শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮

চুম্বন

চুম্বনঃ অ.না.. ০৫/০৫/২০১৮
৫ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক চুমু দিবস। বোধ হয় অনেকেই সেটা জানেন। চুমুক দেওয়া অনুপান, তাতে তৃষ্ণা মেটে, পেটও ভরে। আর চুম্বনে পেট না ভরলেও মন ভরে। সভ্য সমাজে স্নেহ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা প্রকাশের প্রথা হিসাবে দুই ঠোঁটের স্পর্শের সাহায্যে চুম্বন প্রচলিত। সংস্কৃত চুম্বন শব্দ থেকে বাংলায় চুমু বা চুমা কথাটি এসেছে। প্রাচীন গ্রিসে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পন্থা হিসাবে ওষ্ঠ, হস্ত ও পদ চুম্বনের প্রথা প্রচলিত ছিল। হোমারের রচনা থেকে এগুলি জানা যায়। বাৎস্যায়নের কামসূত্রে বিভিন্ন প্রকার চুম্বনের উল্লেখ আছে। যৌনতার নির্বাচন তত্ত্ব নিয়ে গবেষণাকালে চার্লস ডারউইন লক্ষ্য করেছিলেন সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে মেয়েরা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি সাবধানী এবং খুঁতখুঁতে। রবার্ট ট্রাইভার্সের গবেষণা মূলত এই নারী অভিরুচির দিকচিহ্ন। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মাত্র এক মিনিটের চুম্বনে প্রায় ২৬ ক্যালরি শক্তিক্ষয় হয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ডায়েট কন্ট্রোল না করে দিনে গোটাকয়েক চুমু খাওয়ার অভ্যেস করতে পারলে অনায়াসে অতিরিক্ত ক্যালরি ঝরিয়ে ফেলতে পারেন। তবে সে চুম্বন হতে হবে প্রগাঢ়।
ইক্কাচাই ও লাকসানা নামে থাইল্যান্ডের প্রেমিক যুগল টানা ৪৬ গন্টা ২৪ মিনিট চুমু খেয়ে সম্প্রতি বিশ্ব রেকর্ড করে ফেলেছেন। মনোবিজ্ঞানী উইন্ডি হিলের গবেষণা থেকে জানা যায় চুম্বনের পরে শরীরের কর্টিসল হর্মোনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, এই কর্টিসল হর্মোন মানসিক চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। সুতরাং মানসিক চাপ কমাতে চুম্বনের উপকারিতা প্রশ্নাতীত -  একেবারে টনিকের মত। তবে চুম্বনের অপকারিতার কথা শুনলে একটু মর্মাহতও হতে পারেন। যেহেতু চুম্বনের সময়ে মুখে লালার প্রবাহ বেড়ে যায় তাতে মুখ, মাড়ি ও দাঁতের ওপর পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে। মুখের স্বাস্থ্য ভাল থাকলে ব্যাকটিরিয়া ভাইওরাসের আক্রমণ থেকে লালা শরীরকে সুরক্ষিত রাখে। সুতরাং মনে রাখতে হবে, চুম্বনে অংশগ্রহণকারী দুজনের স্বাস্থ্যই ভাল থাকা জরুরী।
তবে মুখানি তুলিয়া চাও/সুধীরে মুখানি তুলিয়া চাও!/নীরবে একটি চুম্বন দাও,/গোপনে একটি চুম্বন দাও! এটি রবীন্দ্রনাথের গোলাপবালা কবিতার পংক্তি। ভাল করে ভাবুন এর মধ্যে একটা নীরবতা আছে, আছে গোপনীয়তাও। না, সর্বক্ষেত্রে নয়, প্রেমিক-প্রেমিকার চুম্বনের জন্য নিভৃত পরিবেশ প্রয়োজন কারন সেখানে যৌনতার অবধারিত উপস্থিতি। সেই জন্যে রয়েছে পার্ক, লেক কিংবা নির্জন স্থান। দাঁত আছে বলেই যেখানে সেখানে বত্রিশ পাটি উন্মোচন করা শোভা পায় না। আমরা পোশাক পড়ে সভ্য হয়েছি। ইচ্ছে করলেই উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়ানো যায় কিন্তু তাতে অর্জিত সভ্যতাকে অপমান করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে, ভালোবাসার প্রকাশে, স্নেহ প্রদর্শনের জন্য চুমু খাওয়ার যে রীতি তা আমাদের সভ্যতার পরিচায়ক। কিন্তু যৌনতার অভিব্যক্তি যে চুম্বনে উপস্থিত তা প্রকাশ্যে আনা আমাদেরকে বোধ হয় ফিরিয়ে নিয়ে যায় আদিম সভ্যতায়।
তবে বলা প্রয়োজন পুরুষের কাছে নারীর ঠোঁট সবচেয়ে আকর্ষণীয়। চুম্বনের বৈজ্ঞানিক নাম ফিলেমাটোলজি। আর চুম্বনের ভীতিকে বলে ফিলেমাটোফোবিয়া। সিগারেট খাওয়ার মত আপনার চুমু খাওয়াতে কারোর কোন আপত্তি থাকবে না, তবে একটু প্রচলিতে প্রথা মেনে চলাই বোধ হয় উচিৎ। হয়ত এখানে ধুমপান করা নিষেধ এই জাতীয় কিছু সতর্কবাণী লেখা কোথাও থাকে না, তবুও ...... । তবে চুম্বনের মাহাত্ম অপরিসীম। ফরাসী স্থপতি অগাস্টি রডিনের বিখ্যাত স্থাপত্যকর্ম ‘The Kiss’ এখনও বিশ্ববাসীকে মোহিত করে।           

সোমবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৮

অনু গল্প: ছোট্ট ইচ্ছে

ছোট্ট ছেলেটা আমার কাছে এরোপ্লেনের বায়না ধরেছিল। কিনে দেব কথা দিয়েছিলাম। কিন্তু সময়াভাবে কিনে দিতে পারিনি। একদিন তার ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখলাম তার বাবা ইতিমধ্যে মস্ত একটা প্লেন কিনে দিয়েছে। তবুও তাকে জিজ্ঞেস করলাম,"কি রে আমার কাছ থেকে প্লেন নিবি না  ? " সে বলল,"না। বাবা এত্ত বড় একটা উড়োজাহাজ কিনে দিয়েছে।" প্রশ্ন করলাম,"আমার কাছ থেকে তাহলে কি নিবি ?" জবাব এল,"প্লেন পেয়েছি, তুমি বরং আমাকে আকাশ কিনে দাও"। একটা শিশুর সামান্য ইচ্ছেটুকু পূরণ করার সাধ্য আমার হয়নি।

শুক্রবার, ২৩ মার্চ, ২০১৮

আহত বাঘ হিংস্র হয়

মারলেই কি মরে সবাই?
হয়ত একটু আঘাত পায়।
অকারনে আঘাত পাওয়া কাম্য নয়,
আহত বাঘ বড্ড বেশি হিংস্র হয়।
                         
অ. না. ক. ২৩/০৩/'১৮

বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০১৭

আমার বিদায় সম্বর্ধনা ১৮/০৭/২০১৭

আজ আমার পুরোনো অফিসে আমাকে বিদায় সম্বর্ধনা দেওয়া হ'ল। প্রায় দেড় বছর পর এমন আমন্ত্রণ পেয়ে খুব পুলকিত হয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম সুন্দর আয়োজন। তার চেয়েও বেশি উচ্ছ্বসিত বোধ করলাম পুরোনো সহকর্মীদের দেখে যারা আমার জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের 'দাগ' রম্যরচনার কথা মনে পড়ছিল খুব। সেই এক ভাড়াটে দীর্ঘ দিন ভাড়া থাকার পর বাড়ি ছেড়েছেন, কিন্তু মেঝে থেকে খাটের পায়ার চারটে দাগ প্রায় চিরস্থায়ী হয়ে জেঁকে বসেছে, সেই দাগ তোলা যাচ্ছে না কিছুতেই। অনুষ্ঠানে অনেকেই স্মৃতিচারণা করলেন। দেখলাম প্রায় সকলের মনেই আমার স্মৃতিগুলো অম্লান হয়ে আছে। সঞ্জয়ের স্মৃতিচারণায় আমার আপাত গুরুত্বহীন অথচ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্মৃতিগুলো উঠে এল অবলীলায়। এরকম অনুষ্ঠানে বিদায়ীদের বিশেষ বিশেষ গুনের পরিচয় তুলে ধরার স্বভাবসিদ্ধ প্রবনতার ব্যতিক্রম এখানেও ছিল না। এসবে আমার মন ছিল না। চোখ পড়ে ছিল পেছনের চেয়ারে বসা শত অনুরোধেও কিছু বলতে রাজী না হওয়া লক্ষ্মণ সিং-এর দিকে। তার মুখে সেই অনুষ্ঠান চলা কালে কোন আবেগের চিহ্ন মাত্র দেখিনি। আমার স্মৃতিচারণায় যখন লক্ষ্মণ সিং (সিংজী বলতেই আমরা অভ্যস্ত ছিলাম)-এর নাম বারবার উঠে আসছিল তখনও তার মধ্যে বিন্দুমাত্র আবেগ প্রবণতা লক্ষ্য করিনি। অফিসের নিয়মানুগ কাজের বাইরে আমার যে নিজস্ব একটা বিচরনক্ষেত্র আছে, দেখলাম সে খবর অনেকেই রাখেন এবং দেখেনও। বিভিন্ন জনের স্মৃতিচারণায় এই কথাগুলো যখন উঠে এল, তখন মনে হ'ল যাক সরকারী কাজের গতানুগতিকতা ছাড়াও সরকারী অফিসের অনেকেই অনেক খবর রাখে। আশ্বস্ত হলাম এই ভেবে যে অস্থায়ী বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চ'লে গেলেও অন্তত স্থায়ী একটা দাগ রেখে যেতে পেরেছি। হাজার মোছামুছি করেও দাগটা তোলা যে সহজ হবে না সেটা নিশ্চিত হলাম অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে। নির্জনে লক্ষণ সিং আমার পাশে এসে দাঁড়াতেই মুহূর্তে পালটে গেল তার মুখচ্ছবি। আচমকা মেঘ নেমে এল মুখে এবং সেই মেঘ থেকে ............... বাড়ি ফিরে এলাম বৃষ্টিতে ভিজে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম স্মৃতির কোন ওজন হয় না। তাই অনায়াসেই তা বয়ে চলা যায়। সত্যিই পারব তো ?
কথাগুলো লিখতে গিয়ে আমার আগে লেখা (ছাপার অক্ষরেও বেরিয়েছিল একদা) স্কুলের স্মৃতি মনে পড়ল।
সমীরণবাবুঃ অ.না.ক.
ক্লাসে মাস্টারমশাইয়ের রক্তচক্ষু, বেত্রাঘাত, দু’আঙুলের মধ্যে পেন্সিল ঢুকিয়ে চাপ দেওয়া, দু’হাতে থান ইট চাপিয়ে নিল ডাউন বা বিভিন্ন ধরণের কষ্টকর শাস্তির ভয়ে ত্রস্ত হওয়ার প্রবণতা ছাত্রদের মধ্যে থাকেই । আবার এসব উপেক্ষা করে উল্টে মাস্টারমশাইদের বিড়ম্বনার কারণ হওয়া ডানপিটে ছাত্রের সংখ্যাও কম নয় । যেমন আমাদের ক্লাসের পার্থ আর অসীম বেত্রাঘাতে নিপুন কার্ত্তিক স্যারকে আড়াল থেকে বিকৃত স্বরে ‘ট্যারা কার্ত্তিক’ ব’লে পালিয়ে যেত প্রায়ই । স্যার ধরতেও পারতেন না । তবে আমাদের ইংরেজি স্যার সমীরণ বাবু ছিলেন ছিলেন সত্যিকারের কড়া, যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁকেও পার্থদের কাছে হার মানতে হয়েছিল । একসময় আমাদের কাছে তো বটেই, অন্যান্য মাস্টারমশাইদের কাছেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক মজার চরিত্র ।
সমীরণ বাবু একসময় ছিলেন প্রেসিডেন্সির ইংরেজির কৃতি ছাত্র । ফর্সা, লম্বা চেহারা । মুখে সর্বদা পাইপ । কোট-টাই পড়া একদম সাহেবদের মত ফিটফাট চেহারা । একটা ইংরেজি কবিতা শেষ করতে তাঁর লেগে যেত মাসখানেক । স্বভাবতই সিলেবাস শেষ হ’ত না । কবির জীবনী শেষ করতে প্রায় মাস কাবার । পড়াতে পড়াতে প্রসঙ্গক্রমে নিজেই গান গাইতেন (তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ভালো গাইতে জানতেন), অভিনয় করতেন । এহেন সমীরণ স্যারের ক্লাসে দেখা যেত ৮০ শতাংশ ছাত্র উধাও । না, পড়া না পারার ভয়ে নয়, এমনকি শাস্তি পাবার ভয়েও নয় – কারণ তাঁর পড়ানোর ধরণ হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র ভালো ছাত্রের কাছে ভালো লাগত, বাকীরা বিন্দুমাত্র আনন্দ পেত না । তাঁর পড়ানো শুরু হওয়া মাত্র বিরক্ত ছাত্রদের মধ্যে শুরু হ’ত চঞ্চলতা । সামান্য অসহিষ্ণুতাও সমীরণবাবু সহ্য করতে পারতেন না, কারোও মধ্যে অমনোযোগিতা দেখলেই দুগালে বসাতেন টেনে থাপ্পর । পার্থ বসত একদম শেষ বেঞ্চে ঠিক দরজার পাশে । স্যার পড়ানো শুরু করার পর স্যারের অলক্ষ্যে পার্থ প্রায়ই বেরিয়ে যেত ক্লাস থেকে । একদিন স্যারের নজরে পড়ে গেল । পার্থ বেরিয়েছে – স্যারও বেরিয়ে পার্থকে হাতেনাতে ধরার উদ্যোগ নিচ্ছেন । বুঝতে পেরে পার্থ দোতলার বারান্দা দিয়ে দৌড় লাগাল । নাছোড়বান্দা স্যারও শুরু করলেন ওর পেছন পেছন দৌড় । দোতলা থেকে একতলা – স্যারও সমানে দৌড়ে চলেছেন । স্যারকে নিরস্ত করার জন্য অফিসরুম থেকে অন্যান্য স্যারেরাও ছুটে এলেন । কোনরকমে তাঁকে শান্ত করা হ’ল । ততক্ষণে পার্থ কিন্তু পগার পার । ফর্সা টুকটুকে সমীরণবাবুর মুখ তখন রাগে লাল । হেডস্যারের কাছে নালিশ হ’ল । পরদিন হাতে পায়ে ধরে পার্থর শাস্তি লাঘব হ’ল । এরপর থেকে ক্লাসে বসে প্রায়ই আমরা শুনতে পেতাম দুপদাপ শব্দ । দেখা যেত অনেকেই সমীরণবাবুকে উত্তক্ত করার ক্ষেত্রে পার্থর অনুসারী হয়ে উঠেছে । সমীরণবাবু দৌড়চ্ছেন আর তাঁর সামনে দৌড়চ্ছে অন্য কোন ছাত্র । এ দৃশ্য হামেসাই চোখে পড়ত ।
তবে সমীরণবাবুর পড়াশোনার পরিধি ছিল তুলনাতীত । ইংরেজি সাহিত্যে তাঁর জ্ঞান ছিল অপরিসীম । হয়ত আমাদের মত সাধারণ মানের ছাত্রদের পক্ষে তা হজম করা কঠিন ছিল বলেই তাঁকে নিয়ে মজা করেছি । কিন্তু এখন বুঝতে পারি তিনি কি বিরাট মাপের মানুষ ছিলেন ।

রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭

বেঁচে থাকার দাম

বেঁচে থাকার দামঃ অ.না.ক. ১৭/০৭/২০১৭

ঠাণ্ডা ঘরে বিলিতি চায়
রেলের ধারে অবাধ চোলাই
সবার লক্ষ্য মাতা নেশায়।

গোরু ছাগল শুয়োর মোষ
ইচ্ছে মতন খেতে কি দোষ ?
পেটের সঙ্গে হয়না আপোষ।

অন্তরে কেউ রহিম বা রাম
আসল কিন্তু জীবন সংগ্রাম

সবচে বেশি বেঁচে থাকার দাম। 

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?