারতির শঙ্খ -ঘন্টার শব্দ পেলাম। কালবিলম্ব না ক'রে ছবি তোলার নেশায় ছুটলাম মন্দিরে। সাধুদের কীর্তি-কলাপে আজ তেমন কিছু বৈচিত্র‍্য পেলাম না, হয়ত পুণ্যার্থী এখনোও তেমন আসেনি তাই।  ঘরে ফিরে এলাম একটু উষ্ণতা সঙ্গী ক'রে। রাত দশটা নাগাদ  খবর পেয়ে শিতবস্ত্রে শরীর ঢেকে বেরিয়ে পড়লাম নৈশাহারে। ফিরে সোজা বিছানা। অনিশ্চিত আগামীকাল।

গঙ্গাসাগরের ডায়েরি: ৯ জানুয়ারি,২০১৮
দু:সংবাদটা পেয়েছিলাম গতকাল মাঝ রাতে। গতকালের (৮ জানু:) ডায়েরি ততক্ষনে লেখা এবং পোস্ট করা হয়ে গেছে। তাই আজকের ডায়েরি এখান থেকেই শুরু করছি। হঠাত খবর এলো যে ঘরে আমরা আছি আগামী কাল সে ঘর ছেড়ে দিতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থার (পুনর্বাসন  বলাটাই বোধ হয় যুক্তিযুক্ত)  কোন খবর জানা নেই।  খবরটা প্রায় বজ্রাঘাতের মত আঘাত হানল মনে। রাত প্রায় তিনটে পর্যন্ত এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার কৌশল তৈরি করার কাজে ব্যস্ত থাকতে হ'ল। তার পরেও যে ঘুম আসবে তার সম্ভাবনা কম। আসলে এমন পরিস্থিতিতে আগে আমাকে কখনোও পড়তে  হয়নি বলেই বোধহয় আমার মধ্যে তৈরি হওয়া আতঙ্ককে প্রশ্রয় দিয়ে ফেলেছিলাম অতিরিক্ত। তারপর মানসিক চাপের সঙ্গে ঘুমের দ্বন্দ্বে ঘুমের জয় হ'ল। অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ভোর বেলা। ঘুমের এই জয়ের কারন সম্ভবত আগে এই কাজে আসা সহকর্মীদের মুখে তাদের একই রকম তিক্ত অতীত অভিজ্ঞতার কথা শোনা এবং একই সঙ্গে সমস্যা সমাধানের কষ্টকর অথচ শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ সমাধানের বিস্তৃত বিবরণ শুনে খানিকটা আশ্বস্ত হওয়া। সকালে যখন ঘুম ভাঙল তখন প্রায় সাড়ে ন'টা।একেবারে স্নান সেরে একটু চা পানের উদ্দেশ্যে বাইরে এলাম সদলবলে। তখনও জিনিসপত্র নিয়ে ঘর ছাড়ার পরিকল্পনা করিনি শেষ পর্যন্ত কি হয় দেখার জন্য। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই খবর এল ঘর খালি ক'রে দেওয়ার জন্য। ছুটলাম তড়িঘড়ি।ব্যাগপত্র নিয়ে উপস্থিত হলাম ডিউটি রুমের সামনে ঘর পাবার আশায়। সেখানে যে ঘরের বন্দোবস্ত করা হ'ল তা শুনে আশাহত হলাম। অনুরোধ করা হ' ল একটু ভাল বন্দোবস্তের জন্য। খাওয়ার আয়োজন নিয়ে কোন অভিযোগ নেই, থাকলেও সে নিয়ে বেশি মাথাব্যথা নেই। কিন্তু থাকার ঘর আর শৌচালয়ের একটু সুবন্দোবস্ত না থাকলে বড্ড অসুবিধা হয়। অভিযোগের যাথার্থ্য বুঝেই হয়ত কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলেন ভালো কিছু বন্দোবস্ত করার কিন্তু অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে এই শর্তে। অপেক্ষা করার ফাঁকে প্রাত:রাশ হ'ল। সময়ের সাথে সাথে উদ্বেগের পারদও চড়তে লাগল। মানসিক চাপ সামলানোর জন্য বেরোলাম একটু ঘোরাঘুরি করতে। রাস্তা আজ পুণ্যার্থীদের আনাগোনায় জনবহুল - সেই সাথে যানবাহনেরও সংখ্যাধিক্য। মন্দিরের দিকে ঘুরে এলাম। কিন্তু সেই উদ্বেগ যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ে না। ইতিমধ্যে মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে ফেললাম। সেখানে আজ থেকে কুপনের ব্যবস্থা চালু হয়েছে। অপেক্ষায় অপেক্ষায় বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হ'ল। তখনও কর্তৃপক্ষ কোন আশার কথা শোনাতে পারেনি। তীর্থের কাকের মত ব'সে আছি। সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত। ঠান্ডা হাওয়ায় শরীরে কাঁপুনি। তবুও আশায় আশায় অপেক্ষমান - কখন সুখবরটি পাওয়া যায়। মন মেজাজ ভাল নেই ব'লে রাতের খাবার খেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। সহকর্মীদের অনুরোধে সামান্য নৈশাহার ক'রে আবার হাজির হলাম কোথায় থাকার বন্দোবস্ত হ'ল জানার জন্য। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ সুখবর একটা পাওয়া গেল। ব্যবস্থা যা হ'ল তাতে নিশ্চিন্তে রাত কাটানো যাবে জেনে উদ্বেগ অনেকটাই কমল। এই ব্যবস্থা করার পেছনে কিছু সহকর্মীর অবদান অনস্বীকার্য।  পাশের ক্যাম্প খাটে জনৈক সহকর্মীর বিরামহীন বিচিত্র শব্দের নাসিকাগর্জনে কান যখন ঝালাপালা, তখন চাদরে কান ঢেকে শীতলতা এবং নাসিকাগর্জন উভয় থেকে পরিত্রাণ পাবার পাশাপাশি আজকের ডায়েরি লেখার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আজ আর ছবি-টবি তুলিনি, মানসিক পরিস্থিতি সেই কাজে উতসাহ যোগায়নি। আগামীকাল থেকে নির্ধারিত
 কাজ শুরু হওয়ার কথা। আপাতত চাই ঘুম - সারাদিনের কর্মহীন দীর্ঘ উদ্বেগময় ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে। সুন্দর আগামীকালের আগাম প্রত্যাশায় - শুভরাত্রি।

গঙ্গাসাগরের ডায়েরি: ১০ জানুয়ারি,২০১৮
গতকাল অনেক রাতে রাত্রিবাসের জায়গা পেয়েছিলাম। কনকনে ঠান্ডায় সারাদিন এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি ক'রে, প্রবল উতকন্ঠায় দিন কাটিয়ে যখন রাত্রিবাসের জায়গা মিলল তখনও উদ্বেগের রেশ কাটেনি, ফলে সহজে ঘুম আসেনি। অন্ন, বস্ত্র ও আশ্রয় এই তিনটি বস্তুই যে বেচে থাকার প্রাথমিক উপকরণ তা হাড়েহাড়ে টের পেয়েছি গতকাল। আশ্রয় আরামদায়ক না হলেও এই বিশাল লোক সমাগমের জায়গায় তা যথেষ্টই ভাল। সকালে ঘুম ভেঙেছে আগেই। কাজ আজও সে ভাবে শুরু হয়নি। তবে উপস্থিত থাকতে হয়েছে কর্মস্থলে কিছুক্ষনের জন্য। সকালে চান ঘরে গান গেয়ে বিদ্যুৎচালিত উষ্ণ প্রস্রবনে (গিজারের বাংলা প্রতিশদ এর চেয়ে ভাল তৈরি করতে পারলাম না) স্নান সেরে বেরোলাম যখন তখন বেলা ন'টা বাজে প্রায়। প্রাতরাশের কুপন হাতে পেয়ে প্রাতরাশ খেয়েছি যথা সময়ে।  সকাল দশটায় মিটিং-এ অংশ নিয়ে বেরিয়েছিলাম এই ক'দিনে প্রিয় হয়ে ওঠা এক চায়ের দোকানে চা খেতে। তখনই রাজপথে দেখলাম মিছিলের মত ক'রে নানান বয়সের এরাজ্য, ভভিন-রাজ্যের মানুষ চলেছে কপিল মুনির আশ্রমের দিকে। কারোও হাতে ধরা ধর্মীয় স্তুতি লেখা পতাকা। কেউ কেউ বিকলাঙ্গতার কারনে খুঁড়িয়ে হাটছে। ছবি তুলে রাখতে ইচ্ছে করল এই দৃশ্যের, তুললামও। পথ চলতে চোখে পড়ল বয়ষ্ক এক দম্পতিকে। অশিতিপর অন্ধ, অশক্ত এবং হাটতে প্রায় অক্ষম এক বৃদ্ধকে তার স্ত্রী প্রায় টেনে হিচড়ে মেলার দিকে নিয়ে চলেছে আর সমানে ব'লে চলেছে 'ওই তো সামনে হোটেল আছে'. বুঝতে অসুবিধা হ'ল না যে বৃদ্ধকে হোটেলে থাকার লোভ দেখিয়ে স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে এসেছে গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্জন করতে। দূর দূরান্ত থেকে এতটা দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এসে গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান ক'রে কতটা পুণ্যার্জন হয় জানা নেই কিন্তু যেটুকু দেখলাম তাতে নিশ্চিত হলাম যে এই সমস্ত মানুষের মনে যে বিশ্বাস তা আক্ষরিক অর্থেই নিখাদ, অকৃত্রিম। রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে এরকম অনেক ছোট ছোট বিষয় আমার চোখে পড়েছে। দুপুরের খাবার খেতে এসে দেখি লম্বা লাইন। আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম টোকেন হাতে লাইনে। মাংস, ডিম এসব থাকলেও এ ক'দিনের নিয়মভাঙা জীবন যাত্রার পক্ষে চারাপোনাকেই ভাতের অনুষঙ্গ হিসাবে বেছে নিলাম। দুপুরের ভাত-ঘুমের সুযোগ মিলল না। ব'সে গেলাম কম্পিউটারের টেবিলে। বিকেলে যখন অবসর মিলল, চললাম বহুদিনের পোষিত কৌতুহল মেটাবার উদ্দেশ্যে কপিল মুনির আশ্রম চত্বরে। আসলে চেয়েছিলাম উলঙ্গ নাগা সন্ন্যাসিদের কার্যকলাপ দেখতে। দেখলাম। অবাক হলাম তাদের অর্থোপার্জনের কৌশল দেখে এবং আরও বিষ্মিত হ'লাম এদের প্রতি নারি পুরুষ নির্বিশেষে অন্ধ বিশ্বাসের মাত্রা দেখে। দেখলাম এই শিতেও তারা বিবস্ত্র অথচ সামনে রয়েছে প্রজ্জ্বলিত কাঠ। এরা প্রত্যেকেই প্রবল নেশাসক্ত। চা খেয়ে সোজা ফিরে এলাম শৈত্য প্রবাহের হাত থেকে মুক্তি পেতে। তারপর রাতের খাবার খেতে বেরোলাম। হোগলা পাতায় ঘেরা যেখানে খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে তার ঠিক সামনে এক বয়স্ক লোককে ক'দিন ধ'রে দেখছি পান-সিগারেট বিক্রি করতে। আমি পানাসক্ত, তাই খাবার পরে তার কাছ থেকে একটা ক'রে পান কিনি এবং পান তৈরি করার ফাঁকে আলাপচারিতায় জেনে নিই তার আবাস, এখানে এতদূরে আসার উদ্দেশ্য এই সব। আজ খেতে অন্য দিনের তুলনায় অনেক দেরি হয়েছে। খেয়ে বেরিয়েছি যখন তখন প্রায় রাত সাড়ে এগারোটা। তখনোও দেখি তিনি বসে। পান কিনলাম। কিন্তু লক্ষ্য করলাম এই প্রচন্ড শিতেও তার গায়ে তেমন কোন গরম পোষাক নেই। জিজ্ঞেস করলাম, 'চাদর টাদর নেই?' বলল, 'চাদর নেই. যেখানে আস্তানা গেড়েছে সেখানে একটা কম্বল আছে। চ'লে এলাম পান মুখে দিয়ে
 এসেই কোনক্রমে জামা-প্যান্ট পালটে কম্বলের তলায় ঢুকে এই ডাইরি লিখছি। ততক্ষনে সেই পান বিক্রেতা ঘরে ফিরেছে নিশ্চয়ই। কাল থেকে নিশ্চিতভাবে কাজ শুরু হবে এমনটি নিশ্চয়তা মিলেছে। অতএব কাল থেকে চারদিকের ঘটনাপ্রবাহ অবলোকনের সুযোগ যে কমবে এবং ডায়েরির শব্দ সংখ্যা সেই সাথে হ্রাসমান হবে সে কথা বলাই বাহুল্য। শিতল শুভরাত্রি।

গঙ্গাসাগরের ডায়েরি: ১১ জানুয়ারি, ২০১৮
