নীতি শিক্ষা আজ খুব জরুরী
শিক্ষার সম্পূর্ণতা তখনই যখন শিক্ষা একজন মানুষের কাছে তার সার্বিক বিকাশের
হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়। এই বিকাশ কেবলমাত্র মানসিক নয়, নৈতিক বিকাশও শিক্ষার
অন্তর্ভুক্ত। সামাজিক জীব হিসাবে মানুষের সামাজিক চিন্তনকে প্রভাবিত করা এবং ‘ভুল’
ও ‘ঠিক’-এর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার ক্ষমতা সৃষ্টির প্রয়োজনে, বিশেষতঃ আজকের
নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের চরম দুঃসময়ে নীতিশিক্ষার মৌলিক চাহিদা অনস্বীকার্য।
নীতি শিক্ষা বৈচিত্র্য, সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বহুবচনীয় মূল্যবোধের
শিক্ষা দেয়।
এখন যৌথ পরিবার ভেঙে অণু পরিবারে রূপান্তরের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ
ক’রে শহরাঞ্চলে এই হার মাত্রাতিরিক্ত হারে ক্রমবর্ধমান। প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে
টিকে থাকার তাগিদে ছোটোবেলা থেকেই ছাত্র-ছাত্রীরা পিতা-মাতার উচ্চাশাপূরণের
মারাত্মক চাপের শিকার। শিক্ষার
বানিজ্যিকীকরণ, তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার, গণমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব, বিশ্বায়ন,
বিলাসী জীবন যাপন প্রভৃতির পরিণামে দ্রুততার সাথে মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের অবনমন
ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। নীতিশিক্ষার অপরিহার্যতার মূলগত কারন, নীতি শিক্ষা বৈচিত্রের
সঙ্গে অভিযোজিত হ’তে শেখায়, শেখায় সহনশীলতা, পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন এবং
বহুত্ববাদের মূল্য।
ইংরেজী MORAL শব্দটি ল্যাটিন ‘মস’ (MOS) বা ‘মরিস’ (MORIS) শব্দ থেকে উৎপন্ন যার অর্থ মানুষের রীতি-নীতি এবং আক্ষরিক অর্থ সামাজিক
পরিবেশে মানুষ কিভাবে একসঙ্গে বসবাস করতে পারে। নৈতিক মূল্যবোধ একটি
সর্বাঙ্গসুন্দর সৎ জীবন সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে যেখানে সততা, দায়ীত্বশীলতা,
কর্তব্যপরায়নতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষের শান্তিপূর্ণ
সহাবস্থান ঘটে।
উপযুক্ত পথ-প্রদর্শক না পেলে শিশুরা অতি সহজেই ভালো বা মন্দ যে কোন দিকেই
প্রভাবিত হ’তে পারে। সুতরাং শিক্ষাঙ্গনে নীতিমালা শিক্ষার প্রয়োজন আছে যা সুন্দর
জীবন যাপনে সাহায্য করে এবং পাশাপাশি শিশুকে সমাজের একজন সভ্য হিসাবে সামাজিক
উন্নয়নে সামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জনে সাহায্য করে। শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেই নয়,
সামগ্রিকভাবে সমাজের কল্যাণে আসে এমন নীতি শিক্ষা সর্বস্তরে প্রসারের প্রয়োজন আছে।
শিশুদের জন্য নীতি শিক্ষার পরিকাঠামো এমন হওয়া প্রয়োজন যাতে তারা প্রথমেই ‘ভালো’
আর ‘মন্দ’-এর ভেদাভেদ বুঝতে সক্ষম হয়। এক্ষেত্রে বই-এর চেয়েও হাতে-কলমে শিক্ষার
গুরুত্ব অধিক, সামাজিক পরিবেশের ভিন্নতা অনুযায়ী নীতি শিক্ষার ধরণ-ধারনও পৃথক হওয়া
প্রয়োজন।
নীতি শিক্ষার প্রয়োজন জরুরী হয়ে ওঠার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারন হ’ল পৃথিবীর
দ্রুত পরিবর্তন হওয়ার কারনে বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে তৈরি হচ্ছে সংঘাত যেখানে কোন
নির্দিষ্ট বা একক আদর্শ বা নীতির স্থান নেই, এই বৈচিত্র্য আমাদেরকে
কিংকর্তব্যবিমুঢ় ক’রে দিচ্ছে। এই নীতির বিভিন্নতার ব্যবধান ঘোচানো প্রায় অসম্ভব।
সুতরাং এই বিভিন্নতাগুলির ধরণ বোঝা নীতিশিক্ষার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া
প্রয়োজন।
অমরনাথ কর্মকার ১৭/১০/২০১৯