শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৬

সপ্তমীতে মন খারাপ



                                    সপ্তমীতে মন খারাপ
সপ্তমী আজ । গতবছর যে ছেলেটাকে যেখানে দেখেছিলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বুদবুদ তৈরির যন্ত্র বিক্রি করতে, ঘটনাচক্রে তাকে আজও দেখলাম সপ্তমীর সন্ধ্যায় একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ফুঁ দিয়ে বুদবুদ তৈরি করছে আর অজস্র বুদবুদ ঝাঁকে ঝাঁকে আনন্দ-উচ্ছ্বল মানুষের ভিড়ে মিলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক । গত একবছরে নিশ্চিত তার মানসিক বিকাশ বিকাশ ঘটেছে কিন্তু সংসার চালানোর জন্য আর্থিক বিকাশ বিন্দুমাত্র যে ঘটেনি তা বলাই বাহুল্য । কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কিরে পড়াশুনা করছিস ? পুলকিত হলাম জেনে যে সে এবার এইটে পড়ছে । গত বছর ও কথা দিয়েছিল সে পড়াশুনা ছাড়বে না । ‘কি রে ঠাকুর দেখতে যাবি না ?’ প্রত্যুত্তরে ও জানালো অষ্টমীতে যাবে – কারন মা অষ্টমী, নবমী ও দশমীতে বাবুদের বাড়িতে কাজে যাবে না । বাবার কথা জিজ্ঞেস করাতে বলল বাবা একই রকম শয্যাশায়ী, তবে আগের চেয়ে ভালো । মনটা একটু ভালো হ’ল বটে তবে ছেলেটার ভবিষ্যৎ কল্পনা ক’রে কিছুটা বিমর্ষ লাগল । পারবে তো ও পড়াশুনা চালিয়ে যেতে ? পুজোর আনন্দ উপভোগ করা না হ’লে ক্ষতি নেই কিন্তু জীবনের আনন্দ উপলব্ধি করার জন্য পড়াশুনা ক’রে, মানুষ হয়ে প্রতিষ্ঠা লাভের স্বপ্ন বুদবুদের মত একদিন মিলিয়ে যাবে না তো ? রাস্তায় হাজার মানুষের ভিড় । পাশের পূজো প্যান্ডেল থেকে ভেসে আসছে ‘আলোকের এই ঝর্ণা ধারায় ধুইয়ে দাও ......’ আমার মনে তখন মন খারাপের নিকষ কালো অন্ধকার একটা ঘটনা দেখে । রেলওয়ে প্লাটফর্ম দিয়ে হাঁটছি অষ্টমী পূজোর ফল কিনবো বলে । আমাদের পাড়ার ছেলেটাকে চোখে পড়ল । ওকে সামনে দেখলে আমার ভীষণ কষ্ট হয় । আজও যে চোখে পড়ে যাবে ভাবিনি । ওর প্যান্টের অনেকটাই ছেঁড়া । দীর্ঘদিন স্নান না করায় চুলে জট । গায়ে নোংরা । ছোটবেলায় ওকে দেখতাম স্কুলে যেতে মায়ের সঙ্গে । সাউথ পয়েন্ট স্কুলে পড়ত । খুব ভাল ছাত্র ছিল । ওর মা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা । হায়ার সেকেন্ডারীতে খুব ভাল ফল করেছিল । তারপর মাঝে মাঝেই ওদের বাড়ি থেকে ভেসে আসত চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ । এটা প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল । একদিন শুনলাম ওর বাবা অন্য এক মহিলাকে বিয়ে ক'রে চ’লে গেছে অন্যত্র । নিত্য ঝগড়ার মূল কারন ছিল এটিই । তারপরও বাড়ি থেকে যখন তখন, এমনকি মাঝ রাতেও ওর মায়ের চিৎকার শুনতে পেতাম – ওর বাবার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালাগাল করতে । কিছুদিন বাদে দেখলাম ওর মা বদ্ধ পাগল হয়ে গেছে । ছেলেটাও ক্রমশ মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়ল । আজ ছেলেটাকে দেখার পর যতটা মন খারাপ হ’ল তার পর আরও বেশি খারাপ লাগল যখন রাস্তায় ওর বাবাকে দেখলাম দ্বিতীয়বার বিয়ে করা বউটাকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছে । ওর বাবাকে দেখে রাগে শরীর জ্বলতে লাগল । বৈপরীত্যের এমন নিষ্ঠুরতা দেখে মন ভালো থাকে ?
                                                        অ.না.ক. সপ্তমী, ৯ অক্টোবর, ২০১৬

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?