ক্ষমতা যখনঃ অমরনাথ কর্মকার ১৭/১২/২০২০
ক্ষমতা যখন অক্ষম হয়ে ক্ষমা চায়
ক্ষমতাহীনের কাছে,
তখন ক্ষমতার ঘায়ে পঙ্গু মানুষও
মেতে ওঠে উদ্দাম নাচে।
ক্ষমতার বহুমুখী পথে দাঁড়িয়ে যদি
দিকভ্রান্ত ক্ষমতাধারী
বেছে নেয় স্বার্থপরতার চোরা গলি
সেই পথে বিপদ ভারি।
ক্ষমতা যখনঃ অমরনাথ কর্মকার ১৭/১২/২০২০
ক্ষমতা যখন অক্ষম হয়ে ক্ষমা চায়
ক্ষমতাহীনের কাছে,
তখন ক্ষমতার ঘায়ে পঙ্গু মানুষও
মেতে ওঠে উদ্দাম নাচে।
ক্ষমতার বহুমুখী পথে দাঁড়িয়ে যদি
দিকভ্রান্ত ক্ষমতাধারী
বেছে নেয় স্বার্থপরতার চোরা গলি
সেই পথে বিপদ ভারি।
ইতিহাস-ঐতিহ্যে ক্যানিং : অমরনাথ কর্মকার
ক্যানিং – সুন্দরবনের
কথা উঠলেই এই জায়গাটির নাম সবার আগে উঠে আসে মুখে।কারন এই শহরটি মূলত সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার
হিসাবেই বেশি পরিচিত। কিন্তু এই শহরের যে এক বিশাল ঐতিহাসিক গুরুত্ত্ব রয়েছে সে সম্পর্কে
জানার আগ্রহ খুব কম মানুষের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। আর সেই অনাগ্রহের যুক্তিসঙ্গত কারনও
রয়েছে যথেষ্ট। কারন ক্যানিং-এর ঐতিহ্য রক্ষায় সরকার,স্থানীয় প্রসাশনের ভূমিকা সেভাবে
চোখে পড়ে না। নইলে ক্যানিং এতদিনে হয়ে উঠতে পারত ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান হিসাবে দর্শনীয়।
১৮৫৬ থেকে ১৮৬২এই সময়
কালের প্রথম দু’বছর ভারতের গভর্নর
জেনারেল এবং পরের চার বছর ভাইসরয় ছিলেন চার্লস যোহান আর্ল (লর্ড) ক্যানিং। তাঁর
আমলে গঠিত হওয়া ‘পোর্ট ক্যানিং
কোম্পানি’র
সুবাদে
মাতলা নদীর ধারে তৈরি হয় স্ট্র্যান্ড, হোটেল,কিছু বাড়ি। সুপরিণামদর্শী লর্ড ক্যানিং-এর উদ্দেশ্য ছিল
সিঙ্গাপুর বন্দরকে টেক্কা দেওয়া। কিন্তু ১৮৬৭ সাল নাগাদ নদীপথ পরিবর্তনের ফলে সে
সব ভেঙে যায়। ইতিমধ্যে ১৮৬২-তে শিয়ালদহ দক্ষিণ (তত্কালীন বেলেঘাটা স্টেশন) থেকে
ক্যানিং পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন করে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেল কোম্পানি। ১৮৮৭-তে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেল কোম্পানি
রাষ্ট্রায়ত্ত হয়। আজ ক্যানিং স্টেশন থেকে মিনিট কুড়ির হাঁটা পথে হাইস্কুল পাড়ায় যে
জীর্ন ইমারতটি লর্ড ক্যানিং-এর স্মৃতি বিজড়িত হয়ে ইতিহাসের সাক্ষ বহন করছে আসলে
সেটি ছিল ‘পোর্ট ক্যানিং
কোম্পানি’-র সদর দফতর। ১৮৭২-এ সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নামমাত্র টাকায়
ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় দু’তিনজন ওই বাড়ি ও সংলগ্ন জমি কিনে নেন। তবে তিনি এবং লেডি
ক্যানিং ওখানে গেলে যে বাড়িটিতে থাকতেন,সেটির অস্তিত্বের বেশির ভাগটাই লোপ পেয়েছে। প্রাচিন
ভবনটির অবস্থা জীর্ণ, ভবনে ঢোকার মুখে যে বিশাল লোহার গেট ছিল সেটিও উধাও। পুরু
দেওয়ালের বিভিন্ন অংশে ফাটল। বাড়ির তিন দিকে বিভিন্ন জায়গায় বটবৃক্ষ বাড়িয়ে চলেছে
এই ফাটলের মাত্রা। উঁচু স্তম্ভগুলোর ইট খসে পড়ছে। বাড়ির দু’টি তল মিলিয়ে অন্তত
পনেরোটি ঘর। কড়িকাঠের ছাদের উচ্চতা অন্তত ১৫ ফুট। ভূগর্ভেও একটি তল আছে। একসময়ে
সেটি ব্যবহৃত হত। বহুকাল ব্যবহৃত হয় না। বন্ধ করে রাখা হয়েছে একতলার বেশির ভাগ
অংশ। বাড়ির আইনি মালিকানা নিয়ে ধন্দ ও সংশয়ের
নিয়মিতকরণ আজও হয়নি। একদা ব্রিটিশ আমলে পৌরসভার কৌলিন্য মর্যাদা পেয়েছিল
ক্যানিং। পরাধীন ভারতবর্ষের তথা বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবনের উন্নয়নকে
কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল বন্দর। তৈরী হয়েছিল চালকল,নুনের গোলা। নানান কারনে ক্যানিং
তার পৌরসভার অস্তিত্ব হারায়।
ভৌগলিক কারণে
বিদ্যাধরী নদীর একটি শাখা বাঁক নিয়ে মিশেছিল আঠারোবাঁকি ও করাতী নদীতে। তিনটি নদীর
সংযোগস্থলে সৃষ্টি হয়েছিল পর্বল একটি ঘুর্ণী। যা কিনা পরে মাতলা নদীর জন্ম দেয়। আর
এই নদীর পাড়েই তৈরী হয় “মাতলা গঞ্জ”। বিভিন্ন সরকারি নথীতে যা “মাতলা মৌজা ”নামে উল্লেখ করা
হয়েছে। অতীতের তথ্য অনুযায়ী সে সময় মাতলা নদী এতই খরস্রোতা ছিল যে ভাটার সময় বড় বড়
জাহাজ অনায়াসেই নোঙর করতে পারতো মাতলা নদীর পাড়ে। লর্ড ডালহৌসির আমলে ক্যানিং এ
বন্দর তৈরীর কাজ শুরু হয়।
ডালহৌসির পরে গভর্ণর হয়ে আসেন
লর্ড ক্যানিং। তাঁর আমলে কলকাতার সাথে রেলপথের মাধ্যমে যুক্ত হয় মাতলা এলাকা।
অন্যদিকে নদীপথে হলদিয়ার সাথে ও যোগাযোগের কাজ শুরু হয়। লর্ড ক্যানিং এর নাম
অনুসারে “মাতলা গঞ্জ” বা “মাতলা মৌজার” নামকরণ হয় “ক্যানিং টাউন”। ১৮৬২-৬৩ সালে
সর্বপ্রথম ক্যানিং-এ রেলপথ চালু হয়। ১৯৩২ সালের ২৯ ভিসেম্বর স্যার ড্যানিয়েল
হ্যামিলটনের আমন্ত্রণে বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর যখন গোসাবায় তাঁর পল্লীউন্নয়ন
দেখতে গিয়েছিলেন, তিনি ক্যানিং পর্যন্ত গিয়েছিলেন এই রেলপথেই। ১৮৬২ সালে ক্যানিং
কে পৌরসভা করে উন্নয়নের তোড়জোড় শুরু হয়। একদা পৌর শহর হিসাবে তকমা পাওয়া ক্যানিং
আজ পঞ্চায়েত এলাকাভুক্ত। ১৯৬৭-৬৮ সালে এক মারাত্মক ঘুর্ণিঝড়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি
হয়েছিল সুন্দরবনে। ফলে ক্যানিং বন্দরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং সব জাহাজ ক্যানিং
বন্দর ত্যাগ করে। ফলে ১৮৭২ সালে লর্ড
ক্যানিং-এর স্বপ্নের বন্দরের যবনিকাপাত হয়। সেই সূত্রেই পৌরসভার কাজ ও থমকে যায়।
বর্তমান সরকার এই শহরকে পৃথক পৌরসভার মার্যাদা দানের চেষ্টা চালালেও নানান
প্রশাসনিক জটিলতায় ক্যানিংবাসীর স্বপ্নের বাস্তবায়ন আজও সম্ভব হয়নি। লর্ড
ক্যানিং-এর ঐতিহাসিক বাড়িটি 'হেরিটেজ বিল্ডিং' হিসাবে সরকারীভাবে ঘোষিত হলেও
বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষনের সেভাবে হয় না। যার ফলে ইংরেজ
আমলের ব্যবহৃত বহু জিনিসপত্র ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে বা বিক্রি হয়ে গেছে প্রশাসনের
অজান্তেই।এছাড়াও আরও একটি ইতিহাস জড়িয়ে আছে ক্যানিংকে নিয়ে যা নিয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র
মাথাব্যথা নেই।রসগোল্লার পেটেন্ট নিয়ে এত সমালোচনা হয়, অথচ লেডিকেনি নামক জনপ্রিয় মিষ্টান্ন
আবিষ্কারের সঙ্গে লেডি ক্যানিং-এর (লর্ড ক্যানিং-এর স্ত্রী,লর্ড ক্যানিং-এর
স্ত্রী শার্লট লেডি ক্যানিং)যে নিবিড় সম্পর্ক আছে সে
ইতিহাস অধিকাংশেরই অজানা। জানা যায়,লেডি ক্যানিং-এর জন্মদিনের উপহার হিসাবে ভীম নাগ
এই মিষ্টি প্রস্তুত করেন যা আজও বাঙালীর রসনা
তৃপ্ত ক’রে চলেছে।
অতীত ইতিহাসের ঐতিহ্যমন্ডিত
ক্যানিং ঐতিহাসিক শহর হিসাবে জনপ্রিয় হোউক,সযত্নে রক্ষিত হোউক যাবতীয় ঐতিহাসিক স্মৃতি,
ক্যানিং শহর তাঁর হৃত গৌরব ফিরে পেয়ে উন্নত পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্রে
উজ্জ্বল হয়ে উঠুক এই প্রত্যাশা পূরণের স্বপ্ন সফল করার জন্য সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন
দ্রুততার সঙ্গে কাজ করুক এই আন্তরিক ইচ্ছা বোধ হয় সকল ক্যানিংবাসীরই। প্রত্যন্ত সুন্দরবনের
মানুষের কাছে ক্যানিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর। এই ক্যানিং শহরে রয়েছে ক্যানিং মহকুমা
দপ্তর, রয়েছে মহকুমা হাসপাতাল, জমজমাট মাছের বাজার, বিস্তীর্ণ ফলের বাজার, উন্নত বানিজ্য
কেন্দ্র, ডেভিড সাশুন-এর মত উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলেজ, থানা, আধুনিক স্টেডিয়াম,ব্লক
অফিস, নামী ক্লাব, সুন্দর রাস্তা-ঘাট সহ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা অর্থাৎ একটি পৌর শহরের
যাবতীয় উপাদান এখানে উপস্থিত। ক্যানিং থেকে ঝড়খালী পর্যন্ত সম্প্রসারিত রেলপথ তৈরির
অনুমোদন মেলার পর ২০০৯ সালে উদ্বোধন হওয়া রেলপথের কাজ নানান প্রশাসনিক জটিলতায় থমকে
আছে। সেই কাজ দ্রুত সম্পন্ন হ’লে সুন্দরবনবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নততর হবে তা বলাই
বাহুল্য। এই সমস্ত প্রত্যাশা পূরণের আশায় অপেক্ষমান ক্যানিং তথা সমস্ত সুন্দরবাসী।
সুতরাং সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকরী উদ্যোগে ক্যানিং তার ঐতিহাসিক মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার
পাশাপাশি পৌর শহরের মর্যাদা পাক এবং অসমাপ্ত রেলপথের কাজ দ্রুত শেষ হোউক এই কামনা সকলেরই।
বিষয় আলু-পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি : অমরনাথ কর্মকার
সম্প্রতি আলু ও পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে রাজ্য
তোলপাড় ।প্রতিকেজি আলুর মুল্য ইতিমধ্যেই অর্ধশত ছুঁই ছুঁই,পেঁয়াজ শতকের পথে।এবং আরোও
মূল্যবৃদ্ধির অশনি সংকেত শোনা যাচ্ছে । ইতিপূর্বে আলু বা পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে
বেশ কয়েকবার কিন্তু এতটা বাড়েনি। সবচেয়ে বড়কথা হ'ল মূল্যবৃদ্ধির এই দীর্ঘ স্থায়ীত্ব
চোখে পড়েনি এবং আরও বিষ্ময়কর ব্যাপার হ'ল এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকার,বিরোধীপক্ষ
সকলের মধ্যেই কেমন যেন আলুথালু ভাব - এর প্রতিকার নিয়ে কেমন যেন আলস্য - তৎপরতার অভাব
লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০১৪ সালে আলুর দাম বেড়েছিল যখন তখন তার কারন অনুসন্ধানে জরুরী
ভিত্তিতে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছিল সরকারীভাবে এবং কালোবাজারীর সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের
জব্দ করতে সরকারী কর্মীরা বাজারে রীতিমত অভিযান চালিয়েছিলেন। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর
নির্দেশে আলুর অহেতুক মজুতদারী এবং উচ্চমূল্যে আলু বিক্রি বন্ধ করার কড়া সরকারী পদক্ষেপ
নেওয়ার সাথে সাথেই পড়ে গেল আলুর আকাল । ইতিপূর্বে মুরগীর লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম
পরাতে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মুরগীর মূল্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। বিগত বছরে আলু-পেঁয়াজের
দামে নিয়ন্ত্রণ আনতে সরকারী তরফে নির্দিষ্ট মূল্যে আলু ও পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়েছিল।
এবারও আলু-পেঁয়াজ মহার্ঘ্য বটে, তবে অন্যান্যবারের মত এবারে এরা বাজার থেকে উধাও হয়ে
যায়নি। অতএব, বুঝতে অসুবিধা নেই যে আলু-পেঁয়াজের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে
প্রশাসনিক কোন কড়া পদক্ষেপ নেই। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভীতির লেশমাত্র নেই ।
করোনার অতিমারীর প্রভাবে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক দুর্বলতার মধ্যে তাদের সহজ উদর পূর্তির
মুখ্য উপকরণের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে তাদের যে কি করুন অবস্থা সেকথা বলাই বাহুল্য।
বাঙালীর আলুবিহীন জীবন অকল্পনীয় । আলুময় ব্যঞ্জন বাঙালীর রান্নার বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য
– ঝালে ঝোলে অম্বলে সর্বত্র আলুর অবধারিত উপস্থিতি । পেঁয়াজও বাঙালীর রান্নায় অপরিহার্য,
বাঙালীর আমিষ মানেই পেঁয়াজের সাহচর্য । আলুর দোষ কী সে সম্বন্ধে ধারণা থাক বা না থাক
আলুর গুনাগুণ যে কি বাঙালী মাত্রেই সে সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল । আলু-পেঁয়াজের এই
অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং তার এই দীর্ঘ স্থায়ীত্বে বাঙালীর মাথায় হাত । আলুহীন বাঙালীর
চোখের সামনে এখন আলোহীন অন্ধকার । একসময় মহার্ঘ্য
পেঁয়াজের পরিবর্তে স্যলাডে আপেল ব্যবহৃত হতে দেখা গেছে । এবারের অবস্থাও সেই
একই পথে। বাস্তবে বর্তমানে আলু আর আপেলের মূল্যে ফারাক নেই। কিন্তু আলুর বিকল্প ? আলুবখরা
নিশ্চয়ই নয় । মন্বন্তরের সময় দেখা গেছে মানুষকে শাক-পাতা, মেটে আলু খেয়ে বেঁচে থাকতে
। এখন বাজারে গিয়ে দেখবেন সব্জির উচ্চমূল্যের কারনে বাজারে প্রচুর বিকোচ্ছে মেটে আলু,
মান-কচু । মনে পড়ে যাচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’-এর কথা । কেন্দ্রীয় সরকার আলু
ও পেঁয়াজকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মজুতদাররা
নিজেদের ভাঁড়ার ভরাচ্ছে, যার মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে, বিশেষ ক’রে করোনার ক্রান্তিকালে
অসহায় মানুষদের কাছে এই মূল্যবৃদ্ধি কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মতই যন্ত্রনাদায়ক।
আলু-পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি এর আগে অনেকবারই ঘটেছে। কিন্তু
সেই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকারের নিজস্ব ক্ষমতা ছিল কারন তখন অত্যাবশ্যকীয়
পণ্য আইনে আলু পেঁয়াজের মত অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকারের নিজস্ব
আইনগত ভূমিকা ছিল। আলু ও পেঁয়াজকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পরে
মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকারের ক্ষমতা খর্ব হয়। সম্ভবত সেই কারনেই আলু পেঁয়াজের
ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে রাজ্য সরকারের ভূমিকা স্বাভাবিকভাবেই চোখে পড়ছে
না । আর কেন্দ্রীয় সরকারের এ ব্যাপারে মাথাব্যথা আদৌ আছে ব’লে মনে হয় না। সম্প্রতি
মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়ে এই সমস্যার আশু সমাধান করতে বলেছেন। এদিকে
অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের সংশোধন নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত লেগেই আছে।
আলু-পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যে রাজনৈতিক খেলা চলছে তার
কতটা মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে আর কতটা আসন্ন নির্বাচনে জনসমর্থন পাওয়ার কৌশল
তা ঈশ্বরই জানেন। তবে এইসব দ্বন্দ্বের যাঁতাকলে পিষে মরা মানুষগুলোর দিকে মানবিকতার
দৃষ্টি নিয়ে না তাকালে করোনার অতিমারী, লকডাউনে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষগুলোর
পরিণতি সত্যিই করুন হয়ে উঠবে। রাজায় রাজায় যুদ্ধ চিরকাল হয়ে এসেছে, চলবেও। কিন্তু উলুখাগড়ার
মত সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করাটা বন্ধ হওয়া উচিৎ।
আলুর এহেন আলুলায়িত পরিস্থিতিতে সবচেয়ে আনন্দে আছেন বোধহয়
রক্তে শর্করা-সমৃদ্ধ মানুষজন। বাঙালীর পাতে আলুবিহীন ব্যঞ্জন কল্পনাতীত। আর বাঙালীর
আমিষ মানে অবধারিতভাবে পেঁয়াজ। দিন আনা দিন খাওয়া হতদরিদ্র বাঙালীর সবচেয়ে সস্তার খাবার
‘আলুভাতে ভাত’ কিংবা ‘কাঁচা পেঁয়াজ সহযোগে পান্তাভাত’ও কি তবে জুটবে না ? না হয় বাঙালীর
একটু বেশিই আলুপ্রীতি আছে – এব্যাপারে আলুর দোষ নেই – হ’লই বা দোষটা আমাদের রসনার
– তাই ব’লে এই বঞ্চনা !
এই পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন আবশ্যক। একটা গণতান্ত্রিক দেশের
পক্ষে এই পরিস্থিতি কখনোই মানানসই নয়।
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?