সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯

ঊনিশ-বিশ


ঊনিশ-বিশ: অ.না.ক. 30/12/2019

সাত পাঁচ না ভেবেই কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না ঠিকই, তবে আগামী বছর আর বছর ক্যালেন্ডারে ঊনিশ-বিশ হলেও পরিস্থিতি যে ঊনিশ-বিশ হবে না একথা ঊনিশের পরিবেশ-পরিস্থিতি থেকে অনেকটাই আন্দাজ করা সম্ভব। আমরা জনগণ, 'গণ' শব্দটাকে গাণিতিক গড় করলে আমাদেরকে চার্লি চ্যাপলিনের ভাষায় 'হেড- লেস মনস্টার' বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবেনা। বৃত্তের কেন্দ্রে যে 'সে আছে আর পরিধির পৃষ্ঠতলে যারা শাসন করছে তারা আমাদেরই সিদ্ধান্তলব্ধ সরকার। কেন্দ্রের সূর্য তাপ ছড়াচ্ছে আর তারই চারপাশে ঘূর্ণায়মান রাজ্যগুলির কোন কোনটি তার থেকে ভিটামিন ডি সংশ্লেষের ক্ষমতা পাচ্ছে আবার সেই তাপের দহনে কোনকোনটি দহন জ্বালায় জর্জরিত। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে কেউ বলছেন 'মোদিভ্রম', আবার  তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে কেউ কেউ বলছেন জনগণের মতিভ্রম। সাম্প্রতিক সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ সহ  বেশ কয়েকটি রাজ্য তোলপাড়। বছরের শেষে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। রাজ্যে ওপার বাংলা থেকে আসা 'অনুপ্রবেশকারী'দের মধ্যে যে ভীতির মেঘ সঞ্চারিত হচ্ছে তাতে আগামী বছরটা এবছরের তুলনায় ঊনিশ-বিশ না হয়ে পরিস্থিতির ব্যবধান যে আকাশ-পাতাল হবে না তা নিশ্চিত 'রে বলা কঠিন। এই অশান্ত পরিস্থিতির মধ্যে 'ফাওবাদি'দের রমরমা। 'ফাওবাদি' মানে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করতে যারা ততপর। কেন্দ্র-রাজ্যের বিরোধের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রায় ভূমিকাহীন বেশ কিছু দল তাদের নেতা-নেত্রীরা পথে নেমে তাদের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে এবং আত্মপ্রকাশের চেষ্টায় মগ্ন। আর গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যমে এই 'ফাওবাদি'রা অতি সক্রিয়। সুযোগ বুঝে পেঁয়াজ মুখ লুকিয়েছে গুদামে। ফলে আমিশাষী জনগণ পেঁয়াজের লাগামহীন দরবৃদ্ধির নাগাল না পেয়ে নিরামিশাষী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আলুও তথৈ বচ। আলুহীন ব্যঞ্জনে অনভ্যস্ত বাঙালীর এখন মাথায় হাত। নববর্ষ উঁকি মারছে। এবছরের ক্ষত যে আগামী বছর ক্যান্সারে পরিণত হবে না সে গ্যারান্টি কে দেবেনাগরিকত্ব আইনের তীক্ষ্ণ নখের থাবা থেকে মুক্তি পাবার নিশ্চয়তা আদৌ কি পাওয়া যাবেঅযোধ্যা রায় নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিশৃঙখলা কতদূর গড়াবে সে নিয়ে আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। নির্ভয়া কান্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই এবছর কিছুদিন আগেই ঘটে গেল তেলেঙ্গানায় মহিলা পশু চিকিতসকের ওপর বর্বরোচিত যৌন নির্যাতন এবং তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা। পুরো দেশ যখন  অপরাধীদের কঠিনতম সাজা দেখার জন্য উদগ্রীব ঠিক তখনই 'পুলিশের গুলি'তে নিহত ' সেই অপরাধীরা, আদালতের রায় ঘোষণার আগেই। দেশে খুন-ধর্ষণের ঘটনা ক্রমবর্ধমান এবং বলা বাহুল্য প্রতিকারহীন সমাজব্যবস্থায় তা আগামী বছরগুলিতে কি ভয়ঙ্কর রুপ নিতে পারে সে আশঙ্কায় বুক দুরু দুরু।  এই সব চিন্তা করতে করতেই আমরা ২০১৯-এর সীমান্তে এসে হাজির। ঊনিশ গেলেও দুশ্চিন্তার অবসানের সম্ভাবনা বিশ বাঁও জলে। ৩৭০ ধারা রদ হওয়ার দৌলতে লাদাখ এবং জম্মু-কাশ্মীরের পৃথক দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হওয়া কিংবা বিক্রমের চাঁদের মাটি স্পর্শ করার ব্যর্থতা প্রভৃতি ২০১৯কে ইতিহাসে বিশেষ জায়গা দেবে। ক্রীড়া প্রেমিকরা মনে রাখবেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পিভি সিন্ধুর সোনা জয়, হিমা দাসের পাঁচটি পদক প্রাপ্তি ইত্যাদি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে  অভিনন্দনের বন্দি হওয়া এবং তার ফিরে আসার রুদ্ধশ্বাস ঘটনা মানুষের মনে দাগ রেখে যাবে। 'বুলবুল'-এর ধ্বংসলীলাও রেখাপাত করবে মনের গভীরে। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সময়ের সাথে আশঙ্কাজনক ক্রমাবনতি ঘটছে। ২০১৯-এর শেষে তাই ২০২০কে স্বাগত জানাতে গিয়ে আসন্ন দিনের রাজনৈতিক ভয়াবহতা নিয়ে জনগণ  কেমন যেন চিন্তাগ্রস্থ। সময় যেমন থেমে থাকে না, তেমনি সময়ের কাছে শিক্ষা নিয়ে জনগণের ভাবনা-চিন্তা পরিমার্জনের প্রয়োজনটাও গুরুত্বপূর্ণ। ঊনিশ-বিশ নয়, এই ভাবনা-চিন্তার ব্যবধান হওয়া উচিত অনেক বেশী।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?