রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

তুমি ভালো আছো তো ?



তুমি ভালো আছো তো ?
যখন নিবিষ্ট হয়ে তোমার দিকে চেয়ে থাকি
আমার কথা জরিয়ে যায়
অগনিত নক্ষত্র, ছায়াপথ, মহাকাশ, নিসর্গ
এবং অস্তিত্ব অবলোকন করি
গভীর মনঃসংযোগে
মনে জাগে সত্যিকারের একটা উদ্বেগ,
-  শিউরে উঠি এক শঙ্কায়
তুমি কি আমার কাছে আছো ?
তার চেয়েও বড় প্রশ্ন জাগে,  
তুমি ভালো আছো তো ?
                     অ.না.ক. ২৮/১২/১৫

রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫

অফিসফিস



প্রথম দিনে অফিসে ঢুকে অফিস বসের কাছে যোগদানপত্র জমা দিয়ে দোতলায় আমার নির্দিষ্ট কক্ষে ঢোকার মুখেই বিপত্তি । দেখলাম একদল বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, কিছু প্রতিবন্ধী প্রায় দরজা আগলে দাঁড়িয়ে । তাদের মধ্যে রয়েছেন কিছু অশীতিপর মানুষও । ভেতর থেকে আমার এক সহকর্মী বেরিয়ে এসে তাদেরকে ধমক দিয়ে আমাকে ভেতরে নিয়ে এলেন । নির্দিষ্ট কম্পিউটারের সামনে বসে পড়লাম । একটু ধাতস্ত হয়ে সেই সহকর্মীর কাছেই জানতে পারলাম এই হতদরিদ্র বৃদ্ধ-বৃদ্ধা প্রতিবন্ধীরা মাঝে মাঝেই আসেন তাদের প্রাপ্য মাসিক ভাতার খবর জানতে । আমার যোগদানের আগাম খবর পেয়ে এই কাজের দায়িত্বে থাকা কর্মী বেশ কিছুদিন হ’ল কাজ-কম্ম শিকেয় তুলে বসে আছেন । ফলে এঁদের মাসিক ভাতা বন্ধ হয়ে আছে । আমার যোগদানের খবর পেয়ে আমার কাছে তাঁদের দুর্দশা নিবারণের আর্জি নিয়ে সকাল থেকে হত্যে দিয়ে বসে আছেন । সরকারী অফিসের নামে এত বদনামের বাস্তব কারণ সেই প্রথম এতটা গুঢ়ভাবে উপলব্ধি করলাম । যাইহোক, সহকর্মী এবং আমার যৌথ অনুরোধে এবং আগামী সপ্তাহে প্রাপ্য মেটালোর প্রতিশ্রুতি পেয়ে পিতৃ-মাতৃ স্থানিয় বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা আমাকে আশীর্বাদ করে ফিরে গেলেন । সে যাত্রা রক্ষা পেলাম । এঁরা কেউ কেউ সমস্যা নিয়ে এখনও প্রায়ই আসেন, চেষ্টা করি মেটাতে । মাসের শেষে আমাদের এক-দুদিনের সংসার-খরচের সমতুল্য সামান্য অর্থ ভাতা পেয়ে যে পরিতৃপ্তির কুঞ্চিত মুখের হাসি নিয়ে সামনে দাঁড়ান তাঁরা, তাতে মন ভরে যায় ।
আমি থাকি কম্পিউটার সেলে, কম্পিউটার নিয়েই কাজ-কারবার । সাজানো গোছানো কাচের বড় ঘর । এই ঘরেই একমাত্র এসি’র ব্যবস্থা আছে । গরমকালে বাইরের লোকেরা অফিসে এসে অনেকেই চ্যাঁচামেচি শুরু করে দেন কারণ অধিকাংশ কর্মীকেই খুঁজে পাওয়া যায় না । আসলে গরমকালে অনেকেই আমাদের এসি ঘরে এসে বসে থাকেন । একবার তো এক রাজনৈতিক নেতা অফিস বসের কাছে সরাসরি নালিশ করেছিলেন । তারপর থেকে অফিস বসের কড়া নির্দেশ জারি হওয়ায় সেই প্রবনতা কমলেও নির্মূল হয়নি । আমাদের ঘরটা কাচে ঘেরা বলে শব্দ বাইরে যায় না । তাই কোন সহকর্মীর পেছলে লাগার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করার এটাই আদর্শ স্থান । বিশেষ করে, সিংজী, যিনি এই অফিসের একমাত্র অবাঙালি কর্মী, তার পেছনে লাগার সবরকম কলা কৌশল এখানেই ঠিক হয় । তবে শেষ পর্যন্ত দোষের ভাগীদার হই একমাত্র আমি । মাঝে মাঝেই সিংজীর সাথে আমার বাক্যালাপ বন্ধ থাকে । তারপর প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের পর আমি নির্দোষ প্রমাণিত হলে আবার শুরু হয় বাক্যালাপ । আদতে রাজপুত বংশীয় হলেও উড়িষ্যায় মানুষ হওয়ার কারনে সিংজীর কথা-বার্তায় ওড়িয়া টান, যদিও তাঁর চেহারায় রাজপুত বংশের ছাপ বেশ স্পষ্ট । সিংজী আদৌ রাজপুত নন একথা বললেই তিনি রেগে অগ্নিশর্মা । এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়েই তাঁকে রাগিয়ে দেওয়া আমাদের প্রায় রুটিন কাজ । তবে অফিসের যে কোন অনুষ্ঠান লখান সিং (লক্ষ্মণ সিং বললে রেগে যান, যদিও ইচ্ছে করে সবাই সেই নামেই ডেকে থাকে) অপরিহার্য । তাঁর নান্দনিক দিকটি সত্যিই প্রশংসনীয় । মেকানিক শিশির বাবুকে কেউ কোনদিন অফিসে কাজ করতে দেখেনি। অথচ, তিনি প্রতিদিন উপস্থিত । বেশিরভাগ সময়ই তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখা যায় । রিটায়ারমেন্টেরও বেশি দেরি নেই ।


অফিস বস কাজ চাপিয়ে দিলে সহাস্যে তা গ্রহণও করেন কিন্তু দিনের পর দিন পরে থাকে । শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে অফিস বস তা অন্যকে দেন । তখন শিশিরবাবুর মুখে বিজয়ীর চটুল হাসি ‘কেমন দিলাম ?’ মিড-ডে মিলের সঞ্জয় একদিন অফিসে না এলে অফিসটা কেমন যেন আলুনী লাগে । কারণ অফিসের বিভিন্ন কর্মচারীর বিচিত্র স্বভাবের মিমিক্রি সঞ্জয়ের মুখে লেগেই থাকে । একদিন তো অফিসবসের মিমিক্রি করার সময় অফিস বস কখন পেছন থেকে সেখানে এসে হাজির বুঝতেই পারেনি । অফিস বস একটুও না রেগে বরং তার প্রশংসাই করেছিলেন । আমাদের অফিসে মহিলা কর্মচারী হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র । অফিসের এক উচ্চপদাধিকারীর অতিরিক্ত মহিলাপ্রীতি আছে । ইলেকশনের কাজে অনেক সময় অন্যান্য অফিস ও স্কুল থেকে অনেক মহিলা কর্মী নিয়োগ করা হয় । পূর্ব পরিকল্পনামাফিক ওই সমস্ত মহিলাদের দায়িত্ব তাকেই দেওয়া হয় এবং অফিসের গ্রুপ-ডি থেকে শুরু করে সবাই তাড়িয়ে তাড়িয়ে মহিলাদের সঙ্গে সেই আধিকারিকের ঢলাঢলি উপভোগ করে ।
অফিসের পলিটিক্স আছে, উপর মহলের চোখরাঙ্গানি আছে, কাজের চাপ আছে কিন্তু পাশাপাশি এই উপভোগ্যতাগুলো আছে বলেই অফিস একঘেয়ে মনে হয় না । অফিস বস কিংবা সহকর্মীর সঙ্গে মনমালিন্য হলে মন খারাপ হয়, সহকর্মীর অবসর গ্রহণের জন্য আয়োজিত বিদায় অনুষ্ঠানে মন ভারাক্রান্ত হয়, চোখে জল আসে, কিন্তু দু’এক দিনেই আবার সব ঠিক হয়ে যায় ।

মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

পঞ্চায়েত জনপ্রতিনিধির ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা জরুরী

সম্প্রতি হরিয়ানা সরকার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থীদের ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারিত ক’রে দিয়েছেন এবং সুপ্রিমকোর্টও এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখার পক্ষেই রায় দিয়েছেন । ইতিপূর্বে রাজস্থান সরকারও সে রাজ্যে একই আইন প্রণয়ন এবং কার্যকরী করেছে । যদিও আমাদের রাজ্যে এরকম আইন প্রণয়নের কোন চিন্তা-ভাবনা আদৌ শুরু হয়নি তবুও সম্প্রতি হরিয়ানায় প্রণীত আইনে সুপ্রিম কোর্টের সম্মতিসুচক রায়ে আমাদের রাজ্যের রাজনীতিতে মত-মতান্তরের তুফান শুরু হয়েছে । পঞ্চায়েত প্রার্থীদের ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের পক্ষে-বিপক্ষে নানান যুক্তির ফুলঝুরি ফুটছে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে । কোন কোন দল তো আবার সুপ্রিমকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধাচরণ করে পুনর্মূল্যায়ন করতে পুনরায় আদালতের দ্বারস্থ হ’তে উদ্যোগী । আবার অনেকে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছেন ।
একথা ঠিক যে আমাদের দেশে গ্রামীণ জনসংখ্যার সামান্য অংশ সাক্ষর এবং শিক্ষিত । যেহেতু ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার অন্তর্গত মানুষজন গ্রামাঞ্চলের, সুতরাং সেই জনগোষ্ঠীতে এক বিরাট অংশের মানুষ নিরক্ষর কিংবা অল্প শিক্ষিত হবেন, একথা বলাই বাহুল্য । আর সেই সমস্ত মানুষজন নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জনপ্রতিনিধিত্ব করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন এমন আইন প্রণয়ন একজন মানুষের সাংবিধানিক অধিকার হরনের সামিল । যদিও সংবিধানের (পঞ্চায়েতিরাজ সংক্রান্ত) ২৪৩-এফ ধারার ১ (বি) উপধারায় পঞ্চায়েত জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাজ্য বিধানসভাকে দেওয়া হয়েছে ।  
এম পি বলবন্তরাই মেহেতা'র নেতৃত্বাধীন ১৯৫৭ সালে ভারত সরকারের ‘বলবন্তরাই মেহেতা কমিটি’ গঠন করার মূল উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ সাধারণ মানুষের উন্নয়নে উপযুক্ত কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করা এবং সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই ১৯৫৮ সালে পঞ্চায়েতি রাজ গঠিত হয়েছিল । তারপর গঙ্গায় প্রবাহিত হয়েছে অনেক জল । সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে এতদিনে অনেক পরিবর্তন এসেছে । স্বাভাবিকভাবেই পঞ্চায়েত আইনের অনেকগুলো সংশোধন হয়েছে । একটা সময় ছিল যখন একজন ম্যাট্রিক পাশ করলেই তাঁকে নিয়ে গর্ব করত মানুষ । এখন সে দিন নেই ।
এখন পঞ্চায়েতে কাজের পরিধি বিস্তর । পঞ্চায়েতে যারা কাজ করেন তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যথেষ্ট এবং সরকারী যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের নিয়োগ করা হয় । আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পঞ্চায়েত দপ্তরে আছে কম্পিউটার, ইন্টারনেট । অনেক কাজই হয় অনলাইনে । তাহলে ভাবুন তো একজন নিরক্ষর কিংবা অতি স্বল্পশিক্ষিত পঞ্চায়েত প্রধানের ন্যুনতম শিক্ষা না থাকলে শুধুমাত্র অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে কিভাবে এই সমস্ত কাজকর্ম পরিচালনা করবেন ? কর্মচারী বা কোন সহযোগীর সাহায্য ছাড়া পঞ্চায়েত সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা তাঁর পক্ষে প্রায় অসম্ভব । যার ফলে উন্নয়ন করার সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরনির্ভরশীলতার কারনে অনেক সময় আইনি চোরাবালিতে ডুবে যাবার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায় । আবার একথাও ঠিক যে যেহেতু শিক্ষা চেতনার বাহক, তাই একজন শিক্ষিত মানুষের মধ্যে দুর্নীতি বাসা বাধার প্রবনতা যথেষ্ট কম থাকে । বলতে দ্বিধা নেই পঞ্চায়েতে দুর্নীতি আমাদের রাজ্যে বহুশ্রুত এবং প্রায় গা সওয়া । তাছাড়া সরকারী উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে এখন পালিত হয় নানান বিষয়ে সচেতনতা শিবির । একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে প্রধান সহ পঞ্চায়েতের প্রায় সকল সদস্যকেই সেই সমস্ত অনুষ্ঠানে উচ্চশিক্ষিত সরকারী আধিকারিকদের সঙ্গে হাজির থাকতে হয় এবং বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য রাখারও প্রয়োজন হয় । সেক্ষেত্রে তিনি ন্যুনতম শিক্ষিত হলে পড়াশুনা করে নিজেকে যেমন সচেতন করতে পারেন তেমনি একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেন । পঞ্চায়েত জনপ্রতিনিধির ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে শুধু যে তাঁর ব্যক্তিগত সাফল্য আসবে তা কিন্তু নয়, তিনি যে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করেন, আখেরে সেই রাজনৈতিক দলেরও ভাবমূর্তিও যথেষ্ট উজ্জ্বল হবে  
মোটকথা গতানুগতিক নিয়মে না চলে সময়ের ছন্দে পা মেলানোটাই বোধ হয় বাস্তবসম্মত এবং বুদ্ধিমানের কাজ ।

শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫

গতকাল (১৩/১১/’১৫) প্যারিসের জঙ্গিহানা প্রসঙ্গেঃ



নিথর সন্ত্রাসঃ .না.. ১৪/১১/২০১৫
ছেড়ে দেওয়ার জন্য ছেলেটার
হাজারো কাকুতি-মিনতি-কান্না
শেষপর্যন্ত গ্রাহ্য হ’ল না ।
সৈনিক বলল,
“তোমাকে বাঁচিয়ে রাখলে
তুমি একদিন বড় হবে”।
পরক্ষণেই পয়েন্ট ব্ল্যাংক ফায়ারিং -
ছেলেটার শরীর নিথর হ’ল ।  

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?