সপ্তমীতে মন খারাপঃ সপ্তমী অমরনাথ কর্মকার ২৩/১০/২০২০
উৎসবের সুর সপ্তমীতে যে সপ্তমে উঠবে না সে তো পূর্ব নির্ধারিত। এবারের পুজোটা অনেকটা ঢাকের বাঁয়ার মত। মানে সুসজ্জিত প্যান্ডেল থাকবে, প্রতিমা থাকবে অথচ সেখানে প্রবেশাধিকার থাকবে না। নেহাতই বাঙালীর আবেগ আর ঐতিহ্যকে শুধুমাত্র প্রদর্শন করে অস্তিত্বের সঙ্কটমোচনের চেষ্টা। সকালে বাজার ক'রে ফেরার সময় দেখলাম পাড়ার মহিলা মহলের প্যান্ডেলের প্রবেশপথ দড়ি দিয়ে আটকানো আর বড় বড় অক্ষরে লেখা 'দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ'। সবই করোনার করুনা। বাইরে থেকে যাদুঘরের অট্টালিকা দেখে কি আসল উদ্দেশ্য সাধন হয়! কিন্তু উপায় নেই। করোনার করাল থাবা থেকে জীবন রক্ষা উৎসবের আনন্দে প্রাণ ভাসানোর চেয়ে ঢের বেশি জরুরি। কিন্তু এত বজ্র আঁটুনি যে কিছু অবুঝ মানুষের কাছে ফসকা গেরো তা টের পেয়েছি সপ্তমীর সব্ধ্যেয়। প্যান্ডেলে ভিঁড় নেই অথচ রাস্তায় দলে দলে মানুষ, না আছে শারীরিক দূরত্ব, না আছে মুখচ্ছদের বালাই। অথচ সব আশঙ্কা সত্যি করে গতকালই এ রাজ্যে করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড করেছে। এভাবে চলতে থাকলে পুজোর শেষে হয়ত অধিকাংশের অস্থায়ী ঠিকানা হবে হাসপাতাল এবং অনেকেরই স্থায়ী ঠিকানা হবে পরলোক। আজ ভোর পাঁচটায় শুনতে পাচ্ছিলাম জমজমাট ঢাকের বাদ্যি। নবপত্রিকা স্নানের সারম্বর সমারোহ দেখে মনে হচ্ছিল উৎসব স্বাভাবিক মাত্রা পেয়েছে। কিন্তু সকালের সমারোহ ক্রমশ ম্লান হ'তে শুরু করল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। হাল্কা ঠান্ডা বাতাস সহযোগে ঝিরঝিরে বৃষ্টি - বাইরের পরিবেশের সঙ্গে মনের কোনেও মেঘ জমতে শুরু করল। এরই মাঝে আমার এক কাছের বন্ধুর করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর মনকে আরও ভারাক্রান্ত ক'রে তুলল। কাল থেকে আবার খবরের কাগজ বন্ধ। সময় কাটানোর একটা প্রধান উপকরণ বন্ধ। যতই অলস সময় কাটাই ততই দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে কপালে। এখন না হয় ছুটি, কিন্তু ছুটি ফুরোলেই আবার করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি, আবার প্রতিকুলতার সঙ্গে লড়াই ক'রে কর্মক্ষেত্রে যাওয়া, আবার মানুষের দুর্দশার যন্ত্রণাকাতরতা। অতএব, মনখারাপের মাত্রা প্রশমণের কোন উপায় নেই। অন্যান্যবার পুজোর উৎসব যত শেষের দিকে আসত আমার মনখারাপের তীব্রতা ক্রমশ কমত। এবার ব্যাপারটা ঠিক তার বিপরীত। সন্ধ্যেবেলা বেরিয়েছিলাম কিছু সাংসারিক জিনিসপত্র কিনতে। রথ দেখতে গিয়ে কলা বেচা অর্থাৎ কয়েকটা প্যান্ডেলও দেখা হয়ে গেল। প্যান্ডেলে জনসমাগম কম কিন্তু রাস্তা দিয়ে চলা দায়। প্রাণের আবেগে, উৎসবের উচ্ছ্বাসে মানুষের বহির্গমন রোধ করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। বাঁচার জন্য সারাটা বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর পুজোর আনন্দে প্রেমের জোয়ারে কয়েকটা দিন গা ভাসাতে তারা বদ্ধপরিকর। কোন আইন, কোন তত্ত্ব দিয়ে এদের আটকানো সহজ নয়। এদের হয়ত শিক্ষা কম কিন্তু শিক্ষিতদের মত এদের আয়ও কম। অতএব, শুধু উপদেশ দিয়ে, সচেতনতা সৃষ্টি ক'রে যে এদের নিরস্ত করা সম্ভব নয় তা শিক্ষিত মাত্রেই হৃদয়ে উপলব্ধি করলেও মুখে বাস্তব কথা বলার সাহস রাখেন না। বাইরে শীতের হাওয়ার নাচন, সপ্তমী শেষ, কাল অষ্টমী। অর্থাৎ উৎসবের মধ্যগগন। উৎসব আর উৎসাহের অনুপাতে ঘাটতি হয়ত এবারের পুজোয় আছে, কিন্তু যতই করোনার আতঙ্ক থাক না কেন, ভিতরে বাইরে, অন্তরে অন্তরে দুর্গোৎসব আছে। আমার মন খারাপ। কিন্তু যাদের জন্য মন খারাপ তারা যদি ভালো থাকে তাহলে আমার মন ভালো থাকাটাই স্বাভাবিক। আসলে মনকে সময়ের গন্ডীতে কিছুতেই বেঁধে রাখা যায় না। যখন যেখানে খুশি গিয়ে হাজির হয়। আর আমার ক্ষেত্রে আমার মন কেবলই দুঃখের স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায়, তাই মন খারাপের অন্ত নেই। কাল অষ্টমীতে লিখব আশা করি। শান্তি হোউক সর্বজনীন।
শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২০
সপ্তমীতে মন খারাপ
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
মুখ চাপা সত্য
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?
-
এক লাইনের কাব্যঃ অ.না.ক. ২১/০৩/২০১৭ এক লাইনেও কাব্য হয় দু'লাইনে ছন্দময় ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন