শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২১
বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২১
নবমীতে মন খারাপ ১৪/১০/২০২১
নবমীতে মন খারাপ ১৪/১০/২০২১
পূজোর আনন্দ অবসানের প্রাকমুহূর্তে, নবমী নিশি অতিক্রান্ত না হওয়ার আকুতি জানিয়ে সকলেরই বাসনা উৎসবের আনন্দ আরও একটু স্থায়ী হোক । আজ তাই সবার মন খারাপ । আর আমার তো এমনিতেই মন খারাপ হয়ে আছে । মন খারাপ দিয়ে শুরু করেছিলাম ষষ্ঠী থেকে – সেই মনখারাপ প্রবহমান নবমীর রাত পর্যন্তও । বৃষ্টির পূর্বাভাসে পুজোর আনন্দ মাটি হবার আভাস ছিল কিন্তু সে আগুনে বৃষ্টির জল না পড়ায় জনজোয়ার জারি ছিল। আজ বোধ হয় সকলেরই মন খারাপ । সন্ধ্যে বেলা রাস্তায় বেরিয়ে দেখলাম জনারণ্যে যাত্রাপথের গতি শ্লথ হয়ে পড়ছে। সকলেই যেন আনন্দের শেষ দিনে উৎসবের উপভোগ্যতাকে চেটেপুটে খেতে মরিয়া। সেই জণারন্যে আমি অবশ্য একা। সত্যিই তো ‘যেওনা নবমী নিশি’ বলে যতই কাতর আবেদন থাক, আসলে সৌর নিয়মে সে নবমীর রাত ঠিকই অতিক্রান্ত হবে। রাত্রে শুতে আসার আগে মা বলে দিল ‘আজকের রাতটা বড় – তাই গেটে তালা দেওয়া আছে কি না দেখে নিস আর রাত্রে একটু সজাগ থাকিস’। মা তাঁর বিশ্বাস থেকে একথা বলেছে জানি। কিন্তু এর অন্তর্নিহিত সত্যটাকে তো অস্বীকার করার উপায় নেই। সকলেই আনন্দের স্থায়ীত্ব চায়। দৈনন্দিন জীবনেও মানুষ একই প্রত্যাশা করে। সেক্ষেত্রে কোন উপলক্ষ থাকে না, কিন্তু দুর্গাপুজোর আনন্দের উপলক্ষ্যকে সম্বল ক’রে সবাই আনন্দের স্থায়ীত্ব কামনা করে। তাদের মন খারাপের নির্দিষ্ট কারন আছে – উৎসবের আনন্দের অবসান আর দেবী দুর্গার ‘অদ্য শেষ রজনী’র বিহ্বলতা । ওসবে আমার মন নেই । আমার মন খারাপের কারন হয়ত আছে কিন্তু শত অনুসন্ধানেও তার হদিশ পাচ্ছি না । নবমীর বাতাসে বিষাদ – সবার মন খারাপ । কোভিডের অতিমারীতে কত শত প্রাণ ঝরে পড়েছে, সেই টাটকা স্মৃতি অনেকটাই ম্লান হয়েছে প্রায় স্বাভাবিক ছন্দে পুজো ফিরে আসায়। বাঙালী আত্মঘাতি কি না জানা নেই, তবে এবারের পুজোর কোভিড বিধি ভাঙা জনস্রোত, ‘বুর্জ খলিফা’ দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষের সমাগম এসব দেখে আমার মনে হয়েছে বাঙালী বুঝি সত্যিই আত্মঘাতি। চিকিৎসকরা পর্যন্ত এই দৃশ্যের ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে রীতিমত আতঙ্কিত। সত্যিই আমরা আনন্দের স্থায়ীত্ব চাই, কিন্তু যে আনন্দ অস্তিত্বের সঙ্কট ডেকে আনতে পারে, সে আনন্দের প্রয়োজন কোথায় ? আনন্দ করার ভিন্ন পন্থা ইতিমধ্যেই কোভিডের সৌজন্যে (?) আমরা শিখতে শুরু করেছি। ‘ভার্চুয়াল’ শব্দটা বোধ হয় বেশিরভাগ মানুষেরই বোধগম্য। এমনিতেই আমার মন খারাপ। তারপর এই সব গুঢ় ভাবনা ভেবে ভেবে আরও মানসিক বিপর্যয় ডেকে আনছি অকারনে। এইসব বিষয় ভাবার জন্য সরকার আছে। পুজো শেষ পর্যায়ে। এইবার আমার মন খারাপের পালা সাঙ্গ হতে চলেছে। কাল দশমী। উৎসবের অন্তিম দিন। কালকেও লিখব আশা করি। এই অকারন অথচ অবধারিত মন খারাপের চক্রব্যুহ থেকে মুক্তি পাবার অপেক্ষায় আছি। না তার মানে এই নয় যে আর মন খারাপ হবে না। সত্যি বলতে কি আমি একটু বেশিই আবেগপ্রবণ। তাই সামান্য কারনেই মন খারাপ হয় আমার। সে মন খারাপের কারন থাকে – যা সকলেরই স্বাভাবিক প্রবণতা। আজ নবমীর দিনে সকলের মন খারাপের আবেশ আমার মন খারাপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই মুহুর্তে মনকে বেশি ভারাক্রান্ত করে তুলেছে। আজ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে নবমী শেষ করছি -
“মন ভালো নেই মন ভালো নেই মন ভালো নেই
কেউ তা বোঝে না সকলি গোপন মুখে ছায়া নেই
চোখ খোলা তবু চোখ বুজে আছি কেউ তা দেখেনি
প্রতিদিন কাটে দিন কেটে যায় আশায় আশায়
আশায় আশায় আশায় আশায় ......
বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২১
অষ্টমীতে মন খারাপ
অষ্টমীতে মনখারাপ ১৩/১০/২০২১ – কথায় বলে বাঙালীর পায়ের তলায় সর্ষে। সুযোগ পেলেই তারা ভ্রমণে বেরোন। বিশেষ ক’রে পুজোর ছুটিতে অনেক বাঙালীই ভ্রমণ বিলাসে মত্ত থাকেন। আমি অবশ্য পুজোর ছুটিতে নিজের জায়গা ছাড়তে নারাজ তা সে যতই বিষন্নতায় ভুগি । ‘মেঘ বলেছে যাব যাব রাত বলেছে যাই ..’ জানিনা সত্যি সত্যিই মেঘ বা রাত কানে কানে রবীন্দ্রনাথকে বিদায় বার্তা দিয়েছিল কি না। তবে হলফ ক’রে বলতে পারি মেঘ বিদায় নেবার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। যখন এই লেখা লিখছি তখন বাইরে চলছে বিদ্যুতের ঝলকানি সহ বজ্রগর্ভ মেঘের হুঙ্কার। আজ অষ্টমীর সারা দিন রৌদ্র করোজ্জ্বল ছিল, কিন্তু বিকেলের পর থেকে মেঘ আবার হাজির, সঙ্গে আবার বজ্র নিনাদ। আর রাত ! এ যুগে রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে নির্ঘাত বুঝে যেতেন এদেশ থেকে রাতের অন্ধকার দূর হওয়া অসম্ভব। কুনীতি, দুর্নীতির অন্ধকার সমাজে যেভাবে জগদ্দল পাথরের মত জেঁকে বসেছে তা যাবার নয়। এবছর অষ্টমীর রাতেই নবমীর আত্মপ্রকাশ ঘটে গেছে। কিছুক্ষণ আগেই সন্ধিপুজো হয়ে গেল। অর্থাৎ বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসবের বিদায় ঘন্টা বেজে গেল প্রায়, নেমে এল উৎসবমুখর বাঙালীর মনে একরাশ বিষন্নতা আর হৃদয়ের অন্তস্থলে অশ্রুত আকুতি ‘যেওনা নবমী নিশি’। আমার ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাপারটা বিপরীত। উৎসবের দিন যত শেষের দিকে যাচ্ছে আমার মন খারাপের মাত্রা ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। আজ সকালে বাজারে গিয়েছিলাম। বড় রাস্তায় উঠেই কানে এল ‘শুধু যাওয়া আসা স্রোতে ভাসা’। গানটা এমনিতেই মন খারাপ ক’রে দেয়। গানটির শেষ ‘শুধু যাওয়া’ দিয়ে, সেখানে ‘আসা’ নেই। যাওয়া আসার স্রোতে ভাসতে ভাসতে একদিন আর ফিরে আসা হয় না। মানুষের জীবনের সঙ্গে তুলনা করলে মন ভারাক্রান্ত হতে বাধ্য। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত বিষন্ন মনকে আরও বিষন্নতায় ভরিয়ে দিল। কিছুদিন আগেই আমার মাতৃসমা কাকীমাকে হারিয়েছি। সেই স্মৃতি উঁকি দিতে শুরু করল মনে। এরই মধ্যে এক প্রবাসী বাল্যবন্ধুর ফোন এল। ধরলাম। ওর মুখেও সেই বিষন্নতার কথা – সুদূর প্রবাসে থেকে পাড়ার পুজো, বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা এসব থেকে বঞ্চিত হওয়ার দুঃখ। এই বিষন্নতা অত্যন্ত স্বাভাবিক। ও অবশ্য জানেই না যে স্বভূমে থেকেও দুর্গোৎসবে আমার মন ভালো থাকে না। মাছের বাজারে ঢুকে দেখলাম মাছ-বাজারে মাছওয়ালা এবং খরিদ্দার উভয়ের সংখ্যাই অতি নগন্য। সম্ভবত অষ্টমীতে অনেক বাড়িতেই নিরামিষ হয় সেই কারনে। চোখ গেল একটা থলে বগলে লুঙ্গি পরিহিত আমাদের পাড়ার এক পরিচিত রিক্সাওয়ালার দিকে। ঠাই দাঁড়িয়ে আছে মাছ বাজারের এক প্রান্তে। আমাদের পাড়ায় পায়ে টানা রিক্সা আছে হাতে গোনা কয়েকটা। সবাই টোটো কিনে নিয়েছে। যে রিক্সাওয়ালার কথা বলছি সে এখনোও টোটো কিনে উঠতে পারেনি। ওর রিক্সায় সহজে কেউ উঠতে চায় না শ্লথ গতির জন্য। যাহোক মাছ বাজার থেকে বেরিয়ে আরোও অন্যান্য জিনিস কেনাকাটা ক’রে ফিরতে ফিরতে প্রায় দেড় দু’ঘন্টা লেগে গেল। মাছ-বাজারের পাশ দিয়ে ফেরার সময় দেখলাম সেই রিক্সাওয়ালা মাছ কিনছে। এবারে তাঁর এই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার কারন অনুধাবন করতে অসুবিধা হ’ল না। মন খারাপ হ’ল। দারিদ্রের সাথে সাথে সবার আত্মসম্মান বিসর্জিত হয় না। অভাবের সংসারে সারাবছর ডাল-ভাত খেয়ে উৎসবের দিনে পরিবারের জন্য অন্তত একটু মাছ-ভাতের ব্যবস্থা করতে একজন দরিদ্র রিক্সাওয়ালার এই কষ্ট কারোও চোখে পড়েছে কিন জানা নাই – আমার দৃষ্টি এড়ায়নি। জানিনা সে শেষ পর্যন্ত সস্তায় মাছ কিনতে পেরেছিল কি না। সপ্তমীতেই বলেছিলাম, মন খারাপের অনেক উপকারীতা আছে। মন খারাপ হ’লে ছোট ছোট ঘটনা অনুভূতিতে সহজেই আঘাত হানে। আনন্দে থাকলে হয়ত এসব ‘.. ছোট ছোট দুঃখ কথা’ উপেক্ষিতই থাকত। নবমী শুরু হয়ে গেছে। মন খারাপ ব’লেই হয়ত এতটা লিখে ফেললাম । কে পড়বে জানি না। তবে ভালো খারাপ যাই হোক, মনের ভাবনাগুলো প্রকাশ করাটাই উদ্দেশ্য। শুভ রাত্রি।
মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর, ২০২১
সপ্তমীতে মনখারাপ ১২/১০/২০২১
সপ্তমীতে মনখারাপ ; অমরনাথ কর্মকার ১২/১০/২০২১ - পূজোয় মন খারাপ না বলে আজ একটু ঘুরিয়ে বলি বরং – মন খারাপের পুজো । সপ্তমীতে উৎসবের মেজাজ সপ্তমেই ছিল । গতকাল অর্থাৎ ষষ্ঠীতেও আকাশের মুখ ছিল গোমড়া। আজ সপ্তমীতে সেই গোমরা মুখে হাসির ঝিলিক দেখে পুজোর আনন্দ মাটি হওয়ার শঙ্কা কাটিয়ে উৎসবমুখরতা প্রকট হতে শুরু করেছিল । তাই জীবনের উৎসব থেকে উৎসবের জীবন একটু অন্য মাত্রা পাক এই আশায় প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে যখন জনস্রোত, আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত চারদিক – তারই মধ্যে ঘোষিত হয়েছে আবহাওয়া দপ্তরের অশনি সংকেত – অষ্টমী থেকে দশমী দক্ষিণবঙ্গে হবে বৃষ্টিপাত । সুতরাং এবার শুধু আমার নয় – সমস্ত বাঙ্গালীর মন খারাপ । সন্ধ্যেয় বেরিয়েছিলাম রাস্তায়। কয়েকটা পুজো প্যান্ডেলে লক্ষ্য করলাম অন্যবারের মত এবার আড়ম্বরের আতিশয্য নেই। করোনার অতিমারির প্রভাবে অর্থনৈতিকভাবে বিপন্ন মানুষের কথা ভেবে পুজো কমিটিগুলোর এই সিদ্ধান্তকে মনে মনে সাধুবাদ জানাতে গিয়ে বিষন্ন মন কিছুটা প্রসন্ন হ’ল। আরোও খুশি হব যদি পুজো কমিটিগুলো কিছুটা অর্থ করোনায় বা সাম্প্রতিক বন্যার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের উপকারে কাজে লাগায়। আমার মন খারাপ কিন্তু অন্যদের দিকে তাকিয়ে তাঁদের মানসিক অবস্থা আন্দাজ করার চেষ্টা করতে তো আর অসুবিধা নেই ! কম বয়সী, বিশেষ ক’রে স্কুল পড়ুয়াদের মুখে পুজোর স্বাভাবিক আনন্দ যেন সেভাবে প্রকাশ পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজহীন নিঃসঙ্গ ভার্চুয়াল জীবনযাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ায় উৎসবের আনন্দ উদযাপনেও কেমন যেন যান্ত্রিকতার প্রভাব। আসলে ওদেরও মন খারাপ আমার মতই, পার্থক্য একটাই – ওদের মন খারাপের নির্দিষ্ট কারন আছে, আমার ক্ষেত্রে কারন অজানা । মনোবিজ্ঞানে বিষণ্ণতা বা মনখারাপ মূলত মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি। আবার অনেকে বলেন এটা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি – পরিবেশ একে প্রভাবিত করে। যেমন বিকেলে মেঘ করলে কারো কারো মন খারাপ হয়। আজ একটা বিষয় পড়ে অবাক হ’লাম। মন খারাপ বা বিষন্নতারও নাকি উপকারিতা আছে। সাধারণভাবে আমরা দেখি, যখন আমরা মন খারাপ করে বসে থাকি তখন ফেলে আসা কোন দিনের বা বিশেষ কোন সময়ের কথা স্পষ্টভাবে মনে ভাসে। পুরোটাই জীবন্ত লাগে, সময়গুলো আবার ফিরে পাওয়ার ইচ্ছাও হয়। কিন্তু মন ভাল থাকলে স্মৃতি আমাদের খুব কমই মনে পড়ে! ফুরফুরে মেজাজে থাকা অবশ্যই আমাদেরকে চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনায় মনোযোগী করে এবং বিষণ্ণতা সেগুলোকে স্মৃতিতে ভালোভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে! এবং ভালোভাবে লক্ষ্য ক’রে দেখেছি পুজোর এই মন খারাপের সময় আমার ফেলে আসা অতীতের আবছায়া স্মৃতিগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে। স্পষ্ট ভেসে ওঠে খুব ছোটবেলায় হারানো আমার অন্ধ ঠাকুমার মুখ, পুজোর সময় ঠাকুমার আঁচল থেকে পয়সা চুরি আরোও কত কি। তাহলে পুজোতে আমার এই অকারন বিষন্নতা পরোক্ষে আমার উপকারেই লাগছে। অবশ্য এই উপকারিতার কথা জানার পরেও মন কিন্তু এতটুকুও প্রসন্ন হয়নি। কাল অষ্টমী, অর্থাৎ দুর্গাপুজোর পরিসমাপ্তি ক্রমশ কাছে আসছে আর তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ক্রমশ কমছে মন খারাপের তীব্রতা। কাল অষ্টমীতে আবার শব্দ ছড়ানোর ইচ্ছে নিয়ে আপাতত শুভরাত্রি।
সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১
ষষ্ঠীতে মনখারাপ ১১/১০/২০২১
পুজো এলেই প্রতিবছর মন খারাপ হ’তে শুরু করে। এই প্রবণতা আমার সেই ছোটবেলা থেকেই। বলা যায় আমার অবচেতনেই এই অদ্ভুত মানসিকতা গড়ে উঠেছে আমার। ইতিপূর্বে আমি বুহুবার বলেছি এর পেছনে আগাম কোন কারন থাকে না, বরং এই মন খারাপের মধ্যেই মন খারাপ করা বিষয়গুলো মনের দরজায় আঘাত হেনে মনকে আরও খারাপ ক’রে দেয়। ষষ্ঠী থেকে দশমী – প্রতি বছর নিয়ম ক’রে আমি ‘পুজোয় মনখারাপ’-এর বৃত্তান্ত লিখে থাকি – এবারও যাতে তার ব্যত্যয় না হয় তাই লিখছি অতিক্রান্ত ষষ্ঠীর মাঝরাত্রে।
ষষ্ঠীতে মনখারাপ ১১/১০/২০২১ – শুনেছি মনখারাপ হ’লে কবি বা লেখকের কলম ভাল চলে। রবীন্দ্রনাথ কলেরায় অকাল প্রয়াত পুত্র শমীন্দ্রনাথকে দাহ ক’রে বাড়ি ফিরে গান রচনা করেছিলেন। এত বড় শোকের মধ্যেও রবীন্দ্রনাথ পেরেছিলেন কলম ধরতে, কারন তিনি রবীন্দ্রনাথ, অথচ আজ আমার সামান্য মনখারাপেই লেখার ইচ্ছে প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলাম। অনেক কষ্টে শেষমেশ মাঝ রাতে কলম ধরলাম। কিন্তু এলোমেলো ভাবনাগুলো সাজিয়ে তোলা বড্ড দুরূহ মনে হচ্ছে। করোনায় বিগত বছরে বহু মানুষের অস্তিত্ব এখন ঘরের দেওয়ালে ফ্রেমবন্দি। কত মানুষ কর্মহীন, কত স্বচ্ছল জীবন বেঁচে থাকার তাগিদে সাহায্যপ্রার্থী। তারই মধ্যে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের প্রলয় নাচন। তবুও উৎসবের স্বাভাবিকতা ক্রমশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারী বিধিনিষেধে শিথীলতা, জানিনা করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের রক্তচক্ষু থেকে আমাদের বাঁচাতে পারবে কি না। টিভিতে দেখছি বুর্জ খলিফা দেখতে শহরে কাতারে কাতারে মানুষ, সামাজিক দূরত্ব সেখানে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের কাছে গো হারা। আর জানলা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি আমাদের পাড়ারই একদা উচ্চপদে চাকরি করা বেসরকারী সংস্থার কর্মী করোনায় কাজ হারিয়ে ফুচকার গাড়ি নিয়ে চলেছেন ষষ্ঠীর দিনে ফুচকা বিক্রি করতে। দুই ছবির কনট্রাস্ট মনের আকাশ মেঘলা ক’রে দিল। মেঘের কথা যখন উঠল তখন এবারের বৃষ্টিতে আমাদের করুণ বানভাসি পরিস্থিতির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে - ঘরের জল বেরোলেও রাস্তায় গোড়ালি-গভীর জল। কি লিখব মাথায় আসছিল না তাই স্ত্রীর পরামর্শে মাথা হালকা করা এবং পকেট ফাঁকা করার উদ্দেশ্যে বাজারের দিকে পা বাড়ালাম প্যান্ট গুটিয়ে। ‘বছরে তিরিশ বার চিত্রাঙ্গদা আর শ্যামা শাপমোচনের অশ্রুমোচন …’ সত্যিই ভালো লাগে না। কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে শারদ সন্ধ্যায় আলোকিত উৎসবের পরিবেশে মাইকে যে গানগুলো ভেসে আসছিল, মনে হ’ল এই পরিবেশে এমন গানের বিকল্প নেই। বিষন্নতার মধ্যেও কন্ঠ মেলাচ্ছিলাম অজান্তেই। কাতারে কাতারে মানুষ চলেছে – অধিকাংশেরই মুখচ্ছদ নেই – মুকচ্ছদের আড়ালে বিউটি পার্লার থেকে অর্থ ব্যয়ে মেক-আপ করা মুখের সৌন্দর্য পাছে হারিয়ে যায় সম্ভবত সেই কারনেই অনেকে মুখচ্ছদ পরেননি। এসব দেখে এক ভয়ংকর আগামীর কল্পনা মাথায় আসছিল। এসব ভেবে শুধু শুধু মন খারাপ করার কোন মানে হয় না। লাগাতার বৃষ্টির কারনে কি না জানিনা, এবারে রাস্তায় খেলনা, বেলুন ইত্যাদি বিক্রি করার লোকজন খুব একটা চোখে পড়ল না। গতবারের সেই ছেলেটাকে খোঁজার চেষ্টা করলাম – পেলাম না। জানিনা ওর মা সুস্থ হয়েছেন কি না কিংবা উল্টোটা ! জানা হ’ল না। আসলে আনন্দের উচ্ছ্বাসে কষ্টগুলো যখন কর্ণগোচর হয় না, তখন উপেক্ষিত হয় আনন্দ, কষ্টগুলোও থাকে অধরা। আমার ক্ষেত্রেও মন খারাপের কারন বোধহয় তাই, আবার অন্য কিছুও হতে পারে। মুশকিল হ’ল মন খারাপের কারন কিছুতেই নির্দিষ্ট করতে পারি না।
আজ মনখারাপ নিয়েই শুতে গেলাম। শুভ রাত্রি। আগামী কাল সপ্তম সুরে কিছু লিখব আশা করি।
শনিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২১
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
মুখ চাপা সত্য
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?
-
এক লাইনের কাব্যঃ অ.না.ক. ২১/০৩/২০১৭ এক লাইনেও কাব্য হয় দু'লাইনে ছন্দময় ।