গতকাল রাতে শিতল শুভরাত্রি জানিয়েছিলাম। আজ কিন্তু এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যাবধি শিতলতার মাত্রা অনেকটাই কম ছিল অথচ খবরেরকাগজ আর ইন্টারনেটের আবহাওয়ার খবর বলছে জেলাগুলিতে চলছে শৈত্য প্রবাহ, গত চোদ্দ বছরে এত ঠান্ডা না কি আগে পড়েনি। একেই হয়ত বলে প্রকৃতির খাম খেয়ালিপনা। গতকালের ডায়েরি ছিল অনেকটা লম্বা। ফলে অনেক রাত অবধি লিখতে হয়েছে। ফলশ্রুতি, সকাল বেলায় গভীর নিদ্রাচ্ছন্নতা কাটিয়ে কষ্টকর শয্যা ত্যাগ। ঘরের লাগোয়া একটিমাত্র শৌচাগার ঘরের বাসিন্দা সংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। তাই সুযোগসন্ধানীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হ'তে হয়েছিল অগত্যা। প্রকৃতির ডাক (ঘুম থেকে সকালে উঠলে ওটা অনেকটা যে হুঙ্কারে পরিণত হয় তা হয়ত সবাই উপলব্ধি করেন) আর সকাল ন'টায় কাজে যোগ দেওয়ার তাড়া দুই-এর সাঁড়াশি আক্রমণে আমাকে সুযোগসসন্ধানি হ'তেই হয়েছিল। এমনকি মিথ্যাবাদি হয়েছিলাম বললেও ভুল বলা হবে না। কারন শুধু শৌচকর্ম করার নাম ক'রে স্নানটাও সেরে ফেলেছিলাম একই সাথে। ন'টার মধ্যেই স্যুটেড-বুটেড হয়ে সোজা প্রাত:রাশের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম। ডিম-কলা-পাউরুটি সহযোগে প্রাতরাশ সেরে কালবিলম্ব না ক'রে চললাম ডিউটি রুমে। কাজ আজ করতে হয়েছে অনেকটাই। গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে কাজে বেশ খানিকক্ষণ ব্যস্ত থেকে বাইরে উকি মেরে দেখলাম মধ্যাহ্ন ভোজনের জন্য দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট না ক'রে দাঁড়িয়ে খাওয়ার বিকল্প অবলম্বন ক'রে সময় বাঁচালাম। সেখান থেকে বেরিয়ে সেই বৃদ্ধ পান বিক্রেতার কাছ থেকে পান কিনলাম এবং দেখলাম আজও তার শরীরে শীতের পোষাক অপ্রতুল। কারন জিজ্ঞেস করতে বলল ,'আজ তেমন ঠান্ডা নেই - কুয়াশার কারনে শীত কম'। সত্যিই তাই। কিন্তু রাত্রে ঠান্ডা পড়লে কি করবে সে প্রশ্ন করাতে এটা বুঝিয়ে দিল যে, যে কম্বলটা আছে তা প'ড়ে আসার অনুপযুক্ত।  তার কথাবার্তা আমার কাছ থেকে কিছু সাহায্য পাবার ঈঙ্গিত বহন করে।  পিতৃসম বৃদ্ধের দৈন্য দশা দেখে ফেরার আগে তাকে কিছু সাহায্য করার বাসনা আগেই জন্মেছিল। এই ইচ্ছে হওয়ার আরও একটি কারন আমার সঙ্গে তার সহজ-সরল ব্যবহার। যদিও একবারও তার সামনে অদ্যাবধি সে ইচ্ছের কথা প্রকাশ করিনি। দুপুরের খাওয়া শেষ ক'রে পান চিবোতে চিবোতে ঘরে ফিরলাম একটু বিশ্রাম নিতে। কিন্তু একটা ফোন সে ইচ্ছেয় বাদ সাধল।  ঊর্ধ্বতনের তলব, অতএব ফিরে গেলাম কাজে যোগ দিতে। সন্ধ্যের দিকে চা-টিফিন খেয়ে অন্য একজনকে দায়িত্ব দিয়ে সদ্য আগত সহকর্মীকে সঙ্গ দানের জন্য চললাম কপিল মুনির আশ্রমের দিকে। রাস্তায়, আশপাশের মাঠে হাজার হাজার পুণ্যার্থী। অনেকের আশ্রয় পূর্ব নির্ধারিত, অধিকাংশই আশ্রয়ের জন্য যাত্রীনিবাস কিংবা সরকারী সৌজন্যে প্রস্তুত হোগলা পাতায় ছাওয়া অস্থায়ী ঘরে আশ্রয় পাবার জন্য হন্যে হয়ে ঘর খুঁজছে। আবার অনেকে এসবের তোয়াক্কা না ক'রে রাস্তার পাশে তাবু খাটিয়ে দিব্যি আশ্রয় তৈরি ক'রে নিয়েছে। দোকানে ব'সে চা খেয়ে মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। মন্দির চত্বর দেখলাম অনেকটাই জনশূন্য। চারদিকে বাঁশের ব্যারিকেট। মাঝে মাঝেই পুলিশি তৎপরতা। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মোড়া সাগর দ্বীপ। দুগ্ধপোষ্য শিশু, অশক্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কেউই বাদ যায়নি গঙ্গাসাগরের পুণ্যার্জন থেকে। আজও গিয়েছিলাম নাঙ্গা সন্ন্যাসিদের দর্শন পেতে। গতকাল দূর থেকে ছবি তুলেছিলাম। আজ ইচ্ছে হ'ল ক্লোজ-আপ নিতে। আমার কমদামী সাধারণ মোবাইলে দূর থেকে ভাল জুম করা সম্ভব নয় ব'লে কাছে গিয়ে দশ টাকার বিনিময়ে আশির্বাদ নিয়ে ছবি তুলতে হ'ল। মন্দিরের চারিদিকে বিচিত্র সাজের, বিচিত্র চেহারার সাধুদের দেখলাম ঘুরে ঘুরে। আগামী কাল থেকে আর এদিকে আসতে পারব কি না এই অনিশ্চয়তার কথা ভেবে ঘুরে নিলাম। সেখান থেকে ফিরতে রাত হ'ল। কনকনে ঠান্ডায় ফেরার সময় প্রায় শুনশান রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা অস্থায়ী তাবুর ভেতর থেকে ভেসে আসছিল নিশ্চিন্ত নিদ্রার নাক ডাকার শব্দ, কোনোটা থেকে শিশুর অস্পষ্ট কান্নার আওয়াজ, কোথাও বা হাসি-ঠাট্টার শব্দ। অসুস্থের যন্ত্রণা কাতর শব্দও কানে এলো। পুণ্যার্জনের বিশ্বাস কতটা কঠিন হ'তে পারে, এদের না দেখলে তা বিশ্বাস করা যায় না। আজ হয়ত ঠিক আছে, কিন্তু স্বচ্ছ ভারত, নির্মল বাংলা দু'একদিন বাদে এসব যে কোথায় পৌছবে কে জানে।  সে যা হবার হবে। আপাতত নৈশভোজ জরুরি, না হ'লে খাবার ফুরিয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা। তাই তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে এসে নৈশাহার সম্পূর্ণ করলাম। রুটি আর ডিমের যুগলবন্দি, সঙ্গে কাচা পেয়াজের অনুষঙ্গ - বেশ জমে উঠেছিল। কিন্তু সে তৃপ্তি উপভোগ করার মধ্যেই সাড়ে দশটার মিটিং-এ হাজির থাকার নির্দেশ এল। চললাম সেখানে। মিনিট পনেরোর সংক্ষিপ্ত নির্দেশাবলী শুনে আগামী কাল থেকে সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকার সাবধানবাণী পেয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ালাম একটু ঘুমিয়ে নিতে। সেখানে শয়নস্থলের একটু রদবদল করার জন্য সময় ব্যয় হ'ল। চোখে তন্দ্রা, ডায়েরি লিখতেই হবে। তাই লেখা শেষ ক'রে ঘুমিয়ে পড়ব। সবাইকে তন্দ্রামাখা শুভরাত্রি।,

গঙ্গাসাগরের ডায়েরি: ১২ জানুয়ারি ২০১৮
তন্দ্রাচ্ছন্ন শুভরাত্রি জানিয়েছিলাম গতকাল।সেই তন্দ্রাচ্ছন্নতা যে কয়েক মুহুর্তেই গভীর নিদ্রায় পরিণত হবে তা ভাবতেই পারিনি। বাড়ি থেকে অফিসের কাজে বাইরে থাকলে সকাল সকাল ঘুম ভাঙানোর স্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়ে দিই। স্ত্রীর ফোনেই ঘুম ভাঙে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আজও সকালে কথামতো সাড়ে সাতটায় স্ত্রীর ফোন পেলাম। আমি কিন্তু তারও আগে ঘুম থেকে উঠে প্রাতকৃত্য,স্নান সেরে অফিসের পোষাকে প্রস্তুত হয়ে গেছি। তবুও স্ত্রীর ফোন পেয়ে তাকে ধন্যবাদ দিতে গিয়ে উলটে সেই আমাকে ধন্যবাদ জানালো এই কারনে যে আমাকে সকাল সকাল ঘুম থেকে ডেকে তোলা যে কি কঠিন ব্যাপার তা সে হাড়ে হাড়ে জানে। গঙ্গাসাগরের কাজে ঠিক সকাল ন'টায়  যোগ দেওয়ার কঠিন নির্দেশের ব্যত্যয় হওয়ার সুপ্ত আশঙ্কায় নিজের অজান্তেই ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। আজ সবেমাত্র অষ্টম দিন। আরোও বাকি ৪-৫ দিন। এই দিন কাটানোর একঘেয়েমি যেমন আছে, তেমনি আছে আমার অভিজ্ঞতা অর্জনের তাগিদ। সাড়ে আটটা নাগাদ প্রাতরাশ খেয়ে সোজা ঢুকে গেলাম কর্মস্থলে। কাজটা কি তা এতদিন বলিনি। ব'লে রাখি এই কাজের অভিনবত্ব আছে, এবং এই অভিনবত্বের কারনেই এই প্রথম গঙ্গাসাগর মেলায় আমাদের ডাক। এই বিশাল মেলার সামগ্রিক নজরদারির জন্য 'তীর্থ সাথী' নামে একটি বিশেষ বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছ্র যা  পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলিতে বিপুল জনসমাবেশের সার্বিক নজরদারির মাধ্যমে নিরাপত্তা রক্ষার  কাজে যে ভাবে ব্যবহৃত হয় তার আদলে তৈরি। তার জন্য গড়া হয়েছে একটি বিশাল কেন্দ্র যাতে রয়েছে প্রায় শতাধিক কম্পিউটার যেখানে পাঁচ শতাধিক সিসি টিভি ক্যামেরা, ড্রোন ক্যামেরা এবং হিলিয়াম বেলুন ক্যামেরার মাধমে তোলা ছবি গুলি ধরা পড়বে মনিটারে যার মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা চলবে নজরদারি এবং যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় কন্ট্রোল রুম থেকে সরাসরি সেই অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মীকে নির্দেশ দিয়ে যুদ্ধকালীন ততপরতায়  পরিস্থিতির মোকাবেলা করা যায়। আমাদের কাজ সেই ফুটেজ দেখে নজরদারি এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া। সকাল ন'টা থেকে শুরু ক'রে রাত ন'টা - এই দীর্ঘ সময় কাটানো যে কি কঠিন কাজ তা আজ টের পেয়েছি। মাঝে শুধু দুপুরের খাওয়া বা টয়লেট ছাড়া বাইরে বেরোনোর কোন সুযোগই পাইনি। নতুন এই পরিকল্পনার সফল রুপায়নের চ্যালেঞ্জকে কেন্দ্র ক'রেই এবছর আমাদেরকে ডাকা হয়েছে। আজ আর কপিল মুনির আশ্রমের দিকে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। তবে একটা জিনিস করেছি। যখনই সুযোগ পেয়েছি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে অপলকে দেখেছি মানুষের মিছিল - শ'য়ে শ'য়ে হাজারে হাজারে। মেলা যদি আক্ষরিক অর্থে ই মিলন ক্ষেত্র হয়, তবে সত্যিই এটি মেলা। আজ সি সি টিভি ক্যামেরার ছবি থেকে দেখেছি মানুষের ঢল। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পুণ্যার্থীদের স্যালুট জানাতে ইচ্ছে হয় তাদের পুণ্যস্নানের প্রতি বিশ্বাসের অকৃত্রিমতা দেখে। চারদিক আলোকময়। মাঝে মাঝে মনটা খারাপ হচ্ছে ঘন ঘন এম্বুলেন্সের আওয়াজ শুনে - জানিনা কোন হতভাগার এই দুর্দশা হ'ল। সরকারী ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট ভাল। কেউ হারিয়ে গেলে সেখানেও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়ার জন্য। দমকল, স্বাস্থ্য প্রভৃতি পরিষেবার জন্য কর্মীদের ততপরতা চোখে পড়ার মত।পুলিশ তো রয়েইছে, বিভিন্ন আপতকালীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারী পরিষেবার সাথে রয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা। এই মাঝরাতে যখন এই ডায়েরি লিখছি তখনও মানুষ প্রবেশ করছে গঙ্গাসাগরে। কারন রাস্তা থেকে ভেসে আসছে মানুষের সমবেত পদচারণার শব্দ। কখনও কখনও ভেসে আসছে কপিল মুনি কিংবা গঙ্গামায়ের জয়ধ্বনি। মাইকেও পুণ্যার্থীদের উদ্দেশ্যে  নানা রকম ঘোষণা চলছে। আজ খুব একটা বাইরে বেরোবার সুযোগ হয়নি
 ব'লে উপাদানের অপ্রতুলতা। আগামী কাল কতটা পারব জানিনা। তবে লেখার চেষ্টা করব। সকালে ঘুম ভাঙার জন্য তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়াটা জরুরী। অতএব টা টা।

গঙ্গাসাগরের ডায়েরি: ১৩ জানুয়ারি  ২০১৮:
আজ সকালেও ঘুম ভেঙেছে তাড়াতাড়ি। আজকেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় পুণ্যার্থীর প্রবেশ ঘটার কথা গঙ্গাসাগরে। সুতরাং যে কাজের উদ্দেশ্যে আমাদের এখানে আনা, সেই কাজের গুরুত্ব আজই সবচে বেশি। পঞ্জিকা মতে কাল ভোরেই মকর সংক্রান্তির স্নান।  অতএব এখানে ভিড় উপচে পড়বে আজ। সেই ভিড়ের নজরদারি করা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে আমাদের ভূমিকা যথেষ্ট দায়িত্বপূর্ণ।  ঘুম থেকে উঠেছিলাম তাড়াতাড়ি - কিন্তু বিপদের গন্ধ পেলাম শৌচাগারে গিয়ে।বেগ আবেগে পরিণত হ'ল যখন দেখলাম বাথরুমে (শৌচাগার আর শৌচ নেই) জল নেই। আমার তখন করুন অবস্থা। কিংকর্তব্যবিমূঢ়তার মধ্যে এখানে সেখানে ছুটে বেড়িয়ে অস্বস্তি নিবারনের একটা উপায় পেয়ে যেন স্বর্গ-সুখ পেলাম। সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার - প্রচলিত এই প্রবাদের সত্যতা যে একশ শতাংশ সত্য - গঙ্গাসাগরে এসে থাকা খাওয়ার এমন করুন অবস্থা দেখে তা মনে হ'তেই পারে। কিছুক্ষণ  বাদে জল এলে স্নান সেরে একশ শতাংশ নিশ্চিত হ'লাম। এক সহকর্মীকে সঙ্গ দিতে আজ কপিল মুনির আশ্রমে গিয়ে আজ আবার পূজো দিয়েছি। কিন্তু সময়াভাবে গঙ্গাজল (সমুদ্রের জল বলাই যুক্তিযুক্ত) নেওয়া হয়নি।  কিন্তু বাড়ি থেকে করা এই অনুরোধ না রাখলে সমূহ বিপদ। তাই ভাবছি কাল সক্কালে কাজটা সাড়তে হবেই।মন্দিরে গিয়ে দেখলাম পূজো দেওয়ার  জন্য বিশাল লাইন বাঁশের ব্যারিকেটের মধ্যে  দিয়ে সর্পিল গতিতে এগিয়ে চলেছে। সে সব ভাবনা আপাতত সুপ্ত রেখে অত:পর কাজে যোগ।  বিরাট একটা কক্ষে প্রায় শতাধিক বিরাটাকায় মনিটরে চলছে বাবুঘাট থেকে সাগর মেলা পর‍্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় পুণ্যার্থীদের আসা- যাওয়ার জীবন্ত দৃশ্য।  তার ওপর আমাদের পলকহীন তীক্ষ্ণ নজর। কোথাও স্যমান্যতম অস্বাভাবিকতা নজরে এলেই তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নির্দেশ পাঠানো - এই ছিল কাজের সারমর্ম।  তা ছাড়া বিস্তৃত অঞ্চলের নজরদারির জন্য রয়েছে ড্রোন ক্যামেরা। সকাল ন'টা থেকে রাত নটা পর‍্যন্ত দীর্ঘ ১২ ঘন্টার একটানা নজরদারি অত্যন্ত কষ্টকর। কিন্তু নিরুপায়। কন্ট্রোল রুমে জল,চা-এর ঢালাও ব্যবস্থা।সুরক্ষিত এই ঘরে সারাদিনই চলেছে মন্ত্রী,আমলা, প্রিন্ট ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমের লোকেদের ঘন ঘন আনাগোনা। ছবি উঠেছে সারাদিন।ছবি তোলাতে আমার বড্ড আপত্তি। তা সত্ত্বেও মন্ত্রী আমলাদের পাশে অনেক ছবি উঠে গেছে। বাড়ি থেকে জানাল কোন একটা টিভি চ্যানেলে আমাকে দেখা যাচ্ছে।  এমনকি গতকালের একটি সংবাদপত্রে আমার ছবি ছাপা হয়েছে। রাতের জন্য সহকর্মীকে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে ঘরে এলাম সাড়ে ন'টায়। বাথরুমে জল আছে শুনে ক্লান্তির মাত্রা অনেকটা কমে গেল। । রাতের খাওয়া সম্পূর্ণ  ক'রে শুতে এলাম। এখনও কানে ভেসে আসছে পুণ্যার্থী  আগমনের শব্দ।  মাইকে ঘোষিত হচ্ছে নান রকম ঘোষনা। কাল আবার কর্তব্যপালন। অতএব শুতে যায়।  ঘুম পাচ্ছে। শুভ রাত্রি।

গঙ্গাসাগরের ডায়েরি: ১৪ জানুয়ারি, ২০১৮
গতকাল সারারাত ধ'রে তীর্থযাত্রীদের প্রবেশ ঘটেছে গঙ্গাসাগরে।  শুনেছি প্রায় ১৮ লাখ পুণ্যার্থীর  প্রবেশ ঘটেছে এবারের মেলায়। তবে হিসাবটা যে অযৌক্তিক নয় তার কারন সিসি টিভি ক্যামেরায় আমরা সর্বক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। কি অসম্ভব কষ্ট সহিষ্ণুতা এদের। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি কোলে দুগ্ধপোষ্য শিশু আর বড়সড় একটা বস্তা নিয়ে কোন মহিলা চলেছে হাজার হাজার মানুষের ভিড় ঠেলে। উদ্দেশ্য হয়ত সেই শিশুর জন্য মানত পূরণ করা। মূলত: পুণ্যার্জনের উদ্দেশেই মানুষ এখানে আসে বয়স, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, দারিদ্র্য, যাত্রাপথের দুর্গমতা সব কিছুকে তুচ্ছজ্ঞান ক'রে।  আরাম ক'রে চেয়ারে হেলান দিয়ে যখন দেখছিলাম নদীতে ভাটা থাকায় ভেসেল চলাচল বন্ধ ব'লে কি অসম্ভব ধৈর্য নিয়ে, প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে দমবন্ধ করা ভিড়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা ঠাই দাঁড়িয়ে আছে ভেসেল আসার অপেক্ষায়। কি পুণ্য লাভ হবে সে প্রশ্নের চেয়েও সামান্য বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে মানুষ যে এতটা একাগ্র, নি:স্বার্থ কিভাবে হ'তে পারে সেই  প্রশ্নটি আমার মধ্যে আলোড়ন সৃষ্ট করেছে সারাদিন। কারন প্রযুক্তির কল্যাণে এদের কঠিন কৃচ্ছ্রসাধন আমি স্বচক্ষে দেখার সুযোগ  পেয়েছি। মকর সংক্রান্তির স্নানের পুংখানুপুংখু চিত্র সরাসরি দেখা গেছে ড্রোন ক্যামেরায়। কিসের এত টান?  আমরা ঈশ্বরকে স্মরণ করি নিজের কল্যাণের স্বার্থে। চাহিদার সাথে প্রাপ্তির অমিল ঘটলেই আমরা ঈশ্বরকে দোষ দিই। অথচ এদেরকে দেখলে মনে হয় একটা ব্যাপারে এদের থেকে আমাদের মানসিকতার বিস্তর ফারাক। অনুকূলতা বা প্রতিকূলতা কোনোটিই এদের বিশ্বাসকে টলাতে পারে না। শুরু করেছিলাম সকাল দিয়ে। মাঝপথে তীর্থযাত্রীদের সম্বন্ধে অনেক কথা বলা হয়ে গেল। সকালেই ফিরে যাই। ঘুম থেকে উঠেই বিপদের মধ্য দিনে দিন শুরু হয়েছিল আজ। বিপদ মানে মারাত্মক বিপদ। প্রাতঃক্রিয়া করতে যাব, এমন সময় একজন জানাল শৌচাগারে জল নেই। ভয়ংকর এই দু:সংবাদটি শোনামাত্র পাশের অফিসের নিচতলার শোচালয়ের দিকে ছুটলাম কিন্তু তা তালাবন্ধ দেখে  মানসিক অবস্থাটা কি হ'তে পারে তা সহজেই অনুমেয়। বিষন্ন হয়ে ফিরে এসে শুনি সবেমাত্র জল এসেছে।আশ্বস্ত হলাম। হাতে স্বর্গ  পাওয়ার মত কালবিলম্ব না করে প্রায় ছুটে গিয়ে দরজা বন্ধ করলাম। স্নান পরে করার সিদ্ধান্ত নিলাম। পোষাক পাল্টে চললাম ডিউটিতে। ভোরবেলা এক সহকর্মী মকর সংক্রান্তির স্নান করতে যাবে ব'লে তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম গঙ্গা জল আনার, এনেও দিল। এই জলের মূল্য মারাত্মক, কারন বাড়ি থেকে মোবাইল ফোন মারফত প্রেরিত আদেশে এই জল নিতে বলা হয়েছিল। ভুলে গেলে 'মারাত্মক' পরিস্থিতি হবে এই কথা চিন্তা ক'রে এক ড্রাম 'পবিত্র' জলের ব্যবস্থা করেছি। প্রাতরাশ খেয়ে সকাল ন'টা থেকে রাত ন'টা টানা বারো ঘন্টা চলল সিসি টিভি ক্যামেরায় নজরদারি।  টানা কথাটা আসলে ঠিক বলিনি কারন কাজের ফাঁকে 'বাথরুমে জল এসেছে' এই সুসংবাদটি পাওয়া মাত্র স্নান ক'রে এসেছি। মধ্যাহ্নভোজের জন্যও লাইন দিতে হয়নি। মেলার সবচে' গুরুত্বপূর্ণ 'মেগা কন্ট্রোল রুম'-এর কর্মী হবার সুবাদে লাইন দেওয়া থেকে মুক্তি পেয়েছি, বরং বলা চলে লাইন না দিয়ে লাইন ক'রে কার্যোদ্ধার করেছি। পুণ্যার্থীদের নির্বিঘ্ন প্রত্যাবর্তনের জন্য সারাদিন কাজ করেছি। বিকেলের টিফিনের অভিনবত্ব অবাক করার মত। কয়েক টুকরো আলুভাজা সহযোগে মুড়ি এবং সঙ্গে পুলি পিঠে। বিকেলের এমন জলখাবার কোনোদিন দেখিনি। তবে বিদেশ বিভুই-এ এসে শিতকালের পিঠে প্রথম খাওয়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষ ধন্যবাদার্হ। ডিউটি সেরে আজ কয়েকজনে মিলে গিয়েছিলাম 'খেলা ভাঙার খেলা' অর্থাত ভাঙা মেলা দেখতে। বিশাল মেলা চত্বরে একটু আগেই ছিল ১৮ লাখ পুণ্যার্থীর পদচারণা অথচ বিশাল মেলা প্রাঙ্গন ঘুরলাম প্রায় বিনা বাধায়। আজকেও প্রচুর পুণ্যার্থী প্রবেশ করেছে। কারন আগামী কালও স্নান- যোগ আছে। তবে তা আজকের মতো এত বিশাল সংখ্যায় নয়। স্বভাবতই আগামী কালের কাজে দায়িত্ব অনেক হালকা, অন্তত: তা আশা করা যেতে পারে। এখন অনেক রাত। সন্ধ্যের তুলনায় ঠান্ডা কম। বাইরে অনেক কর্মী অতন্দ্র কাজে ব্যস্ত। মাইকে ভেসে আসছে মেলায় এসে হারিয়ে যাওয়া বা উদ্ধার হওয়া তীর্থ যাত্রীদের জন্য ঘন ঘন ঘোষণা, মাঝে মাঝেই ভেসে আসছে দ্রুত ছুটে চলা এম্বুলেন্সের আওয়াজ। মেলায় ঘুরতে গিয়ে মেলা প্রাঙ্গনে গড়ে ওঠা 'লস্ট  অ্যান্ড ফাউন্ড' সেন্টারে দেখলাম ছোট্ট একটি ছেলে উদ্ধার হয়েছে, সে তার বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ছেলেটার কান্না দেখে কষ্ট হ'ল খুব। দশটা নাগাদ ঘরে ফিরে আবার নৈশাহার করতে গেলাম। 'ফ্রায়েড রাইস কাকে বলে ভুলে গেছি' এমনটি ভেবে নিয়ে ফ্রায়েড রাইস খেলাম প্রায় আনুবিক্ষনিক পরিমাণ ফুলকপির তরকারি সহযোগে। তারপর সোজা বিছানা। কাল আবার লেখার চেষ্টা করবো। শুভরাত্রি।

গঙ্গাসাগরের ডায়েরি: ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮
গতকাল প্রায় সারারাত ঘুম হয়নি। প্রথমত, যে ঘরে শোয়ার ব্যবস্থা সেই ঘরে ফুটোফাটা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকছিল। সেটা অবশ্য কাটানো গিয়েছিল কারন পাশেই স্তুপাকারে সাজানো ছিল বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের অজস্র কম্বল,বালিশ। যথেচ্ছ সংখ্যায় সেগুলো ব্যবহার ক'রে নিজেরাই নিজেদের বিপর্যয় মোকাবিলা করেছিলাম। ঘুম না আসার দ্বিতীয় কারনটাই মূল কারন। কাছাকাছি গ'ড়ে ওঠা কোন এক 'লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড' কেন্দ্র থেকে হারিয়ে যাওয়া বা উদ্ধার হওয়া মানুষদের স্বকন্ঠে সঙ্গী প্রিয়জনদের উদ্দেশ্যে আর্ত আকুতি। মেলায় এসে কতজন যে সঙ্গী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপন্ন হয় তার ইয়ত্তা নেই। ঘুমিয়ে ছিলাম, তবে সামান্যই। বাড়ি থেকে আসা ফোন বেজে গেছে সকালে, গভীর ঘুমে মগ্ন থাকায় শুনতে পাইনি। দেরি ক'রে উঠলেও উপযুক্ত সময়েই উঠেছি এবং স্নানঘরে আজ জলের অসুবিধা না থাকায় বেশ ভাল ক'রে স্নান করেছি সময় নিয়ে। পুণ্যার্থী গতকালও এসেছে। আজকে ভোরেও নাকি পুণ্যস্নানের যোগ ছিল। তাই সংখ্যায় কম হলেও এসেছিল বেশ কিছু। ঠিক সকাল ন'টায় কন্ট্রোল রুমে ঢুকে প্রায় পলকহীন দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষন করতে হয়েছে আমার নির্দিষ্ট অঞ্চলের সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ এবং প্রয়োজনে ভিড় সামলানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। সারাদিন কেটেছে উদ্বেগে আর  উতকণ্ঠায়। আজ সকালে ইচ্ছে হ'ল না প্রাতরাশ খেতে। শরীরটা ভালো লাগছিল না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ঘরে ফেরার মিছিল লম্বা হ'তে শুরু করল। এত উদ্বেগের মধ্যেও অন্য রকমের উপভোগ্যতাও ছিল। বি এস এন এল-এর এক ভদ্রলোক এলেন কন্ট্রোল রুমে। পূর্ব পরিচিত অনেককেই দেখলাম তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে। ভদ্রলোকের সাদা দাড়ি ভরতি মুখের দিকে তাকালে মনে হবে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। অবাকই হলাম রবীন্দ্রনাথের মুখের সঙ্গে তার মুখের প্রায় নিখুঁত মিল দেখে। একটু পাশ থেকে ছবি তুললাম - মনে হ'ল স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। সঙ্গে সঙ্গে সেই ছবি তুলে দিলাম ফেসবুকে আর ছবির নামকরণ করলাম "গঙ্গাসাগরে রবীন্দ্রমাথের সাথে  'হঠাত দেখা'"। আজ আমার ফেসবুক পোস্টটি যারা দেখেছে তাদের কাছেও আশা করি ব্যাপারটা বিষ্ময়কর মনে হবে। ইতিমধ্যে এই ঘরে বহু উচ্চ পদস্থ আই এ এস আই পি এস আধিকারিক, এম,এল,এ, মন্ত্রী অনেকেরই প্রবেশ ঘটেছে।মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণে অভাবনীয় এই  প্রযুক্তি দেখাটাই মূল উদ্দেশ্য। প্রিন্ট এবং বৈদ্যুতিন মাধ্যমের প্রতিনিধিদের ঘন ঘন চিত্র গ্রহণ চলেছে। এমনকি টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারও হয়েছে। বাড়ি থেকে ফোন এসেছে মাঝে মাঝে যখন তারা বাড়িতে ব'সেই টেলিভিশনে আমার ছবি দেখে আনন্দে আত্মহারা। ক্যামেরার সামনে থাকাতে আমার বড্ড অনীহা। কিন্তু যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই রাত হয়। 'বর্তমান', 'আজকাল', 'এই সময়' কাগজে পরদিন দেখি মন্ত্রী আমলাদের ছবির সাথে আমার ছবিটাও স্পষ্ট ছাপা হয়েছে, যদিও এতে আমার বিড়ম্বনাই বেড়েছে। বিকেলে এক সহকর্মীর জন্মদিনের কেক কাটা হ'ল কন্ট্রোল রুমের মধ্যেই। ততক্ষণে ভিড় কমতে শুরু করেছে, পুণ্যার্থীদের একটা বড় অংশ ইতিমধ্যে নদী পার হয়ে গেছে ফিরতি ট্রেন ধরার উদ্দেশ্যে। এরপর হাতে এল টিফিন, একটা ভেজিটেবিল চপ ও ছোট্ট একটা সন্দেশ সহযোগে মুড়ি। সামান্য একটু খেয়ে বাদবাকিটা দিলাম বর্জ ফেলার পাত্রে। ঠিক ন'টায় রাতের ডিউটি শেষ ক'রে কয়েকজন মিলে চললাম মেলা প্রাঙ্গন পরিদর্শন করতে। বিশাল মেলা চত্বরে কিছুক্ষণ আগেই লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে তিল ধারনের জায়গা ছিল না, সেখানে এখন হাতে গোনা গুটিকতক দোকানদার পসরা সাজিয়ে ব'সে আছে। আমি রথ দেখতে এসে কলা বেচতে আসিনি, বরং উল্টোটা অর্থাৎ কলা বেচতে এসে রথ দেখে ফেললাম। তীর্থ স্থানে যখন এসেই পড়েছি তখন আমার পুণ্যের অংশিদারদের কথাও ভাবা প্রয়োজন। যদিও 'পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য' দিয়েও কাজ চালিয়ে নেওয়া যেত,তবুও স্মৃতি রক্ষার তাগিদে কিনে ফেললাম কপিল মুনির বেশ কয়েকটা বাঁধানো ছবি। এতে পুণ্যের ভাগীদার বাড়বে। জানিনা পুণ্য বিদ্যার মত কি না - 'যতই করিবে দান তত বৃদ্ধি হয়'। একটা রুদ্রাক্ষের মালাও কিনেছি। মেলা থেকে ঘরে ফিরে, হাত-মুখ ধুয়ে, পোষাক পাল্টে  আবার বেরোলাম নৈশাহার করতে। ফিরে এসে দ্রুত শুয়ে পড়লাম বটে কিন্তু ডাইরি লেখা শেষ না ক'রে শুই কি ক'রে ?  অনেক লেখার ছিল। কাল হয়ত কাজের চাপ প্রায় শূন্য হয়ে যাবে তখন লিখে ফেলব ভুলে যাওয়া অংশ সহ আগামী কালের ডাইরি। আজ বাধ্য হয়েই অনেক কিছু বাদ দিতে হ'ল। শুভরাত্রি।

গঙ্গাসাগরের ডায়েরি: ১৬ জানুয়ারি, ২০১৮
সকালে যে প্রাতরাশের কুপনটি পাই সেটি অধিকাংশ দিনই যাকে দিয়ে দিই, আজ ঘুম থেকে দেরি করে উঠেছি ব'লে স্নানের আগেই দ্রুত গিয়ে তাকে সেই কুপনটি দিয়ে তবেই স্বস্তি পেলাম। যে দোকান থেকে আমরা মাঝে মাঝে চা খাই সেই দোকানদার বৃদ্ধা ভদ্রমহিলার একমাত্র নাতি প্রতিদিন আমার কুপনের অপেক্ষায় থাকে, তার জন্যই এই তাড়াহুড়ো।  দোকানদার ভদ্রমহিলা, কেন জানিনা, আমার ব্যবহারে খুব খুশি। আজ বা কাল আমরা বাড়ি ফিরব শুনে আজ তিনি কেঁদেই ফেললেন প্রায়। কেউ কেউ থাকে যাদের সাময়িক সান্নিধ্যও স্মরনীয় হয়ে থাকে। শান্ত, মৃদুভাষী ঐ ভদ্রমহিলা আমাদের কাছ থেকে অযথা জিনিসের দাম বেশি নিতেন না, এমনকি তার ছেলে দাম বেশি চাইলে তিনি ছুটে এসে ঠিক দাম নিতেন। ফেরার আগে ভেবেছিলাম দেখা ক'রে আসি, ইচ্ছে হ'ল না। আর সেই আশিতীপর পান বিক্রেতাকে কিছু আর্থিক সাহায্য করার কথা ভেবেছিলাম তাকে আজ দিয়ে এসেছি একশ টাকা। প্রথমে নিতে অস্বীকারই করেছিল। বলেছি,"আপনার জন্য নয়, আপনার নাতি-নাতনির জন্য মেলা থেকে কিছু কিনে নিয়ে যাবেন। " বাড়ি ফেরার দিন নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে। সিসি টিভি নজরদারির গুরুত্ব অনেকাংশেই কমেছে আজ। কারন অধিকাংশ তীর্থযাত্রীই ফিরে গেছে। কিন্তু মাননীয় জেলা শাসকের সবুজ সঙ্কেত না পাওয়া পর্যন্ত বাড়ি ফেরা যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত বন্ধু অভিজিতের কথাটাই ঠিক হ'ল। সত্যি সত্যিই আজ হোম সিকনেস-এ ভুগেছি। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। কাজের চাপ নেই ব'লে মানসিক চাপ বাড়ছে। তবুও সহকর্মীদের অবস্থানে নিজেকে রেখে সান্ত্বনা পাওয়ার চেষ্টা করেছি। আজ সকালেও স্নান করতে অসুবিধা হয়নি। জলের অভাব ছিল না। আজ দুপুরে গঙ্গাসাগরের কাজ শেষ হলে বাড়ি ফেরার সম্ভাবনা থাকতেও পারে এরকম আশায় ব্যাগপত্র গুছিয়ে রেখে কাজে যোগ দিয়েছিলাম। সকালের প্রাতরাশের জন্য কুপন লাগেনি আমার। তাই কুপনটা সেই পানওয়ালাকে দিয়ে দিয়েছিলাম। ন'টা বাজতে কয়েক মিনিট বাকি থাকায় একটু রাস্তায় বেরিয়েছিলাম চারদিকটা দেখতে। তখনও দেখলাম বেশ কিছু তীর্থযাত্রী মেলার দিকে চলেছে। স্থানীয় এক দোকানদারের কাছ থেকে জানা গেল আরোও তিন-চারদিন এই মেলা চলবে, তাতে স্থানীয় লোকজন সহ সামান্য কিছু বাইরের লোকের ভিড় হয়।  রাস্তার পাশের মাঠগুলো সারি সারি হোগলার ছাউনিতে পূর্ণ। ড্য্রোন ক্যামেরার তোলা ছবিতে অসম্ভব সুন্দর দেখায় এগুলো। মেলা পুরোদমে শুরু হওয়ার পর থেকেই অস্থায়ী শৌচাগারগুলি থেকে আসা মনুষ্যবরের গন্ধে রাস্তার আশপাশ মাতোয়ারা।তবে আসার আগে যা শুনেছিলাম অতটা কিন্তু পাইনি। দুপুরের খাবার খেতেও ভালো লাগছিল না। কিন্তু খালি পেটে থাকলে সমস্যা হ'তে পারে এই ভয়ে একটু ভাত খেলাম তবে সামান্য পরিমানে। একদিন মুরগীর মাংস না খাওয়ার চেষ্টা করেছি। দুপুর বেলায় বাড়ি ফেরার নিশ্চয়তা পাওয়া গেল না। হতাশ হলাম। কাজ নেই ব'লে দুশ্চিন্তা পেয়ে বসল। তারপর 'আগামীকালও ছুটি পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই' এমন খবর মনকে আরোও বিষন্ন ক'রে তুলল। মানসিক বিষন্নতা শরীরেও প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করল ক্রমশ। এই ক'দিনের সমস্ত ক্লান্তি ভর করল শরীরে। চুপচাপ অতি সাবধানে সদা সতর্ক  হয়ে, চোখ দুটো বব্ধ করার চেষ্টা করলাম। সতর্ক  থাকার কারন যে কোন মুহুর্তে  জেলা শাসকের প্রবেশ ঘটতে পারে। কানাঘুষো শুনলাম আমাদের ছাড়া পেতে পেতে ১৯ তারিখও হয়ে যেতে পারে। হতাশা ক্রমশ নিরাশায় পরিণত হ'তে শুরু করল। সন্ধ্যের কিছু পরে "ক্যাম্প ফায়ার" শুরু হ'ল জেলা শাসকের উপস্থিতিতে। খবর পাইনি, কিন্তু পাশের জায়েন্ট স্ক্রিনে যখন অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার দেখলাম তখন দেখতে চ'লে গেলা। ক'দিন ধরেই গঙ্গাসাগরে আযানের শব্দ শুনতে প্সচ্ছি। তার মানে এখানে মুসলমানের সংখ্যা কম নয়। কপিল মুনির গল্প সবাই জানেন। সাংখ্যতত্ত্বের আদি প্রবক্তা কপিলমুনি সাগরদ্বীপে আশ্রম নির্মাণ করেন। এই কপিল মুনির ক্রোধাগ্নিতে একদা সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র ভষ্মিভুত হয়। সগর পুত্র ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে নিয়ে আসেন এবং ভষ্মাবশেষ ধুয়ে ফেলে পুত্রদের আত্মার মুক্তি দেন। গঙ্গাসাগরের ধবলঘাট, মন্দিরতলা, হরিনবাড়ি, মহিষমারি প্রভৃতি অঞ্চলের ভূগর্ভ থেকে প্রাক মুসলমান যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে ব'লে জানা যায় । তার মানে শুধু তীর্থ ক্ষেত্র হিসেবে নয়, ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান হিসাবেও সাগরদ্বীপের গুরুত্ব আছে। সাড়ে নটা নাগাদ হতাশ মনে ঘরে ফিরে একটু ফ্রেস হয়ে বেরোলাম নৈশাহার করতে। আজ ছিল দীর্ঘ লাইন। খাবারের বৈচিত্র আজ চোখে পড়ল, হয়ত শেষ দিন বলেই। রুটি আর খাসির মাংস। লোভনীয় খাবার - কিন্তু বাড়ি ফেরার অনিশ্চয়তার কারনে মন খারাপ ব'লে খাবারে আকর্ষণ পেলাম না। শুয়ে শুয়ে ডাইরি লিখছি এমন সময় পাভেলের ফোন মানসিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দিল। কাল সকাল সাতটার মধ্যে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। চটপট ব্যাগ গুছিয়ে আবার লিখতে বসেছি। হয়ত ঘুম হবে না। আশা করি গঙ্গাসাগরকে এবছরের মত বিদায় জানাতে পারলাম। দু:খ হচ্ছে 'গঙ্গাসাগরের ডায়েরি' বন্ধ করতে হবে ব'লে। সুযোগ পেলে আবার হবে - হয়ত অন্য কোথাও।

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?