একটা
কবিতার গল্প
অমরনাথ
কর্মকার ২২/১০/২০১৬
বলা নেই
কওয়া নেই হঠাৎ আজ বিকেলে সস্ত্রীক পঙ্কজ আমাদের বাড়িতে হাজির । সকালে অচেনা নম্বর
থেকে আমার কাছে ফোন এসেছিল একটা – বলল দুটো মাল আপনার বাড়িতে আসছে আপনার বাড়ির
সঠিক ঠিকানাটা জানা জরুরী । আমার বাড়ি থেকে মাঝে মাঝেই অনলাইনে জিনিসপত্রের অর্ডার
দেয় আমার ছেলে বা স্ত্রী । ভেবেছিলাম এরকমই কোন ব্যাপার হবে নিশ্চয়ই । তাই অবলীলায়
ঠিকানাটা ব’লে দিয়েছিলাম । বিকেলে কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খোলার আগে জিজ্ঞাসা
করলাম, “কে ?” ওপার থেকে উত্তর এল, “মাল দুটো এসে গেছে – দয়া ক’রে দরজা খুলুন ।“
দরজা খুলে দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে কাউকেই চিনতে পারছি না । আজকাল প্রতারণা চক্র
যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সে কথা ভেবে, সত্যি বলতে কি, বেশ ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম ।
আমার সন্দিহান মুখ দেখে আগন্তুক ভদ্রলোকই নিজেই ভয় ভাঙিয়ে বলল, “আমাকে চিনতে পারলি
না ? ক্লাস ইলেভেনের কবিতার কথা মনে পড়ছে তোর ?” কবিতার কথা বলাতেই স্মৃতির
এ্যালবামটা কে যেন চোখের সামনে মেলে ধরল । মনে পড়ে গেল সব । হো হো ক’রে হেসে
উচ্চস্বরে ব’লে উঠলাম আরে পঙ্কজ না ? এতবছর পর হঠাৎ আমার বাড়িতে ? সাদর অভ্যর্থনায়
ঘরে নিয়ে বসালাম । আজ বিজয়া দশমী । পারস্পরিক সৌহার্দ বিনিময়ের উৎসব । দীর্ঘ পঁচিশ
বছর বাদে এক সতীর্থের সঙ্গে সাক্ষাৎ উৎসবের আনন্দকে কোন মাত্রা দিতে পারে তা বলাই
বাহুল্য । ওর
স্ত্রীকে নীরব দেখে সহাস্যে জিজ্ঞাসা করলাম, “কি ম্যডাম অত চুপচাপ কেন ?” শুধু
শব্দহীন একগাল হাসি দিয়েই জবাব এল । পাশ থেকে পঙ্কজ ব’লে উঠল, “আদতে এরা প্রবাসী
বাঙালী । ওর জন্ম, বড় হওয়া, শিক্ষা সবই আমেরিকার নিউ জারসিতে । বাবা-মা বাংলা
জানার সুবাদে ও বাংলাটা বোঝে বটে, বলতে প্রায় পারে না বললেই চলে ।“ ইতিমধ্যে ঘরে
হাজির হয়ে গেছে আমার স্ত্রী আর ছেলে । আমার স্ত্রী আর পুত্রের সাথে পঙ্কজের পরিচয়
করিয়ে দিয়ে ওদের যাবতীয় আপ্যায়নের ভার স্ত্রীর ওপর সঁপে দিয়ে আমি পঙ্কজকে নিয়ে
চললাম ওপরের ঘরে ।
পঙ্কজ
আর আমি সেই নার্সারি থেকে সহপাঠী । একই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ ক’রে দুজনে আবার
একই স্কুলে সায়েন্স নিয়ে ইলেভেনে ভর্তি হলাম । ইলেভেন-টুয়েলভ আমাদের ছিল কো-এড । আমরা
যেমন মেয়েদের সঙ্গে হই-হুল্লোর, হাসিঠাট্টা করতে অভ্যস্ত ছিলাম, পঙ্কজ ছিল ঠিক তার
বিপরীত । ক্লাসের মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে ও রীতিমত লজ্জা পেত । পঙ্কজের সঙ্গে আমার
আন্তরিকতা ছিল বেশ গাঢ় । ও ক্লাসের মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা পেত বটে, তবে কোন
সহপাঠিনী ওর পছন্দসই হ’লে আমাকে বলত । আমাদের স্কুলের ঠিক আগেই একটা মেয়েদের স্কুল
ছিল । আমাদের ফিজিক্স ল্যাবের জানলা দিয়ে ক্লাস নাইনের ক্লাসরুম দেখা যেত । লক্ষ্য
করতাম যেদিন আমাদের ফিজিক্স ল্যাবে প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস থাকত সেদিন পঙ্কজকে খুব
খুশি খুশি লাগত । একদিন আমার চোখে প’ড়ে গেল একটা মেয়ে আমাদের ল্যাবের দিকে তাকিয়ে হাত
মুখের অঙ্গভঙ্গিমায় কাকে যেন ইশারা করছে । বৃষ্টি ব’লে সেদিন আমাদের হাতেগোনা
মাত্র কয়েকজন হাজির । স্পষ্ট দেখলাম পঙ্কজ জানলায় দাঁড়িয়ে । সেই মুহূর্তে পঙ্কজকে
কিছু বলিনি । ভেবেছিলাম সুযোগ বুঝে ওর ডুবে ডুবে জল খাওয়ার প্রসঙ্গটা তুলব ।
ছোট
বেলা থেকেই আমার লেখালেখির প্রতি আগ্রহ ছিল । মাঝে মাঝে কবিতা লিখতাম । পড়তাম বিজ্ঞান অথচ সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল
। আমার এহেন লেখালেখির কথা অনেকেই জানত । পঙ্কজ প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসত । পঙ্কজ মাধ্যমিক পরীক্ষায় একটু
ভালই নম্বর পেয়েছিল ব’লে ও সায়েন্স নিয়েছিল তাও আবার পিওর সায়েন্স । কিন্তু কিছুদিন
যেতে না যেতেই ওর অবস্থা ঢিলে হতে শুরু করল । আসলে আমরা সবাই জানতাম মাধ্যমিকে ভাল
নম্বর পেলেও বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার বিন্দুমাত্র যোগ্যতা ওর ছিল না । বাবা মায়ের ইচ্ছে
পূরণের তাগিদেই ও এইচ এসে বিজ্ঞান নিয়েছিল । অদ্ভুত ব্যাপার ও আমাদের বাড়িতে আসলে
কোনোদিন ক্লাসের পড়াশুনা নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করত না । ওর আগ্রহ ছিল আমার লেখার
প্রতি । নতুন কিছু লিখলেই ওকে তার একটা কপি দিতে হ’ত । হাবাগোবা গোবেচারা টাইপের
ছেলে পঙ্কজ । আমার লেখার খুব প্রশংসা করত । স্বভাবতই আমার লেখার গুণমুগ্ধ হওয়াতে
পঙ্কজকে আমার লেখার কপিগুলো ওকে পড়তে দিয়ে নিজেকে লেখক ভাবার আনন্দ পেতাম মনে মনে
। কিন্তু একদিন হঠাতই আমার বিশ্বাসভঙ্গ হল পঙ্কজের প্রতি । সেদিন ক্লাসে লক্ষ্য
করলাম আমার কয়েকজন সহপাঠী একটা গল্প নিয়ে আলোচনায় মশগুল । আমি কাছে যেতেই আমাদের
স্কুলের পাশের মেয়েদের স্কুলের একটা ম্যাগাজিন থেকে একটা গল্প বের করে শোনাল এবং
গল্পটার প্রশংসায় ওরা পঞ্চমুখ । লেখিকার নাম লেখা আছে শর্বাণী পুরকায়স্থ, ওই
স্কুলেরই ক্লাস নাইনের ছাত্রী । আমার তখন চক্ষু চরখগাছ । আরে এতো কিছুদিন আগে লেখা
আমারই গল্প । সেই মুহূর্তে কাউকে কিচ্ছু বললাম না । মনে মনে শুধু একটা
প্রতিশোধস্পৃহা কাজ করতে লাগল । পঙ্কজ রইল আমার সন্দেহের তালিকার শীর্ষে । আমার
সন্দেহকে যথার্থ প্রমাণ করার জন্য কৌশল অবলম্বনের চেষ্টা করলাম ।
ঘটনার কয়েকদিন বাদে আমাদের ফিজিক্স ল্যাবে আবার পঙ্কজকে দেখলাম জানলায় দাঁড়িয়ে
পাশের স্কুলের ওই মেয়েটার সঙ্গে ইশারায়
কথা বলছে । আমি যে ওর পেছনে দাঁড়িয়ে ব্যাপারটা লক্ষ্য করছি পঙ্কজ সেটা বুঝতে
পা্রেনি । পেছন ফিরে আমাকে দেখেই একটু অপ্রস্তুত বোধ করল । আমি বললা্ম – মেয়েটার
নাম কি রে ? কোন ক্লাসে পড়ে ? লজ্জা পেলেও
নামটা ব’লে দিল – ওর নাম শর্বাণী পুরকায়স্ত, ক্লাস নাইনে পড়ে । এবারে প্রায় নয়
পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম – একাজ নির্ঘাত পঙ্কজের । সুযোগের অপেক্ষায় রইলাম শুধু ।
পঙ্কজের কাছ থেকেই জানতে পারলাম শর্বাণীর প্রতি ওর ভালোবাসা জন্ম নিচ্ছে ক্রমশ
। পঙ্কজ আমার কাছে এলেই ওর মুখে সর্বক্ষণ শর্বাণীর গল্প, ওর প্রশংসা, ওর লেখার
তারিফ । একদিন বললাম, ‘ও যে ভালো লেখে সে তো স্কুল ম্যাগাজিনে ওর লেখা দেখেই
বুঝেছি।‘ কথাটা বলার পর ওর মুখের গতিক বোঝার চেষ্টা করলাম । ওর মাথা নাড়ার ভঙ্গিমা
দেখেই বুঝতে অসুবিধা হ’ল না যে শর্বাণীকে লেখাটা ওই সাপ্লাই করেছিল আমার কাছ থেকে
। বললাম, শর্বাণীর লেখা তো মাঝে মাঝে আমাকে দিতে পারিস – ভালো লেখা পড়তে আমার খুব
ভালো লাগে – তা ছাড়া অনেক সমৃদ্ধ হওয়া যায় । পঙ্কজ সোৎসাহে রাজিও হয়েছিল । কিন্তু
কোনোদিন শর্বাণীর একটি লেখাও আমাকে দেয়নি – বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়েছে
। তবে আমার লেখা পঙ্কজ নিয়মিত নিয়ে যেত পড়ার জন্য – আমি অবশ্য নির্দ্বিধায় ওকে
দিয়ে দিতাম । এমনকি ঘটনাটা জানার পরেও । শুনলাম পঙ্কজের সঙ্গে শর্বাণীর প্রেম বেশ
জমে উঠেছে ।
সেদিন কি যেন একটা কারনে আমি স্কুলে যাইনি । দুপুর বেলা শুয়ে শুয়ে অংক করছিলাম
। হঠাৎ স্কুলের ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় হাঁপাতে হাঁপাতে পঙ্কজ এসে হাজির । দর দর
করে ঘামছে । ‘সুদেব প্লিজ একটা উপকার কর, নইলে আমার সব মাটি হয়ে যাবে’। ওর উদ্বেগ
দেখে বললাম ‘কি হয়েছে একটু খুলে বল তো’। আসল ঘটনাটা হ’ল আগামী কাল শর্বাণীর
স্বরচিত কবিতার একটা কম্পিটিশন আছে কোলকাতায় । তাই তোর লেখা একটা ভাল কবিতা দিতেই
হবে । ‘আরে ও নিজেই তো ভাল লেখে, নিজের কবিতাই তো দিতে পারে’, আমি পাল্টা প্রশ্ন
করলাম । ‘সে জানিনা’, পঙ্কজের গলায় কেমন যেন হতাশার সুর । আর একটি প্রশ্ন না ক’রে
পারলাম না । ‘কবিতার জন্য তোকেই বা বলল কেন, তুই যে কবিতা লিখিস না সেতো শর্বাণী
জানেই’। কোন প্রত্যুত্তর পেলাম না পঙ্কজের কাছ থেকে । শুধু এমনভাবে কাকুতি-মিনতি
করতে থাকল যেন মনে হ’ল কবিতাটা না পেলে শর্বাণীর সঙ্গে ওর সম্পর্কটা বিচ্ছিন্ন হয়ে
যাবে । আমার মনে সেই প্রতিশোধস্পৃহা ভীষণভাবে জেগে উঠল এবার । ‘দাঁড়া দিচ্ছি’ বলে
পঙ্কজকে আশ্বস্ত ক’রে ঘরে গিয়ে একটা কবিতা কাগজে লিখে এনে পঙ্কজকে দিলাম । কাগজটা
হাতে পেয়ে পঙ্কজ ভীষণ খুশী – যেন হাতে স্বর্গ পেয়েছে । এক মুহূর্ত দেরি না ক’রে
পঙ্কজ উধাও হ’ল ।
তার ঠিক একদিন পরের ঘটনা । অত্যন্ত মর্মান্তিক, অত্যন্ত ট্র্যাজিক । স্কুলের
টিফিন পিরিয়ড চলছে তখন । আমরা কয়েকজন সহপাঠী মিলে স্কুলের মাঠে ব’সে টিফিন খাচ্ছি
। পঙ্কজটা স্কুলের বাইরে বেরিয়ে গেছে কিছু না ব’লে । আমরা গল্প করতে করতে খাচ্ছি ।
হঠাৎ প্রায় ছুটতে ছুটতে পঙ্কজ এসে হাজির । এসেই মাথা নিচু ক’রে ব’সে পড়ল । সমস্বরে
জিজ্ঞাসা করলাম – কি রে কি হয়েছে ? পঙ্কজ প্রায় ডুকরে কেঁদে ব’লে উঠল, ‘শর্বাণী
আমাকে চড় মেরেছে’। বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন?’ পঙ্কজকে শান্ত ক’রে ওর কাছ থেকে
যা জানা গেল তা হ’ল গতকাল শর্বাণী স্বরচিত কবিতা প্রতিযোগিতায় যে কবিতাটা পাঠ
করেছে সেটি আসলে কোন বিখ্যাত আধুনিক কবির কবিতা । এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর
শর্বাণীকে সর্বসমক্ষে অপমানিত হ’তে হয়েছে এবং তারই বদলা হিসাবে পঙ্কজকে শর্বাণীর
হাতে চড় খেতে হয়েছে । আমি বাদে বাকীরা পঙ্কজের চড় খাওয়ার কারন জানতে যখন উৎসুক তখন
আমিই সবিস্তারে প্রকৃত সত্যটা প্রকাশ করলাম এবং এই ঘটনার নেপথ্য নায়ক হিসাবে
নিজেকে দোষী সাব্যস্ত ক’রে পঙ্কজের কাছে করজোড়ে ক্ষমাও চেয়ে নিলাম । আমি সেদিন
ইচ্ছে করেই ঘরে গিয়ে বই ঘেঁটে বিখ্যাত এক কবির অপিরিচিত একটা কবিতা টুকে এনে আমার
লেখা হিসাবে পঙ্কজের হাতে তুলে দিয়েছিলাম । স্বভাবতই বিচারকদের তা নজর এড়ায়নি এবং
তার পরিণাম শর্বাণীকে ভোগ করতে হয়েছে ।
সেদিনই কথা প্রসঙ্গে পঙ্কজ স্বীকার করল যে স্কুল ম্যাগাজিনে যে গল্পটা
শর্বাণীর নামে ছাপা হয়েছিল সেটা আসলে আমারই লেখা এবং শর্বাণী সেটা নিজের নামে
চালিয়েছে । আমি ব্যঙ্গ ক’রে বললাম, ‘তুই তো ওকে আমার অনেক লেখাই দিয়েছিস, সেগুলো আবার অন্য কোথাও শর্বাণীর নামে
ছাপা হয়নি তো?’ পঙ্কজ একথা স্বীকার করতে কুণ্ঠিত হ’ল না যে লেখালেখির ব্যাপারে
শর্বাণীর কোন আগ্রহ নেই – নাম কেনার জন্যই এত কান্ড । সেই শেষ – সেদিন থেকে
পঙ্কজের মুখে আর কোনোদিন শর্বাণীর নাম উচ্চারিত হ’তে শুনিনি ।
হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করার পর বাংলা অনার্স, তারপর যাদবপুর থেকে মাস্টার্স, পি
এইচ ডি ক’রে পঙ্কজ ইতালিতে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি দপ্তরে উঁচু পদের চাকরি করতে চলে
গেল, সেই সাথে বিভিন্ন লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে বেশ পরিচিত
নাম হয়ে উঠল । মাঝে মাঝেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ওর নামে লেখা দেখি কিন্তু জানা ছিলনা
এই সেই আমার সহপাঠী পঙ্কজ । উপরের ঘরে আমি আর পঙ্কজ এতক্ষণ গল্প করছিলাম । এখনই
পঙ্কজের এই পরিচয় জানতে পারলাম । কারন হায়ার সেকেন্ডারির পর থেকে পঙ্কজের সঙ্গে এই
আমার প্রথম দেখা । আমার পড়াশোনা সেভাবে হয়নি । সরকারী অফিসে কেরানীর কাজ ক’রে জীবিকা
নিরবাহ নির্বাহ করি । তবে শখের লেখায়
খামতি নেই । নিয়মিত লেখার চেষ্টা করি, কখনো সখনো কেউ কেউ পড়ে, নতুবা খাতার পাতায়
ঘুমিয়ে থাকে মুক হয়ে ।
স্কুল জীবনের গল্প, নস্টালজিয়া এসবের মাঝে নিচ থেকে স্ত্রীর ডাক শুনতে পেলাম,
‘চা রেডি, নিচে এস’। সবাই মিলে অনেকক্ষণ খাওয়া-দাওয়া আড্ডা, হই-হুল্লোড় হ’ল । ফেলে
আসা ইতিহাসগুলো আমার স্ত্রীকে শোনালাম । পঙ্কজের স্ত্রীর মুখে অবিচ্ছিন্ন হাসি ।
বাংলাটা ও ভালই বোঝে – হয়ত সেভাবে বলতে পারে না বলেই নীরব শ্রোতা হয়ে আছে । ওরা
বেরিয়ে যাবার ঠিক প্রাক মুহূর্তে পঙ্কজ আমার স্ত্রীকে একটা কথাই ব’লে গেল – আপনার
স্বামীর মত সহপাঠী ছিল ব’লেই আমি আজ ইতালিতে – ওর জন্যই ছুটে এসেছি এই কোলকাতায়
দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর । দেখলাম আমার স্ত্রীর চোখে জল । যেতে যেতে পেছন ফিরে আমাকে
উদ্দেশ্য ক’রে বলল, ‘শর্বাণীর অবদানও কম নয় রে’ ।
রাতে স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করতে করতে জানলাম ওর স্ত্রী পঙ্কজের জীবনে তোমার
অবদানের সবটাই জানে – ভাঙা বাংলায় সবটাই সে বলেছে আমার স্ত্রীকে । এবারও দেখলাম
স্ত্রীর চোখে জল । বলল, ‘তুমি এত লেখ অথচ কোথাও ছাপা হয়না । এনিয়ে তোমাকে অনেক
বলেছি । মনে কিছু করোনা । পঙ্কজদা তো তোমারই সৃষ্ট চরিত্র – এবং বাস্তব’।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন