'সকলেই আড়চোখে সকলকে দেখে' : অ.না.ক. ২৭/০৩/২০২০
মারন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বময় যখন মৃত্যু-মিছিল, তখন আমাদের দেশকে সেই মহামারী থেকে বাঁচাতে আগামী বেশ কয়েক দিন সকলকে গৃহবন্দী থাকতে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকারী নির্দেশনামা জারি হয়েছে। কিন্তু সময়ে মানুষ অনেকেই সত্য উপলব্ধি করতে পারছেন না হয়ত।। আবার যারা পারছেন তারা সত্যকে সত্য বলে প্রকাশ করার পরিবেশ পাচ্ছেন না অনেকক্ষেত্রেই। আমরা উপলব্ধি করি, জীবনের ছায়ায় কখনো প্রকৃতি, আবার কখনো প্রকৃতির ছায়ায় জীবন। মূলত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই অভাবনীয় উন্নতির যুগেও এই মুহূর্তে প্রকৃতির ছায়ায় জীবন।জানিনা, জীবনের ছায়ায় প্রকৃতি যখন থাকে তখন কেন এই প্রকৃতিকেই আমরা কলুষিত করতে দ্বিধা করি না। আর আজ যখন প্রকৃতি চোখ রাঙাচ্ছে, তখন আমাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। এই দুঃসময়ে গৃহবন্দী থাকার প্রয়োজনীয়তা যে কি ভীষনভাবে জরুরী এই সত্যোপলব্ধি অনেকের মধ্যেই অনুপস্থিত। অনেকেই এসবের তোয়াক্কা না ক'রে অকারনে রাস্তায় বেরোচ্ছেন। এরা একগুঁয়ে। যারা প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন তাঁদের অনেকেই প্রথম পক্ষের কারনে সত্য প্রকাশে পিছপা হচ্ছেন। সুতরাং এভাবে চললে পরিস্থিতি যে কোন দিকে গড়াবে তা ভেবে যথেষ্ট শঙ্কিত হতে শুরু করেছি।
প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও জীবনান্দ দাশের '১৯৪৬-৪৭' কবিতার লাইনগুলো প্রাসঙ্গিকতা বয়ে নিয়ে আসছে। তখন একদিকে ব্রিটিশ শোষণের কড়াল অভিঘাতে বিপর্যস্ত বাঙালি-জীবন, অন্যদিকে বিশ্বরাজনীতির প্রতিহিংসায় দ্বিতীয় মহাসমরে ভেঙে যাওয়া অর্থনীতিতে মানুষের ওপর মানুষ যখন আস্থা হারিয়েছে তখন অযুত যন্ত্রণা-কষ্ট সত্ত্বেও বাঙালিরা মুক্তির স্বপ্ন দেখছিল। এক্ষেত্রেও একদিকে করোনা ভাইরাসের ভয়ঙ্কর সংক্রমণে বিপর্যস্ত জীবনযাত্রা, অন্যদিকে প্রবল অর্থনৈতিক মন্দা আর তারই মধ্যে আমরা মহামারীর ছোবল থেকে আগাম মুক্তি পাবার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আবার মারণ সংক্রমণের আতঙ্কে পরস্পর পরস্পরের প্রতি সন্দিহান - সকলেই সকলকে আড়চোখে দেখতে শুরু করেছি। এ রোগের সংক্রমণ ঘটলে তার প্রতিষেধক নেই - এ যেন জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা। কবির ভাষায় -
'আজকে অস্পষ্ট সব? ভালো করে কথা ভাবা এখন কঠিন;
অন্ধকারে অর্ধসত্য সকলকে জানিয়ে দেবার
নিয়ম এখন আছে; তারপর একা অন্ধকারে
বাকি সত্য আঁচ করে রেওয়াজ
রয়ে গেছে; সকলেই আড়চোখে সকলকে দেখে।'
এ রোগ ধর্ম মানে না, জাত মানে না, এর কাছে আকবর বাদশা আর হরিপদ কেরাণীর মধ্যে কোন ভেদ নেই। ধর্ম,জাত,অর্থ এ সবের চেয়ে এখন জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই নৈরাশ্য আর নেতিবোধকে প্রাধান্য না দিয়ে জীবন রক্ষার চেষ্টা করাটাই আজ একমাত্র সংগ্রাম আমাদের।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন