রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৬

অষ্টমীতে মন খারাপ



                                      অষ্টমীতে মন খারাপ

নৈমিত্তিক মুখোশপরা জীবন । অনেক ব্যস্ত মানুষের বিচিত্র বর্ণিল ভিড়ে খুঁজে ফিরি বিষণ্ণ আড়াল । এমন কাউকে খুঁজে পাইনা যার প্রসস্থ কাঁধে হাত রেখে আকাশ দেখা যায় । আমি আমার কথা বলছি না, তাদের কথা বলছি উৎসবের জীবনে প্রবেশের সামর্থ্য যাদের নেই – জীবনের উৎসবে যারা ব্রাত্য । আজ অষ্টমী – আনন্দ-মুখরতায় সবচেয়ে চড়া । বর্ষণমুখর দিন । কেউ ব্যস্ত ঘরের ফুটো ছাদ মেরামত ক’রে মাথা বাঁচাতে, কেউ ব্যস্ত হাজার হাতের দুর্গা দেখার কিংবা হোটেলে ডিনার সারার পরিকল্পনায় । কেউ বলছে ‘আকাশটা আজ বেশ সেজেছে’ কারও আবার মাথায় হাত । কি অদ্ভুত বৈপরীত্য ! আমার কিন্তু হেলদোল নেই । খারাপ মন ভালো হবার এতটুকু সম্ভাবনা নেই । আজ আবার খবরের কাগজও বন্ধ । মন খারাপের এও এক অন্যতম কারন হ’তে পারে । আজ পূজো প্যান্ডেলের পাশে চেয়ারে বসা বাবলুকে দেখে ট্র্যাজিক উপন্যাসের চরিত্র ব’লে মনে হ’ল । প্রেম আর চাকরীর পারীক্ষা পাশাপাশি চলেছিল বহুদিন ওর জীবনে । শেষমেশ চাকরীর পরীক্ষা দেবার বয়স অতিক্রান্ত হ’ল । পরিণতি বুঝে প্রেমিকা সু-চাকুরের স্ত্রী । অবিবাহিত বেকার বাবলু তাই পূজোর ক’টা দিন প্যান্ডেলে ঠাঁই ব’সে থাকে প্রাক্তন প্রেমিকাকে দেখার জন্য । না, বাবলুর জন্য মন খারাপ লাগে না, ওরকম বাবলু এদেশে প্রচুর আছে,  খারাপ লাগে যখন দেখি ওর প্রাক্তন প্রেমিকা একবারের জন্যও বাবলুর দিকে ফিরে তাকায় না । নাকি আমারই ভুল, হয়ত সে আজও বাবলুকে ভালবাসে মনে মনে – আজও নির্জন একাকীত্বে বাবলুর কথা ভেবে বালিশ ভেজায় চোখের জলে ! এই দ্বন্দ্বগুলো মনের মধ্যে ঘুরপাক খায় – মন খারাপ হয় – মন খারাপের সঠিক কারন খুঁজতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে যাই । আসলে আমি যে মন খারাপের গাড়িতে চড়ে বসে আছি, তার কোন নির্দিষ্ট গতি নেই, স্থির গন্তব্য নেই, এ গাড়ির ভেঁপু বাজে না । আমি দিন রাত মন খারাপের সঙ্গে অবিরাম  যুদ্ধ ক’রে চলেছি । এটুকু বুঝেছি, মন খারাপের সঙ্গে সংঘাতের প্রাপ্তিটা কিন্তু বেশ আনন্দদায়ক । অষ্টমীর রাতে পরিবেশে যখন উৎসবের ভরপুর আমেজ তখন আমি ঘরে ব’সে মন খারাপের সঙ্গে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মেতে উঠে লিখে চলেছি – পরে এই লেখাগুলোই আমার মন ভালো ক’রে দেবে, এই প্রাপ্তিটা কম কিসের । সে লেখা যতই নিম্ন মানের হোক নে কেন, সৃষ্টি তো আমারই । আজ সকালে আমেরিকা প্রবাসী আমার এক বন্ধুর ফোন এসেছিল বিস্ময়কে ছাপিয়ে । ও ছিল ধনী পরিবারের ছেলে । ক্লাসে ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব তেমন গাঢ় কিংবা আন্তরিক ছিল না । বাবার অর্থের মহিমায় ও আমেরিকায় পাড়ি দিল ভালো চাকরী নিয়ে, বিদেশিনী বউ হ’ল । ওর ফোন পেয়ে কেরানীগিরি করা মানসিকতায় কেমন যেন সঙ্কোচ জাগল ।  কুশল জিজ্ঞাসা করার পরই জানতে চাইল – তোদের ওখানে পূজোর আনন্দ কেমন ? বললাম এখানে কোনদিনই পূজোর আনন্দে ঘাটতি নেই । জিজ্ঞাসা করলাম, “ওখানে?” বলল, আজ মনটা খুব খারাপ লাগছে, ছোটবেলার দিনগুলোর কথা ভেবে, দেশের পূজোর কথা ভেবে মন খারাপ লাগছে খুব । এখানে পূজো আছে, সেই আনন্দ নেই । আমি বললাম, এখানে পুজোতে আনন্দ করে সবাই – এখানে পূজোতে বৈচিত্রের মাঝে ঐক্য – মানে পূজোর ক’টা দিন সবাই আনন্দে থাকে । এটুকু বলার পরেই আচমকা ফোনটা কেটে গেল । জানিনা, ওপার থেকে কেটে দেওয়া হ’ল নাকি যান্ত্রিক ত্রুটি । নাকি উত্তর মনঃপুত হ‘ল না । কে জানে ! মনটা যে আমারও খারাপ ও কি সেটা বুঝে ফেলেছে ?
                                                    
