বন্ধুত্ব বলিতে তিনটি পদার্থ বুঝায়। দুই জন
ব্যক্তি ও একটি জগৎ । অর্থাৎ দুই জনে সহযোগী হইয়া জগতের কাজ সম্পন্ন করা। আর,
প্রেম বলিলে দুই জন ব্যক্তি মাত্র
বুঝায়, আর জগৎ নাই। দুই জনেই দুই জনের জগত্। ... ইহা ছাড়া আর একটা কথা আছে—প্রেম মন্দির ও বন্ধুত্ব বাসস্থান। মন্দির হইতে যখন দেবতা
চলিয়া যায় তখন সে আর বাসস্থানের কাজে লাগিতে পারে না, কিন্তু বাসস্থানে দেবতা প্রতিষ্ঠা করা যায়।– কথাগুলো বলেছেন
রবীন্দ্রনাথ। সত্যিই তো বন্ধুত্ব মানে একটা নতুন জগতের সৃষ্টি । অনেকটা ঢাকের
বাঁয়ার মত । যেকোন একজনের অনুপস্থিতি এই নতুন জগৎ সৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে ।
জীবনের পথে চলার সময় এই বন্ধুত্বই আমাদের অতুলনীয় পাথেয় । সেই ছোট্ট বেলায় বন্ধু
পেলে কান্না থামত, বন্ধু পেলে আনন্দে ভরত মন । তারপর স্কুল, কলেজ সর্বত্র চলেছে
বন্ধুর সন্ধান আর সেই বন্ধুত্বের হাত ধরেই চেনা জগতের গণ্ডি পেরিয়ে চলে গেছি অন্য
জগতে – কল্পনা আর বাস্তব মেশানো এক অন্য রকম জগৎ । এখন কঠিন জীবনযুদ্ধে অনেক কিছু
না পেলেও শুধু বন্ধু পেলে চলে যায়, আবার প্রাপ্তির প্রাচুর্যের মধ্যেও বন্ধু ছাড়া
চলে না । বোধ হয় ভার্জিনিয়া উলফ একারনেই বলেছেন, Some people go to
priests; others to poetry; I to my friends । তার মানে বন্ধু মানেই সবকিছু – প্রেম, কবিতা,
ঈশ্বর । দার্শনিক অ্যারিস্টটল বন্ধুত্বের পরিণাম নিয়ে
বলেছিলেন যে বন্ধুত্ব গড়া ক্ষণিকের কাজ, কিন্তু সে ফল ধীরে ধীরে পাকে । বন্ধুত্ব
গড়া সহজ, সেটাকে টিকিয়ে রাখা ততোটাই কঠিন । নানা তুচ্ছ কারনে বন্ধুত্বের ইতি ঘটে
যায় হামেশাই । তাই বন্ধুত্ব অনেকটা দাঁতের মত । দাঁত পড়ে গেলে তবেই বোঝা যায়
দাঁতের মর্যাদা । পারিবারিক, অর্থনৈতিক বা সামাজিক অবস্থানের বৈষম্য বেশিরভাগ
ক্ষেত্রেই মাঝপথে বন্ধুত্বের অবসান ঘটায় । কিন্তু বন্ধু সবার
চায় – ভীষণভাবে চায় – এই উপলব্ধি থেকেই অস্কার ওয়াইল্ড লিখেছেন, I don't want to go to heaven. None of my friends are there. দেশ, ভাষা, সমাজ, জাতি,
ধর্ম এসবের বিভিন্নতা অনুযায়ী বন্ধুত্বের রীতিও বিচিত্র । কিন্তু মোড়কের রং যাই হোক,
বন্ধুত্বের মৌলিক উপাদানের ভেদ নেই । আজ বন্ধুত্বের দিনে মজবুত হোক বন্ধুত্বের ভীত
– গড়ে উঠুক নতুন জগৎ । তবে জীবনে এমন বন্ধু যেন না জোটে যাতে ভলতেয়ারের মত আক্ষেপ
করে বলতে না হয় “ঈশ্বর আমাকে বন্ধুদের হাত থেকে বাঁচাও, শত্রুকে আমি নিজেই দেখে
নেব” ।
রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০১৬
বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬
সন্তানের নামকরণ
নবজাতকের নামে অভিনবত্ব আনার ব্যাপারে আজকাল কমবেশি সকলেই বেশ সচেতন ।
বিশেষত শহুরে অভিভাকদের মধ্যে সন্তানের নামকরণে ব্যতিক্রম এবং আকর্ষণ আনার
মরিয়া চেষ্টা । কখনো গল্প উপন্যাসের চরিত্র, কখনো রামায়ন-মহাভারতের প্রায়
অপরিচিত অথচ অভিনব নাম খুঁজে সন্তানের নামে বৈচিত্র আনার প্রতিযোগিতা চলে
শহরাঞ্চলে । এখন তো সন্তান জন্মালেই ইন্টারনেটে নতুন নতুন নাম খোঁজার ধুম
পড়ে যায় । সত্যি বলতে কি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো আসলে নিজেদের রুচি,
সংস্কৃতি এসব জাহির করার চেষ্টা মাত্র । আরে বাবা, রাম, শ্যাম,
সুনীল, কমল এসব নাম রাখলে কি সন্তান বড় হবে না, নাকি এসব নাম বংশের
মর্যাদা রক্ষায় অক্ষম । জানি নামে কিছু আসে যায় না, তবুও নাম নিয়ে নাচানাচি
। গ্রামের লোকের মধ্যে এই প্রবনতা এখনও কম । লুচিমনি, ক্ষান্তমনি, রাম,
শ্যাম, যা হোক একটা রাখলেই হ'ল । গ্রামের লোক বার তিথি নক্ষত্র এসব মাথায়
রাখেন নামকরণের সঙ্গে । যে কারনে বৃহস্পতি, পূর্ণিমা রবি এই ধরনের নামই
সেখানে বেশি শোনা যায় । অবশ্য পৌরাণিক চরিত্র যেমন যুধিষ্ঠির, অর্জুন,
লক্ষণ, লক্ষ্মী এই নামগুলো গ্রামের মানুষের মধ্যে অতীব সাধারণ । দারিদ্র আর
পরিশ্রমের সঙ্গে যাদের প্রাত্যহিক সংগ্রাম, তাদের সময় বা মানসিকতা কোথায়
অভিধান ঘেঁটে সন্তানের নামকরণ করার ? তাই বলে এই নয় যে গ্রামের মানুষের
মধ্যে সন্তানের সুন্দর নামকরণ করার মত কেউই নেই । আছে, এবং এমন মানুষও আছে
যাদের কাছে শহরের মানুষকেও হার মানতে হবে । আজ অফিসে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার
সম্মুখীন হয়ে এতগুলো কথা লিখলাম । আমার অফিস দঃ ২৪ পরগণার প্রত্যন্ত
গ্রামবেষ্টিত অঞ্চলে । অফিসে গ্রামের স্বল্প শিক্ষিত বা নিরক্ষর
দিন-আনা-দিন-খাওয়া অনেক মানুষের দরখাস্ত জমা পড়ে বিভিন্ন সরকারী সাহায্যের
আবেদন জানিয়ে । স্বভাবতই আবেদনকারীদের বহুশ্রুত নামেও থাকে গ্রাম্য প্রকাশ ।
কিন্তু আজ এক আবেদনকারীর নাম দেখে রীতিমত বিষ্মিতই হলাম । প্রথমে
ভেবেছিলাম গতানুগতিক বানান ভুল । একটু খুঁটিয়ে দেখে থমকে গেলাম । ইন্টারনেট
সার্চ করে দেখলাম ভুল তো নয়ই, নামটি সঠিক, দারুন অর্থবহ এবং আমার কাছে
অশ্রুতপূর্ব । আবেদনকারীর নাম ষড়শীতি যার অর্থ ছিয়াশিতম । জানিনা ছিয়াশি
সালে জন্ম বলেই এই নামকরণ কিনা । তবে কারন যাই হোক, নামকরণটি যার করা তিনি
যে নামকরণের ব্যাপারে তথাকথিত আধুনিক শিক্ষিত রুচিশীল শহরবাসীদের অতি সহজেই
টেক্কা দিতে পারেন তা বলাই বাহুল্য ।
সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬
অস্ত্র
নাই বা কাটুক ধারে
অস্ত্র যদি ভারি হয়
কাটতে পারে ভারে ।
যে অস্ত্র ধারবিহীন
ওজনেও খুব হাল্কা
সেটা কি তবে মূল্যহীন ?
না, তা কখনই নয়
‘অস্ত্র’ আঘাত হানবে না
তা কখনো হয় ?
অস্ত্র যদি ভারি হয়
কাটতে পারে ভারে ।
যে অস্ত্র ধারবিহীন
ওজনেও খুব হাল্কা
সেটা কি তবে মূল্যহীন ?
না, তা কখনই নয়
‘অস্ত্র’ আঘাত হানবে না
তা কখনো হয় ?
বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১৬
ছেলেটার প্রশ্নঃ
ছেলেটার প্রশ্নঃ অ.না.ক. ০১/০৭/২০১৬
পড়াশোনায় সে তুখর ছেলে,
খেলাধুলাতেও যায় না কম ।
এমন ছেলে লাখে একটা মেলে,
সবকিছুতেই পারফেক্ট একদম ।
ছেলের গর্বে বাবার ভরে বুক,
মায়ের কাছে ছেলে খাঁটি সোনা,
পাড়ার লোকে গুনে পঞ্চমুখ,
এমন ছেলে মেলে হাতে গোনা ।
ইতিমধ্যে সন্তান-সম্ভবা হল মা তার,
ছেলেটার মনে প্রশ্ন জাগে দিনভর,
‘আমি যদি নিই স্বপ্ন পূরণের ভার,
তবে মা কেন আনছে নতুন সহোদর ?’
সোমবার, ২৭ জুন, ২০১৬
রাত্রি হলেই
রাত্রি হলেই অপলকে তাকিয়ে থাকি
আকাশ পানে, পড়ে না চোখের তারা,
আবছা আলোর নরম ছোঁয়ায় মাতি
চিনিনা কোনটা অরুন্ধতি, কে যে শুকতারা ।
আকাশে মেঘ দেখলেই ইচ্ছে করে ভিজতে
শীতল-স্নানের প্রতিক্ষাতে দৃষ্টি ঊর্ধপানে
কেবল বৃষ্টি ধরায় স্নিগ্ধ স্নানের প্রত্যাশা
কোন মেঘেতে বৃষ্টি হয়, খুঁজি না তার মানে ।
অ না ক ২৭/০৬/২০১৬
বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০১৬
তোমার উষ্ণতা
তোমার উষ্ণতাকে ফেলেছি ভীষণ ভালোবেসে ।
কিন্তু যখন সে এল উগ্র গম্ভীর কালো বেশে,
তোমার শরীর হ'ল শীতল, সিক্ত
তোমার উষ্ণতা হারিয়ে আজকে আমি রিক্ত ।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
মুখ চাপা সত্য
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?
-
এক লাইনের কাব্যঃ অ.না.ক. ২১/০৩/২০১৭ এক লাইনেও কাব্য হয় দু'লাইনে ছন্দময় ।