মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

পঞ্চায়েত জনপ্রতিনিধির ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা জরুরী

সম্প্রতি হরিয়ানা সরকার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থীদের ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারিত ক’রে দিয়েছেন এবং সুপ্রিমকোর্টও এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখার পক্ষেই রায় দিয়েছেন । ইতিপূর্বে রাজস্থান সরকারও সে রাজ্যে একই আইন প্রণয়ন এবং কার্যকরী করেছে । যদিও আমাদের রাজ্যে এরকম আইন প্রণয়নের কোন চিন্তা-ভাবনা আদৌ শুরু হয়নি তবুও সম্প্রতি হরিয়ানায় প্রণীত আইনে সুপ্রিম কোর্টের সম্মতিসুচক রায়ে আমাদের রাজ্যের রাজনীতিতে মত-মতান্তরের তুফান শুরু হয়েছে । পঞ্চায়েত প্রার্থীদের ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের পক্ষে-বিপক্ষে নানান যুক্তির ফুলঝুরি ফুটছে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে । কোন কোন দল তো আবার সুপ্রিমকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধাচরণ করে পুনর্মূল্যায়ন করতে পুনরায় আদালতের দ্বারস্থ হ’তে উদ্যোগী । আবার অনেকে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছেন ।
একথা ঠিক যে আমাদের দেশে গ্রামীণ জনসংখ্যার সামান্য অংশ সাক্ষর এবং শিক্ষিত । যেহেতু ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার অন্তর্গত মানুষজন গ্রামাঞ্চলের, সুতরাং সেই জনগোষ্ঠীতে এক বিরাট অংশের মানুষ নিরক্ষর কিংবা অল্প শিক্ষিত হবেন, একথা বলাই বাহুল্য । আর সেই সমস্ত মানুষজন নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জনপ্রতিনিধিত্ব করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন এমন আইন প্রণয়ন একজন মানুষের সাংবিধানিক অধিকার হরনের সামিল । যদিও সংবিধানের (পঞ্চায়েতিরাজ সংক্রান্ত) ২৪৩-এফ ধারার ১ (বি) উপধারায় পঞ্চায়েত জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাজ্য বিধানসভাকে দেওয়া হয়েছে ।  
এম পি বলবন্তরাই মেহেতা'র নেতৃত্বাধীন ১৯৫৭ সালে ভারত সরকারের ‘বলবন্তরাই মেহেতা কমিটি’ গঠন করার মূল উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ সাধারণ মানুষের উন্নয়নে উপযুক্ত কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করা এবং সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই ১৯৫৮ সালে পঞ্চায়েতি রাজ গঠিত হয়েছিল । তারপর গঙ্গায় প্রবাহিত হয়েছে অনেক জল । সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে এতদিনে অনেক পরিবর্তন এসেছে । স্বাভাবিকভাবেই পঞ্চায়েত আইনের অনেকগুলো সংশোধন হয়েছে । একটা সময় ছিল যখন একজন ম্যাট্রিক পাশ করলেই তাঁকে নিয়ে গর্ব করত মানুষ । এখন সে দিন নেই ।
এখন পঞ্চায়েতে কাজের পরিধি বিস্তর । পঞ্চায়েতে যারা কাজ করেন তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যথেষ্ট এবং সরকারী যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের নিয়োগ করা হয় । আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পঞ্চায়েত দপ্তরে আছে কম্পিউটার, ইন্টারনেট । অনেক কাজই হয় অনলাইনে । তাহলে ভাবুন তো একজন নিরক্ষর কিংবা অতি স্বল্পশিক্ষিত পঞ্চায়েত প্রধানের ন্যুনতম শিক্ষা না থাকলে শুধুমাত্র অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে কিভাবে এই সমস্ত কাজকর্ম পরিচালনা করবেন ? কর্মচারী বা কোন সহযোগীর সাহায্য ছাড়া পঞ্চায়েত সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা তাঁর পক্ষে প্রায় অসম্ভব । যার ফলে উন্নয়ন করার সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরনির্ভরশীলতার কারনে অনেক সময় আইনি চোরাবালিতে ডুবে যাবার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায় । আবার একথাও ঠিক যে যেহেতু শিক্ষা চেতনার বাহক, তাই একজন শিক্ষিত মানুষের মধ্যে দুর্নীতি বাসা বাধার প্রবনতা যথেষ্ট কম থাকে । বলতে দ্বিধা নেই পঞ্চায়েতে দুর্নীতি আমাদের রাজ্যে বহুশ্রুত এবং প্রায় গা সওয়া । তাছাড়া সরকারী উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে এখন পালিত হয় নানান বিষয়ে সচেতনতা শিবির । একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে প্রধান সহ পঞ্চায়েতের প্রায় সকল সদস্যকেই সেই সমস্ত অনুষ্ঠানে উচ্চশিক্ষিত সরকারী আধিকারিকদের সঙ্গে হাজির থাকতে হয় এবং বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য রাখারও প্রয়োজন হয় । সেক্ষেত্রে তিনি ন্যুনতম শিক্ষিত হলে পড়াশুনা করে নিজেকে যেমন সচেতন করতে পারেন তেমনি একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেন । পঞ্চায়েত জনপ্রতিনিধির ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে শুধু যে তাঁর ব্যক্তিগত সাফল্য আসবে তা কিন্তু নয়, তিনি যে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করেন, আখেরে সেই রাজনৈতিক দলেরও ভাবমূর্তিও যথেষ্ট উজ্জ্বল হবে  
মোটকথা গতানুগতিক নিয়মে না চলে সময়ের ছন্দে পা মেলানোটাই বোধ হয় বাস্তবসম্মত এবং বুদ্ধিমানের কাজ ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?