সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২

অষ্টমীতে মন খারাপ - অমরনাথ কর্মকার ০৩/১০/২০২২

 

অষ্টমীতে মন খারাপ – অমরনাথ কর্মকার ০৩/১০/২০২২

সপ্তম সুরে প্রাণ বাঁধা শেষ। সপ্তমীর পর আজ অষ্টমীও অতিক্রমণের পথে। অষ্টমী মানে দুর্গোৎসবের লেখচিত্রে বাঙালীর আনন্দের শীর্ষবিন্দু। অর্থাৎ উচ্ছ্বাস আজ মধ্যগগণে। ভোরবেলা একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। তারপর থেকে আকাশের মুখ ভার থাকলেও বৃষ্টি নেই – তবে নিম্নচাপজনিত বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। অষ্টমী তিথি হল অসুরবিনাশী শুদ্ধসত্তার আবির্ভাব তিথি। অষ্টমী তিথিতে দেবী মহালক্ষ্মীরূপা বৈষ্ণবী শক্তি। দেবী সেদিন রাজরাজেশ্বরী মূর্তি। দুহাতে বর দেন ভক্তদের। শ্রেষ্ঠ উপাচার সেদিন নিবেদিত হয়। দেবীর দু’হাত ভরা বরের প্রত্যাশায় কি না জানা নেই, তবে পথে নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ একেবারে উৎসবের মেজাজে। এখন অবশ্য দেব-দেবীর বরে মানুষের বিশ্বাস কম, সমাজে প্রভাবশালীদের (বিশেষ ক’রে রাজনৈতিক) বরই নিশ্চিত এবং নিশ্চিন্ত জীবনের চাবিকাঠি, এমনকি অযোগ্যকে যোগ্যতা দেওয়ার ক্ষমতাধারী এরা। এরাই আজ মূলত এবং কার্যত আমাদের সমাজের দেব-দেবী।  আজ সারাদিন বাড়িতেই কেটেছে। মাঝে মাঝে গেছি পাড়ার পুজো মন্ডপে। বাড়ি বসেই শুনতে পাচ্ছিলাম সানাইএর সুর। সানাইএর সুরে কেমন যেন বিষাদ মেশানো। মনে হয় কোন বিয়ে বাড়ি্র নহবত অথবা বিসমিল্লাহ খানের রেকর্ড শুনছি – যেন একটু বাদেই বাপের বাড়ি থেকে ছিন্ন হবে মেয়ের মায়ার বাঁধন। সত্যিই তো। মায়ার বাঁধন ছিন্ন হওয়ার সেই ট্রানজিশন টাইম অর্থাৎ সন্ধিক্ষণ বা সময়ান্তর অষ্টমীতেই পেরিয়ে গেল।  অষ্টমী পেরিয়ে নবমীর সূচনাও হয়ে গেছে আজ। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট আর নবমী তিথির শুরুর ২৪ মিনিট এই সময়ের মধ্যে চলে সন্ধিক্ষণের উপাসনা। সোজা কথায় সন্ধিপুজো। এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধে মহিষাসুরকে শূলবিদ্ধ করলেন দেবী দুর্গা। অর্থাৎ শুভ শক্তির জয় হ’ল। এই সন্ধিক্ষণের মাহাত্ম্য হ’ল অসহনীয় খারাপের শেষে সহনীয় ভালোতে উত্তরণ।  এতকাল জেনে এসেছি শুভ-অশুভের লড়াইয়ে সব সময় নাকি শুভশক্তির জয় হয়েছে। প্রশ্ন একটাই, জীবনের বাস্তবতায়ও কি তাই হয় ?  মানুষ অবশ্যই শুভশক্তির জয় দেখতে চায়। কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীন অশুভ শক্তি যে ভাবে আমাদের সমাজে ক্ষমতা প্রদর্শন করে তাতে অশুভ শক্তিরই জয়-জয়াকার দেখি। এক ভয়ানক যুদ্ধে দেবী দুর্গা অসুর নিধন করেছিলেন এবং তারপর এসেছিল সেই ট্রানজিশন টাইম বা সন্ধিক্ষণ – অন্ধকার থেকে আলোতে উত্তরণের সময়। বাঙালীর সমাজ ব্যবস্থায় এই সন্ধিক্ষণ আসাটা আজ খুব জরুরী। রক্তমাংসের হাজারো দুর্গা যদি বাস্তবের মহিষাসুর বধ করতে পারে তবেই হবে শুভের জয় – তবেই আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যাদের কারনে সমাজে গরীব না খেয়ে মরে, যদের কারনে দুর্নীতি প্রশ্রয় পায়, যাদের কারনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়, যাদের কারনে সমাজে ভাষা সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে, যাদের কারনে শিক্ষা কলুষিত হয় তারাই এই সমাজের অসুর। এই অসুর নিধন করতে পারার মধ্যেই রয়েছে দুর্গা পুজোর প্রকৃত সার্থকতা। সমাজের প্রয়োজন এইরকম দুর্গারূপী বহু মানুষ, যারা বছরে একবার নয়, প্রতিদিন লেগে থাকুক অসুর নিধনে। এঁদের আজ খুব প্রয়োজন, খুব।

আজ মন খারাপের মাত্রাও লাগামছাড়া। এই সময় মন খারাপ হবার কথা নয়। অথচ আমার ক্ষেত্রে প্রতিবছর উল্টোটাই ঘটে। কারন খুঁজে পাই না। কারন নির্ঘাত আছে। হয়ত সে কারন অন্তঃসলীলা, আমার বোধগম্যতার বাইরে কিংবা অবচেতনে ক্রিয়াশীল। অষ্টমীতে সারাদিন কেটেছে বাড়িতে, টিভিতেই দেখা গেছে কলকাতার নামকরা প্যান্ডেল, সন্ধিপুজো, কুমারী পুজো। কোভিডের পর থেকে ভার্চুয়াল-এ অনেকটা অভিযোজিত হয়েছি ব’লে এভাবে কিছুটা হলেও উপভোগ করা যায়। তবে পুজো মন্ডপে গিয়ে প্রতিমা দর্শনে যে আনন্দ, সে স্বাদের ভাগ হয় না। অষ্টমী শেষ মানে দুর্গোৎসবের উচ্ছ্বাসের লেখচিত্র নিম্নগামী। আমার মন খারাপের মাত্রাও এবার থকে ক্রমশ নিম্নগামী হতে থাকবে।  আগামীকাল নবমী। লেখা আজকের মত প্রায় শেষ। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। স্নিগ্ধ শীতল পরিবেশে চোখ ক্রমশ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে আসছে। কাল আশাকরি আবার কলম ধরব। অসুরবিহীন সমাজে বাস্তবের নবমী কবে আসবে কে জানে ! শুভরাত্রি।

 

রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০২২

সপ্তমীতে মন খারাপ - অমরনাথ কর্মকার ০২/১০/২০২২

 

সপ্তমীতে মন খারাপ - অমরনাথ কর্মকার ০২/১০/২০২২

 

আকাশ ভয় দেখাচ্ছিল সারাদিন। কিন্তু রাত্রি বাড়লেও আমাদের এখানে সেটা কাগুজে বাঘের মত নিস্তেজই রয়ে গেল। উৎসবমুখী মানুষের জন্য এক স্বস্তির বার্তা। সপ্তমী আজ। উৎসবের উচ্ছ্বলতায় স্বাভাবিকভাবেই মহাত্মা গান্ধী হারিয়ে গেলেন। মন ভালো থাকে না পুজো এলে। একথা বহুবার বলেছি। তবে আমার মন খারাপের সঙ্গে অন্যদার সম্পৃক্ত করার কোন অধিকার আমার নেই। তাই  বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের সাথে আনন্দে সামিল হওয়ার বিরুদ্ধাচরণ করা দৃষ্টিকটু। তাই নতুন পাঞ্জাবি-পাজামায় সুবেশ হয়ে চললাম স্থানীয় পুজো মন্ডপগুলো প্রদক্ষিন করতে। এখন অবশ্য 'প্যান্ডেল হপিং' বললে বাঙালীরা ভালো বোঝেন। মন্ডপে মন্ডপে চোখ দিয়ে প্রতিমা দর্শনের লোকের সংখ্যা সামান্যই। বেশিরভাগই প্রতিমা বা মন্ডপের সৌন্দর্য দর্শন করছেন মোবাইল ফোনের লেন্স দিয়ে। এরই মধ্যে গতকাল থেকে ৫জি পরিষেবা চালু হয়েছে দেশে। এমনিতেই আমরা অন্তর্জালে আবদ্ধ হয়ে একরকম নিজস্বতা হারাতে বসেছি। তারপর ৫জি চালু 'লে তার গতি আমাদের নিজস্বতাকে প্রায় সম্পূর্ণ হরন করার অপেক্ষায় আছে। মন্ডপ প্রদক্ষিণ করতে করতে গান্ধীমূর্তির পাদদেশের অবস্থা কল্পনা করছিলাম। সেখানে, গান্ধী জয়ন্তীতেও, পরীক্ষায় পাশ করেও প্রশাসনিক দুর্নীতির কারনে একদল বঞ্চিত চাকরীপ্রার্থী চাকরীর জন্য দীর্ঘদিন আন্দোলন চালাচ্ছেন। চারিদিকে যখন পুজোর আনন্দে সবাই মাতোয়ারা তখন তাদের বঞ্চনার কান্নার শব্দ হারিয়ে যাচ্ছে। একদল অসুর আমাদের সমাজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে যারা আমাদের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে। দেবি দুর্গা নাকি মহিষাসুর মর্দিনী। বছরের পর বছর অসুরদলনী হিসাবে দুর্গার আবির্ভাব হয়। অথচ এই অসুরগুলো যুগে যুগে রয়েই যায়। এবার আবার বাংলার পুজো ইউনেস্কোর হেরিটেজ স্বীকৃতি পেয়েছে। ভেবেছিলাম অসুরনাশিনী দুর্গা এবারে অন্তত অসুর নিধনে লেগে পরবেন। কারন গত কয়েক মাসে বাঙালীর ইতিহাসে বিরল কিছু অন্যায়কারী ধরা পড়েছে যারা অনেক যোগ্য মানুষের আইনসম্মত অধিকার কেড়ে নিয়ে অযোগ্যদের কাছে সেই অধিকার তুলে দিয়েছে। জানিনা এই সমস্ত সমাজধ্বংসকারীদের দুগগা ঠাকুর শেষ পর্যন্ত নিধন করবেন কি না। আজ সপ্তমী – দুর্গোৎসব প্রবহমান। ভেবেছিলাম পুজোর কয়েকদিন অন্তত দুর্গন্ধমুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ অনুপস্থিত থাকবে। কিন্তু হ’ল ঠিক উল্টোটাই। পুজোর উদ্বোধনে গিয়েও রাজনৈতিক নেতাদের মুখে রাজনীতির কথা। আসলে রাজনৈতিক প্রভাব সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনভাবে ঢুকে গেছে যে সমাজ আর রাজনীতিকে পৃথক করা যাচ্ছে না, আর এই দুই-এর মাঝখানে প’ড়ে সাধারণ মানুষ স্যান্ডউইচ। সপ্তমী শেষ। তার মানে দুর্গোৎসবের মধ্যগগন। আমার মন খারাপের মাত্রাও পৌঁছে গেছে সর্বোচ্চ স্তরে। আজ সপ্তমীর রাস্তায় মানুষের মিছিল দেখতে দেখতে ভাবছিলাম সবকিছু ভুলে মানুষ অনাবিল আনন্দে আত্মহারা। অথচ দুদিন বাদেই আবার কানে বাজবে সীমাহীন দুর্নীতির গল্প, রাজনৈতিক তরজা, আদালত, ইডি, সিবিআই, সিআইডি, পুলিশ আর সাধারণ মানুষ উদ্বেগের নদীতে হাবুডুবু খাবে, ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে, আর্থিক সঙ্কট নিয়ে, পেট্রোল ডিজেলের দাম নিয়ে, শিক্ষায় দুর্নীতি নিয়ে। রেপো রেট কিংবা জিডিপি নিয়ে চায়ের দোকানে গভীর আলোচনা হলেও সাধারণ মানুষের এ নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই, কারন এই জটিল অঙ্ক তাদের মাথার উপর দিয়ে যায়। মন খারাপ লাগছে। দু’দিন পরেই আবার শুরু হয়ে যাবে সেই দুর্নীতির গল্প, আইন-আদালত, রাজনৈতিক ভাষা সন্ত্রাস। টিভি খুললেই সারাদিন একটানা চলবে দুর্নীতি আর রাজনীতির খবর। যেন রাজনীতিই হয়ে গেছে আমাদের সংস্কৃতি।

অশান্তির হাতছানিতে শান্তিরও শান্তি নেই। কাল অষ্টমীর প্রস্তুতি চলছে বাঙালীর মনোরাজ্যে। আর আমার মন খারাপ হচ্ছে বাঙালীর স্বার্ণালী ঐতিহ্যের পরিণাম কল্পনা ক’রে। মন হয়ত এভাবে অনেকেরই খারাপ হয়। কিন্তু এই ভাবনাগুলো আমি লিখে ফেলি। কাল অষ্টমীতেও মন ভালো থাকবে না অবধারিতভাবে। আশা করি, আগামীকালও লিখব। চললাম।   

শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২

ষষ্ঠীতে মন খারাপ – অমরনাথ কর্মকার ০১/১০/২০২২

 

 

ষষ্ঠীতে মন খারাপ – অমরনাথ কর্মকার ০১/১০/২০২২

না পাওয়ার যন্ত্রনাকে কোনোদিন মনের মধ্যে সেভাবে স্থান দিইনি। তার  চেয়ে  না দিতে পারার যন্ত্রণায় ভুগি অনেক বেশি। না পাওয়া দুঃখ দেয়নি বা দেয় না তার কারন আমার চাহিদার পরিমাণ নিতান্তই সামান্য। ছোটবেলায় পুজো এলে যখন আমার বন্ধু-বান্ধবদের নতুন পোশাক আশাকের প্রদর্শনী আর সংখ্যা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলত তখন আমিও সেই প্রতিযোগিতায় দর্শক হতাম হাসি মুখে, কারন মাত্র এক বা বড়জোর দুই প্রস্থ (তাও কম দামী) নতুন পোশাক পেয়ে সেই প্রতিযোগিতায় যোগ দিলে শেষ থেকে প্রথম হয়ে হাস্যকর  হওয়ার কোন মানেই হয় না। পুজোর সময় নতুন পোশাকের চেয়েও বেশি আনন্দ পেতাম যখন পুজো উপলক্ষে গুরুজনেরা পয়সা হাতে দিতেন। সেই পয়সা সযত্নে আর সুরক্ষার সঙ্গে জমিয়ে রাখার মধ্যে যে কি আনন্দ ছিল তা অভাবনীয়। মনে পড়ছে ঠাকুমার আঁচলে বাঁধা পয়সা চুরির কথা গুলো। সেই ছোট ছোট পাওয়ার সাথে সাথে দেওয়ার আনন্দও অনুভব করতাম খুব।চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোমকথাটা শুধুই প্রবাদ নয়। পুজোর সময় বাড়িতে কোন সাহায্যপ্রার্থী এলে মা-এর হাত দরাজ হয়ে উঠত। আমি ছোট লে সেই সময় মা আমার হাত দিয়েই তাদের হাতে চাল, পয়সা তুলে দিতেন। আমার হাত দিয়ে সাহায্য তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্য অবশ্যই আমার ওপর ঈশ্বরের আশির্বাদ বর্ষণএটাই বোধ হয় মায়েদের ধর্ম, সন্তানকে ভালো রাখার আপ্রাণ চেষ্টা। এই ভাবেই বোধ হয় আমার মধ্যে তৈরি হয়েছে কাউকে কিছু দিয়ে আনন্দ পাওয়া। সেই ট্রাডিশান আজও সমানে চলেছে। প্রাপ্তিযোগ আমার কম, এখনও। প্রাপ্তির জায়গা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা এর জন্য অনেকাংশেই দায়ী।  আবার অনেকক্ষেত্রে অবধারিত প্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত হই অনেক সময়। তা নিয়ে ভাবি না বললে ভুল হবে, তবে দ্রুত তা মাথা থেকে ভ্যানিশ করার চেষ্টা করি। ছাত্রাবস্থায় কলেজে পড়ার অর্থ যোগাতে যখন থেকে ছাত্র পড়িয়ে রোজগার করতে শুরু করেছি তখন থেকেই সেই রোজগার থেকে পুজোর সময় পরিজনদের নতুন পোশাক কিনে দিয়েছি। সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল পরিজনদের শিশুদের কিছু দেওয়ার চেষ্টা করতাম। আমি এখনও তাই ক’রে থাকি। অর্থবানদের উপহার দিতেও আমার সঙ্কোচ হয়, কারন তাদের বেশিরভাগই উপহারকে আর্থিক মূল্যে বিচার করে এবং তা কম দামী হ’লে উপহার প্রদানকারীর সমালোচনায় লিপ্ত হয়। 

পুজো এসে গেল। আজ ষষ্ঠী। পুজো এলেই আমার মন খারাপ হয় প্রতি বছর। পুজো একটা উৎসব, বাঙালীর ঐতিহ্য। পুজো মানেই এক দেবিকে সামনে রেখে এলাহি আয়োজন, টানা কয়েকদিন আনন্দ, উদ্দীপনা। এ তো প্রতিবছরই হয়। অথচ কেন জানিনা এক’দিন বাইরে যতটা আলো, আমার মনের মধ্যে ততটাই অন্ধকার। নির্দিষ্ট কারনও খুঁজে পাই না। তবে এই সময় গাদাগাদি ভিড়ে অনেক অর্থ ব্যয়ে নির্মিত ঝা চকচকে প্যান্ডেলে আলোর রোশনাই, উচ্ছ্বসিত সুসজ্জিত মানুষের আনন্দঘন আনাগোনা দেখতে দেখতে আর একদল হতদরিদ্র মানুষের ছবি উঁকি মারতে থাকে মনের জানালায়। এ এক অদ্ভুত কন্ট্রাস্ট। এই হতদরিদ্র না খেতে পাওয়া মানুষগুলোও কিন্তু উৎসবে সামিল হয়। তবে অন্যভাবে। সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই মোরগের মত – যার স্থান হয়েছিল টেবিলে – খার খেতে নয় – খাবার হিসাবে। এরা পুজো প্যান্ডেলে মানুষের ভিড়ে হাজির হয় ঠাকুর দেখতে নয়, উৎসব থেকে সাহায্য পেতে। ছোট্ট ছেলেটির হাতে রঙিন বেলুনের পসরা। বেলুন বিক্রিতে তাঁর মন নেই। সে সোৎসাহে চেয়ে আছে নতুন পোশাকে সজ্জিত তার সমবয়সীদের আনন্দ-উচ্ছ্বল বিচরণে। টানাটানির সংসারে বাড়তি উপার্জনের সুযোগ হাতছাড়া না করার তাগিদেই বাবা-মায়ের আদেশ পালন ক’রে যাচ্ছে সে। উৎসব তো তাদের জন্যই হওয়া দরকার কোনোক্রমে বেঁচে থাকার রসদ যোগাতেই যাদের হিমশিম খেতে হয়। অর্থবানদের সারাবছরই তো উৎসব চলে। সমাজের এই ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্য এই সময়টা বড্ড বেশি চোখে পড়ে। বড়লোকের ছেলেটা যখন তার নতুন পোশাক প্রাপ্তির হিসাব করছে ডজনে, তখন পরের বাড়ি বাসন মেজে আয় করা মহিলার ছোট্ট ছেলেটার নউন জামা না হওয়ার দুঃখে চোখের জল শুকিয়ে গেছে।

ষষ্ঠীতে মন খারাপ দিয়ে পুজো শুরু। সপ্তমীতে বৃষ্টির পূর্বাভাষ থাকলেও ষষ্ঠীতেই হাজির। মন খারাপের বৃষ্টি। কাল সপ্তমীতে আবার লিখব মন খারাপের গল্প – ইচ্ছে রইল।

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?