সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

উচ্চারণ ও বানানগত কিছু সাধারণ ভুল



আবৃত্তিকার খুব সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করলেন কিন্তু সূচনায় ‘আবৃত্তি’কে বললেন ‘আবৃতি’ । চট করে মাথাটা গরম হয়ে গেল । ফলে সেই আবৃত্তিকারের আবৃত্তি শোনার প্রতি আগ্রহ রইল না । বই-এর মলাটেই যদি বড় বড় হরফে লেখা ভুল বানান চোখে পড়ে তাহলে ভেতরের দশা কল্পনা করে সেই বই পড়ার ইচ্ছেটা স্তিমিত হওয়াটাই স্বাভাবিক – অন্তত মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল একজন বাঙালীর মানসিকতায় এমনটিই ঘটা উচিৎ । বাসে, রেলে, ট্যাক্সির পেছনে, দোকানের পরিচিতি ফলকে, দেয়াল লিখনে ভুলের ছড়াছড়ি দেখা যায় বাক্যগঠন, যতিচিহ্নের ব্যবহার, শব্দ চয়ন ইত্যাদি ভুল উপেক্ষা করলেও বাংলা বানানের লাগামছাড়া ভুলের বহর দেখলে ৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা-আন্দোলনের শহীদদের কাছে করজোড়ে ক্ষমা চাইতে ইচ্ছে করে । এমনকি সরকারী বিজ্ঞাপনেও দৃষ্টিকটু বানান বিপর্যয় আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা ম্লান করে দেয় । পরীক্ষার খাতায় ছাত্র বানান ভুল করবে, একজন ছাত্র, একজন অশিক্ষিত বা স্বল্প-শিক্ষিত মানুষ শব্দ ভুল উচ্চারণ করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক । আবার অনেকক্ষেত্রে অজ্ঞতায় কিংবা অবচেতনে শিক্ষিত মানুষদেরও ভুল হয়ে থাকে । ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক, তাই হয়তো প্রবাদে আছেমানুষ মাত্রই ভুল সব ভুল কিন্তু মেনে নেওয়া যায় না ধরা যাক মুমূর্ষু রোগীর অস্ত্রোপচার চলছে তখন যদি চিকিত্সক ভুল করে রোগীর পেটে ছুরি-কাঁচি রেখে সেলাই করে দেন তখন ভুল কি মেনে নেওয়া যায়? তেমনি বাংলা বানানে ভুল হলেও মেনে নেওয়া কষ্টকর কেননা বাংলা আমাদের মাতৃভাষা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ভাষা আন্দোলনের এক কঠিন অধ্যায় অতিক্রম করতে হয়েছে, ঝরেছে অনেক শহীদের রক্ত এখন বিশ্বময় বাংলা ভাষা অন্যান্য অনেক ভাষার সঙ্গে সমান গুরুত্বে সমমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত, এমনকি একটি স্বাধীন দেশের জাতীয় ভাষা হিসাবেও স্বীকৃত । সুতরাং এখন যদি আমরা বাংলা বানান ভুল করি বা বাংলা শব্দের ভুল উচ্চারণ করি,  সেটা হবে আমাদের মাতৃভাষাকে অবমাননা করার সামিল ।
অনেকেই ‘সম্মান’ শব্দটিকে ‘সন্মান’ উচ্চারন করতে অভ্যস্ত । টি ভি খুললেই বহু স্বনামধন্য ব্যক্তির মুখে ‘সন্মান’ উচ্চারন করতে শুনবেন । উৎসাহ নিয়ে কারও বক্তব্য শুনতে গিয়ে যখনই বক্তার মুখ থেকে ‘সন্মান’ উচ্চারন শুনি, বক্তার বক্তব্য যত সুন্দরই হোক তৎক্ষণাৎ বক্তার প্রতি অশ্রদ্ধা জন্মে যায় আমার  । এই অভ্যেসটা (বন্ধুবান্ধবরা অনেকে ব’লে থাকে ‘বদভ্যেস’) আমার দীর্ঘদিনের । বক্তার ‘সন্মান’ উচ্চারনে তাঁর প্রতি আমার অসম্মান জন্মে যাওয়ার অভ্যেসটা শত চেষ্টাতেও ত্যাগ করতে পারিনি । হাতে গোনা  বিশিষ্ট কয়েকজনকে দেখেছি প্রথম প্রথম ‘সন্মান’ বললেও পরবর্তীকালে শুধরে নিয়ে ‘সম্মান’ বলছেন । কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বক্তারা শব্দটির বানান তথা উচ্চারন নিয়ে মাথা ঘামান না । তার চেয়েও বেশি আশ্চর্যের, কেউ বক্তাদের (বিশেষ ক’রে বিশিষ্টজন, রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে) এই ভ্রম সংশোধনের চেষ্টাও করেন না । কোন লেখা পড়তে গিয়ে যখনই ‘ব্যথা’ শব্দটি ‘ব্যাথা’ হয়ে যায় কিংবা ‘ব্যক্তি’ পরিনত হয় ‘ব্যাক্তি’তে তখনই লেখাটা আর পড়তে ইচ্ছে করে না । এমনকি ছাপার ভুল হলেও না । খবরের কাগজে, পত্রিকায়, টিভি চ্যানেলে (বিখ্যাত থেকে অথ্যাত সর্বত্র)যখন কোন বিজ্ঞাপনে বড় বড় হরফে ‘ব্যাথা’ শব্দটি দেখা যায় তখন বিজ্ঞাপনদাতার ওপর নয়, রাগ হয় ওই খবরের কাগজ, পত্রিকার বা টিভি চ্যানেলের কর্তৃপক্ষের বা সম্পাদকের ওপর । তাঁরই তো উচিৎ এই ভুল সংশোধন করা । ‘এখানে প্রস্রাব করিবেন না’ বা ‘এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ’ এই বক্ত্যব্যটি লিখতে গিয়ে অন্তত শতকরা পঁচানব্বই ভাগ দেওয়ালে ‘প্রস্রাব’ শব্দটিকে লেখা হয় ‘প্রস্বাব’ বা এই জাতীয় কোন ভুল শব্দ । সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলোতে অনেকক্ষেত্রেই চোখে পড়ে নিয়মনীতির ধার না ধারা বাংলা লেখা । এগুলো আসলে সুন্দর প্রাচীরের গায়ে ঘুঁটে দেওয়ার মত । যত্র-তত্র দৃশ্যমান ভুল বানান মুলতঃ ভাষা সচেতন মানুষের পক্ষে এক ধরনের দৃশ্যদূষণ। আর ভুল উচ্চারণে কথা বলা বা বক্তৃতা করা,  অশালীন ভাষা প্রয়োগ করা এক ধরনের মারাত্মক ক্ষতিকর শব্দ দূষণ যা নব্য প্রজন্মের ভবিষ্যৎ এবং বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎকে বিপথে চালনা করতে বাধ্য । ইদানিং ‘ভাষা-সন্ত্রাস’ শব্দটির বহুল প্রচলন শুরু হয়েছে যা নাকি প্রতিপক্ষকে আক্রমনের জন্য পেশ করা উগ্র, অশালীন বক্তব্য । বাংলা ভাষাতেও যদি এই উগ্র পন্থার অনুপ্রবেশ ঘটে তবে বাঙ্গালীর মাতৃভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগের কারন আছে । বাংলা ভাষার মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করার জন্য অনতিবিলম্বে আমাদের সকলেরই এগিয়ে আসা উচিৎ।

শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

সম্পর্ক ও আত্মীয়তা


পরিবারের সদস্য যেমন বাবা, মা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা, কাকা, কাকিমা, ভাই, বোন এদের সঙ্গে আমাদের আত্মিক সম্পর্ক । বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী, প্রতিবেশী এদের সঙ্গে জন্মের পর থেকেই আমাদের প্রকৃতিগতভাবে পরিচয় এবং স্বভাবতই গড়ে ওঠে সম্পর্কের বন্ধন । এ সম্পর্কগুলো অত্যন্ত দৃঢ় । বাড়ির কোন অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিতদের তালিকা প্রস্তুত করতে গিয়ে এদের নাম এমনিতেই চলে আসে তালিকার প্রথমে – কষ্ট করে মনে করতে হয় না । সহকর্মীদের নাম গুলোও সহজেই ঢুকে পড়ে এই তালিকায় । কিন্তু কিছু কিছু মানুষ থাকেন যাদের নাম পরিচিতদের তালিকায় আনতে গিয়ে একটু কিংবা বেশ অনেকখানি ভাবতে হয় – অথচ এদের অনেকের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় । আসলে পরিচয়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সম্পর্কের বিভিন্নতা আমাদের কাছে ভিন্ন ভিন্ন গুরুত্ব পায় । যেমন আমার বা আমার পরিবারের কারও অসুস্থতার সময় একজন ডাক্তারবাবুর সঙ্গে আমাদের পরিচিতি ঘটে, রোগী সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে আমাদের পরিবারের একটা সম্পর্ক বজায় থাকে । রোগী সুস্থ হওয়ার পর এই সাময়িক সম্পর্কের ক্রমশ অবলুপ্তি ঘটতে থাকে । এই সম্পর্ক স্থায়ী না হওয়ার অন্যতম প্রধান কারন সম্ভবত চিকিৎসাই একজন ডাক্তারের পেশা বলে । অথচ গুরুতর অসুস্থ কোন ব্যক্তিকে যখন কোন অপরিচিত মানুষ নিঃস্বার্থে সুস্থ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন তার সঙ্গে ওই ব্যক্তির বা তার পরিবারের যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা কিন্তু আলাদা মাত্রা পায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা স্থায়ী হয়ে ওঠে । রাস্তা-ঘাটে, ট্রেনে-বাসে প্রতিদিন আমাদের কত নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় ঘটে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই পরিচয় শুধুমাত্র পরিচয়ের গণ্ডিতেই আবদ্ধ থাকে – সম্পর্কের সীমানা স্পর্শ করে না । আবার এই প্রাত্যহিক পরিচয়ের মধ্যে থেকেই কেউ কেউ কিছু কিছু বিশেষ কারনে পরিচয়ের গণ্ডী পেড়িয়ে সম্পর্কের জালে বন্দী হয়ে পড়ে । একটা ছোট্ট উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে । আপনি সপরিবারে রাজধানী এক্সপ্রেসে চলেছেন দিল্লীর উদ্দেশ্যে । আপনার সামনের আসনেই পেয়ে গেলেন এক বাঙালী পরিবারকে । দীর্ঘ ট্রেন যাত্রায় আশপাশে ভ্রাম্যমান ভিন্নভাষী অবাঙ্গালীদের ভিড়ে একজন স্বজাতি ও স্বভাষীকে দেখে স্বভাবতই আপনি মনে মনে উল্লসিত । তারপর চলতে লাগল আলাপচারিতা, গল্প-গুজব । হঠাৎ আপনার খেয়াল হ’ল আপনার মানিব্যাগ নেই । শেষ পর্যন্ত সেই বাঙালী ভদ্রলোক আপনাকে নির্দ্বিধায় টাকা দিয়ে সাহায্য করলেন এবং সে যাত্রায় আপনি একটি কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পেলেন সেই ভদ্রলোকের কল্যাণে । পরে যথা সময়ে আপনি সেই ভদ্রলোকের টাকা ফেরত দিলেন । তার পর থেকে আপনার কৃতজ্ঞতা আর সেই ভদ্রলোকের সাহায্য আপনাদের মধ্যে গড়ে তুলল সম্পর্কের সেতুবন্ধন । এ রকম অনেক ছোট ছোট ঘটনা থেকে পরিচিত কিংবা সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষের সঙ্গেই গড়ে উঠতে পারে সম্পর্ক । আবার আপনার অফিসের বসের সঙ্গে আপনার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠার পেছনে এক বা একাধিক কারন থাকতে পারে । হয়ত আপনার কর্মদক্ষতায় তিনি মুগ্ধ, কিংবা কিছু অনৈতিক কাজকর্মে আপনি তার সহযোগী । অথবা বস সঙ্গীতানুরাগী হওয়ায় আপনার সঙ্গীতানুরাগ তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে পরস্পরের মধ্যে একটা সুসম্পর্কের বাতাবরণ তৈরি করেছে । কিন্তু দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গড়ে ওঠা এই সমস্ত সম্পর্কগুলো স্বার্থহীন নয় – কোন না কোনভাবে এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে স্বার্থপরতা, অনেক ক্ষেত্রে তা প্রত্যক্ষ আবার অনেকক্ষেত্রে আপাত নিঃস্বার্থ । ট্রেনের সেই সহযাত্রী ভদ্রলোকের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের মূলে কিন্তু আপনার বিপদে তার সাহায্য, অর্থাৎ কৃতজ্ঞতা এই পারস্পরিক সম্পর্কের সেতুবন্ধন । আবার আপনার অফিসের বসের সঙ্গে আপনার যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা আপনার পেশাগত স্বার্থ । এই ধরনের সম্পর্কগুলোর বাঁধন অত্যন্ত পলকা – যে কোন সময় এই ধরনের সম্পর্কগুলো ছিন্ন হতে পারে । আত্মীয়তার সঙ্গে সম্পর্কের পার্থক্য এখানেই । আত্মীয়তা মানে পারস্পরিক আত্মিক সম্পর্ক – সেখানে স্বার্থের উপস্থিতি অনেকক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ করলেও এই সম্পর্কের শিকড় থাকে অনেকটা গভীরে । ফলত এই আত্মীয়তার বন্ধন অনেকগুন বেশি দৃঢ় । তাই এই ধরনের সম্পর্কে ইতি টানা সহজ নয় । অনেকসময় এই আত্মিক সম্পর্কের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার দেওয়াল গড়ে ওঠে কিন্তু অন্তরের অন্তঃস্থলে এই আত্মীয়তার একটা স্থায়ী আসন পাতা থাকে । ভাই-এ ভাই-এ বিবাদ থাকে, শত্রুতা থাকে কিন্তু তা সত্ত্বেও আত্মীয়তার একটা অনুভুতি লুকিয়ে থাকে মনের গভীরে । সুতরাং সম্পর্ক ও আত্মীয়তা দুটি ভিন্ন জিনিস । আত্মীয়তা মানেই একটা সম্পর্ক, কিন্তু সম্পর্ক থাকলেই যে সেখানে আত্মীয়তা থাকবে তার কোন অর্থ নেই । বাবা, মা, ভাই, বোন, দাদু, ঠাকুমা, কাকা-কাকিমা এরা আত্মীয় কারন এদের সঙ্গে অনিবার্যভাবে গড়ে ওঠা সম্পর্কে কোন স্বার্থের প্রয়োজন থাকে না । কিন্তু বাইরের কারও সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কেউ আত্মীয় হতে পারবেন না এমন কোন কথা নেই । পরিচিত বা অপরিচিত কারো সঙ্গে গড়ে ওঠা সম্পর্কে যদি নিঃস্বার্থতা থাকে তবে তিনিও আত্মিক সম্পর্কের সুবাদে আত্মীয় হয়ে উঠতে পারেন, দুঃখের বিষয় আমাদের সমাজে আইনগতভাবে এদেরকে আত্মীয়ের পর্যায়ে ফেলা হয় না । স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার সম্পর্ককে আত্মীয়তা বলা যায় কিনা তা বোধহয় সম্পর্কের চরিত্র বিচার না করে বলা কঠিন ।                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                    

বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৪

কিছু সাধারণ ভুল



অনেকেই ‘সম্মান’ শব্দটিকে ‘সন্মান’ উচ্চারন করতে অভ্যস্ত । টি ভি খুললেই বহু স্বনামধন্য ব্যক্তির মুখে ‘সন্মান’ উচ্চারন করতে শুনবেন । উৎসাহ নিয়ে কারও বক্তব্য শুনতে গিয়ে যখনই বক্তার মুখ থেকে ‘সন্মান’ উচ্চারন শুনি, বক্তার বক্তব্য যত সুন্দরই হোক তৎক্ষণাৎ বক্তার প্রতি অশ্রদ্ধা জন্মে যায় আমার । এই অভ্যেসটা (বন্ধুবান্ধবরা অনেকে ব’লে থাকে ‘বদভ্যেস’) আমার দীর্ঘদিনের । বক্তার ‘সন্মান’ উচ্চারনে তাঁর প্রতি আমার অসম্মান জন্মে যাওয়ার অভ্যেসটা শত চেষ্টাতেও ত্যাগ করতে পারিনি । হাতে গোনা  বিশিষ্ট কয়েকজনকে দেখেছি প্রথম প্রথম ‘সন্মান’ বললেও পরবর্তীকালে শুধরে নিয়ে ‘সম্মান’ বলছেন । কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বক্তারা শব্দটির বানান তথা উচ্চারন নিয়ে মাথা ঘামান না । তার চেয়েও বেশি আশ্চর্যের, কেউ বক্তাদের (বিশেষ ক’রে বিশিষ্টজন, রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে) এই ভ্রম সংশোধনের চেষ্টাও করেন না । কোন লেখা পড়তে গিয়ে যখনই ‘ব্যথা’ শব্দটি ‘ব্যাথা’ হয়ে যায় কিংবা ‘ব্যক্তি’ পরিনত হয় ‘ব্যাক্তি’তে তখনই লেখাটা আর পড়তে ইচ্ছে করে না । এমনকি ছাপার ভুল হলেও না । খবরের কাগজে, পত্রিকায় (বিখ্যাত থেকে অথ্যাত সর্বত্র)যখন কোন বিজ্ঞাপনে বড় বড় হরফে ‘ব্যাথা’ শব্দটি ছাপা হয় তখন বিজ্ঞাপনদাতার ওপর নয়, রাগ হয় ওই খবরের কাগজ বা পত্রিকার সম্পাদকের ওপর । তাঁরই তো উচিৎ এই ভুল সংশোধন করা । ‘এখানে প্রস্রাব করিবেন না’ বা ‘এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ’ এই বক্ত্যব্যটি লিখতে গিয়ে অন্তত শতকরা পঁচানব্বই ভাগ দেওয়ালে ‘প্রস্রাব’ শব্দটিকে লেখা হয় ‘প্রস্বাব’ বা এই জাতীয় কোন ভুল শব্দ । এগুলো আসলে সুন্দর প্রাচীরের গায়ে ঘুঁটে দেওয়ার মত । বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষা করার জন্য এ বিষয়ে আমাদের সকলেরই এগিয়ে আসা উচিৎ বলে আমার মনে হয় ।  
                                                    অ.না.ক. ০৫/১২/২০১৪    

বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৪

ভারতে শিশুশ্রম ও কৈলাস সত্যার্থীর নোবেল প্রাপ্তি



লক্ষ্মীকান্তপুর লাইনে যে ছোট্ট ছেলেটা প্রতিদিন তার নিজের ওজনের চেয়েও বেশি ওজনের ফটাস জলের ব্যাগ কাঁধে করে রেল পুলিশের সামনেই প্রতিদিন ট্রেনের কামরায় ফটাস জল  বিক্রি করে বেড়ায়, সে কি জানে তাদের মত শিশু শ্রমিকদের যন্ত্রণা লাঘবের চেষ্টা করার জন্যেই কৈলাস সত্যার্থী নোবেল পেয়েছেন ! না জানাটাই স্বাভাবিক । কিন্তু অস্বাভাবিক হ’ল, এত বড় একটা গর্বের খবর ভারতবর্ষের খুব কম সংখ্যক মানুষের কানে পৌঁছেছে । ফলে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধাচরণের জন্য যে ফলপ্রসূ আলোড়ন সৃষ্টি হওয়া উচিৎ ছিল, তা হয়নি । অথচ একজন ভারতীয় হিসাবে নোবেল পাওয়ার পরে ভারতীয় আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় অমর্ত্য সেনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল ।



এই প্রবল অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার যুগে শিশুশ্রমিক ব্যবহারকারী দেশগুলি থেকে পণ্য আমদানী নিয়ন্ত্রণ কতটা কার্যকরী হওয়া সম্ভব তাতে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে । মালিক যেমন কম মজুরীতে পণ্য উৎপাদন করতে গিয়ে শিশুশ্রমিক নিয়োগের আইন বা মানবিকতাকে বুড়ো আঙুল দেখাতে পিছপা হন না, তেমনি কোন দেশও পণ্য আমদানীতে যে শিশুশ্রমের ব্যাপারকে মাথায় রাখবে না তা বলাই বাহুল্য । আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার নির্ধারিত মান কোন আইন নয় – নীতি মাত্র । আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বিচার করলে দেখা যায়, উন্নত দেশগুলো লাগামছাড়া মুনাফা অর্জনের লোভে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে  পণ্য আমদানীতে ব্যস্ত – তার মধ্যে কতখানি শিশুশ্রম জড়িয়ে আছে তার হিসাব রাখার প্রয়োজনীয়তা তাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক । প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক নীতি (এমনকি আইনও) লঙ্ঘনের কারনেই মাঝে মাঝে জ্বলে ওঠে যুদ্ধের লেলিহান শিখা । 



শিশুশ্রম রোধে আইন হয়েছে কিন্ত জনমনে সচেতনতা সৃষ্টির যথেষ্ট বাতাবরন তৈরি হয়নি । কৈলাস সত্যার্থী নোবেল পাওয়ার পরে দেশজুড়ে শিশুশ্রম বন্ধ করার একটা ব্যাপক প্রয়াস শুরু হবে – এমনটাই আশা ছিল । কিন্তু বাস্তবে এই নোবেল প্রাপ্তির কোন ফলাফল আজও পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হ’ল না । না হলে চায়ের কাপ ভেঙে ফেলার অপরাধে আট বছরের শিশু শ্রমিকের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার আগে হোটেলের মালিকটি অন্তত একবার ভাবতেন ।

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?