রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২২

অণু কবিতাঃ তবু আমি রয়েই যাব

 তবু আমি রয়েই যাব 

      - অমরনাথ কর্মকার ১৬/১০/২০২২


হয়ত একদিন তুমি লিখবে আমার নাম

বিচিত্র সব মিথ্যে মেশানো বিকৃত ইতিহাসে।

জানি একদিন শূণ্যে নেমে যাবে আমার দাম

তবুও আমি রয়েই যাব তোমার আশেপাশে।

কারন তোমার ফেলে দেওয়া ময়লাগুলো

তোমার বাঁচার বাতাসে ভরিয়ে দেবে ধুলো।

বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০২২

দশমীতে মন খারাপ - অমরনাথ কর্মকার ০৫/১০/২০২২

 

দশমীতে মন খারাপ – অমরনাথ কর্মকার ০৫/১০/২০২২

এই ক’দিন, মানে দশমীর বিকেল পর্যন্ত, বাঙালীর জীবন দেখা গেছে ক্লোজ-আপ শটে। আর ক্লোজ-আপ শটে জীবন ধরা পড়ে কমেডিতে। চার্লি চ্যাপলিন (সম্ভবত) জীবনকে এভাবেই দেখতেন। চলচ্চিত্রে তাঁকে দেখা যেত কমেডিয়ানের চরিত্রে। কমেডিয়ান বলতে, সর্বক্ষণ আনন্দ-উচ্ছ্বল, মানুষকে অনাবিল আনন্দ দেওয়ার হাসি-খুশি এক চরিত্র। কিন্তু লং শটে তাঁর জীবন-যন্ত্রণার ছবি আমাদের চোখে ধরা পড়ে না । হ্যাঁ, এই দুর্গোৎসবে মানুষকে ক্লোজ-আপে দেখে একটুও মনে হয়নি এঁদের নানান সমস্যা আছে, অর্থাভাব আছে, বঞ্চনা আছে, সামাজিক অধঃপতনের কারনে ক্ষোভ আছে। আজ আমার মন খারাপ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। কারন মাত্র পাঁচ দিনের ছন্দ পতন থেকে বেরিয়ে আবার ছন্দে ফিরব, যে ছন্দে রয়েছে জীবন সংগ্রাম, বাঁচার লড়াই। দুর্গা কৈলাসে ফিরলেন আজ। মর্তের দুর্গতি শুধুই পর্যবেক্ষণ ক’রে গেলেন, নাকি এই দুর্গতি নাশের জন্য কোন ব্যবস্থা নেবেন ? দেবী কৈলাসে ফিরলেন কি না তা কারোর চোখে ধরা পড়েছে কি না জানা নেই, তবে নদীতে বা গঙ্গাবক্ষে প্রতিমার বিসর্জন হ’ল। এও এক প্রতীক - সমস্ত জড়তাকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করা, অশুভের বিসর্জন । আজ বিসর্জনকে কেন্দ্র ক’রে বেশ কতকগুলো দুর্ঘটনা আর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর মিলেছে। মনটা খারাপ লাগছে এই কারনে । তবে এ ক’দিন টিভিতে রাজনৈতিক কচকচানি বন্ধ ছিল। সেখানে রাজনৈতিক সম্প্রীতির চেহারাটা মনকে আনন্দ দিয়েছে। কাল থেকে আবার শুরু হয়ে যাবে বিচিত্র খবরের প্রচার যার বেশিরভাগটা জুড়েই থাকবে দুর্নীতি, আইন-আদালত এই সব।

সামাজিক সুস্থতা ফিরে আসুক। রাজনীতি জরুরী। কিন্তু সে রাজনীতি হোক সমাজের ভালোর জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য। রাজনীতি যেন হয় দুর্গারূপী।

আজ এই পর্যন্তই। শুভ বিজয়ার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই সকলকে। শুভ রাত্রি।

 

মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০২২

নবমীতে মন খারাপ - অমরনাথ কর্মকার ০৪/১০/২০২২

 

নবমীতে মন খারাপ – অমরনাথ কর্মকার ০৪/১০/২০২২

নবম শ্রেণী শেষ করা মানে স্কুল জীবনের প্রান্তে হাজির হওয়া। আর দশম পাশ করলেই স্কুল জীবনের ইতি। স্কুল জীবনের মত আনন্দঘন সময় কোথাও পাওয়া যায় না। বাঙালীর দুর্গোৎসবে আজ নবমী। বিগত কয়েকদিনের অনাবিল আনন্দ-উচ্ছ্বলতার অবসানের নির্মম সঙ্কেত।  মহানবমীর দিন হচ্ছে দেবী দুর্গাকে প্রাণভরে দেখে নেওয়ার ক্ষণ। অগ্নি সব দেবতার যজ্ঞভাগ বহন করে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। আজই দুর্গাপূজোর অন্তিম দিন। আগামীকাল কেবল বিজয়া বিসর্জনের পর্ব। নবমীর রাত তাই বিদায়ের অমোঘ পরোয়ানা নিয়ে হাজির হয়েছে। আজ তাই আধ্যাত্মিকতার চেয়েও অনেক বেশি লোকায়ত ভাবনায় ভাবিত মন। আমার তো এমনিতেই মন খারাপ। বলেইছি চারিদিকে যখন দুর্গাপুজোর উৎসব মুখরতা তখন আমার মন ভালো থাকে না। আজ নবমীতে যখন উৎসবের আতিশয্য নিষ্প্রভ, মানুষের মনে যখন বিষাদময়তার মেঘ তখন আমার মনের মন খারাপের মেঘ কাটতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। কিন্তু পরিবেশে উৎসবের গন্ধ ম্লান হচ্ছে ব’লে নয়, সকলের চোখে-মুখে এক প্রতিকী মহিষাসুর মর্দিনীর বিদায়ে যে বিষন্নতার ছায়া, তা দেখে আমার মনেও যে তার প্রভাব পড়ছে না তা কিন্তু নয়। আমিও তো এই সমাজেরই জীব (সামাজিক জীব কি না বলা কঠিন)। গ্রাম বাংলায় আজও কোথাও কোথাও তিন-চারদিন বা সপ্তাহ জুড়ে যাত্রা পালা অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতার নামীদামী যাত্রাদল আসে। প্যান্ডেল বাধা থেকে শুরু ক’রে শেষ দিন পর্যন্ত এলাকার মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার জোয়ার বয়ে যায়, বিশেষ ক’রে কম বয়সীদের মধ্যে আনন্দের অন্ত থাকে না। পাড়ায় পাড়ায় মাইকে অনর্গল প্রচার চলতে থাকে।  কিন্তু শেষ যাত্রা পালার দিন মাইকে যখন প্রচার চলে ‘অদ্যই শেষ রজনী’ তখন মন খারাপ হ’তে শুরু করে। এই অভিজ্ঞতা আমার আছে ব’লেই এই উপলব্ধি। আজ নবমী – স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি কারা যেন ঘন ঘন প্রচার করছে ‘অদ্য শেষ রজনী’। সে শব্দের ডেসিবেল শূণ্য কিন্তু বুকের বাঁ পাশটায় ডিজে’র শব্দের মত আঘাত হানছে ঘন ঘন। না, কোন পৌরাণিক কাহিনী বিশ্বাস ক’রে নয়, নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত মানুষ উৎসবের আবহে সবকিছু ভুলে ছিল, কাল থেকে আবার সেই সমস্যার সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে শুরু করবে – এই কথা ভেবে মন খারাপ করছে। আসলে উৎসবের আবিষ্টতায় আমরা, বিশেষত বাঙালীরা, সেই মহালয়া থেকে শুরু ক’রে আজ অবধি যে ভাবে মগ্ন ছিলাম তা থেকে আকষ্মিক নিষ্ক্রমণ আমাদের মন ভারাক্রান্ত করে। তাই নবমীতে দৃষ্টিভ্রমে কেউ দেখেন  উমার চোখে জল। স্বামীর ঘরে উমার অশ্রুসজল প্রত্যাবর্তন আসলে সাময়িক আনন্দ, হৈ-হুল্লোড় থেকে গতানুগতিক, কঠিন নৈমিত্তিক বাস্তবতায় ফিরে যাওয়ার প্রতীক। সকলেরই আন্তরিক প্রত্যাশা সব ভেদাভেদ, দুঃখ-কষ্ট, মনোমালিন্য ভুলে মিলেমিশে জীবনের শেষ অবধি জীবনের আনন্দ উপভোগ করা। কিন্তু এই ইউটোপিয় জীবনের স্বপ্ন বাস্তবে আদৌ সম্ভব নয়। তাই ‘যেওনা নবমী নিশি’ ব’লে আর্তনাদ করাও থাকবে, আবার সুখ-দুঃখ-কষ্ট সমৃদ্ধ জীবনে ফিরে যাওয়া থাকবে।    

একটু বাদেই নবমীর রাত শেষ হয়ে বিসর্জনের প্রভাত নামবে। মাটির প্রতিমা জলে গলে যাবে। রঙিন থেকে আবার সাদা-কালো দিন। কিন্তু যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই উৎসবের আয়োজন সেই উদ্দেশ্য সার্থক করতে পারাটাই আজ জরুরী।

বাস্তব বড্ড কঠিন আর এই কঠিনটাই বাস্তব। নবমী শেষ হ’ল। আসলে কঠিন বাস্তবের সঙ্গে নিত্য লড়াই করার অভ্যস্ত জীবনে ফিরে যেহেতু যেতেই হবে, তাই সামান্য ৫ দিনের আনন্দের চেয়ে ৩৬০ দিনের লড়াই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমার মন খারাপের মেঘ কেটেছে অনেকটাই। বাঙালী উৎসবপ্রিয়। নবমীতেই যে উৎসব শেষ হয়ে গেল তা কিন্তু নয়। সবে তো উমা গেলেন। এরপরে লক্ষ্মী আসবেন (অর্থনীতির বেহাল দশার হাল ফেরাতে পারবেন কি না জানিনা), আসবেন মা কালী। এছাড়াও রয়েছে ভাইফোঁটা ইত্যাদি ইত্যাদি।

অনেক হ’ল। আর নয়। কলম চললে থামতে চায় না, লাগাম টানলাম। কাল দশমীতেও কলম চালানোর ইচ্ছে রইল। তবে কম চলবে। শুভ নবমী নিশি।  

 

 

সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২

অষ্টমীতে মন খারাপ - অমরনাথ কর্মকার ০৩/১০/২০২২

 

অষ্টমীতে মন খারাপ – অমরনাথ কর্মকার ০৩/১০/২০২২

সপ্তম সুরে প্রাণ বাঁধা শেষ। সপ্তমীর পর আজ অষ্টমীও অতিক্রমণের পথে। অষ্টমী মানে দুর্গোৎসবের লেখচিত্রে বাঙালীর আনন্দের শীর্ষবিন্দু। অর্থাৎ উচ্ছ্বাস আজ মধ্যগগণে। ভোরবেলা একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। তারপর থেকে আকাশের মুখ ভার থাকলেও বৃষ্টি নেই – তবে নিম্নচাপজনিত বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। অষ্টমী তিথি হল অসুরবিনাশী শুদ্ধসত্তার আবির্ভাব তিথি। অষ্টমী তিথিতে দেবী মহালক্ষ্মীরূপা বৈষ্ণবী শক্তি। দেবী সেদিন রাজরাজেশ্বরী মূর্তি। দুহাতে বর দেন ভক্তদের। শ্রেষ্ঠ উপাচার সেদিন নিবেদিত হয়। দেবীর দু’হাত ভরা বরের প্রত্যাশায় কি না জানা নেই, তবে পথে নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ একেবারে উৎসবের মেজাজে। এখন অবশ্য দেব-দেবীর বরে মানুষের বিশ্বাস কম, সমাজে প্রভাবশালীদের (বিশেষ ক’রে রাজনৈতিক) বরই নিশ্চিত এবং নিশ্চিন্ত জীবনের চাবিকাঠি, এমনকি অযোগ্যকে যোগ্যতা দেওয়ার ক্ষমতাধারী এরা। এরাই আজ মূলত এবং কার্যত আমাদের সমাজের দেব-দেবী।  আজ সারাদিন বাড়িতেই কেটেছে। মাঝে মাঝে গেছি পাড়ার পুজো মন্ডপে। বাড়ি বসেই শুনতে পাচ্ছিলাম সানাইএর সুর। সানাইএর সুরে কেমন যেন বিষাদ মেশানো। মনে হয় কোন বিয়ে বাড়ি্র নহবত অথবা বিসমিল্লাহ খানের রেকর্ড শুনছি – যেন একটু বাদেই বাপের বাড়ি থেকে ছিন্ন হবে মেয়ের মায়ার বাঁধন। সত্যিই তো। মায়ার বাঁধন ছিন্ন হওয়ার সেই ট্রানজিশন টাইম অর্থাৎ সন্ধিক্ষণ বা সময়ান্তর অষ্টমীতেই পেরিয়ে গেল।  অষ্টমী পেরিয়ে নবমীর সূচনাও হয়ে গেছে আজ। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট আর নবমী তিথির শুরুর ২৪ মিনিট এই সময়ের মধ্যে চলে সন্ধিক্ষণের উপাসনা। সোজা কথায় সন্ধিপুজো। এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধে মহিষাসুরকে শূলবিদ্ধ করলেন দেবী দুর্গা। অর্থাৎ শুভ শক্তির জয় হ’ল। এই সন্ধিক্ষণের মাহাত্ম্য হ’ল অসহনীয় খারাপের শেষে সহনীয় ভালোতে উত্তরণ।  এতকাল জেনে এসেছি শুভ-অশুভের লড়াইয়ে সব সময় নাকি শুভশক্তির জয় হয়েছে। প্রশ্ন একটাই, জীবনের বাস্তবতায়ও কি তাই হয় ?  মানুষ অবশ্যই শুভশক্তির জয় দেখতে চায়। কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীন অশুভ শক্তি যে ভাবে আমাদের সমাজে ক্ষমতা প্রদর্শন করে তাতে অশুভ শক্তিরই জয়-জয়াকার দেখি। এক ভয়ানক যুদ্ধে দেবী দুর্গা অসুর নিধন করেছিলেন এবং তারপর এসেছিল সেই ট্রানজিশন টাইম বা সন্ধিক্ষণ – অন্ধকার থেকে আলোতে উত্তরণের সময়। বাঙালীর সমাজ ব্যবস্থায় এই সন্ধিক্ষণ আসাটা আজ খুব জরুরী। রক্তমাংসের হাজারো দুর্গা যদি বাস্তবের মহিষাসুর বধ করতে পারে তবেই হবে শুভের জয় – তবেই আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যাদের কারনে সমাজে গরীব না খেয়ে মরে, যদের কারনে দুর্নীতি প্রশ্রয় পায়, যাদের কারনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়, যাদের কারনে সমাজে ভাষা সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে, যাদের কারনে শিক্ষা কলুষিত হয় তারাই এই সমাজের অসুর। এই অসুর নিধন করতে পারার মধ্যেই রয়েছে দুর্গা পুজোর প্রকৃত সার্থকতা। সমাজের প্রয়োজন এইরকম দুর্গারূপী বহু মানুষ, যারা বছরে একবার নয়, প্রতিদিন লেগে থাকুক অসুর নিধনে। এঁদের আজ খুব প্রয়োজন, খুব।

আজ মন খারাপের মাত্রাও লাগামছাড়া। এই সময় মন খারাপ হবার কথা নয়। অথচ আমার ক্ষেত্রে প্রতিবছর উল্টোটাই ঘটে। কারন খুঁজে পাই না। কারন নির্ঘাত আছে। হয়ত সে কারন অন্তঃসলীলা, আমার বোধগম্যতার বাইরে কিংবা অবচেতনে ক্রিয়াশীল। অষ্টমীতে সারাদিন কেটেছে বাড়িতে, টিভিতেই দেখা গেছে কলকাতার নামকরা প্যান্ডেল, সন্ধিপুজো, কুমারী পুজো। কোভিডের পর থেকে ভার্চুয়াল-এ অনেকটা অভিযোজিত হয়েছি ব’লে এভাবে কিছুটা হলেও উপভোগ করা যায়। তবে পুজো মন্ডপে গিয়ে প্রতিমা দর্শনে যে আনন্দ, সে স্বাদের ভাগ হয় না। অষ্টমী শেষ মানে দুর্গোৎসবের উচ্ছ্বাসের লেখচিত্র নিম্নগামী। আমার মন খারাপের মাত্রাও এবার থকে ক্রমশ নিম্নগামী হতে থাকবে।  আগামীকাল নবমী। লেখা আজকের মত প্রায় শেষ। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। স্নিগ্ধ শীতল পরিবেশে চোখ ক্রমশ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে আসছে। কাল আশাকরি আবার কলম ধরব। অসুরবিহীন সমাজে বাস্তবের নবমী কবে আসবে কে জানে ! শুভরাত্রি।

 

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?