করোনা ত্রাস ও আমরাঃ অ.না.ক. ২৩/০৩/২০২০
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বজুড়ে যে ত্রাস সৃষ্টি হয়েছে তাতে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। চীনের পর এবার এই মারন ভাইরাসের তাণ্ডবে ইতালিতে চলছে মৃত্যু-মিছিল। এই লেখা যখন শুরু করেছি তখন ইটালিতে মৃতের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। ভারতে ইতিমধ্যেই সংক্রমন শুরু হয়েছে। মৃত্যুও হয়েছে বেশ কয়েকজনের। এই সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার যখন ব্যবস্থা নিচ্ছে তখন আমাদের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যে রাজনৈতিক তরজা শুরু ক'রে দিয়েছি। কেউ গোমুত্র সেবনে এর প্রতিকার খুঁজছে, কেউ হোমিওপ্যাথিতে। কেউ থানকুনি পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, কেউ ভরসা করছেন ঈশ্বরের ওপর। বাংলাদেশের একজন তো ইতিমধ্যে স্বপ্নে পেয়ে গেছেন করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক। অথচ এই রোগের প্রতিষেধক এখনও অনাবিষ্কৃত বলেই কিন্তু বিশ্বজুড়ে এই আতঙ্ক, এত কর্মকান্ড। আর একদল মজা দেখতে ব্যস্ত। সামাজিক মাধ্যমে তারা মশকরা ক'রে চলেছে, গুজব ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি ক'রে দেঁতো হাসি হাসছে। জানিনা হয়ত এটাই তাদের নিরুদ্বেগ থাকার কৌশল। 'জনতা কার্ফু'র জন্য আজ সারাদিন বাড়ি ব'সে সময় কাটছে। তাই লিখতে ইচ্ছে হ'ল। লিখতে বসার আর একটি কারন হ'ল আজ সারাদিন যখন 'এই বিজ্ঞানের যুগেও আমরা কেন এতটা অসহায় বোধ করছি' এই ব্যাপারটা ভেবে কুল পাচ্ছি না তখন মনে প'ড়ে গেল অনেক বছর আগে পড়া বনফুল (বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়)-এর লেখা 'মানুষের মন' গল্পটার কথা। মানুষের চরম দুঃসময়ে মানূষ কিভাবে তাঁর নীতি,আদর্শ থেকে বিচ্যুত হ'তে পারে তারই বর্ণনা রয়েছে গল্পে। নরেশ ও পরেশ দুই সহোদর। দু'জনেই অকৃতদার। প্রথম জন রসায়নে এম.এস.সি., দ্বিতীয় জন সংস্কৃতে এম.এ., দুজনেই কলেজের অধ্যাপক। নরেশ জ্ঞানমার্গে বিশ্বাসী, 'থিওরি অফ রিলেটিভিটি' নিয়ে তাঁর সর্বক্ষণের চর্চা। পরেশের বিচরণ ভক্তিমার্গে। ছোট ভাই মারা যাবার পর তার একমাত্র ছেলে পল্টুর দেখাশোনার সমস্ত ভার নরেশ ও পরেশই নিয়েছিলেন। দু'জনের কাছেই পল্টু ছিল অতি আদরের। একবার পল্টুর অসুখ করল। নরেশ যখন ডাক্তার ডাকার প্রস্তাব দিচ্ছেন, পরেশ তা না মেনে কবিরাজ ডাকতে চাইছেন। ডাক্তারের পরামর্শে নরেশ যখন ইঞ্জেকশান দেওয়ার তোরজোড় করছেন পরেশ তখন জ্যোতিষির পরামর্শ নিতে ব্যস্ত। এদিকে অসুখ ক্রমশ বাড়ছে। নরেশ তখনও পরেশকে ডাক্তারের ইঞ্জেকশনে রাজী করানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। ওদিকে নরেশের ঘোরতর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও পরেশ ঠাকুরের চরণামৃত খাইয়ে পল্টুকে সুস্থ ক'রে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। একসময় পল্টু প্রায় মরনাপন্ন। তখন দেখা গেল পল্টুকে বাঁচিয়ে তোলার তাগিদে নরেশ ও পরেশ তাঁদের সব নীতি, বিশ্বাস বিসর্জন দিলেন। দেখা গেল নরেশ নিজ হাতে পল্টুর মুখে চরণামৃত তুলে দিচ্ছেন আর ওদিকে পরেশ ডাক্তারবাবুকে ফোন করছেন পল্টুকে ইঞ্জেকশান দেওয়ার জন্য।
গল্পটা যাঁদের পড়া আছে তাঁরা নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন এই গল্পের অবতারনা করার উদ্দেশ্য।
করোনা ভাইরাস যখন মহামারীর আকার ধারণ করেছে তখন চিকিতসা শাস্ত্রে অনাবিষ্কৃত থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ এই রোগের প্রতিষেধক বাতলে দিচ্ছেন অনায়াসে। আসলে এগুলো আমাদের অসহায়ত্বের প্রকাশ। তবে এটাও ঠিক একশ্রেণির মানুষ এতে অনেকটা আশ্বস্তও হন। আবার গোমুত্র পানে অসুস্থও হয়ে পড়েন। আমার বক্তব্য, এখনোও সেই অসহায়ত্ব বোধ করার মত পরিস্থিতি বোধ হয় আসেনি। সুতরাং সচেতন থেকে এই রোগ এবং তার সংক্রমণ প্রতিহত করতে হবে আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে। এখনোও বিজ্ঞান ধর্মের দ্বারস্থ হয়নি কিংবা ধর্ম বিজ্ঞানের।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন