বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২১

একুশে আইন

 একুশে আইন - অমরনাথ কর্মকার ০৭/০১/২০২১

একথা পরীক্ষিত সত্য যে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেবার প্রবণতা হ্রাস করলে একদিকে যেমন মেয়েদের প্রসবকালীন মৃত্যু হার কমানো সম্ভব, তেমনি অসুস্থ ও অপুষ্ট শিশু জন্মানোর হারও কমবে।  পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে ভারতে মহিলাদের প্রসবকালীন মৃত্যু হার প্রতি ১ লক্ষ জনে গড়ে ১৪৫ জন। বিষ্ময়ের হলেও সত্যি যে এদেশে প্রতি বছর জন্ম নেওয়া প্রতি ১০০০ জন শিশুর মধ্যে ৩০ টি শিশু জন্মের ১ বছরের মধ্যে মারা যায় অপুষ্টিজনিত ও অসুস্থতার কারনে। ভারতে মা ও শিশুর এই মৃত্যু হার কিন্তু বিশ্বের সর্বোচ্চ যা খুবই উদ্বেগের।  

দেখা গেছে অল্প বয়সে মা হওয়া মেয়েদের মধ্যে রক্তাল্পতায় ভোগার প্রবণতা খুব বেশি। গত কুড়ি বছর ধরে ভারতে এই ধরণের রোগে ভোগা মহিলাদের সংখ্যা একটুও কমেনি বরং তা ক্রমবর্ধমান।

শিক্ষার আলো না পাওয়া, দারিদ্র্য এবং নিরাপত্তাহীনতা – এই সব কারনেই মূলত আমাদের দেশে অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার প্রধানতম কারন। এতদিন আইন ক’রে ১৮ বছরের নীচে মেয়েদের বিয়ে না দেওয়ার চেষ্টা সত্ত্বেও তা পুরোপুরী কার্যকর করা যায়নি এবং আমাদের মত বিশাল জনসংখ্যার তৃতীয় বিশ্বের দেশে তা সম্পূর্ণ কার্যকরী না হওয়াটা স্বাভাবিক কারনেই অসম্ভব।  

সম্প্রতি মেয়েদের ন্যুনতম বিয়ের বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর করার আইন পাশ হয়েছে। শিক্ষিত উচ্চবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্তদের মধ্যে কিছুটা হলেও এই আইনের কার্যকারীতা চোখে পড়বে। কিন্ত যে কারনে অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত, দরিদ্র, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষদের মধ্যে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেবার প্রবণতা, সেই কারণগুলির সমাধান না করা পর্যন্ত আইন আইনই রয়ে যাবে। সুতরাং সবার আগে দরকার সকলের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান। আর অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা শিক্ষা পাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে যা মানুষের বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগের পরিপন্থি। বেঁচে থাকার মত অর্থ রোজগারের পেছনে ছুটতে গিয়ে যাদের জীবন জেরবার, তাদের ওপর আইনের বোঝা চাপিয়ে দিলে তা হবে দুর্বিসহ।  

বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলিতে ধনী দেশগুলির তুলনায় অনেক কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। দেখা গেছে ভারতে অল্প বয়সে বিয়ে হওয়া মেয়েদের মধ্যে ১৭.৬ শতাংশ নিরক্ষর যাদের বয়স ১৫ থেকে ১৮ বছর। ১৯৯০ সালে চীনে মেয়েদের ও ছেলেদের বিয়ের গড় বয়স যেখানে ছিল যথাক্রমে ২২ ও ২৪ বছর সেখানে ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ২৫ ও ২৭ বছর। এই পরিসংখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় অর্থনৈতিক উন্নতি মানুষের শুভ বুদ্ধিকে উদ্দীপ্ত করার পক্ষে অনেকখানি সহায়তা করে – সেক্ষেত্রে সঠিক আইন কার্যকরী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আসে না।

জাতি সংঘের এক সমীক্ষা জানাচ্ছে, বুলগেরিয়ায় সবচেয়ে বেশি ৩৪ বছর বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয় যেখানে নাইজিরিয়ায় বিয়ে দেওয়া হয় সবচেয়ে কম বয়সে। সেখানে মেয়েদের বিয়ের বয়স ২১ বছর। বিশ্বের সার্বিক পরিসংখ্যান বিচার করলে এবং সমস্ত বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসম্মত যুক্তি বিচার করলে নতুন আইনে মেয়েদের ন্যুনতম বিয়ের বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ করার প্রবর্তন যথেষ্ট যুক্তি সাপেক্ষ, সন্দেহ নেই। কিন্তু তারও আগে প্রয়োজন ছিল প্রতিটি মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান।    

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?