শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২১

দশমীতে মন খারাপ - ১৫/১০/২০২১

দশমীতে মন খারাপ ১৫/১০/২০২১ – কথা যখন দিয়েছিলাম ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতি বছরের মত এবারেও মন খারাপের বৃত্তান্ত লিখব, তখন লিখতেই হবে। তাছাড়া সব ভালো যার শেষ ভালো। যদিও শেষটা ভালো হ’ল না, কারন দিনের শেষে আকাশ চোখ রাঙাতে শুরু ক’রে এখনোও চালিয়ে যাচ্ছে তার খামখেয়ালিপনা। আজ তো স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ সবার। আমার মন খারাপ ভিন্ন কারনে। উৎসব শেষ হয়্রে গেল ব'লে একটুও নয়। আমার খারাপ লাগছে বিজয়া দশমীতে পারস্পরিক মিলনের করুন অবস্থা দেখে। কোভিডের আতঙ্কে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে তো এতদিন অনেক কিছুই চলল। কিন্তু কোলাকুলি, প্রণাম, আশির্বাদ এগুলো কি ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সম্ভব। স্পর্শ না থাকলে অনুভূতি অনুপস্থিত। মানুষ তো আর রোবট নয়, রীতিমত রক্ত-মাংসে গড়া। অতএব, স্পর্শ ছাড়া অনুভূতি আসা অসম্ভব। হ্যাঁ, মন দিয়েও অনুভূতির আস্বাদ মেলে। সে তো ব্যতিক্রমী উচ্চ দর্শন। প্লেটোনিক প্রেম, ইউটোপিয়া এসব সাধারণ ব্যাপার-স্যাপার নয়। কোলে কোলে মিলনের নাম কোলাকুলি। অতএব সোস্যাল মিডিয়ায়, অন লাইনে কোলাকুলি আদৌ সম্ভব নয়। বিদেশ থেকে বাবা ছেলেকে যতই আশির্বাদ করুন ভিডিও কলে, আশির্বাদের হাত তো আর ছেলের মাথায় পড়ে না! কিংবা বাবার পায়ে ছেলের হাতের স্পর্শ পেলে বাবার যে অনুভূতি হয় তা কি ভার্চুয়াল মাধ্যমে সম্ভব? মোটকথা এগুলো মূলত যান্ত্রিকতা, মানবিকতা বা সামাজিকতা কোনটাই নয়। গত বছরের মত এবছরেও দশমীতে বাঙালীর এই বঞ্চনা প্রবহমান। জানিনা, এই বঞ্চনাই একদিন হয়ত স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হবে কি না। কল্পবিজ্ঞানের বিখ্যাত লেখক উইলিয়াম গিবসনের স্বকপোলকল্পিত 'ভার্চুয়াল জগত' আজ কল্পবিজ্ঞানের গণ্ডী ছাড়িয়ে সটান হাজির আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। মানুষে মানুষে যে যোগাযোগ ও লেনদেন তা বাস্তব জীবনের বিপরীতে বিশ্বজনীন করার স্বপ্ন সত্যি সত্যিই আজ সফল হতে চলেছে এবং কোভিড-১৯ নামক অপ্রত্যাশিত অতিমারীর প্রভাব নিঃসন্দেহে একে ত্বরান্বিত করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের মত অনুন্নত দেশে ভার্চুয়াল পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা কতটা? যে দেশে অধিকাংশ মানুষ কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন ব্যবহার তো দূরের কথা,বেঁচে থাকার রসদ সংগ্রহের জন্যে হিমশিম খায় সেখানে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পড়াশুনা চালানো বা নানাবিধ কাজ সম্পন্ন করা সত্যি দুরুহ। আর শিক্ষার হার কম হবার কারনে অত্যাধুনিক এই ভার্চুয়াল ব্যবস্থার ইতিবাচক দিক নিয়েও অনেকে সন্দিহান। ফলে উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মত আমাদের দেশে ভার্চুয়াল যোগাযোগ দ্রুত সর্বজনীন হওয়া সম্ভব নয়। তবুও শত অসুবিধা সত্ত্বেও নিরুপায় হয়ে মানুষকে এই ভার্চুয়াল পথেই হাঁটতে হচ্ছে। গত বছর বেশির ভাগ মানুষই বাড়িতে ব’সে টিভিতে বা সামাজিক মাধ্যমে পুজোর আনন্দ উপভোগ করেছে। এবারে করোনার প্রকোপ কম থাকায় দুর্গাপুজো্র আনন্দ ফিরেছিল অনেকটাই স্বাভাবিক ছন্দে। কিন্তু এই ছন্দে ফিরতে গিয়ে যে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে তাতে আগামী বছরের পরিণাম নিয়ে চিকিৎসক মহন যথেষ্ট সন্দিগ্ধ। তবে আশা করব, মানুষ মানুষের পাশে থাকুক সশরীরে, ভার্চুয়াল পথে আর যাই হোক মেলামেশার অনুভূতিটা ঠিক পাওয়া যায় না। মুখচ্ছদে ঢাকা মুখ মুখোশ মনে হয়। মনটা ভালো হতে শুরু করেছিল এমনিতেই। তারপর এতগুলো মনের কথা শব্দের আকারে সাজিয়ে তুলে মনটা আরোও খানিকটা হাল্কা লাগছে। শেষ পাতে দই-এর মত লেখার শেষে আমার লেখা একটা ছড়া পরিবেশন না ক’রে পারছি না। মন খারাপের সুরঃ অমরনাথ কর্মকার রঙ বেরঙে এই ক’টা দিন কাটলো ভালো আজকে হঠাৎ পালটে গিয়ে সাদা-কালো। এই ক’টা দিন বাজছিল ঢাক ঢ্যাং কুরাকুর আজকে কেন বাজছে তবে মন খারাপের সুর ? ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষন ? ঠাকুর যাবে বিসর্জন।‘ সবাইকে শুভ বিজয়ার আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে এবং সারাবছর সকলের সুস্থতা ও শান্তি কামনা ক’রে এবছরের মত ‘পুজোয় মনখারাপ’ শেষ করলাম। শুভরাত্রি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?