রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৫

KOLKATA TUI BURO KHOKA



কাঙ্ক্ষিত জীবনের খোঁজ



কাঙ্ক্ষিত জীবনের খোঁজঃ ২৫/১০/১৫


আমাদের কপালে দৈনিক
বন্দুক ধরে থাকে সৈনিক ।  
মৃত্যু-ভয় করে তাড়া  
আত্মারাম খাঁচা ছাড়া ।
জানি বন্দুকে নেই গুলি
তবু কেন দু’হাত তুলি ?  
তবু কেন বৃথাই করি খোঁজ
কাঙ্ক্ষিত জীবন রোজ রোজ ?

শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫

ঊমার অসুর নিধন



ঊমার অসুর নিধনঃ .না.. ২৩/১০/১৫    



শিব রয়েছেন অনলাইনে
ল্যাপটপটা সামনে নিয়ে,
নজর রাখছেন রাত্রি দিনে
ঊমা করছেটা কি মর্ত্যে গিয়ে ?
হোয়াটসঅ্যাপে দেয় কার্ত্তিক
সারাদিনের আপডেট,  
‘বাবা, অবস্থাটা খুব প্যাথিটিক,
এখানে বড্ড স্লো নেট’।
দুঃখ ক’রে গণেশ পাঠায়
একটা লম্বা এস এম এস,
‘বাবা, এখানে কেউ মানুষ নাই,   
নেতারাই সব করল শেষ’ ।
এসব দেখে অগ্নিশর্মা হর
ফোনে ধরেন পার্বতীকে,   
‘এক্ষুনি সব অসুর নিধন কর  
বাদ রাখ শুধু মানুষ ক’টিকে’।  
ঠক বাছতে গাঁ উজার
দেবী পড়েন মহা মুশকিলে
মানুষ বাছতে দিন গুনজার
এদিকে শিবের ভয়ে চমকায় পিলে ।
এমন সময় মর্ত্য থেকে কৈলাসে
শিবের কাছে ফোন কল,  
‘জনগণ আছে আমাদের পাশে,
বাড়াবাড়িতে হবে না ভালো ফল’।
তড়িঘড়ি আপডেট দেয় ফেসবুকে
মহাদেব হয়ে থরহরি কম্পমান,  
‘তীর মেরো না অসুরের বুকে 
অন্তরদ্বন্দ্বই ওদের মৃত্যুর ফরমান’ । 

বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫

বিজয়া দশমী চাইনা



বিজয়া দশমী চাইনাঃ .না.. বিজয়া দশমী ২২/১০/১৫
মর্তে এসে মাগো তুমি করলে নিধন অসুর
কিন্তু সত্যি তুমি করেছ কি মৃত্যু নিশ্চিত তার ?  
তুমি ‘অভয়া’ তবুও ভয়ে ভয়ে থাকি সব্বাই  
তুমি কৈলাসে গেলেই ওরা বেঁচে ওঠে আবার !
তুমি প্রতি বছর আসো আর যাও নিয়মিত, 
‘অসুরদলনী’ তুমি পূজিত কত খ্যাতি নিয়ে,   
কিন্তু তবু দিনে দিনে বাড়ছে অসুর সংখ্যা  
এভাবে চললে ‘নির্ভয়া’ বাড়বেই পাল্লা দিয়ে ।     
মাগো তুমি চিরটাকাল এখানেই থেকে যাও,   
বরং তোমার ভোলা মহেশ্বরকে আন ডেকে,  
যদি তিনি করতে পারেন সব অসুর নাশ !  
‘বিজয়া দশমী’ তাই আর চাইনা মন থেকে ।  

সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫

পুজোয় মন খারাপঃ ষষ্ঠী ১৯/১০/২০১৫



পুজোয় মন খারাপঃ ষষ্ঠী ১৯/১০/২০১৫
গত বছরে পুজোয় মন খারাপের কথা লিখেছিলাম । এবছরেও ইতিমধ্যেই একরাশ মনখারাপ জমা হয়ে গেছে । উৎসবের জীবন শুরু হয়ে গেছে । কিন্তু জীবনের উৎসবে যেখানে রঙিন আলোর ঝলকানি নেই সেই অন্ধকার জায়গাগুলোর দিকেই আমার চোখ চলে যায়, আর তখনই আনন্দঘন পারিপার্শ্বিকতার মধ্যেও মন খারাপ হয়ে যায় । আবার অদ্ভুতভাবে কর্মক্ষেত্রের চাপমুক্ত উৎসবমুখর এই অবসরের দিনগুলিতে হারানো অতীতের নস্টালজিয়া অতর্কিতে হানা দেয় এবং বিস্ময়করভাবে সেগুলোর বেশীরভাগই অনুভূতির মূলে আঘাতহানা । মন খারাপ পঞ্চমীর রাতে । বাড়িতে বিকেলের পর থেকেই দেখলাম স্ত্রীর মুখ গোমড়া । কারণ জিজ্ঞেস করাতে ঠিক উওর মিলল না । আজ ঠাকুর দেখতে যাওয়ার আগাম কোন পরিকল্পনা ছিলনা । তাই বাড়ী থেকে বেরনোর কোন তারাও ছিলনা । অতএব, ঘরে বসে টিভি’র পর্দায় চোখ রেখে সবার সঙ্গে গল্প-গুজবে মত্ত ছিলাম । কিন্তু স্ত্রীর নীরবতা কেমন যেন বেমানান লাগছিল । তাই বাধ্য হয়েই জিজ্ঞেস করলাম কারন । অনেক পরে জানতে পারলাম এবার পুজোতে ছেলের অনেকগুলো জামাপ্যান্ট হয়েছে বটে কিন্তু আমার তরফ থেকে কেনা হয়নি । আমি যে জানতাম না তা কিন্তু নয়, ভেবেছিলাম আত্মীয়-স্বজন প্রায় সকলকেই পুজোর উপহার কিনে দিয়ে মাঝ-মাসেই হাত প্রায় শূন্য । ছেলেরও অনেক প্রাপ্তি ঘটেছে । সুতরাং আমারটা না দিলেই বা ক্ষতি কি ? কিন্তু ব্যাপারটা যে এতটা সংবেদনশীল হয়ে উঠবে বুঝতে পারিনি । অগত্যা অর্থকষ্টকে সহাস্যবদনের অন্তরালে রেখে নতুন জামা কিনে এনে দিলাম ছেলের জন্য । স্ত্রীর মুখের আষাঢ়ে মেঘ কেটে গিয়ে চকিতে দেখা দিল রৌদ্র করোজ্জ্বল দিনের আভাস । আমার কিন্তু মনখারাপের বিন্দুমাত্র উপশম হ’ল না । ছেলের জামাটা কিনতে গিয়ে মোড়ের মাথায় মিষ্টির দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছি, একটা ১০-১২ বছরের ছেলে ছুটে এসে পয়সা চাইল, দশটি টাকা দিয়েও দিলাম । ইচ্ছের বিরুদ্ধেই দিলাম । আমি সাধারণত ভিখারিকে পয়সা দিই না । পুজোর বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই লক্ষ্য করি ট্রেনে বাসে রাস্তায় ভিখারির সংখ্যা বেড়ে যায় । কেউ মেয়ের বিয়ে, কেউ একমাত্র সন্তানের ক্যান্সারের চিকিৎসা, কেউ বা বিকলাঙ্গতার কারণ শুনিয়ে ভিক্ষা চায় । ইতিপূর্বে জেনেছি, এমনকি স্বচক্ষে দেখেছিও, ট্রেনের কামরায় যে মহিলা ছেলের ডায়ালিসিসের জন্য ভিক্ষা চায়, তার ছেলেটির কোন রোগই আদতে নেই । ট্রেনের কামড়ায় অন্ধ সেজে লাঠি হাতে ভিক্ষা চাওয়া লোকটাকে দিব্যি স্বাভাবিক ভাবে হাঁটা-চলা করতে দেখেছি রাস্তায় । এদের মধ্যে নিশ্চয়ই কেউ কেউ আছেন সত্যিই যাদের অর্থ উপার্জনের ক্ষমতা নেই । সত্য আর মিথ্যার মিশ্রিত ভিড়ে সত্যকে সনাক্তকরণের বৃথা চেষ্টায় না গিয়ে ভিক্ষা দেওয়াটাই বন্ধ করে দিয়েছি । তাই ছেলেটার হাতে ১০টি টাঁকা দেওয়ার পরে মনে মনে বেশ একটা দ্বন্দ্ব অনুভব করছিলাম । এমনিতেই পুজোর আগে মনখারাপ, তারওপর সেই মাত্রাটা বেড়ে গেল । আজ ষষ্ঠী । এবার পুজোয় নিজের জন্য কিছু কিনিনি । কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্ত্রি-পুত্রের জোর-জবরদস্তিতে একটা জামা কিনতেই হ’ল । স্ত্রীর বায়নামত সকালে স্নান সেরে আলমারি খুলে নতুন জামাটা বের করতে গিয়ে আলমারির কোনে অতি সযত্নে তুলে রাখা একটা পুরনো জামা চোখে পড়তেই মনটা খারাপ হ’ল – ছোট বেলার একটা স্মৃতি চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে উঠল – বোধহয় চোখের কোনে দু’এক ফোঁটা জলও এসে গিয়েছিল । আমাদের স্কুলের গেটে রামকাকু বসতেন ঝালমুড়ি নিয়ে । টিফিন হলেই রামকাকুর ঝালমুড়ি খাওয়া ছিল আমার নিত্যদিনের কাজ । আজপর্যন্ত অনেক ঝালমুড়ি খেয়েছি, কিন্তু রামকাকুর ঝালমুড়ির স্বাদ ছিল একদমই অন্য রকম – আজও সে স্বাদ ভুলতে পারিনা । একদিন রামকাকুকে কৌতূহলবশে জিজ্ঞেস করেছিলাম –কাকু, তুমি ঝালমুড়িতে কি কি দাও গো ? এতো টেস্টফুল হয় কি ক’রে ? স্বভাবগতভাবে স্বল্পভাষী রামকাকু মুচকি হেসে বলেছিলেন ‘এমন কিছু না’ । রামকাকু আমাকে কেন জানিনা খুব ভালবাসতেন । একদিন আমাকে না দেখতে পেলে বন্ধুদের কাছে খবর নিতেন । আমার মনে আছে, একবার আমার খুব জ্বর হয়েছিল । প্রায় সপ্তাহখানেক স্কুলে যেতে পারিনি । বাড়িতে শুয়েই দিন কাটছে । একদিন বিকেল বেলা হঠাৎ দেখি রামকাকু বাড়ী ফেরার পথে তার মালপত্র সমেত আমাদের বাড়িতে এসে হাজির । মা-বাবার কাছে আমার খবর নিয়ে, আমার সঙ্গে দেখা করে, মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন । সঙ্গে ছিল রামকাকুর একমাত্র ছেলেটা । সেই থেকে শুরু । আমার বাবা প্রতি বছর পুজোর সময় রামকাকুর ছেলের জন্য জামাপ্যান্ট পাঠাতেন । মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার পর থেকে স্কুলে যাওয়া প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল । স্বভাবতই রামকাকুর ঝালমুড়ি খাওয়া বন্ধ । কিন্তু রামকাকুর স্মৃতি থেকে আমি এতটুকুও ম্লান হলাম না । মাঝে মাঝেই ছেলেকে দিয়ে রামকাকু আমার জন্য ঝালমুড়ি পাঠিয়ে দিতেন । অনেক চেষ্টা করেও পয়সা নিতে রাজী করাতে পারিনি । রামকাকু গরীব হলেও তার আন্তরিকতা আর ভালোবাসা নিয়ে বাবা আমাকে অনেক কিছু বলেছেন । বাবাও রামকাকুকে খুব ভালবাসতেন । মাধ্যমিকে ভালো ফল করে আমি কলকাতায় চলে এসেছি । কলকাতার এক নামী স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভরতি হলাম । সেখানেও স্কুলের গেটে ঝালমুড়ি আলুকাবলি নিয়ে বসতেন একজন । কিন্তু তার ঝালমুড়ি খেলেই রামকাকুর কথা মনে হ’ত । বড্ড মিস করতাম রামকাকুকে । সেবার পুজোয় বাড়ী গিয়ে দেখলাম বাবা আমার জন্য বেশ দামী জামাপ্যান্ট কিনেছেন । তাছাড়া মাধ্যমিকে ভালো ফল করার সুবাদে অনেক উপহার এসেছে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে । রাত্রে মা আলমারি থেকে বের করে একে একে সব দেখাতে লাগলেন । মনে মনে খুব আনন্দ পাচ্ছিলাম । দেখানো প্রায় শেষ । ওঘর থেকে বাবা এলেন একটা প্যাকেট হাতে । প্যাকেটখানা খুলে দেখলাম খুব কমদামী একটা জামা । পছন্দ না হওয়ায় কোন মন্তব্য না করে রেখে দিলাম । এবার বাবা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে দিয়েছে জানিস ?’ আমার কাকার যথেষ্ট অর্থ থাকলেও বরাবরই ভীষণ কৃপণ প্রকৃতির মানুষ । তাই ভাবলাম নিশ্চয় এটা আমার কাকার দেওয়া । বাবা এবার প্রায় উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন ‘তোর রামকাকু পাঠিয়েছে’। আমি নির্বাক । চশমার মোটা কাচের ভেতর দিয়ে বাবার চকচকে চোখের কোনে মুক্তোর মত জল স্পষ্ট চোখে পড়ল ।
এতো বছর ধ’রে রামকাকুর দেওয়া সেই জামা সযত্নে রক্ষা করে চলেছি । আজ আলমারি খুলে নতুন জামা বের করতে গিয়ে যে জামাটা আবিষ্কার করলাম, মনে হ’ল উপহার যদি সত্যিকারের ভালোবাসার স্মারক হয়, তবে রামকাকুর দেওয়া জামাটাই আমার জীবনের একমাত্র উপহার । রামকাকুর কথা মনে করে ষষ্ঠীতে মনখারাপ হল । কে জানে রামকাকু আজ বেঁচে আছেন কি না ! তবে শুনেছি ওনার ছেলেটা আজ প্রতিষ্ঠিত । বাবার সঙ্গে নাকি মাঝে মাঝে কথা হয় ।
আজ ষষ্ঠীতে মন খারাপ । জানিনা কাল আবার কোন মনখারাপ এসে হাজির হবে ।

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?