সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯

ঊনিশ-বিশ


ঊনিশ-বিশ: অ.না.ক. 30/12/2019

সাত পাঁচ না ভেবেই কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না ঠিকই, তবে আগামী বছর আর বছর ক্যালেন্ডারে ঊনিশ-বিশ হলেও পরিস্থিতি যে ঊনিশ-বিশ হবে না একথা ঊনিশের পরিবেশ-পরিস্থিতি থেকে অনেকটাই আন্দাজ করা সম্ভব। আমরা জনগণ, 'গণ' শব্দটাকে গাণিতিক গড় করলে আমাদেরকে চার্লি চ্যাপলিনের ভাষায় 'হেড- লেস মনস্টার' বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবেনা। বৃত্তের কেন্দ্রে যে 'সে আছে আর পরিধির পৃষ্ঠতলে যারা শাসন করছে তারা আমাদেরই সিদ্ধান্তলব্ধ সরকার। কেন্দ্রের সূর্য তাপ ছড়াচ্ছে আর তারই চারপাশে ঘূর্ণায়মান রাজ্যগুলির কোন কোনটি তার থেকে ভিটামিন ডি সংশ্লেষের ক্ষমতা পাচ্ছে আবার সেই তাপের দহনে কোনকোনটি দহন জ্বালায় জর্জরিত। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে কেউ বলছেন 'মোদিভ্রম', আবার  তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে কেউ কেউ বলছেন জনগণের মতিভ্রম। সাম্প্রতিক সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ সহ  বেশ কয়েকটি রাজ্য তোলপাড়। বছরের শেষে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। রাজ্যে ওপার বাংলা থেকে আসা 'অনুপ্রবেশকারী'দের মধ্যে যে ভীতির মেঘ সঞ্চারিত হচ্ছে তাতে আগামী বছরটা এবছরের তুলনায় ঊনিশ-বিশ না হয়ে পরিস্থিতির ব্যবধান যে আকাশ-পাতাল হবে না তা নিশ্চিত 'রে বলা কঠিন। এই অশান্ত পরিস্থিতির মধ্যে 'ফাওবাদি'দের রমরমা। 'ফাওবাদি' মানে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করতে যারা ততপর। কেন্দ্র-রাজ্যের বিরোধের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রায় ভূমিকাহীন বেশ কিছু দল তাদের নেতা-নেত্রীরা পথে নেমে তাদের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে এবং আত্মপ্রকাশের চেষ্টায় মগ্ন। আর গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যমে এই 'ফাওবাদি'রা অতি সক্রিয়। সুযোগ বুঝে পেঁয়াজ মুখ লুকিয়েছে গুদামে। ফলে আমিশাষী জনগণ পেঁয়াজের লাগামহীন দরবৃদ্ধির নাগাল না পেয়ে নিরামিশাষী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আলুও তথৈ বচ। আলুহীন ব্যঞ্জনে অনভ্যস্ত বাঙালীর এখন মাথায় হাত। নববর্ষ উঁকি মারছে। এবছরের ক্ষত যে আগামী বছর ক্যান্সারে পরিণত হবে না সে গ্যারান্টি কে দেবেনাগরিকত্ব আইনের তীক্ষ্ণ নখের থাবা থেকে মুক্তি পাবার নিশ্চয়তা আদৌ কি পাওয়া যাবেঅযোধ্যা রায় নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিশৃঙখলা কতদূর গড়াবে সে নিয়ে আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। নির্ভয়া কান্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই এবছর কিছুদিন আগেই ঘটে গেল তেলেঙ্গানায় মহিলা পশু চিকিতসকের ওপর বর্বরোচিত যৌন নির্যাতন এবং তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা। পুরো দেশ যখন  অপরাধীদের কঠিনতম সাজা দেখার জন্য উদগ্রীব ঠিক তখনই 'পুলিশের গুলি'তে নিহত ' সেই অপরাধীরা, আদালতের রায় ঘোষণার আগেই। দেশে খুন-ধর্ষণের ঘটনা ক্রমবর্ধমান এবং বলা বাহুল্য প্রতিকারহীন সমাজব্যবস্থায় তা আগামী বছরগুলিতে কি ভয়ঙ্কর রুপ নিতে পারে সে আশঙ্কায় বুক দুরু দুরু।  এই সব চিন্তা করতে করতেই আমরা ২০১৯-এর সীমান্তে এসে হাজির। ঊনিশ গেলেও দুশ্চিন্তার অবসানের সম্ভাবনা বিশ বাঁও জলে। ৩৭০ ধারা রদ হওয়ার দৌলতে লাদাখ এবং জম্মু-কাশ্মীরের পৃথক দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হওয়া কিংবা বিক্রমের চাঁদের মাটি স্পর্শ করার ব্যর্থতা প্রভৃতি ২০১৯কে ইতিহাসে বিশেষ জায়গা দেবে। ক্রীড়া প্রেমিকরা মনে রাখবেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পিভি সিন্ধুর সোনা জয়, হিমা দাসের পাঁচটি পদক প্রাপ্তি ইত্যাদি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে  অভিনন্দনের বন্দি হওয়া এবং তার ফিরে আসার রুদ্ধশ্বাস ঘটনা মানুষের মনে দাগ রেখে যাবে। 'বুলবুল'-এর ধ্বংসলীলাও রেখাপাত করবে মনের গভীরে। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সময়ের সাথে আশঙ্কাজনক ক্রমাবনতি ঘটছে। ২০১৯-এর শেষে তাই ২০২০কে স্বাগত জানাতে গিয়ে আসন্ন দিনের রাজনৈতিক ভয়াবহতা নিয়ে জনগণ  কেমন যেন চিন্তাগ্রস্থ। সময় যেমন থেমে থাকে না, তেমনি সময়ের কাছে শিক্ষা নিয়ে জনগণের ভাবনা-চিন্তা পরিমার্জনের প্রয়োজনটাও গুরুত্বপূর্ণ। ঊনিশ-বিশ নয়, এই ভাবনা-চিন্তার ব্যবধান হওয়া উচিত অনেক বেশী।


বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৯

নবনীতা

নবনীতাঃ অ.না.ক. ০৭/১১/'১৯

কেউ কেউ এভাবেই জীবন শুরু করে,
যাতে আরেকটা জীবন পায় মৃত্যুর পরে।
নবজন্মের শুরু যখন জ্বলল চিতা
তার নাম চিরকাল থাক নবনীতা।

বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৯

পাশ-ফেল থাক বা না থাকঃ অমরনাথ কর্মকার


কারোও মৃত্যুতে একজন নেতা-মন্ত্রী কিংবা খ্যাতনামা ব্যক্তির শোক প্রকাশের ছবি বা সাফল্যের আনন্দোচ্ছ্বাস নানাভাবে ভিস্যুয়াল মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। জীবনের সুখ-দুঃখ আজ অনেকটা বিক্রয়যোগ্য পণ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। আনন্দ একটি ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রশ্ন কিন্তু আজকাল তা ফলাও ক’রে টিভিতে দেখানোর বা খবরের কাগজে প্রকাশিত হবার রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেতার সম্প্রচারে তা দৃশ্যমান হয় না বলেই বেতার আজ অনেকটাই ব্রাত্য। 

একটা যুতসই উপলক্ষ পেলেই শোক প্রকাশ কিংবা আনন্দোচ্ছ্বাস প্রকাশের আনুষ্ঠানিক আয়োজন করা বাঙালীর একটা প্রবৃত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়েছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে। ইংরেজদের মূলগত উদ্দেশ্য ছিল তাদের শাসন ব্যবস্থার ভীত পাকা-পোক্ত করা। আজ অবধি মোটামুটি সেই শিক্ষা ব্যবস্থাই চালু আছে এদেশে। হয়ত মাঝে মাঝে সংস্কার করা হয়েছে কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থায় আদৌ বিপ্লব আসেনি। এই সংস্কারের ফলে কতটা উপকার বা অপকার হয়েছে সে সব বিবেচনা না করেই বলা যায় আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রভাব রয়েই গেছে।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যাচর্চার পাশাপাশি পাশ-ফেলও ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিদ্যা চর্চা করার পর বিদ্যার্জনের মাপকাঠি হিসাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বা অকৃতকার্য হওয়ার নাম যথাক্রমে পাশ ও ফেল। ফেলের কোনো ডিভিশন বা গ্রেড নেই কিন্তু পাশের তা আছে। পরীক্ষায় ভাল ফল ক’রে আনন্দে আত্মহারা হয়ে প্রাণ হারানোর নজির নেই কিন্তু পরীক্ষায়  ফেল ক’রে প্রতি বছর হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের বাবা-মাও আত্মহনন করে। একটা নর্দমাকে যতই সংস্কার করা হোক না কেন, পরিকল্পিত নিকাশী ব্যবস্থা না থাকলে তার আবর্জনা স্থায়ীভাবে পরিস্কার রাখা দুঃসাধ্য। মাঝখানে বেশ কয়েক বছর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল প্রথা তুলে দেওয়া হয়েছিল। ফলে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তরণের ক্ষেত্রে কোন বাধা ছিল না। এই পদ্ধতি প্রবর্তনের অন্যতম কারন হিসাবে বলা হয়েছিল এতে স্কুল-ছুট শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমবে। এই সংস্কারের সুফল না পেয়েই কি সরকার পাশ-ফেল প্রথা পুনর্বহাল করার পরিকল্পনা নিয়েছে ?
বিদ্যার্জন বিষয়ে আমাদের ধারনা বৈষয়িক। অর্থাৎ শিক্ষার্থী ভালো নম্বর নিয়ে পাশ ক’রে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, মোটা মাইনের চাকুরীজীবি হোক এটাই সকলের প্রত্যাশিত। অর্থাৎ উদ্দেশ্য মোটা অঙ্কের অর্থোপার্জন।  তাই পাশ করলে আনন্দোচ্ছ্বাসের বন্যা বয়ে যায় আর ফেল করলেই হতাশা, আত্মহত্যা, পড়া ছেড়ে দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর একদিকে টিভি চ্যানেলে পাশ করা কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে উচ্ছ্বাস, অন্যদিকে অকৃতকার্যদের মুখ লুকানো, আত্মহনন। এ এক অদ্ভুত কন্ট্রাস্ট। পরীক্ষায় ভাল ফল করা নিঃসন্দেহে খুব গৌরবের, কিন্তু ফেল করলেই জীবন ব্যর্থ, এই ধারণা আমাদের মজ্জাগত। আসলে এই ধারণা সৃষ্টির উৎস কয়েক শতক ধ’রে চ’লে আসা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শিক্ষা পদ্ধতি। 

বঙ্কিমচন্দ্র বাংলায় ফেল করেছিলেন।  ১৮৫৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বি এ পরীক্ষার প্রবর্তন করে। সে বছর মোট ১৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র দু’জন পাশ করেছিলেন, তাও টেনে টুনে দ্বিতীয় বিভাগে-  একজন বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অন্যজন যদুনাথ বসু। আজ কোথায় বঙ্কিম চন্দ্র আর কোথায় যদুনাথ বসু। একথাও হয়ত জানা আছে যে বাঙালীর অন্যতম বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু প্রথমবার বিএ পরীক্ষায় ফেল করেন। পরবর্তীকালে বিএসসি, এমএসসি, ডিএসসি পরীক্ষায় তাঁর সাফল্য এবং বিজ্ঞানে তাঁর অবদান সম্পর্কে জানেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। বিশ শতকের উপমহাদেশের স্বনামধন্য চিকিৎসক নীল রতন সরকার কোন রকমে বিএ পাশ ক’রে শিক্ষকতা করতে শুরু করেন। কিন্তু ১৮৮৫ সালে তিনিই ডাক্তারিতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসক হিসাবে বিশ্ববন্দিত হন। এই উদাহরণগুলি দেওয়ার উদ্দেশ্য একটাই – পরীক্ষায় সাফল্য বা অকৃতকার্যতা কখনোই একজন মানুষের প্রতিভার মানদন্ড হতে পারে না। 

অর্ধ শতক আগেও বাঙালীর শিক্ষার মান ছিল উচ্চ। ইউরোপের মত না হলেও তাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতই। তারপর আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত দেশগুলি তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এনেছে পরিবর্তন নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মূল্য দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীকে মানসিক চাপ মুক্ত ক’রে তাদের কাছে শিক্ষাকে উপভোগ্য করার বিষয়ে। এছাড়াও শিক্ষার্থীর বিষয়ভিত্তিক আগ্রহকেও যথেষ্ট প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পাশ-ফেল থাকা বা না থাকা একেবারেই গুরুত্বহীন বিষয়। রবীন্দ্রনাথও চেয়েছিলেন আমাদের দেশের এই গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষায় ভিন্ন পদ্ধতি প্রবর্তনের। পাশ-ফেল থাকা বা না থাকা এই সমস্ত সংস্কারমূলক চিন্তা ভাবনার চেয়েও আজ  বেশি জরুরী হয়ে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থায় সামগ্রিক উন্নতি সাধন - শিক্ষাকে চাপ-মুক্ত আনন্দময় ক’রে তোলার ব্যাপারে কি পদ্ধতি অবলম্বন করা যায় সে দিকে বিশেষ নজর দেওয়া। এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সাহায্য নেওয়াটাও বোধহয় গুরুত্বপূর্ণ। শুধু প্রতিযোগিতার ইঁদুর-দৌড়ে অংশ নেওয়াই যদি শিক্ষাব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হয় তবে তা হবে প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ গড়ে তোলার অন্তরায়। এতে হয়ত ডিগ্রিধারীর সংখ্যা বাড়বে – শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির কাজে লাগবে না।   

বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৯

কবিতা কি কবি তা জানেন


নীতি শিক্ষা আজ খুব জরুরী


নীতি শিক্ষা আজ খুব জরুরী

শিক্ষার সম্পূর্ণতা তখনই যখন শিক্ষা একজন মানুষের কাছে তার সার্বিক বিকাশের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়। এই বিকাশ কেবলমাত্র মানসিক নয়, নৈতিক বিকাশও শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। সামাজিক জীব হিসাবে মানুষের সামাজিক চিন্তনকে প্রভাবিত করা এবং ‘ভুল’ ও ‘ঠিক’-এর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার ক্ষমতা সৃষ্টির প্রয়োজনে, বিশেষতঃ আজকের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের চরম দুঃসময়ে নীতিশিক্ষার মৌলিক চাহিদা অনস্বীকার্য। নীতি শিক্ষা বৈচিত্র্য, সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বহুবচনীয় মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়।
এখন যৌথ পরিবার ভেঙে অণু পরিবারে রূপান্তরের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ ক’রে শহরাঞ্চলে এই হার মাত্রাতিরিক্ত হারে ক্রমবর্ধমান। প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে টিকে থাকার তাগিদে ছোটোবেলা থেকেই ছাত্র-ছাত্রীরা পিতা-মাতার উচ্চাশাপূরণের মারাত্মক চাপের শিকার।  শিক্ষার বানিজ্যিকীকরণ, তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার, গণমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব, বিশ্বায়ন, বিলাসী জীবন যাপন প্রভৃতির পরিণামে দ্রুততার সাথে মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের অবনমন ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। নীতিশিক্ষার অপরিহার্যতার মূলগত কারন, নীতি শিক্ষা বৈচিত্রের সঙ্গে অভিযোজিত হ’তে শেখায়, শেখায় সহনশীলতা, পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন এবং বহুত্ববাদের মূল্য।
ইংরেজী MORAL  শব্দটি ল্যাটিন ‘মস’ (MOS)  বা ‘মরিস’ (MORIS) শব্দ থেকে উৎপন্ন যার অর্থ মানুষের রীতি-নীতি এবং আক্ষরিক অর্থ সামাজিক পরিবেশে মানুষ কিভাবে একসঙ্গে বসবাস করতে পারে। নৈতিক মূল্যবোধ একটি সর্বাঙ্গসুন্দর সৎ জীবন সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে যেখানে সততা, দায়ীত্বশীলতা, কর্তব্যপরায়নতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ঘটে।
উপযুক্ত পথ-প্রদর্শক না পেলে শিশুরা অতি সহজেই ভালো বা মন্দ যে কোন দিকেই প্রভাবিত হ’তে পারে। সুতরাং শিক্ষাঙ্গনে নীতিমালা শিক্ষার প্রয়োজন আছে যা সুন্দর জীবন যাপনে সাহায্য করে এবং পাশাপাশি শিশুকে সমাজের একজন সভ্য হিসাবে সামাজিক উন্নয়নে সামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জনে সাহায্য করে। শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেই নয়, সামগ্রিকভাবে সমাজের কল্যাণে আসে এমন নীতি শিক্ষা সর্বস্তরে প্রসারের প্রয়োজন আছে। শিশুদের জন্য নীতি শিক্ষার পরিকাঠামো এমন হওয়া প্রয়োজন যাতে তারা প্রথমেই ‘ভালো’ আর ‘মন্দ’-এর ভেদাভেদ বুঝতে সক্ষম হয়। এক্ষেত্রে বই-এর চেয়েও হাতে-কলমে শিক্ষার গুরুত্ব অধিক, সামাজিক পরিবেশের ভিন্নতা অনুযায়ী নীতি শিক্ষার ধরণ-ধারনও পৃথক হওয়া প্রয়োজন।
নীতি শিক্ষার প্রয়োজন জরুরী হয়ে ওঠার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারন হ’ল পৃথিবীর দ্রুত পরিবর্তন হওয়ার কারনে বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে তৈরি হচ্ছে সংঘাত যেখানে কোন নির্দিষ্ট বা একক আদর্শ বা নীতির স্থান নেই, এই বৈচিত্র্য আমাদেরকে কিংকর্তব্যবিমুঢ় ক’রে দিচ্ছে। এই নীতির বিভিন্নতার ব্যবধান ঘোচানো প্রায় অসম্ভব। সুতরাং এই বিভিন্নতাগুলির ধরণ বোঝা নীতিশিক্ষার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া প্রয়োজন।

                                                                        অমরনাথ কর্মকার ১৭/১০/২০১৯

বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৯

দিনান্তে গোধূলি - অ.না.ক. ১০/১০/২০১৯

দিনান্তে গোধূলি - অ.না.ক. ১০/১০/২০১৯


দিনান্তে দিগন্তে গোধূলি নেমেছে দূরে
সূর্য দিনভর তপ্ত রোদে পুড়ে পুড়ে
ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে রাতের গভীরে,
দরিয়ার মাঝি এখনো আসেনি ফিরে। 

                                                                                                                                                   

সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৯

নবমীতে মন খারাপ – অ.না.ক. ০৭/১০/২০১৯



                         নবমীতে মন খারাপ – অ.না.ক.  ০৭/১০/২০১৯

'যেও না নবমী নিশি' হাজার আকুতি সত্ত্বেও নবমীর নিশাবসান হবেই। আসলে এই আকুতির মূল বক্তব্য সবের আনন্দের স্থায়ীত্ব আর একটু দীর্ঘ 'লে ভাল 'ত। আমার যেহেতু পুজো এলেই মন খারাপের রোগ আছে, অতএব সে আকুতি প্রকাশের আগ্রহ আমার নেই। তবে নবমীতে আর সকলের ভারাক্রান্ত মুখের দিকে চেয়ে আমার মন খারাপ হয়। মন খারাপ মূলত সমবেদনা প্রকাশ। অনেক প্রতিমা দেখেছি এবার। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিমার আদলের পরিবর্তন নিয়ে কেউ খুব একটা মাথা ঘামায় না, বরং থিম নিয়েই সবাই যেন বেশি ভাবিত রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুর পালটে যাচ্ছে কপি রাইট উঠিয়ে নেওয়ার পর থেকে। পুরোনো গান রিমেক করা হচ্ছে নতুন আঙ্গীকে। সবই আধুনিকতাকে জানান দিতে। আমরা ছোট বেলায় খুব সাহ নিয়ে প্রতিটা প্যান্ডেলের দুর্গা প্রতিমার মুখ-চোখের আদল দেখতাম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। বিশেষ 'রে অসুর আর কার্তিকের চেহারা নিয়ে আমাদের মধ্যে সমালোচনার ধুম পড়ে যেত।  এখন দুর্গা প্রতিমাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট বিরল ঘটনা। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরের হরিশ মুখার্জী রোডের দে বাড়ির পুজোতে কিন্তু গত দেড়শ বছর ধরে অসুরকে দেখা যায় কোট-টাই পড়া ইংরেজের বেশে। এর ব্যাখ্যা স্পষ্ট। অসুররূপী ইংরেজদের নিধন করেই ভারতবর্ষের স্বাধীনতা এসেছিল। বাংলা ও বাঙালির চিরাচরিত জীবনধারাতে বিশেষ করে প্রাচীন সমাজের গতানুগতিক রীতিনীতি বদলের ক্ষেত্রে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি অগ্রণী ভূমিকা পালন  করেছিল। প্রিন্স দ্বারকানাথের স্ত্রী দিগম্বরীদেবী ছিলেন অসামান্যা সুন্দরী এক নারী, কথিত আছে তাঁর আমলে ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপুজোর মূর্তি দিগম্বরীদেবীর মুখের আদলে তৈরি করা হত। যদিও পরবর্তীকালে ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার কারনে ঠাকুর পরিবারে দুর্গাপুজো সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। খারাপ লাগে, যে দেবীকে ঘিরে এই উৎসব, তাঁর প্রতি মনোনিবেশ না ক’রে অন্যান্য বিষয়ের প্রতিই উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বেশী। এক সময় পুজোর গান নিয়ে মাতামাতি হ’ত। এখন আর আলাদা ক’রে পুজোর গান তৈরি হয় না। শিল্পীদের মধ্যেও এই আক্ষেপ শোনা যায়। তবে, আমাদের একটাই সান্ত্বনা, ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ বাঙালী ছিলেন আর তিনি অফুরন্ত গান লিখেছিলেন। আজ নবমী – অর্থাৎ দুর্গোৎসবের অন্তিম দিন। আগামীকালই মাটির প্রতিমা জলে গুলে যাবে। প্রতিমা মাটির। মৃৎশিল্পীর বছরভর অক্লান্ত পরিশ্রম আর তাঁর শৈল্পিক কুশলতায় তিল তিল ক’রে গড়ে তোলা শিল্প কর্মের সলিল সমাধি হবে দশমীতে। যেহেতু মৃৎশিল্প তাই বিসর্জনে দুঃখ নেই। আগামী বছর আবার  শিল্পীর কুশলতা প্রকাশ পাবে, তৈরি হবে আর্থিক আনুকূল্য। কিন্তু এই যে থিম-এর পেছনে বিপুল অর্থ-ব্যয় তার দায়-ভার কিন্তু নিতে হবে আমাদের সকলকেই, ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে । এখানেই আমার আপত্তি। যা হোক, গত কয়েকদিনের রঙিন জীবনের শেষে আবার ফিরে আসবে সাদা-কালো প্রাত্যহিক জীবন যাপন। এটা মন খারাপের কারন হলেও এটাকে বাস্তব ধ’রে সারা বছর আনন্দমুখর থাকাটাই হয়ত যুক্তিসঙ্গত। শুভ রাত্রি। কাল দশমীতে আবার লেখার চেষ্টা করব – এবারের দুর্গাপুজোয় শেষ লেখা। শুভ রাত্রি।  
  

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?