সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১
ষষ্ঠীতে মনখারাপ ১১/১০/২০২১
পুজো এলেই প্রতিবছর মন খারাপ হ’তে শুরু করে। এই প্রবণতা আমার সেই ছোটবেলা থেকেই। বলা যায় আমার অবচেতনেই এই অদ্ভুত মানসিকতা গড়ে উঠেছে আমার। ইতিপূর্বে আমি বুহুবার বলেছি এর পেছনে আগাম কোন কারন থাকে না, বরং এই মন খারাপের মধ্যেই মন খারাপ করা বিষয়গুলো মনের দরজায় আঘাত হেনে মনকে আরও খারাপ ক’রে দেয়। ষষ্ঠী থেকে দশমী – প্রতি বছর নিয়ম ক’রে আমি ‘পুজোয় মনখারাপ’-এর বৃত্তান্ত লিখে থাকি – এবারও যাতে তার ব্যত্যয় না হয় তাই লিখছি অতিক্রান্ত ষষ্ঠীর মাঝরাত্রে।
ষষ্ঠীতে মনখারাপ ১১/১০/২০২১ – শুনেছি মনখারাপ হ’লে কবি বা লেখকের কলম ভাল চলে। রবীন্দ্রনাথ কলেরায় অকাল প্রয়াত পুত্র শমীন্দ্রনাথকে দাহ ক’রে বাড়ি ফিরে গান রচনা করেছিলেন। এত বড় শোকের মধ্যেও রবীন্দ্রনাথ পেরেছিলেন কলম ধরতে, কারন তিনি রবীন্দ্রনাথ, অথচ আজ আমার সামান্য মনখারাপেই লেখার ইচ্ছে প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলাম। অনেক কষ্টে শেষমেশ মাঝ রাতে কলম ধরলাম। কিন্তু এলোমেলো ভাবনাগুলো সাজিয়ে তোলা বড্ড দুরূহ মনে হচ্ছে। করোনায় বিগত বছরে বহু মানুষের অস্তিত্ব এখন ঘরের দেওয়ালে ফ্রেমবন্দি। কত মানুষ কর্মহীন, কত স্বচ্ছল জীবন বেঁচে থাকার তাগিদে সাহায্যপ্রার্থী। তারই মধ্যে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের প্রলয় নাচন। তবুও উৎসবের স্বাভাবিকতা ক্রমশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারী বিধিনিষেধে শিথীলতা, জানিনা করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের রক্তচক্ষু থেকে আমাদের বাঁচাতে পারবে কি না। টিভিতে দেখছি বুর্জ খলিফা দেখতে শহরে কাতারে কাতারে মানুষ, সামাজিক দূরত্ব সেখানে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের কাছে গো হারা। আর জানলা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি আমাদের পাড়ারই একদা উচ্চপদে চাকরি করা বেসরকারী সংস্থার কর্মী করোনায় কাজ হারিয়ে ফুচকার গাড়ি নিয়ে চলেছেন ষষ্ঠীর দিনে ফুচকা বিক্রি করতে। দুই ছবির কনট্রাস্ট মনের আকাশ মেঘলা ক’রে দিল। মেঘের কথা যখন উঠল তখন এবারের বৃষ্টিতে আমাদের করুণ বানভাসি পরিস্থিতির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে - ঘরের জল বেরোলেও রাস্তায় গোড়ালি-গভীর জল। কি লিখব মাথায় আসছিল না তাই স্ত্রীর পরামর্শে মাথা হালকা করা এবং পকেট ফাঁকা করার উদ্দেশ্যে বাজারের দিকে পা বাড়ালাম প্যান্ট গুটিয়ে। ‘বছরে তিরিশ বার চিত্রাঙ্গদা আর শ্যামা শাপমোচনের অশ্রুমোচন …’ সত্যিই ভালো লাগে না। কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে শারদ সন্ধ্যায় আলোকিত উৎসবের পরিবেশে মাইকে যে গানগুলো ভেসে আসছিল, মনে হ’ল এই পরিবেশে এমন গানের বিকল্প নেই। বিষন্নতার মধ্যেও কন্ঠ মেলাচ্ছিলাম অজান্তেই। কাতারে কাতারে মানুষ চলেছে – অধিকাংশেরই মুখচ্ছদ নেই – মুকচ্ছদের আড়ালে বিউটি পার্লার থেকে অর্থ ব্যয়ে মেক-আপ করা মুখের সৌন্দর্য পাছে হারিয়ে যায় সম্ভবত সেই কারনেই অনেকে মুখচ্ছদ পরেননি। এসব দেখে এক ভয়ংকর আগামীর কল্পনা মাথায় আসছিল। এসব ভেবে শুধু শুধু মন খারাপ করার কোন মানে হয় না। লাগাতার বৃষ্টির কারনে কি না জানিনা, এবারে রাস্তায় খেলনা, বেলুন ইত্যাদি বিক্রি করার লোকজন খুব একটা চোখে পড়ল না। গতবারের সেই ছেলেটাকে খোঁজার চেষ্টা করলাম – পেলাম না। জানিনা ওর মা সুস্থ হয়েছেন কি না কিংবা উল্টোটা ! জানা হ’ল না। আসলে আনন্দের উচ্ছ্বাসে কষ্টগুলো যখন কর্ণগোচর হয় না, তখন উপেক্ষিত হয় আনন্দ, কষ্টগুলোও থাকে অধরা। আমার ক্ষেত্রেও মন খারাপের কারন বোধহয় তাই, আবার অন্য কিছুও হতে পারে। মুশকিল হ’ল মন খারাপের কারন কিছুতেই নির্দিষ্ট করতে পারি না।
আজ মনখারাপ নিয়েই শুতে গেলাম। শুভ রাত্রি। আগামী কাল সপ্তম সুরে কিছু লিখব আশা করি।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
মুখ চাপা সত্য
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?
-
এক লাইনের কাব্যঃ অ.না.ক. ২১/০৩/২০১৭ এক লাইনেও কাব্য হয় দু'লাইনে ছন্দময় ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন