সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২০

ভাল-মন্দের মাপ

,ভাল-মন্দের মাপঃ অ. না.ক. 21/01/2020

কারো কাছে শীত ভালো
কেউ কেউ বলে গ্রীষ্ম,
কেউ বলে ধনী সুখী
কেউ বা বলে নিঃস্ব।
ভালো মন্দের তফাত জানতে
পেতে হবে দুয়েরই স্বাদ
একটা দিয়ে হয়না বিচার
অন্যটাকে যদি দিই বাদ।
যতই আমরা চেঁচিয়ে মরি
'এইটা ভালো ওইটা খারাপ'
তবু সবই থাকে স্বমহিমায়
বৃথাই নিই ভালো- মন্দের মাপ।

সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২০

রাগ ও অভিমান


রাগ ও অভিমানঃ অমরনাথ কর্মকার
রাগ আর অভিমান শব্দ দুটি যে ভিন্নার্থক তা বলাই বাহুল্য। রাগ আর অভিমান দুটি ভিন্ন মানসিক অনুভূতি। রাগের সাথে মিশে থাকে হিংসাত্মক বা নেতিবাচক মনোভাব। বিরক্তিও রাগের উদ্রেক ঘটায়। যে শিক্ষক কথায় কথায় ছাত্র পেটান, তাঁর ছাত্র পেটানো মূলত তাঁর রাগের বহিঃপ্রকাশ। আবার শুনেছি অভিমানের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্কের নিবিড়তা মিশে থাকে। অর্থাৎ অধিকার থাকলে কারোও ওপরে অভিমান হ’তে পারে, তার ওপরে রাগ হওয়াটা অস্বাভাবিক। মোদ্দা কথা, রাগ সবার ওপরই করা যায়, কেবলমাত্র যার ওপরে অধিকার আছে তার ওপরে প্রথমে অভিমান এবং তা মাত্রা ছাড়ালে রাগে পর্যবসিত হয়। তা হ’লে দাঁড়াচ্ছে, রাগ ব্যাপারটার সঙ্গে সম্পর্কহীনতার বা  দুঃসম্পর্কের যোগ আছে। পথে ঘাটে চলতে গিয়ে প্রায়শই আমরা অজানা-অচেনা মানুষদের সঙ্গে  ঝগড়া-ঝাটি, হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ি। বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা বেশি ভাড়া চেয়েছে ব’লে রেগে গিয়ে তাকে যা ইচ্ছে তাই ব’লে ফেলি। রিক্সাওয়ালার অন্যায় আবদার অসহনীয় হয়ে ওঠে কারন তার সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক নেই ব’লে তার প্রতি আমার অভিমান হয় না, রাগ হয়। ক’দিন আগে আমার অফিসে বার্ধক্য ভাতা পাবার আশায় এক বৃদ্ধ এসেছিলেন। তাঁর কাগজ-পত্র যথাযথ নেই, একথা তাকে বোঝাতে চাইলে তিনি কিছুতেই তা বুঝতে চাইওলেন না। কারন তিনি যে কোন প্রকারে বার্ধক্য ভাতা পেতে চান। যতবার বোঝাবার চেষ্টা করেছি, ততবার তিনি তার অসহায়ত্বের কথা, ছেলের দ্বারা তার বঞ্চনার কথা ব’লেই চলেছেন। মনে মনে ভীষণ বিরক্ত হচ্ছিলাম আর তার জীর্ণ চেহারা আর করুণ দৃষ্টি লক্ষ্য ক’রে বিরক্তি প্রশমণের আপ্রাণ চেষ্টা ক’রে যাচ্ছিলাম। বিরক্তিটা রাগে পরিণত হওয়ার আগেই তার দুরবস্থার কথা চিন্তা ক’রে তাকে বার্ধক্য ভাতা পাইয়ে দেবার পথ খুঁজতে লাগলাম। ইতিমধ্যে তাকে ধমক-ধামক দিয়ে থামাবার চেষ্টা করলাম। সেই ধমক ততক্ষণে অভিমান হয়ে গেছে। মনে মনে ভেবে নিয়েছি, তিনি তো আমারই সহ-নাগরিক, অতএব, আমার ক্ষমতার মধ্যে তাকে সাহায্য করা আমার কর্তব্য। শেষ-মেশ গ্রাম পঞ্চায়েতে নিজেই যোগাযোগ ক’রে একটা সুরাহা ক’রে দিলাম। ঐ যে বলেছি, যে শিক্ষক কথায় কথায় ছাত্র পেটান, তাহলে তাঁর সঙ্গে ছাত্রদের সুসম্পর্ক নেই ? না হ’লে ছাত্র পিটিয়ে রাগ প্রকাশের কারন কি ? আসলে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক মূলতঃ নিবিড়। শিক্ষক নিশ্চয়ই চান ছাত্রের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, উৎকৃষ্ট বিদ্যার্জন। হয়ত ছাত্রদের অন্যায় আচরণে বিরক্ত শিক্ষকের এটাই অভিমান প্রকাশের ধরন। ব্যতিক্রম যে নেই, তা নয়। অনেকক্ষেত্রে রাগের তীব্রতা দুঃসম্পর্ক তৈরি করে বলেই অনেক শিক্ষক অভিযুক্ত হন, খবরের কাগজের শিরোনামে আসেন। বাবা, মা বা নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে অভিমান হয় এবং এই অভিমান যখন রাগে পরিণত হয় তখনই ঘটে বিপর্যয় – মারামারি, খুনোখুনি। সেই মুহূর্তে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং অধিকার ছিন্ন হয়। আবার অভিমানও হতে পারে ছাই চাপা আগুনের মত মারাত্মক। অনেক ক্ষেত্রেই আত্মহত্যা এই অভিমানের করুন পরিণতি।  মার্ক টোয়েন যথার্থই বলেছিলেন Anger is an acid that can do more harm to the vessel in which it is stored than to anything on which it is poured. সোজা কথা রাগ আসলে নিজেরই বেশি ক্ষতি করে। সেই জন্যই কনফুসিয়াস বলেছিলেন, রাগ জমা হ’লে আগে তার পরিণাম ভাবা উচিৎ।
আমার মনে হয় অভিমানের সঙ্গে অনুভূতির একটা আত্মিক যোগাযোগ আছে। আধুনিকতার সাথে সাথে আমরা বোধ হয় ক্রমশ অনুভূতি হারাচ্ছি। আমরা সম্প্রীতি, সৌভ্রাতৃত্ব নিয়ে বড় বড় বক্তৃতা দিই। কিন্তু আদৌ কি আমরা সম্প্রীতি, সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারি ? তাই যদি হয়, তা হ’লে দেশ জুড়ে এত হানাহানি, হিংসা, অস্থিরতা থাকত না। সোজা কথায় একই দেশের নাগরিক হিসাবে, একই মাতৃভূমির সন্তান হিসাবে পরস্পরের মধ্যে যে সম্পর্ক থাকা উচিৎ তাতে অভিমান হয়ত থাকত, রাগ থাকত না। এবং এই রাগের পরিণাম নিয়ে দেশ সর্বদা এত উত্তপ্ত থাকত না। বিশেষ ক’রে রাজনৈতিক নেতাদের মুখের ভাষায় সম্প্রীতির সুর থাকলেও বাস্তবে তাঁদের মধ্যেই  অসহিষ্ণুতা বেশী, বক্তৃতায় পারস্পরিক দুঃসম্পর্কের বেলাগাম প্রকাশ। ফলত, বিবিধ রাজনৈতিক মতাদর্শে প্রভাবিত মানুষদের মধ্যে ক্রোধের বাতাবরণ।
আমরা নিজেকে ছাড়া আর কাউকেই চিনি না। নিজের প্রতি নিজে অভিমান ক’রে লাভ নেই। তাই ক্রোধের আগুনে পুড়িয়ে মারি আমাদের দেশকে।  আমরা আদৌ কি দেশকে ভালোবাসি ? মাতৃভূমির সঙ্গে কি আমাদের আদৌ মায়ের সম্পর্ক অনুভব করি ? আজ এ এক বিরাট প্রশ্ন চিহ্ন আমাদের সামনে। প্রসঙ্গত, দার্শনিক অ্যারিস্টটল-এর  বিখ্যাত উক্তির কথা মনে পড়ছে যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় ‘যে কেউ ক্রুদ্ধ হ’তে পারেন, রেগে যাওয়া খুব সহজ। কিন্তু রাগ করার জন্য উপযুক্ত মানুষ চায়, রাগের মাত্রা থাকা চায় এবং রাগের উপযুক্ত সময়, উদ্দেশ্য এবং সঠিক পন্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। সেই ক্ষমতা সবার থাকে না এবং সে ক্ষমতা অর্জন সহজসাধ্য নয়’।   

সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯

ঊনিশ-বিশ


ঊনিশ-বিশ: অ.না.ক. 30/12/2019

সাত পাঁচ না ভেবেই কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না ঠিকই, তবে আগামী বছর আর বছর ক্যালেন্ডারে ঊনিশ-বিশ হলেও পরিস্থিতি যে ঊনিশ-বিশ হবে না একথা ঊনিশের পরিবেশ-পরিস্থিতি থেকে অনেকটাই আন্দাজ করা সম্ভব। আমরা জনগণ, 'গণ' শব্দটাকে গাণিতিক গড় করলে আমাদেরকে চার্লি চ্যাপলিনের ভাষায় 'হেড- লেস মনস্টার' বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবেনা। বৃত্তের কেন্দ্রে যে 'সে আছে আর পরিধির পৃষ্ঠতলে যারা শাসন করছে তারা আমাদেরই সিদ্ধান্তলব্ধ সরকার। কেন্দ্রের সূর্য তাপ ছড়াচ্ছে আর তারই চারপাশে ঘূর্ণায়মান রাজ্যগুলির কোন কোনটি তার থেকে ভিটামিন ডি সংশ্লেষের ক্ষমতা পাচ্ছে আবার সেই তাপের দহনে কোনকোনটি দহন জ্বালায় জর্জরিত। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে কেউ বলছেন 'মোদিভ্রম', আবার  তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে কেউ কেউ বলছেন জনগণের মতিভ্রম। সাম্প্রতিক সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ সহ  বেশ কয়েকটি রাজ্য তোলপাড়। বছরের শেষে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। রাজ্যে ওপার বাংলা থেকে আসা 'অনুপ্রবেশকারী'দের মধ্যে যে ভীতির মেঘ সঞ্চারিত হচ্ছে তাতে আগামী বছরটা এবছরের তুলনায় ঊনিশ-বিশ না হয়ে পরিস্থিতির ব্যবধান যে আকাশ-পাতাল হবে না তা নিশ্চিত 'রে বলা কঠিন। এই অশান্ত পরিস্থিতির মধ্যে 'ফাওবাদি'দের রমরমা। 'ফাওবাদি' মানে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করতে যারা ততপর। কেন্দ্র-রাজ্যের বিরোধের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রায় ভূমিকাহীন বেশ কিছু দল তাদের নেতা-নেত্রীরা পথে নেমে তাদের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে এবং আত্মপ্রকাশের চেষ্টায় মগ্ন। আর গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যমে এই 'ফাওবাদি'রা অতি সক্রিয়। সুযোগ বুঝে পেঁয়াজ মুখ লুকিয়েছে গুদামে। ফলে আমিশাষী জনগণ পেঁয়াজের লাগামহীন দরবৃদ্ধির নাগাল না পেয়ে নিরামিশাষী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আলুও তথৈ বচ। আলুহীন ব্যঞ্জনে অনভ্যস্ত বাঙালীর এখন মাথায় হাত। নববর্ষ উঁকি মারছে। এবছরের ক্ষত যে আগামী বছর ক্যান্সারে পরিণত হবে না সে গ্যারান্টি কে দেবেনাগরিকত্ব আইনের তীক্ষ্ণ নখের থাবা থেকে মুক্তি পাবার নিশ্চয়তা আদৌ কি পাওয়া যাবেঅযোধ্যা রায় নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিশৃঙখলা কতদূর গড়াবে সে নিয়ে আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। নির্ভয়া কান্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই এবছর কিছুদিন আগেই ঘটে গেল তেলেঙ্গানায় মহিলা পশু চিকিতসকের ওপর বর্বরোচিত যৌন নির্যাতন এবং তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা। পুরো দেশ যখন  অপরাধীদের কঠিনতম সাজা দেখার জন্য উদগ্রীব ঠিক তখনই 'পুলিশের গুলি'তে নিহত ' সেই অপরাধীরা, আদালতের রায় ঘোষণার আগেই। দেশে খুন-ধর্ষণের ঘটনা ক্রমবর্ধমান এবং বলা বাহুল্য প্রতিকারহীন সমাজব্যবস্থায় তা আগামী বছরগুলিতে কি ভয়ঙ্কর রুপ নিতে পারে সে আশঙ্কায় বুক দুরু দুরু।  এই সব চিন্তা করতে করতেই আমরা ২০১৯-এর সীমান্তে এসে হাজির। ঊনিশ গেলেও দুশ্চিন্তার অবসানের সম্ভাবনা বিশ বাঁও জলে। ৩৭০ ধারা রদ হওয়ার দৌলতে লাদাখ এবং জম্মু-কাশ্মীরের পৃথক দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হওয়া কিংবা বিক্রমের চাঁদের মাটি স্পর্শ করার ব্যর্থতা প্রভৃতি ২০১৯কে ইতিহাসে বিশেষ জায়গা দেবে। ক্রীড়া প্রেমিকরা মনে রাখবেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পিভি সিন্ধুর সোনা জয়, হিমা দাসের পাঁচটি পদক প্রাপ্তি ইত্যাদি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে  অভিনন্দনের বন্দি হওয়া এবং তার ফিরে আসার রুদ্ধশ্বাস ঘটনা মানুষের মনে দাগ রেখে যাবে। 'বুলবুল'-এর ধ্বংসলীলাও রেখাপাত করবে মনের গভীরে। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সময়ের সাথে আশঙ্কাজনক ক্রমাবনতি ঘটছে। ২০১৯-এর শেষে তাই ২০২০কে স্বাগত জানাতে গিয়ে আসন্ন দিনের রাজনৈতিক ভয়াবহতা নিয়ে জনগণ  কেমন যেন চিন্তাগ্রস্থ। সময় যেমন থেমে থাকে না, তেমনি সময়ের কাছে শিক্ষা নিয়ে জনগণের ভাবনা-চিন্তা পরিমার্জনের প্রয়োজনটাও গুরুত্বপূর্ণ। ঊনিশ-বিশ নয়, এই ভাবনা-চিন্তার ব্যবধান হওয়া উচিত অনেক বেশী।


মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?