লক্ষ্মীকান্তপুর লাইনে যে ছোট্ট ছেলেটা প্রতিদিন তার নিজের ওজনের চেয়েও বেশি
ওজনের ফটাস জলের ব্যাগ কাঁধে করে রেল পুলিশের সামনেই প্রতিদিন ট্রেনের কামরায় ফটাস
জল বিক্রি করে বেড়ায়, সে কি জানে তাদের মত
শিশু শ্রমিকদের যন্ত্রণা লাঘবের চেষ্টা করার জন্যেই কৈলাস সত্যার্থী নোবেল পেয়েছেন
! না জানাটাই স্বাভাবিক । কিন্তু অস্বাভাবিক হ’ল, এত বড় একটা গর্বের খবর ভারতবর্ষের
খুব কম সংখ্যক মানুষের কানে পৌঁছেছে । ফলে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধাচরণের জন্য যে
ফলপ্রসূ আলোড়ন সৃষ্টি হওয়া উচিৎ ছিল, তা হয়নি । অথচ একজন ভারতীয় হিসাবে নোবেল
পাওয়ার পরে ভারতীয় আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় অমর্ত্য সেনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল ।
এই প্রবল অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার যুগে শিশুশ্রমিক ব্যবহারকারী দেশগুলি থেকে
পণ্য আমদানী নিয়ন্ত্রণ কতটা কার্যকরী হওয়া সম্ভব তাতে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে ।
মালিক যেমন কম মজুরীতে পণ্য উৎপাদন করতে গিয়ে শিশুশ্রমিক নিয়োগের আইন বা
মানবিকতাকে বুড়ো আঙুল দেখাতে পিছপা হন না, তেমনি কোন দেশও পণ্য আমদানীতে যে
শিশুশ্রমের ব্যাপারকে মাথায় রাখবে না তা বলাই বাহুল্য । আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার
নির্ধারিত মান কোন আইন নয় – নীতি মাত্র । আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বিচার করলে দেখা
যায়, উন্নত দেশগুলো লাগামছাড়া মুনাফা অর্জনের লোভে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকেপণ্য আমদানীতে ব্যস্ত – তার মধ্যে কতখানি
শিশুশ্রম জড়িয়ে আছে তার হিসাব রাখার প্রয়োজনীয়তা তাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক ।
প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক নীতি (এমনকি আইনও) লঙ্ঘনের কারনেই মাঝে মাঝে জ্বলে ওঠে
যুদ্ধের লেলিহান শিখা ।
শিশুশ্রম রোধে আইন হয়েছে কিন্ত জনমনে সচেতনতা সৃষ্টির যথেষ্ট বাতাবরন তৈরি
হয়নি । কৈলাস সত্যার্থী নোবেল পাওয়ার পরে দেশজুড়ে শিশুশ্রম বন্ধ করার একটা ব্যাপক
প্রয়াস শুরু হবে – এমনটাই আশা ছিল । কিন্তু বাস্তবে এই নোবেল প্রাপ্তির কোন ফলাফল
আজও পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হ’ল না । না হলে চায়ের কাপ ভেঙে ফেলার অপরাধে আট বছরের
শিশু শ্রমিকের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার আগে হোটেলের মালিকটি অন্তত একবার ভাবতেন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন