বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২১
অষ্টমীতে মন খারাপ
অষ্টমীতে মনখারাপ ১৩/১০/২০২১ – কথায় বলে বাঙালীর পায়ের তলায় সর্ষে। সুযোগ পেলেই তারা ভ্রমণে বেরোন। বিশেষ ক’রে পুজোর ছুটিতে অনেক বাঙালীই ভ্রমণ বিলাসে মত্ত থাকেন। আমি অবশ্য পুজোর ছুটিতে নিজের জায়গা ছাড়তে নারাজ তা সে যতই বিষন্নতায় ভুগি । ‘মেঘ বলেছে যাব যাব রাত বলেছে যাই ..’ জানিনা সত্যি সত্যিই মেঘ বা রাত কানে কানে রবীন্দ্রনাথকে বিদায় বার্তা দিয়েছিল কি না। তবে হলফ ক’রে বলতে পারি মেঘ বিদায় নেবার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। যখন এই লেখা লিখছি তখন বাইরে চলছে বিদ্যুতের ঝলকানি সহ বজ্রগর্ভ মেঘের হুঙ্কার। আজ অষ্টমীর সারা দিন রৌদ্র করোজ্জ্বল ছিল, কিন্তু বিকেলের পর থেকে মেঘ আবার হাজির, সঙ্গে আবার বজ্র নিনাদ। আর রাত ! এ যুগে রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে নির্ঘাত বুঝে যেতেন এদেশ থেকে রাতের অন্ধকার দূর হওয়া অসম্ভব। কুনীতি, দুর্নীতির অন্ধকার সমাজে যেভাবে জগদ্দল পাথরের মত জেঁকে বসেছে তা যাবার নয়। এবছর অষ্টমীর রাতেই নবমীর আত্মপ্রকাশ ঘটে গেছে। কিছুক্ষণ আগেই সন্ধিপুজো হয়ে গেল। অর্থাৎ বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসবের বিদায় ঘন্টা বেজে গেল প্রায়, নেমে এল উৎসবমুখর বাঙালীর মনে একরাশ বিষন্নতা আর হৃদয়ের অন্তস্থলে অশ্রুত আকুতি ‘যেওনা নবমী নিশি’। আমার ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাপারটা বিপরীত। উৎসবের দিন যত শেষের দিকে যাচ্ছে আমার মন খারাপের মাত্রা ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। আজ সকালে বাজারে গিয়েছিলাম। বড় রাস্তায় উঠেই কানে এল ‘শুধু যাওয়া আসা স্রোতে ভাসা’। গানটা এমনিতেই মন খারাপ ক’রে দেয়। গানটির শেষ ‘শুধু যাওয়া’ দিয়ে, সেখানে ‘আসা’ নেই। যাওয়া আসার স্রোতে ভাসতে ভাসতে একদিন আর ফিরে আসা হয় না। মানুষের জীবনের সঙ্গে তুলনা করলে মন ভারাক্রান্ত হতে বাধ্য। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত বিষন্ন মনকে আরও বিষন্নতায় ভরিয়ে দিল। কিছুদিন আগেই আমার মাতৃসমা কাকীমাকে হারিয়েছি। সেই স্মৃতি উঁকি দিতে শুরু করল মনে। এরই মধ্যে এক প্রবাসী বাল্যবন্ধুর ফোন এল। ধরলাম। ওর মুখেও সেই বিষন্নতার কথা – সুদূর প্রবাসে থেকে পাড়ার পুজো, বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা এসব থেকে বঞ্চিত হওয়ার দুঃখ। এই বিষন্নতা অত্যন্ত স্বাভাবিক। ও অবশ্য জানেই না যে স্বভূমে থেকেও দুর্গোৎসবে আমার মন ভালো থাকে না। মাছের বাজারে ঢুকে দেখলাম মাছ-বাজারে মাছওয়ালা এবং খরিদ্দার উভয়ের সংখ্যাই অতি নগন্য। সম্ভবত অষ্টমীতে অনেক বাড়িতেই নিরামিষ হয় সেই কারনে। চোখ গেল একটা থলে বগলে লুঙ্গি পরিহিত আমাদের পাড়ার এক পরিচিত রিক্সাওয়ালার দিকে। ঠাই দাঁড়িয়ে আছে মাছ বাজারের এক প্রান্তে। আমাদের পাড়ায় পায়ে টানা রিক্সা আছে হাতে গোনা কয়েকটা। সবাই টোটো কিনে নিয়েছে। যে রিক্সাওয়ালার কথা বলছি সে এখনোও টোটো কিনে উঠতে পারেনি। ওর রিক্সায় সহজে কেউ উঠতে চায় না শ্লথ গতির জন্য। যাহোক মাছ বাজার থেকে বেরিয়ে আরোও অন্যান্য জিনিস কেনাকাটা ক’রে ফিরতে ফিরতে প্রায় দেড় দু’ঘন্টা লেগে গেল। মাছ-বাজারের পাশ দিয়ে ফেরার সময় দেখলাম সেই রিক্সাওয়ালা মাছ কিনছে। এবারে তাঁর এই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার কারন অনুধাবন করতে অসুবিধা হ’ল না। মন খারাপ হ’ল। দারিদ্রের সাথে সাথে সবার আত্মসম্মান বিসর্জিত হয় না। অভাবের সংসারে সারাবছর ডাল-ভাত খেয়ে উৎসবের দিনে পরিবারের জন্য অন্তত একটু মাছ-ভাতের ব্যবস্থা করতে একজন দরিদ্র রিক্সাওয়ালার এই কষ্ট কারোও চোখে পড়েছে কিন জানা নাই – আমার দৃষ্টি এড়ায়নি। জানিনা সে শেষ পর্যন্ত সস্তায় মাছ কিনতে পেরেছিল কি না। সপ্তমীতেই বলেছিলাম, মন খারাপের অনেক উপকারীতা আছে। মন খারাপ হ’লে ছোট ছোট ঘটনা অনুভূতিতে সহজেই আঘাত হানে। আনন্দে থাকলে হয়ত এসব ‘.. ছোট ছোট দুঃখ কথা’ উপেক্ষিতই থাকত। নবমী শুরু হয়ে গেছে। মন খারাপ ব’লেই হয়ত এতটা লিখে ফেললাম । কে পড়বে জানি না। তবে ভালো খারাপ যাই হোক, মনের ভাবনাগুলো প্রকাশ করাটাই উদ্দেশ্য। শুভ রাত্রি।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
মুখ চাপা সত্য
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?
-
এক লাইনের কাব্যঃ অ.না.ক. ২১/০৩/২০১৭ এক লাইনেও কাব্য হয় দু'লাইনে ছন্দময় ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন