বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০১৭

ভিক্ষাবৃত্তির কি অবসান হবে না ?

ভিক্ষাবৃত্তির কি অবসান হবে না ? অ.না.ক. ০৬/০৭/২০১৭
আমার মত আর সকলেই নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন বাড়িতে বাড়িতে ভিখারির আনাগোনা প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। আমি শহুরে অভিজ্ঞতার কথা বলছি। গ্রাম গঞ্জের অভিজ্ঞতা, আমার মনে হয় কম-বেশি একই রকম। এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে ভিখারির সংখ্যা বিষ্ময়কর ভাবে হ্রাস পেয়েছে। থালা হাতে বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে আর্ত কন্ঠে খাবার বা পয়সা চাওয়া ভিখারি মেলা বিরল। পথে-ঘাটে, ট্রেনে-বাসে যদিও বা মেলে, তাদের বেশিরভাগই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারনে ভিক্ষা চান। কর্মক্ষম মানুষের বেঁচে থাকার ন্যুনতম চাহিদা মেটানোর মত কাজের অভাব নেই, মানুষের মনে এই সচেতনতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি অহেতুক সহানুভূতিশীল হওয়ার প্রবণতাও অনেকাংশে কমে যাওয়ায় ভিখারির আকুল সাহায্য প্রার্থনা বিফলে যায়। এভাবেই ভিক্ষাবৃত্তি ক্রমহ্রাসমান। না, ভিক্ষাবৃত্তি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, সত্যিকারের অসহায় মানুষ এখনও আছেন, ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া তাদের গত্যন্তর নেই। অনেক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আছেন যাদের দেখলে সত্যিই মায়া হয়। কিন্তু বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায় অনেকক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতা আসলে অভিনয়। আমি নিজেই আবিষ্কার করেছি রাস্তায় স্বাভাবিকভাবে হেঁটে চলে বেড়ানো এক ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ অন্ধ সেজে ট্রেনের কামরায় ভিক্ষা করতে। হ্যাঁ, মানতেই হবে ভিক্ষাবৃত্তি ন্যুনতম বিনিয়োগ, পরিশ্রম এবং আয়করবিহীন উপার্জনের সহজ পন্থা। প্রয়োজন শুধু অভিনয়ের দক্ষতা। হাতে দগদগে ঘা নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভিক্ষা করতে আসা লোকটার অভিনয়টা যথাযথ হ’লে তবেই মিলবে সাহায্য। আসলে ঘা টা যে মেক-আপ সেটা বুঝে গেলেই তো সব শেষ। তথ্য বলছে, এখন যে ভিখারিদের দেখা মেলে তাদের অধিকাংশই ভন্ড। এই আয়করবিহীন উপার্জনের উপায় হিসাবে ভিক্ষাবৃত্তিরাষ্ট্রীয় ভাবে আইন প্রণয়ন করে বন্ধ করে দেওয়া উচিত, অবিলম্বেই। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে ভিখারি মুক্ত সমাজ গঠনের জন্য সে দেশের সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমাদের দেশে কি ভিক্ষাবৃত্তির মত সামাজিক অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবার কোন পদক্ষেপ নেওয়া হবে না ? উদ্যোগ আর মানসিকতার যৌথ প্রয়াসে আমাদের দেশও ভিক্ষাবৃত্তির অভিশাপ থেকে মুক্ত হ’তে পারে। ভিখারি মুক্ত সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের সময় হয়েছে। প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রণয়নেরও প্রয়োজন আছে।     
মূলত এক শ্রেণির মানুষ আমাদের সমাজে ভিখারি বা ভিক্ষাবৃত্তিকে জিইয়ে রাখার কাজে ব্যস্ত। এরা অন্যকে করুনা ক’রে আত্মতুষ্টি আর পুণ্যার্জন করেন। সুতরাং শয়ে শয়ে করুনা প্রার্থীরা ভিখারির বেশে হাজির। মন্দির-মসজিদগুলিতে এই কারনেই ভিখারিদের সংখ্যাধিক্য। এরা ধর্মের নামে ভিক্ষা করে - কেউ আল্লাহর বান্দা, কেউ ভগবানের দাস। হিন্দুধর্মে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ না-হলেও ইসলাম ধর্মে কিন্তু নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ কী নিষিদ্ধ না সেটা বড়ো কথা নয় ভিখারি কিন্তু রয়েই গেছে – ভিক্ষাবৃত্তির অবসান কিন্তু হয়নি। স্মার্ট ফোন ব্যবহার করলেও ভিক্ষাবৃত্তিকেই তারা লাভজনক বিনা-পরিশ্রমের পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছে। এমনকি ভিক্ষাবৃত্তিতেও চলে দাদাগিরি। ছোটো ছোটো শিশু,অস্থিচর্মসার বৃদ্ধ-বৃদ্ধা,রুগ্ন মহিলা এবং শারীরিক অক্ষম মানুষগুলোর ভিক্ষের জন্য করুণ আর্তিতে বেদনাহত হয়ে বা অনেক সময় পূণ্যলাভের আশায় আমরা কিছু সাহায্য করি। কিন্তু আমরা যেটা অনেকেই জানি না যে ওই ভিক্ষার অর্থ যা আমরা ভিখিরিটির হাতে তুলে দিলাম তাতে হয়তো তার কোনোই অধিকার নেই। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, ভিক্ষাবৃত্তি আর সাহায্য প্রার্থনা আক্ষরিক অর্থে দুটি ভিন্ন। যদিও সাহায্য প্রার্থনার নাম ক’রে রাস্তা ঘাটে যা চলে তা ভিক্ষাবৃত্তিরই নামান্তর। পাড়ার একটি বাচ্চার ক্যানসারের চিকিৎসার খরচের জন্য বাচ্চাটির একটি ছবি দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধ’রে চলে এই সাহায্য প্রার্থনা। আবার মৃত বাবার শ্রাদ্ধের খরচ জোগাতে একটি ছেলেকে আশৌচের পোষাক প’ড়ে বিভিন্ন জায়গায় সাহায্য প্রার্থনা করতে দেখেছি মাসের পর মাস। মিথ্যের আশ্রয় নেওয়া এই সমস্ত মানুষের জন্য প্রকৃত সাহায্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়।   
মানুষের মধ্যে আত্নসন্মান আর আত্নমর্যাদা বোধের উন্মেষ না ঘটলে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ হওয়া কঠিন। নিজের সাধ্যের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখার মানসিক শক্তি তৈরি হ’লে তবেই অন্যের মুখাপেক্ষিতা দূর হয়। এই সচেতনতা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করার সামাজিক উদ্যোগ নিলে তবেই একদিন নির্মূল হবে ভিক্ষাবৃত্তি।  
      নিঃসন্দেহে দারিদ্র ভিক্ষাবৃত্তির অন্যতম কারণ। দরিদ্রতার কষাঘাতে পিষ্ট হয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকেই ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়। কিন্তু সত্যি বলতে কি বর্তমানে বিভিন্ন সরকারী, বে-সরকারী প্রকল্প আছে যেগুলির সদ্ব্যবহার করার মানসিকতা থাকলে বাস্তবিক কাউকেই বোধ হয় ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করতে হয় না। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, স্বভাব আমাদের সমাজের আরোও মারাত্মক ব্যাধি ।    


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?