                                                           অ.না.ক. অষ্টমী, ৯ অক্টোবর, ২০১৬  

শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৬

সপ্তমীতে মন খারাপ



                                    সপ্তমীতে মন খারাপ
সপ্তমী আজ । গতবছর যে ছেলেটাকে যেখানে দেখেছিলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বুদবুদ তৈরির যন্ত্র বিক্রি করতে, ঘটনাচক্রে তাকে আজও দেখলাম সপ্তমীর সন্ধ্যায় একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ফুঁ দিয়ে বুদবুদ তৈরি করছে আর অজস্র বুদবুদ ঝাঁকে ঝাঁকে আনন্দ-উচ্ছ্বল মানুষের ভিড়ে মিলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক । গত একবছরে নিশ্চিত তার মানসিক বিকাশ বিকাশ ঘটেছে কিন্তু সংসার চালানোর জন্য আর্থিক বিকাশ বিন্দুমাত্র যে ঘটেনি তা বলাই বাহুল্য । কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কিরে পড়াশুনা করছিস ? পুলকিত হলাম জেনে যে সে এবার এইটে পড়ছে । গত বছর ও কথা দিয়েছিল সে পড়াশুনা ছাড়বে না । ‘কি রে ঠাকুর দেখতে যাবি না ?’ প্রত্যুত্তরে ও জানালো অষ্টমীতে যাবে – কারন মা অষ্টমী, নবমী ও দশমীতে বাবুদের বাড়িতে কাজে যাবে না । বাবার কথা জিজ্ঞেস করাতে বলল বাবা একই রকম শয্যাশায়ী, তবে আগের চেয়ে ভালো । মনটা একটু ভালো হ’ল বটে তবে ছেলেটার ভবিষ্যৎ কল্পনা ক’রে কিছুটা বিমর্ষ লাগল । পারবে তো ও পড়াশুনা চালিয়ে যেতে ? পুজোর আনন্দ উপভোগ করা না হ’লে ক্ষতি নেই কিন্তু জীবনের আনন্দ উপলব্ধি করার জন্য পড়াশুনা ক’রে, মানুষ হয়ে প্রতিষ্ঠা লাভের স্বপ্ন বুদবুদের মত একদিন মিলিয়ে যাবে না তো ? রাস্তায় হাজার মানুষের ভিড় । পাশের পূজো প্যান্ডেল থেকে ভেসে আসছে ‘আলোকের এই ঝর্ণা ধারায় ধুইয়ে দাও ......’ আমার মনে তখন মন খারাপের নিকষ কালো অন্ধকার একটা ঘটনা দেখে । রেলওয়ে প্লাটফর্ম দিয়ে হাঁটছি অষ্টমী পূজোর ফল কিনবো বলে । আমাদের পাড়ার ছেলেটাকে চোখে পড়ল । ওকে সামনে দেখলে আমার ভীষণ কষ্ট হয় । আজও যে চোখে পড়ে যাবে ভাবিনি । ওর প্যান্টের অনেকটাই ছেঁড়া । দীর্ঘদিন স্নান না করায় চুলে জট । গায়ে নোংরা । ছোটবেলায় ওকে দেখতাম স্কুলে যেতে মায়ের সঙ্গে । সাউথ পয়েন্ট স্কুলে পড়ত । খুব ভাল ছাত্র ছিল । ওর মা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা । হায়ার সেকেন্ডারীতে খুব ভাল ফল করেছিল । তারপর মাঝে মাঝেই ওদের বাড়ি থেকে ভেসে আসত চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ । এটা প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল । একদিন শুনলাম ওর বাবা অন্য এক মহিলাকে বিয়ে ক'রে চ’লে গেছে অন্যত্র । নিত্য ঝগড়ার মূল কারন ছিল এটিই । তারপরও বাড়ি থেকে যখন তখন, এমনকি মাঝ রাতেও ওর মায়ের চিৎকার শুনতে পেতাম – ওর বাবার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালাগাল করতে । কিছুদিন বাদে দেখলাম ওর মা বদ্ধ পাগল হয়ে গেছে । ছেলেটাও ক্রমশ মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়ল । আজ ছেলেটাকে দেখার পর যতটা মন খারাপ হ’ল তার পর আরও বেশি খারাপ লাগল যখন রাস্তায় ওর বাবাকে দেখলাম দ্বিতীয়বার বিয়ে করা বউটাকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছে । ওর বাবাকে দেখে রাগে শরীর জ্বলতে লাগল । বৈপরীত্যের এমন নিষ্ঠুরতা দেখে মন ভালো থাকে ?
                                                        অ.না.ক. সপ্তমী, ৯ অক্টোবর, ২০১৬

শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৬

ষষ্ঠীতে মনখারাপ ০৮ অক্টোবর, ২০১৬


                                                                 ষষ্ঠীতে মনখারাপ 

আবার পূজো এল । আবার মন খারাপের পালা । কি অদ্ভুত ! চারিদিকে আনন্দের প্লাবন দেখলেই আমার মনে বিষণ্ণতার শুষ্কতা জেগে ওঠে । না, পরশ্রীকাতরতা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ । যারা আনন্দের বন্যায় ভেসে উৎসব উপভোগ করে প্রাণ ভ’রে, তাদের দেখে আনন্দ হয় ভীষণ । কিন্তু আমার মন খারাপের কারন সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং একদম অন্য রকম । পুজো এলেই পরিবেশ রৌদ্রজ্জ্বল, আমার মন কিন্তু মেঘলা । পাড়ার এক রিক্সা চালকের ছেলেটা অংকে এম.এস.সি. করেছে । মাঝে মাঝেই আসেন আমার কাছে পরামর্শ করতে ছেলেটার চাকরি পাবার ব্যাপারে । এমনকি তাঁর রিক্সাতে উঠলেও তিনি ছেলের প্রসঙ্গ তোলেন । এর আগে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর শংসাপত্র পাবার ব্যাপারে তাঁর ছেলেকে সাহায্য করেছিলাম । সেই সূত্র ধরেই তিনি আমাকে যথেষ্ট সমীহ করেন । মাঝে মাঝে রিক্সার ভাড়া না নিয়ে লজ্জায় ফেলে দেন আমাকে । গতকাল পঞ্চমীর দিনে তাঁর রিক্সায় চেপে বাড়ি ফিরছি । কথাবার্তায় মনে হ’ল বেশ আনন্দে আছেন । অবশ্য আমি বুঝলেও তাঁর মুখ দিয়ে কখনোও শুনিনি তাঁর দারিদ্রের কথা – শুধু একথা বলতে শুনেছি ছেলের পড়াশুনার খরচ চালানো বড্ড দুঃসাধ্য হয়ে যাচ্ছে তাঁর পক্ষে । জিজ্ঞেস করলাম – কি ব্যাপার বেশ খুশি খুশি লাগছে যে । পরক্ষণেই জানালেন ছেলে আপার প্রাইমারী পরীক্ষায় পাশ করেছে । নম্বর ভালই পেয়েছে । ইন্টার্ভিউ ওৎরাতে পারলেই চাকরিটা নিশ্চিত একথা ভেবেই হয়ত আনন্দে আছেন । জানি, এই দুর্নীতির বাজারে চাকরিটা আদৌ হবে কি না সে ব্যাপারে যথেষ্ট সংশয় আছে, তবুও আমি আশ্বস্ত করলাম – নিশ্চয়ই হয়ে যাবে । দেখলাম রিক্সাচালকের মুখটা কেমন গম্ভীর হয়ে গেল । তাঁর মনখারাপের কারন খোঁজার বৃথা চেষ্টা করলাম না, কারন আমারও তো মাঝে মাঝেই মন খারাপ হয় অজ্ঞাত কারনে । রিক্সা থেকে নেমে প্রায় জোর ক’রে পয়সা দিতে হ’ল। আজ ষষ্ঠী, সকালে মাছের বাজারে একটু ভালো মাছ কেনার ইচ্ছেয় একটা বড় দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছি – এক কোনায় একটা ব্যাগ হাতে লুঙ্গি পরিহিত ওই রিক্সাওয়ালাকে দেখলাম একা একা দাঁড়িয়ে আছেন । এর আগেও ওনাকে বাজারে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখেছি অনেকদিন । আসলে বাজার শেষ হওয়ার মুখে দোকানিরা যখন কম দামে জিনিস বিক্রি করে চলে যান, তিনি সেই অপেক্ষায় থাকেন । আমি আজ মাছ না কিনেই বাড়ি ফিরেছি । ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি দুর্গা নাকি সবার মা । তাহলে যে বাচ্চা ছেলেটা তার শৈশব বিসর্জন দিয়ে পুজোর দিনে বেলুন বেচে উপার্জনে ব্যস্ত তার মা কে ? আজ সকালে ঘুরতে বেড়িয়ে বেশ কয়েকটি পুজো প্যান্ডেলের সামনে দেখলাম কিছু মানুষের জটলা – নারী, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা । দৃশ্যতই তারা দারিদ্রপীড়িত । বোঝা গেল বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন । মঞ্চে সুবেশ নেতা, ক্লাবের সম্পাদক থেকে শুরু করে নানা উচ্চতার মানুষজন – যেন নিজেদের দানশীলতাকে জাহির করার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে । মনে মনে ভাবলাম সারা বছর যাদের অন্ন-বস্ত্র জোটানোর চেষ্টার নামে যেখানে রাজনীতি চলে, পূজোর আনন্দঘন পরিবেশে তাদের দাঁড় করিয়ে দানশীলতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ঐ সমস্ত অসহায় মানুষদের বেঁচে থাকার অধিকারকে কি অপমান করা হয় না ? তাঁদেরকে কি বুঝিয়ে দেওয়া হয় না তোমরা আনন্দ করো আমাদের দয়ায় – তোমাদের আনন্দে স্বতঃস্ফূর্ততা নেই ? ওরাও বোঝে কিন্তু মুখের ভাষা মূক ক’রে দেয় দারিদ্র । একটু আগেই পাড়ার পূজো প্যান্ডেলের সামনে ১২-১৩ বছরের এক কিশোরকে দেখলাম বেলুন বিক্রি করছে । এই বয়সের ছেলেদের হাতে এখন দামী অ্যানড্রয়েড ফোন । ভাবলাম ওর একটা ছবি তুলি । ফোকাসও করলাম – দেখলাম একরাশ বিষণ্ণতা নিয়ে আমার ক্যামেরার দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে । মন খারাপ হ’ল । শেষপর্যন্ত ক্লিক করলাম না । জানি ওর ছবিটা এরপর আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে । বিকেলে রাস্তা দিয়ে আসতে আসতে দেখলাম একটা বাচ্চা মেয়ের কান্না থামাতে তার মা মেয়েটাকে রাস্তায় এনে অনেক ক’রে বোঝাচ্ছেন । বুঝতে অসুবিধা হ’ল না – তার বাবা ড্রাইভার – ভাড়া নিয়ে গেছে সারারাত কোলকাতায় ঠাকুর দেখতে । মেয়েটাও চেয়েছিল বাবার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাবে । কিন্তু বাবা রাতে বাড়ি ফিরবে না জেনেই মেয়ের এই করুন কান্না । এরকম টুকরো টূকরো দৃশ্য চোখে পড়ার ভয়ে পূজোর সময় রাস্তায় বেরোতে সাহস হয় না । সন্ধের পরে চারিদিকে যখন আলোর রোশনাই – মাইকের আওয়াজ – বাড়ির পাশে রাস্তা দিয়ে আনন্দ-মুখরিত মানুষজনের উচ্ছ্বসিত পদচারনা – আমি তখন ঘরের কোনে একের পর এক রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর শুনে চলেছি বাঁশিতে – আজ ভাষার চেয়ে সুরই বেশি ভালো লাগছে – হয়ত মন খারাপ বলেই । 
                                                                                                                     অ.না.ক. ষষ্ঠী, ৮ অক্টোবর, ২০১৬

শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৬

সমস্যা জিইয়ে রাখার চেষ্টাঃ অ,না,ক, ২৭/০৮/২০১৬

মুর্শিদাবাদ হাসপাতালে আগুন । কি মর্মান্তিক দৃশ্য ! সদ্যোজাত শিশুগুলোর কি করুন দশা ! আমরা এরকম পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদেরকে প্রায় মানিয়ে নিতে শিখে নিয়েছি । আমরা দুঃখ পাচ্ছি, এসব নিয়ে রাজনীতি করছি, খবরের কাগজের বিক্রি বাড়ছে, টিভি চ্যানেলের টি,আর,পি, বাড়ছে হই হই করে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করছি । আমরা আদৌ বিষ্মিত হচ্ছি না । কারন ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করার আন্তরিক প্রয়াসে রাজনৈতিক মুনাফা মেলে না । এই কারনেই সমস্যা সমাধানের দাবি ওঠে মিটিং-মিছিলে - বাস্তবে বরং সমস্যা জিইয়ে রাখারই চেষ্টা চলে । আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতি - সভ্যতার কফিনের ওপর চলছে রাজনীতির জীবন্ত উদ্দিপনা ।

অ্যাম্বুলেন্স:অ. না. ক. ২৭/০৮/২০১৬

এখানে আয়নার বারংবার প্রতিফলন
কখনো গদ্যে কখনো কাব্যে ।
আমি দেখি শোকের ছায়া
আর অন্তিম পরিণামের দৃশ্য ।
এখানে ঘন ঘন মৃত্যুর পুনরাবৃত্তি
একরাশ যন্ত্রণা, শোকার্ত পরিজন ।
আমরা চলেছি অ্যাম্বুলেন্সের পেছনে
সাংবাদিকের ক্যামেরায় চলমান বিরামহীন গল্প ।
মাঝে মাঝে দুঃখ হয়, বিস্ময় জাগে না
কারন এ ছবি প্রতিকারহীন প্রাত্যহিক ।
                                                           অ. না. ক. ২৭/০৮/২০১৬

রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০১৬

বন্ধুত্ব দিবসের শুভেচ্ছাঃ অ.না.ক. ০৭/০৮/২০১৬



বন্ধুত্ব বলিতে তিনটি পদার্থ বুঝায়। দুই জন ব্যক্তি ও একটি জগ। অর্থা দুই জনে সহযোগী হইয়া জগতের কাজ সম্পন্ন করা। আর, প্রেম বলিলে দুই জন ব্যক্তি মাত্র বুঝায়, আর জগনাই। দুই জনেই দুই জনের জগত্। ... ইহা ছাড়া আর একটা কথা আছেপ্রেম মন্দির ও বন্ধুত্ব বাসস্থান। মন্দির হইতে যখন দেবতা চলিয়া যায় তখন সে আর বাসস্থানের কাজে লাগিতে পারে না, কিন্তু বাসস্থানে দেবতা প্রতিষ্ঠা করা যায়।– কথাগুলো বলেছেন রবীন্দ্রনাথ। সত্যিই তো বন্ধুত্ব মানে একটা নতুন জগতের সৃষ্টি । অনেকটা ঢাকের বাঁয়ার মত । যেকোন একজনের অনুপস্থিতি এই নতুন জগৎ সৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে । জীবনের পথে চলার সময় এই বন্ধুত্বই আমাদের অতুলনীয় পাথেয় । সেই ছোট্ট বেলায় বন্ধু পেলে কান্না থামত, বন্ধু পেলে আনন্দে ভরত মন । তারপর স্কুল, কলেজ সর্বত্র চলেছে বন্ধুর সন্ধান আর সেই বন্ধুত্বের হাত ধরেই চেনা জগতের গণ্ডি পেরিয়ে চলে গেছি অন্য জগতে – কল্পনা আর বাস্তব মেশানো এক অন্য রকম জগৎ । এখন কঠিন জীবনযুদ্ধে অনেক কিছু না পেলেও শুধু বন্ধু পেলে চলে যায়, আবার প্রাপ্তির প্রাচুর্যের মধ্যেও বন্ধু ছাড়া চলে না । বোধ হয় ভার্জিনিয়া উলফ একারনেই বলেছেন, Some people go to priests; others to poetry; I to my friends । তার মানে বন্ধু মানেই সবকিছু প্রেম, কবিতা, ঈশ্বর । দার্শনিক অ্যারিস্টটল বন্ধুত্বের পরিণাম নিয়ে বলেছিলেন যে বন্ধুত্ব গড়া ক্ষণিকের কাজ, কিন্তু সে ফল ধীরে ধীরে পাকে । বন্ধুত্ব গড়া সহজ, সেটাকে টিকিয়ে রাখা ততোটাই কঠিন । নানা তুচ্ছ কারনে বন্ধুত্বের ইতি ঘটে যায় হামেশাই । তাই বন্ধুত্ব অনেকটা দাঁতের মত । দাঁত পড়ে গেলে তবেই বোঝা যায় দাঁতের মর্যাদা । পারিবারিক, অর্থনৈতিক বা সামাজিক অবস্থানের বৈষম্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাঝপথে বন্ধুত্বের অবসান ঘটায় । কিন্তু বন্ধু   সবার চায় – ভীষণভাবে চায় – এই উপলব্ধি থেকেই অস্কার ওয়াইল্ড লিখেছেন, I don't want to go to heaven. None of my friends are there. দেশ, ভাষা, সমাজ, জাতি, ধর্ম এসবের বিভিন্নতা অনুযায়ী বন্ধুত্বের রীতিও বিচিত্র । কিন্তু মোড়কের রং যাই হোক, বন্ধুত্বের মৌলিক উপাদানের ভেদ নেই । আজ বন্ধুত্বের দিনে মজবুত হোক বন্ধুত্বের ভীত – গড়ে উঠুক নতুন জগৎ । তবে জীবনে এমন বন্ধু যেন না জোটে যাতে ভলতেয়ারের মত আক্ষেপ করে বলতে না হয় “ঈশ্বর আমাকে বন্ধুদের হাত থেকে বাঁচাও, শত্রুকে আমি নিজেই দেখে নেব” ।  

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?