বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৯

দিনান্তে গোধূলি - অ.না.ক. ১০/১০/২০১৯

দিনান্তে গোধূলি - অ.না.ক. ১০/১০/২০১৯


দিনান্তে দিগন্তে গোধূলি নেমেছে দূরে
সূর্য দিনভর তপ্ত রোদে পুড়ে পুড়ে
ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে রাতের গভীরে,
দরিয়ার মাঝি এখনো আসেনি ফিরে। 

                                                                                                                                                   

সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৯

নবমীতে মন খারাপ – অ.না.ক. ০৭/১০/২০১৯



                         নবমীতে মন খারাপ – অ.না.ক.  ০৭/১০/২০১৯

'যেও না নবমী নিশি' হাজার আকুতি সত্ত্বেও নবমীর নিশাবসান হবেই। আসলে এই আকুতির মূল বক্তব্য সবের আনন্দের স্থায়ীত্ব আর একটু দীর্ঘ 'লে ভাল 'ত। আমার যেহেতু পুজো এলেই মন খারাপের রোগ আছে, অতএব সে আকুতি প্রকাশের আগ্রহ আমার নেই। তবে নবমীতে আর সকলের ভারাক্রান্ত মুখের দিকে চেয়ে আমার মন খারাপ হয়। মন খারাপ মূলত সমবেদনা প্রকাশ। অনেক প্রতিমা দেখেছি এবার। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিমার আদলের পরিবর্তন নিয়ে কেউ খুব একটা মাথা ঘামায় না, বরং থিম নিয়েই সবাই যেন বেশি ভাবিত রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুর পালটে যাচ্ছে কপি রাইট উঠিয়ে নেওয়ার পর থেকে। পুরোনো গান রিমেক করা হচ্ছে নতুন আঙ্গীকে। সবই আধুনিকতাকে জানান দিতে। আমরা ছোট বেলায় খুব সাহ নিয়ে প্রতিটা প্যান্ডেলের দুর্গা প্রতিমার মুখ-চোখের আদল দেখতাম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। বিশেষ 'রে অসুর আর কার্তিকের চেহারা নিয়ে আমাদের মধ্যে সমালোচনার ধুম পড়ে যেত।  এখন দুর্গা প্রতিমাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট বিরল ঘটনা। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরের হরিশ মুখার্জী রোডের দে বাড়ির পুজোতে কিন্তু গত দেড়শ বছর ধরে অসুরকে দেখা যায় কোট-টাই পড়া ইংরেজের বেশে। এর ব্যাখ্যা স্পষ্ট। অসুররূপী ইংরেজদের নিধন করেই ভারতবর্ষের স্বাধীনতা এসেছিল। বাংলা ও বাঙালির চিরাচরিত জীবনধারাতে বিশেষ করে প্রাচীন সমাজের গতানুগতিক রীতিনীতি বদলের ক্ষেত্রে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি অগ্রণী ভূমিকা পালন  করেছিল। প্রিন্স দ্বারকানাথের স্ত্রী দিগম্বরীদেবী ছিলেন অসামান্যা সুন্দরী এক নারী, কথিত আছে তাঁর আমলে ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপুজোর মূর্তি দিগম্বরীদেবীর মুখের আদলে তৈরি করা হত। যদিও পরবর্তীকালে ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার কারনে ঠাকুর পরিবারে দুর্গাপুজো সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। খারাপ লাগে, যে দেবীকে ঘিরে এই উৎসব, তাঁর প্রতি মনোনিবেশ না ক’রে অন্যান্য বিষয়ের প্রতিই উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বেশী। এক সময় পুজোর গান নিয়ে মাতামাতি হ’ত। এখন আর আলাদা ক’রে পুজোর গান তৈরি হয় না। শিল্পীদের মধ্যেও এই আক্ষেপ শোনা যায়। তবে, আমাদের একটাই সান্ত্বনা, ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ বাঙালী ছিলেন আর তিনি অফুরন্ত গান লিখেছিলেন। আজ নবমী – অর্থাৎ দুর্গোৎসবের অন্তিম দিন। আগামীকালই মাটির প্রতিমা জলে গুলে যাবে। প্রতিমা মাটির। মৃৎশিল্পীর বছরভর অক্লান্ত পরিশ্রম আর তাঁর শৈল্পিক কুশলতায় তিল তিল ক’রে গড়ে তোলা শিল্প কর্মের সলিল সমাধি হবে দশমীতে। যেহেতু মৃৎশিল্প তাই বিসর্জনে দুঃখ নেই। আগামী বছর আবার  শিল্পীর কুশলতা প্রকাশ পাবে, তৈরি হবে আর্থিক আনুকূল্য। কিন্তু এই যে থিম-এর পেছনে বিপুল অর্থ-ব্যয় তার দায়-ভার কিন্তু নিতে হবে আমাদের সকলকেই, ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে । এখানেই আমার আপত্তি। যা হোক, গত কয়েকদিনের রঙিন জীবনের শেষে আবার ফিরে আসবে সাদা-কালো প্রাত্যহিক জীবন যাপন। এটা মন খারাপের কারন হলেও এটাকে বাস্তব ধ’রে সারা বছর আনন্দমুখর থাকাটাই হয়ত যুক্তিসঙ্গত। শুভ রাত্রি। কাল দশমীতে আবার লেখার চেষ্টা করব – এবারের দুর্গাপুজোয় শেষ লেখা। শুভ রাত্রি।  
  

রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৯

অষ্টমীতে মন খারাপ - ০৬/১০/২০১৯

                                              অষ্টমীতে মন খারাপঃ অ.না.ক. ০৬/১০/২০১৯

অষ্টমী আজ।। মন খারাপের তীব্রতা একটু যেন ফিকে হয়েছে। সারাদিন চেষ্টা করেছি মনকে প্রশ্রয় না দিতে। গতকাল আমাকে যেতে হয়েছিল শপিং মলে, বাকী থাকা উপহার কেনার উদ্দেশ্যে। পুজোতে আমি সবাইকে উপহার দিই না - আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যাদের বাস্তবিক অর্থানুকুল্য নেই তাদেরকেই উপহার দেওয়ার চেষ্টা করি আমার সীমিত ক্ষমতার মধ্যে। আমার নিজের জন্য যখন একটা প্যান্ট বাছাই চলছে ততক্ষনাৎ মনে প'ড়ে গেল এক দরিদ্র আত্মীয়ের কথা যার কথা এবার ভাবাই হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমার প্যান্ট কেনা বন্ধ রেখে সেই উপহার কেনা হ'ল। আজ সেই আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে উপহার দিয়ে এসেছি। সেখানে গিয়ে বুঝলাম আমার উপহারটি প্রত্যাশিত ছিল - নইলে এবার পুজো কাটাতে হ'ত পুরোনো পোশাকেই। মন খারাপের মধ্যেই খানিকটা মানসিক তৃপ্তি পেলাম। সত্যি বলতে কি ছোট বেলায়, যখন পুজোতে উপহার পেলে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কথা, আমি আমার আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে সেভাবে উপহার পাইনি, এমনকি ধনী আত্মীয়দের কাছ থেকেও নয়। তখন পুজোতে দুঃখ হ’ত। সেই দিনগুলোর কথা পুজো এলে খুব মনে পড়ে। মন খারাপ হয়। তাই পুজো এলে আমি তাদেরই উপহার দিই যারা আমার সামান্য উপহারে আনন্দিত হয়। না পাওয়ার দুঃখ ভুলতে দানই সবচে’ ভাল দাওয়াই – আমি এই তত্ত্বে বিশ্বাসী। পুজোর উপহারের কথা যখন উঠলই তখন একটা কথা খুব মনে হচ্ছে, পুজোতে উপহার হিসাবে শুধু নতুন পোষাক কেন, অন্য অনেক উপহারও তো দেওয়া যেতে পারে। হয়ত প্রথাগত পরম্পরার কারনে এর ব্যতিক্রম ঘটে না, কিন্তু প্রথা তো ভাঙাই যায়। জানা যায় দ্বারকানাথের কাছ থেকে প্রত্যেক পুজোতেই ঠাকুরবাড়ির মেয়ে-বউ উপহার পেতেন এক শিশি দামী সুগন্ধী, খোঁপায় দেওয়ার সোনা বা রুপোর ফুল, কাচের চুড়ি আর নতুন বই। আজ রাস্তায় চলতে চলতে সেই বাচ্চা ছেলেটার কথা খুব মনে পড়ছিল গত বছর পুজোতে যাকে দেখেছিলাম উৎসবের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে বুদবুদ তৈরির যন্ত্র বিক্রি করছে জীর্ণ পোশাকে। আর তারই সমবয়সীরা নতুন পোশাকে তার কাছে হাজির ক্রেতার ভূমিকায়। ছেলেটার জন্য মন খারাপ হ'ল। মনে মনে সান্ত্বনা পাবার চেষ্টা করলাম, হয়ত তার বাবার অসুখ সেরেছে। এবছর নিশ্চয় সে নতুন পোশাকে ঠাকুর দেখছে আনন্দ নিয়ে। লক্ষ্য ক'রে দেখেছি এখন ভিক্ষাবৃত্তি অনেকটাই কমেছে। কিন্তু এবার পুজোয় কিছু মানুষকে দেখলাম ভিক্ষা চাইতে, চেহারায় বা পোশাকে আদৌ তাদেরকে ভিখারী বলে মনে হবে না।প্রকৃত আর ভন্ডের পার্থক্য বোঝা যত কঠিন হচ্ছে, প্রকৃত অসহায়রা তত বঞ্চিত হচ্ছে। গত দু’দিন পুজো প্যান্ডেলে ঘুরতে ঘুরতে অনেক জায়গায় পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ে নানান প্রচার দেখেছি। বিশেষ ক’রে জল সংরক্ষণ ও প্লাস্টিক বর্জন বিষয়ে। জানিনা এই সচেতনতা কতটা কার্যকরী। পুজো যেমন বছরে একবার আসে, জানিনা মানুষ ঐ একদিনের জন্যই সচেতন হয় কি না। অথচ রাস্তার ধারের পৌরসভার টাইম কলের পানীয় জল দিনের পর দিন অকারনে ড্রেনে যাচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জন বলতে আমরা জানছি প্লাষ্টিকের ব্যাগ পরিহার করা। অথচ পুজো প্যান্ডেলের বাইরে পসরা সাজিয়ে বিক্রি হচ্ছে বাচ্চাদের প্লাস্টিকের খেলনা। এই ধরনের খেলনা বা প্লাস্টিকের দ্রব্য তৈরি বন্ধ করার সরকারী উদ্যোগ সেভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না । উৎসব উৎসবের মত পালিত হোক, এর সঙ্গে নানান বিষয় মিশিয়ে দুর্গাপুজোর মৌলিকত্ব নষ্ট ক’রে তাকে জটিল করার আমি ঘোর বিরোধী। অষ্টমীর রাস্তায় ভীড়ের দাপটে পথ চলা কঠিন, তাই আশপাশের কয়েকটা প্যান্ডেল ঘুরে বাড়ি ফিরে এসেছি। ঘরের বোকা বাক্সটা তো রয়েইছে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর জন্য।মন খারাপ এখন লঘুতর। উৎসব প্রায় শেষের দিকে। কাল নবমী – আবার লিখব এই আশা নিয়ে আপাতত বিছানায়।

শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৯

সপ্তমীতে মন খারাপ ০৫/১০/২০১৯

সপ্তমীতে মন খারাপ ০৫/১০/২০১৯

পুজো এলেই মন খারাপ হয়। এর থেকে বেরোনোর কোন পথ খুঁজে পাইনি আজও। আসলে কেন জানিনা উৎসবের জনারণ্যে  নিজেকে বড্ড নিঃসঙ্গ লাগে। আজ সপ্তমী। প্রিয়জনদের আবদার মেটানো আর সামাজিকতার খাতিরে বেরিয়েছিলাম প্যান্ডেল দেখতে, রংবাহারী আধুনিক আলোকসজ্জা দেখতে। তার চেয়েও সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু 'থিম' দেখার আগ্রহ ছিল  বেশি। মন খারাপ লাগছিল এই ভেবে যে, যে দেবীর আরাধনা ঘিরে এই উৎসব  তাঁর প্রসঙ্গ, তাঁর মূর্তির সৌন্দর্য নিয়ে কোন আলোচনাই অনুপস্থিত। কেবল প্যান্ডেলের কারুকার্য আর থিম এগুলোই প্রায় সবার মুখে মুখে। বারবার মনে হচ্ছিল এগুলোর জন্য তো পৃথক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে - দুর্গা পুজো কেন?  তাতে কি দেবীকে ছোট করা হচ্ছে না!  জানি একান্ত এই ব্যক্তিগত মতামত গ্রহণযোগ্য হবে না।  আমাদের ছোট বেলায় আলোকসজ্জা পুজো মন্ডপের অন্যতম আকর্ষণের বিষয় ছিল ঠিকই কিন্তু বেশ মনে আছে সবার মুখে মুখে ফিরত কোন প্যান্ডেলে দুর্গার মুখ কেমন হয়েছে, কোথায় অসুরের চেহারাটা মন কেড়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রসঙ্গত ব'লে রাখি আমি আধুনিকতায় বিশ্বাসী কিন্তু আধুনিকতার সাথে প্রাসঙ্গিকতার মেল বন্ধন না থাকলে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য হয় না আমার কাছে। এসব দেখে শুনেই মন খারাপ হয়, সহস্র মানুষের ভিড়েও নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে হয়। আমাদের পাড়ার এক প্যান্ডেলের সামনে দেখলাম পুজো কমিটির তরফ থেকে গরীবদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণের অনুষ্ঠান চলছে। মঞ্চে একে একে ডাকা হচ্ছে বস্ত্র গ্রহণের উদ্দেশ্যে। দেখলাম আমাদের পাড়ার লালু মাথা নিচু করে মঞ্চে উঠে আবার মাথা নিচু করেই বস্ত্র হাতে নেমে দ্রুত মিশে গেল মানুষের ভিড়ে। বুঝতে বাকী রইল না ও লজ্জা পেয়েছে। লালু ভীষন মেধাবী ছাত্র। ওর দারিদ্রের কথা মুখ ফুটে কখনও বলতে শুনিনি। লেখাপড়ার জন্য পাড়া থেকে আমরা নিয়মিত অর্থ সাহায্য করি। মনটা খারাপ হ'ল। বস্ত্র বিতরণ কি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে পুজো প্যান্ডেলে হাজার হাজার মানুষের সামনেই করতে হবে!  দরিদ্রের কি লাজ লজ্জা নেই?  এসব ভেবে লাভ হবে না জানি, তবুও মনে খোঁচা দেয়। পরিণতি মন খারাপ। মন খারাপ হলে সময় যেন দীর্ঘায়িত হয় - সময় ধার নেওয়ার মত পাশে কাউকে পাই না ব'লে কলমকে সঙ্গী করি। শেষে কবিতায় চার লাইন -
মন খারাপে মন না দিয়ে
খুলে রাখি বুকের বোতাম,
ঠান্ডা বাতাস হুড়মুড়িয়ে
ঢুকলে আমি স্নিগ্ধ হতাম।

মন খারাপ হ'লে

মন খারাপ হ'লে - অ..না.ক ০৫/১০/২০১৯

মন খারাপে মন না দিয়ে
খুলে রাখি বুকের বোতাম,
ঠান্ডা বাতাস হুড়মুড়িয়ে
ঢুকলে আমি স্নিগ্ধ হতাম।

পুজোয় মন খারাপঃ আজ ষষ্ঠী ০৪/১০/২০১৯

না লিখে পারলাম না।  অনুভূতিগুলো মনের মধ্যে যেভাবে প্রাণচঞ্চল হয়, লেখনির প্রকাশে তা ম্রিয়মান হবে জেনেও লিখছি, মনের তাৎক্ষণিক উপলব্ধি লিপিবদ্ধ করে রাখার তাগিদে। পূজো আসন্ন জানি, কেউ না বলুক অন্তত ক্যালেন্ডার বলে দিচ্ছে। বলে দিচ্ছে দোকানে দোকানে, শপিং মলে ক্রেতার অস্বাভাবিক ভিড়। পুজোর আগমণবার্তা সবার আগে যাদের নিঃশব্দে ঘোষণা করার কথা সে বেচারিরা এখন কেমন যেন নির্বিকার। গতকাল একটু বেশি রাতে বাড়ি ফিরছিলাম। পঞ্চমীর রাত - মনে হ'ল শিউলি ফুলের সুবাস পাচ্ছি। অথচ আমি নিশ্চিত এ তল্লাটে কোথাও শিউলি ফুলের গাছ নেই - সবুজের প্রাণবন্ত সমারোহ খুন হয়েছে কংক্রিটের আগ্রাসনের কাছে। এখন গাছ নয়, মাথা উঁচু ক'রে দাঁড়িয়ে আছে দাম্ভিক ফ্ল্যাট। ঠিক যে জায়গা থেকে গন্ধটা পেলাম, সেখানে থমকে দাঁড়ালাম খানিক্ষণ - রাস্তার উজ্জ্বল আলোয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে তন্ন তন্ন ক'রে খোঁজার চেষ্টা করলাম শিউলির ঘ্রাণের উৎস। পেলাম না। মন খারাপ হ'ল। বাড়ি ফিরে ঘুমাবার আগে আবার সেই সুগন্ধ পেলাম। বুঝলাম মনের ভুল। ছোট বেলায় পুজোর আগে প্রকৃতির অদ্ভুত পরিবর্তন জানান দিত পুজো এসে গেছে। আমাদের পাড়াতেই  মাঠের প্রান্তে সারি সারি কাশফুল আর মাথার ওপরে পেঁজা তুলোর মত শারদ মেঘ দেখে মনে আনন্দ হ'ত। মাঝে মাঝে ছুটে যেতাম রেশম-কোমল কাশফুলের গায়ে আলতো  স্পর্শ দিয়ে শরতের সবটুকু অনুভূতি নিংড়ে নিতে। আর একটু রাত বাড়লেই জানলা দিয়ে হালকা হিমেল বাতাসের সঙ্গে ভেসে আসত মাতাল করা শিউলির সুবাস। প্রকৃতির সাথে মনের যোগাযোগ নিবিড়। রাত্রি হ'লেই ঘুম পাওয়া, ভোর হ'লে জেগে ওঠা,বৃষ্টি হলে মন উদাস হওয়ার মত দুর্গাপুজোর আগমনীর  আগাম বার্তা তো এতদিন 'ব্রেকিং নিউজ' এর মত প্রকৃতিই শুনিয়ে এসেছে। এখনো শোনায় নিশ্চয়। হয়ত আমাদের মত ইট কাঠ কংক্রিটের জঙ্গলে বন্দি-দশায় যারা প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি তারা প্রকৃতির কাছ থেকে সে সংবাদ পাই না। বৈদ্যুতিক আলোর তীব্রতায় ক্রমশ হারিয়ে ফেলছি দিন-রাতের ব্যবধান বোঝার ক্ষমতা। হ্যাঁ, ইতিমধ্যেই উদ্ধার ক'রে ফেলেছি গতরাতের শিউলির সুবাস পাওয়ার কারন। আসলে, 'রাতের সব তারাই থাকে দিনের আলোর গভীরে'। যে জায়গা থেকে গতকাল শিউলির গন্ধ পেয়েছিলাম, ঠিক সেই জায়গাতে একদা একটা শিউলি গাছ ছিল। আমরা ছোটবেলায় খুব ভোরে  উঠে সেখান থেকে শিউলি কুড়িয়ে মায়ের কাছে দিতাম পুজোর উদ্দেশ্যে। শরৎ এলে ভোরবেলা বন্ধুদের মিলিত হবার এ এক অছিলা ছিল। সেই স্মৃতি অজান্তেই উঁকি দিয়েছিল মনে, তাই শিউলির সুবাস পেয়েছিলাম। এখন সেখানে গগনচুম্বী অট্টালিকা।  হয়ত বাস্তব নয়, অলীক তবুও সাময়িক আনন্দ হয়েছিল  প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ ক'রে। কিন্তু আবার মন খারাপ। পুজো এলে প্রতিবারই মন খারাপ হয়। এবারেও তার ব্যতিক্রম নয়। ষষ্ঠী থেকেই মন খারাপের শুরু। ঠাকুরের বিসর্জন না হওয়া পর্যন্ত চলবে এই মন খারাপ। কাল সপ্তমীতে আমার লিখব আশাকরি। 

মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ


সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ
অমরনাথ কর্মকার
প্রযুক্তির সাথে প্রযুক্তির দ্বন্দ্ব এবং তার পরিণাম যে কি হবে তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধন্দ। ব্যাপারটা সংবাদপত্র সহ অন্যান্য মুদ্রণ মাধ্যমের সঙ্গে আধুনিক বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মাধ্যমের মধ্যে অস্তিত্বের সংগ্রাম।  প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নতির ধাপ অতিক্রম ক’রে সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম আধুনিক অবয়বে হাজির হয়েছে পৃথিবীকে আমাদের ড্রয়িংরুমে এনে হাজির করানোর গুরুদায়িত্ব নিয়ে। কিন্তু সমান্তরালে ভিন্ন প্রযুক্তির অভাবনীয় আবিষ্কারে ধাপে ধাপে আত্মপ্রকাশ করেছে বেতার, টেলিভিশন থেকে আজকের ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আজ সংবাদপত্রকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, একুশ শতকের প্রযুক্তিগত বিপ্লবে আদৌ কি অস্তিত্ব রক্ষা করতে সক্ষম হবে আমাদের একদা সকালের প্রাত্যহিক সঙ্গী সংবাদপত্র  ?

অস্তিত্বের সঙ্কটের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে প্রশ্নটা উঠছে অন্য ভাবে – আজকের মুদ্রিত সংবাদপত্র কি অচিরেই তার ঐতিহ্য হারিয়ে মাধ্যম পরিবর্তন ক’রে শুধুই ইন্টারনেটে দৃশ্যমান থাকবে  ? নাকি সংবাদপত্র হারিয়ে ফেলবে তার নিজস্ব স্বাদ, কাঠামো, ধারা ও বৈশিষ্ট্য  ?

প্রশ্নগুলো স্বাভাবিক কিন্তু উত্তর বড্ড কঠিন। সঙ্গত কারনেই প্রশ্নগুলো সংবাদপত্রের পাঠকের মনে উঁকি দিতে শুরু করেছে। পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রের মুদ্রিত সংখ্যা বন্ধ হয়ে ঠাই হয়েছে অনলাইনে। এসব দেখেই সংবাদপত্রের অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় দানা বাঁধছে জনমানসে। তবে ইন্টারনেটের মত আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে অস্তিত্বের সংগ্রামে সংবাদপত্র কিন্তু এখনও হেরে যায়নি।
আঞ্চলিক ভাষায় সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকের শিরোপা এই বাংলারই একটি সংবাদপত্রের। তথাপি অডিট ব্যুরো অফ সার্কুলেশনের সাম্প্রতিক সমীক্ষানুসারে ভাষাভিত্তিক সংবাদপত্র পাঠের ভিত্তিতে ভারতের অনেক আঞ্চলিক ভাষার তুলনায় বাংলা ভাষার সংবাদপত্র পাঠকের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান ।  অডিট ব্যুরো অফ সার্কুলেশনের আর একটি সমীক্ষা বলছে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মুদ্রণ মাধ্যমের সংখ্যাধিখ্য ঘটেছে যা সংবাদপত্রপ্রেমী মানুষদের কাছে আশাব্যঞ্জক।  আমাদের দেশে বৈদ্যুতিন মাধ্যমের বাড়বাড়ন্তের ফলে সংবাদপত্রের অস্তিত্বের সংকট নিয়ে যে সংশয় তৈরি হয়েছে সংবাদপত্রের ওপর তার বাস্তব প্রভাব যে সেভাবে পড়েনি তা সংবাদপত্র প্রেমীদের যে আশ্বস্ত করবে, তা বলাই বাহুল্য। তবে একথা ঠিক যে আধুনিক সংবাদপত্রে সাংবাদিকতার রীতি ও রেওয়াজের যথেষ্টই পরিবর্তন হয়েছে।  
মুদ্রিত সংবাদপত্র এখন তাৎক্ষণিক সংবাদ পরিবেশনে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। কারন টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের মত দৃশ্য-শ্রাব্য মাধ্যমগুলো তাৎক্ষনিক সংবাদ পরিবেশনে অনেক অগ্রণী। এই মাধ্যমগুলিতে ঠিক এই মুহূর্তে যে সংবাদটি পরিবেশিত হচ্ছে, সেই খবরটিই সংবাদপত্রে ছাপার অক্ষরে আমাদের হাতে আসবে আগামীকাল। ততক্ষণে সেই সংবাদের প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহ অনেকটাই স্থিমিত হয়ে যাবে। বিশেষত আধুনিক মোবাইল ফোনের দৌলতে হাতের তালুতেই পেয়ে যাচ্ছি হাতে গরম খবর । তা ছাড়া অধিকাংশ সংবাদপত্রই এখন হাজির ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। সুতরাং বাসী খবর পড়ার জন্য আগামীকালের সংবাদপত্রের অপেক্ষায় থাকা আগ্রহী মানুষের সংখ্যা অর্থাৎ মুদ্রিত সংবাদপত্রের পাঠকের সংখ্যা ক্রমশ নামছে । এক্ষেত্রে সংবাদপত্রগুলি নিজেরাই আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশের পাশাপাশি ইন্টারনেট সংখ্যাও চালু ক’রে অর্থের বিনিময়ে ইন্টারনেটে গ্রাহক বৃদ্ধির ব্যবসায় মশগুল। অনেক ক্ষেত্রে ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল প্রভৃতি ইন্টারনেটনির্ভর সামাজিক মাধ্যম সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে গতির নিরিখে টেলিভিশনকেও হার মানাচ্ছে।
মোবাইল ফোন আসার পরেও অনেক বছর পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী ল্যান্ডলাইনের যথেষ্ট কদর ছিল। তার প্রথম কারন, মোবাইল ফোনের প্রযুক্তিগত কলাকৌশল সম্বন্ধে ধারণার অভাব। বিশেষত আমাদের মত শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারে অক্ষমতার কারনে এই ফোন ব্যবহারেও অনীহা ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে মোবাইল ফোন ব্যবহারের মানুষের মধ্যে সম্যক ধারণা তৈরি হবার পর এবং সর্বোপরি মোবাইল ফোনের প্রযুক্তিগত সুবিধার কথা মাথায় রেখে ল্যান্ড লাইনের ব্যবহার প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। সংবাদপত্রের দশাও যে ল্যান্ড লাইন ফোনের মত হবে না সে কথা কে বলতে পারে  ? আমাদের দেশে শিক্ষিতের হার কম এবং দারিদ্র্যের হার বেশি হওয়ায় এখনও পর্যন্ত সংবাদপত্রের পাঠকের সংখ্যা হ্রাসের হার ততটা উদ্বেগের কারন হয়ে দাঁড়ায়নি। তবে আমরা কিন্তু সেই পথেই এগোচ্ছি।  এই ভাবেই বৈদ্যুতিন মাধমের সৌজন্যে সিনেমা হলের সংখ্যা কমছে – বাড়ছে ইউটিউবের মত মাধ্যমের জনপ্রিয়তা।
এভাবে চলতে থাকলে এমন দিন আসতে বোধ হয় খুব একটা দেরি নেই যখন মুদ্রিত সংবাদপত্রের স্থান হবে মিউজিয়ামে – ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে। তবে সবটাই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঙ্গে প্রযুক্ত্রির দ্বন্দ্বে কে জেতে কে হারে তার ওপর । সবকিছুতেই ‘পেপারলেস’ করার যে উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী পরিলক্ষিত হচ্ছে তাতে মুদ্রণ মাধ্যমের ভবিষ্যত বোধ হয় মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়।   



মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?