শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৯

পুজোয় মন খারাপঃ আজ ষষ্ঠী ০৪/১০/২০১৯

না লিখে পারলাম না।  অনুভূতিগুলো মনের মধ্যে যেভাবে প্রাণচঞ্চল হয়, লেখনির প্রকাশে তা ম্রিয়মান হবে জেনেও লিখছি, মনের তাৎক্ষণিক উপলব্ধি লিপিবদ্ধ করে রাখার তাগিদে। পূজো আসন্ন জানি, কেউ না বলুক অন্তত ক্যালেন্ডার বলে দিচ্ছে। বলে দিচ্ছে দোকানে দোকানে, শপিং মলে ক্রেতার অস্বাভাবিক ভিড়। পুজোর আগমণবার্তা সবার আগে যাদের নিঃশব্দে ঘোষণা করার কথা সে বেচারিরা এখন কেমন যেন নির্বিকার। গতকাল একটু বেশি রাতে বাড়ি ফিরছিলাম। পঞ্চমীর রাত - মনে হ'ল শিউলি ফুলের সুবাস পাচ্ছি। অথচ আমি নিশ্চিত এ তল্লাটে কোথাও শিউলি ফুলের গাছ নেই - সবুজের প্রাণবন্ত সমারোহ খুন হয়েছে কংক্রিটের আগ্রাসনের কাছে। এখন গাছ নয়, মাথা উঁচু ক'রে দাঁড়িয়ে আছে দাম্ভিক ফ্ল্যাট। ঠিক যে জায়গা থেকে গন্ধটা পেলাম, সেখানে থমকে দাঁড়ালাম খানিক্ষণ - রাস্তার উজ্জ্বল আলোয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে তন্ন তন্ন ক'রে খোঁজার চেষ্টা করলাম শিউলির ঘ্রাণের উৎস। পেলাম না। মন খারাপ হ'ল। বাড়ি ফিরে ঘুমাবার আগে আবার সেই সুগন্ধ পেলাম। বুঝলাম মনের ভুল। ছোট বেলায় পুজোর আগে প্রকৃতির অদ্ভুত পরিবর্তন জানান দিত পুজো এসে গেছে। আমাদের পাড়াতেই  মাঠের প্রান্তে সারি সারি কাশফুল আর মাথার ওপরে পেঁজা তুলোর মত শারদ মেঘ দেখে মনে আনন্দ হ'ত। মাঝে মাঝে ছুটে যেতাম রেশম-কোমল কাশফুলের গায়ে আলতো  স্পর্শ দিয়ে শরতের সবটুকু অনুভূতি নিংড়ে নিতে। আর একটু রাত বাড়লেই জানলা দিয়ে হালকা হিমেল বাতাসের সঙ্গে ভেসে আসত মাতাল করা শিউলির সুবাস। প্রকৃতির সাথে মনের যোগাযোগ নিবিড়। রাত্রি হ'লেই ঘুম পাওয়া, ভোর হ'লে জেগে ওঠা,বৃষ্টি হলে মন উদাস হওয়ার মত দুর্গাপুজোর আগমনীর  আগাম বার্তা তো এতদিন 'ব্রেকিং নিউজ' এর মত প্রকৃতিই শুনিয়ে এসেছে। এখনো শোনায় নিশ্চয়। হয়ত আমাদের মত ইট কাঠ কংক্রিটের জঙ্গলে বন্দি-দশায় যারা প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি তারা প্রকৃতির কাছ থেকে সে সংবাদ পাই না। বৈদ্যুতিক আলোর তীব্রতায় ক্রমশ হারিয়ে ফেলছি দিন-রাতের ব্যবধান বোঝার ক্ষমতা। হ্যাঁ, ইতিমধ্যেই উদ্ধার ক'রে ফেলেছি গতরাতের শিউলির সুবাস পাওয়ার কারন। আসলে, 'রাতের সব তারাই থাকে দিনের আলোর গভীরে'। যে জায়গা থেকে গতকাল শিউলির গন্ধ পেয়েছিলাম, ঠিক সেই জায়গাতে একদা একটা শিউলি গাছ ছিল। আমরা ছোটবেলায় খুব ভোরে  উঠে সেখান থেকে শিউলি কুড়িয়ে মায়ের কাছে দিতাম পুজোর উদ্দেশ্যে। শরৎ এলে ভোরবেলা বন্ধুদের মিলিত হবার এ এক অছিলা ছিল। সেই স্মৃতি অজান্তেই উঁকি দিয়েছিল মনে, তাই শিউলির সুবাস পেয়েছিলাম। এখন সেখানে গগনচুম্বী অট্টালিকা।  হয়ত বাস্তব নয়, অলীক তবুও সাময়িক আনন্দ হয়েছিল  প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ ক'রে। কিন্তু আবার মন খারাপ। পুজো এলে প্রতিবারই মন খারাপ হয়। এবারেও তার ব্যতিক্রম নয়। ষষ্ঠী থেকেই মন খারাপের শুরু। ঠাকুরের বিসর্জন না হওয়া পর্যন্ত চলবে এই মন খারাপ। কাল সপ্তমীতে আমার লিখব আশাকরি। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?