বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২১
নবমীতে মন খারাপ ১৪/১০/২০২১
নবমীতে মন খারাপ ১৪/১০/২০২১
পূজোর আনন্দ অবসানের প্রাকমুহূর্তে, নবমী নিশি অতিক্রান্ত না হওয়ার আকুতি জানিয়ে সকলেরই বাসনা উৎসবের আনন্দ আরও একটু স্থায়ী হোক । আজ তাই সবার মন খারাপ । আর আমার তো এমনিতেই মন খারাপ হয়ে আছে । মন খারাপ দিয়ে শুরু করেছিলাম ষষ্ঠী থেকে – সেই মনখারাপ প্রবহমান নবমীর রাত পর্যন্তও । বৃষ্টির পূর্বাভাসে পুজোর আনন্দ মাটি হবার আভাস ছিল কিন্তু সে আগুনে বৃষ্টির জল না পড়ায় জনজোয়ার জারি ছিল। আজ বোধ হয় সকলেরই মন খারাপ । সন্ধ্যে বেলা রাস্তায় বেরিয়ে দেখলাম জনারণ্যে যাত্রাপথের গতি শ্লথ হয়ে পড়ছে। সকলেই যেন আনন্দের শেষ দিনে উৎসবের উপভোগ্যতাকে চেটেপুটে খেতে মরিয়া। সেই জণারন্যে আমি অবশ্য একা। সত্যিই তো ‘যেওনা নবমী নিশি’ বলে যতই কাতর আবেদন থাক, আসলে সৌর নিয়মে সে নবমীর রাত ঠিকই অতিক্রান্ত হবে। রাত্রে শুতে আসার আগে মা বলে দিল ‘আজকের রাতটা বড় – তাই গেটে তালা দেওয়া আছে কি না দেখে নিস আর রাত্রে একটু সজাগ থাকিস’। মা তাঁর বিশ্বাস থেকে একথা বলেছে জানি। কিন্তু এর অন্তর্নিহিত সত্যটাকে তো অস্বীকার করার উপায় নেই। সকলেই আনন্দের স্থায়ীত্ব চায়। দৈনন্দিন জীবনেও মানুষ একই প্রত্যাশা করে। সেক্ষেত্রে কোন উপলক্ষ থাকে না, কিন্তু দুর্গাপুজোর আনন্দের উপলক্ষ্যকে সম্বল ক’রে সবাই আনন্দের স্থায়ীত্ব কামনা করে। তাদের মন খারাপের নির্দিষ্ট কারন আছে – উৎসবের আনন্দের অবসান আর দেবী দুর্গার ‘অদ্য শেষ রজনী’র বিহ্বলতা । ওসবে আমার মন নেই । আমার মন খারাপের কারন হয়ত আছে কিন্তু শত অনুসন্ধানেও তার হদিশ পাচ্ছি না । নবমীর বাতাসে বিষাদ – সবার মন খারাপ । কোভিডের অতিমারীতে কত শত প্রাণ ঝরে পড়েছে, সেই টাটকা স্মৃতি অনেকটাই ম্লান হয়েছে প্রায় স্বাভাবিক ছন্দে পুজো ফিরে আসায়। বাঙালী আত্মঘাতি কি না জানা নেই, তবে এবারের পুজোর কোভিড বিধি ভাঙা জনস্রোত, ‘বুর্জ খলিফা’ দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষের সমাগম এসব দেখে আমার মনে হয়েছে বাঙালী বুঝি সত্যিই আত্মঘাতি। চিকিৎসকরা পর্যন্ত এই দৃশ্যের ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে রীতিমত আতঙ্কিত। সত্যিই আমরা আনন্দের স্থায়ীত্ব চাই, কিন্তু যে আনন্দ অস্তিত্বের সঙ্কট ডেকে আনতে পারে, সে আনন্দের প্রয়োজন কোথায় ? আনন্দ করার ভিন্ন পন্থা ইতিমধ্যেই কোভিডের সৌজন্যে (?) আমরা শিখতে শুরু করেছি। ‘ভার্চুয়াল’ শব্দটা বোধ হয় বেশিরভাগ মানুষেরই বোধগম্য। এমনিতেই আমার মন খারাপ। তারপর এই সব গুঢ় ভাবনা ভেবে ভেবে আরও মানসিক বিপর্যয় ডেকে আনছি অকারনে। এইসব বিষয় ভাবার জন্য সরকার আছে। পুজো শেষ পর্যায়ে। এইবার আমার মন খারাপের পালা সাঙ্গ হতে চলেছে। কাল দশমী। উৎসবের অন্তিম দিন। কালকেও লিখব আশা করি। এই অকারন অথচ অবধারিত মন খারাপের চক্রব্যুহ থেকে মুক্তি পাবার অপেক্ষায় আছি। না তার মানে এই নয় যে আর মন খারাপ হবে না। সত্যি বলতে কি আমি একটু বেশিই আবেগপ্রবণ। তাই সামান্য কারনেই মন খারাপ হয় আমার। সে মন খারাপের কারন থাকে – যা সকলেরই স্বাভাবিক প্রবণতা। আজ নবমীর দিনে সকলের মন খারাপের আবেশ আমার মন খারাপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই মুহুর্তে মনকে বেশি ভারাক্রান্ত করে তুলেছে। আজ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে নবমী শেষ করছি -
“মন ভালো নেই মন ভালো নেই মন ভালো নেই
কেউ তা বোঝে না সকলি গোপন মুখে ছায়া নেই
চোখ খোলা তবু চোখ বুজে আছি কেউ তা দেখেনি
প্রতিদিন কাটে দিন কেটে যায় আশায় আশায়
আশায় আশায় আশায় আশায় ......
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
মুখ চাপা সত্য
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?
-
এক লাইনের কাব্যঃ অ.না.ক. ২১/০৩/২০১৭ এক লাইনেও কাব্য হয় দু'লাইনে ছন্দময় ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন