শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১
বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২১
মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ, ২০২১
সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
রাজনীতির অশালীন ভাষা
রাজনীতির
অশালীন ভাষাঃ অমরনাথ কর্মকার
রাজনীতি মূলত শাসন করার এক ধরণের সুচারু শিল্প যার সাহায্যে
জনগণ ও অনুগামীদের কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায়
রাজনীতিকদের অন্যতম মূল অস্ত্র রাজনৈতিক ভাষা প্রয়োগ। পৃথিবীর সমস্ত দেশেই ক্ষমতা পাওয়ার
সুযোগ যখন সৃষ্টি হয় অর্থাৎ নির্বাচনের আগে রাজনীতিকদের কৌশলী ভাষার ব্যবহারের তৎপরতা
শুরু হয়ে যায়। উদ্দেশ্য, নির্বাচকদের তাদের দলের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য প্রভাবিত করা।
এক্ষেত্রে রাজনীতির একটা নিজস্ব ভাষা-শৈলি আছে
যা প্রথাগত প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহৃত ভাষার চেয়ে ভিন্ন। অনেক সময় আমাদের ভাষার
ব্যবহারে তা যুক্ত হয়ে যায়, আবার অনেক ক্ষেত্রে কোন শব্দের বা শব্দগুচ্ছের আভিধানিক
অর্থের বিকৃতি ঘটায়। আমরা পশ্চিমবঙ্গে থাকি ব’লে
বাংলা ভাষা নিয়েই আমাদের চর্চা।
ইতিপূর্বে রাজনীতিতে আমরা তার নিজস্ব শৈলির ভাষা ব্যবহৃত
হ’তে দেখেছি। ব্যতিক্রম বাদ দিলে সাধারণভাবে কখনোই তা অশালীনতা ও ব্যক্তিগত আক্রমণের
দোষে দুষ্ট ছিলনা। তারপর রাজনীতিকদের ভাষার
শালীনতা হারানো শুরু হ’ল – শুরু হ’ল ব্যক্তিগত আক্রমণের প্রবণতা। অশালীন বা কুভাষা
প্রয়োগের মাত্রা বাড়তে বাড়তে তা ক্রমশ অশ্রাব্য হ’তে শুরু করেছে যা বাংলা ভাষার গৌরবকে
প্রতিনিয়ত ম্লান ক’রে চলেছে। সম্প্রতি টিভির পর্দায় বা রাজনৈতিক মঞ্চে রাজনীতিকদের
মুখে লাগামহীন অশালীন ভাষা প্রয়োগের যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তা বাংলা ভাষার মর্যাদাকে
ভুলুন্ঠিত ক’রে চলেছে। নিজেদের পক্ষে জনসমর্থন পাওয়ার মহান উদ্দেশ্য সাধনে যে ধরণের
নীচতা প্রদর্শিত হচ্ছে তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়।
স্লোগান বা ভাষা হওয়া উচিৎ নীপিড়িত মানুষের ভাষা – যা মানুষের
মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করে। রাজনীতির ভাষা চাতুর্যপূর্ণ হোউক ক্ষতি নেই, কিন্তু তা যেন
হয় জনগণের দিকনির্দেশনামূলক। রাজনীতির ভাষা এমন হওয়া উচিৎ সাধারণ মানুষ যেন সে ভাষা
বুঝতে পারে, পক্ষান্তরে রাজনৈতিক দলগুলোও যেন জনগণের ভাষা পড়তে পারে। এতে সাধারণ মানুষের
সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা বাড়ে। যত দিন যাচ্ছে, রাজনীতিকদের গঠনমূলক কোন সমালোচনা
বা চমক সৃষ্টিকারী কোন কর্মসূচি গ্রহণ করতে দেখা যায় না – শোনা যাচ্ছে শুধুই লাগামহীন
দোষারোপের রাজনীতি, পারস্পরিক কাদা ছোঁড়াছুড়ি। বর্তমানে যে ধারা আমরা প্রত্যক্ষ করছি তাতে রাজনীতিকদের ভাষায় জনগণের মনের ভাষার প্রতিফলন
আদৌ নেই। কারন, তাতে না আছে গঠনমূলক সমালোচনা, না আছে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য। বরং
তা অশালীনতার মাত্রা ছাড়াচ্ছে। সম্প্রতি পশ্চিমবাংলায় রাজনীতিকদের অশালীন, কুরুচিকর
ভাষা প্রয়োগের যে বন্যা বইছে তাতে মানুষের মনে আশার সঞ্চার তো দূরের কথা, মানুষ আসন্ন
ভয়াবহ দিনের কথা ভেবে রীতিমত শঙ্কিত। সবচেয়ে বড় কথা, অশালীন কুরুচিকর ভাষা ব্যবহারকারী
রাজনীতিকদের মুখে লাগাম পরানোর কোন তৎপরতা দলের নিয়ন্ত্রক নেতা-নেত্রিদের মধ্যেও দেখা যায় না। রাজনীতির আভিধানিক
অর্থ নীতির রাজা। তাহ’লে রাজনীতি হওয়া উচিৎ শুদ্ধ এবং তাঁর ভাষা হওয়া উচিৎ পরিশীলিত।
বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক সাধারণ মানুষ রাজনীতির প্রতি আস্থাহীনতায়
ভুগছেন – রাজনৈতিক দলগুলির সাথে জনগণের একটা অবিশ্বাস ও অনাস্থার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এই বাস্তব পরিস্থিতি কিন্তু উন্নয়নের অন্তরায়। যে জনগোষ্ঠী ভোটে রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষমতা
ভোগের আশায় বুক বাঁধছে, সেই জনগণের মনের ভাষা যদি রাজনৈতিক দলের নেতাদের মুখে উচ্চারিত
না হয় তাহ’লে সাধারণ মানুষের মনে উদ্ভুত অনাস্থা ধীরে ধীরে রাজনীতিকে জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন
ক’রে দেবে। তখন রাজনীতি হয়ে উঠবে গোষ্ঠীকেন্দ্রিক। রাজনীতির এই পরিণাম কখনোই কাঙ্খিত
নয়।
সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের
জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন রাজনীতির ভাষা সংস্কার। রাজনীতিকদের ভাষার ব্যবহারে লাগাম টানতে,
অশালীন ভাষার প্রয়োগ রোধ করতে নতুন ধারা প্রবর্তনের আশু প্রয়োজন। রাজনীতির ভাষা হ’ল
স্বপ্ন দেখা আর মানুষকে স্বপ্ন দেখানোর ভাষা। এতে মিশে থাকে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ মেশানো
পরিশীলিত শব্দ চয়ন। রাজনীতি তো দেশের উন্নয়নের সবচেয়ে মূল্যবান অস্ত্র।
মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২১
ছড়া - রাজনীতি বুঝি না
রাজনীতি বুঝি না
-অমরনাথ কর্মকার ১২/০১/২০২১
দাদা আমি রাজনীতি বুঝি না
সবেতেই রাজনীতি খুঁজি না।
যখন যেখানে পারি ঢুকে যাই
স্বার্থ সিদ্ধি হ'লে সব ল্যাঠা চুকে যায়।
রাজনীতি নীতির রাজা বলে অভিধান
বাস্তবে দেখি রাজনীতি নেতার বিধান।
রাজনীতি যে কি নীতি বলা ভারি শক্ত
তাই আজ নীতি ছেড়ে শক্তের ভক্ত।
যে দিকে জলের স্রোত বয়ে যায়
সাত পাঁচ না ভেবেই গা ভাসাই
চামড়া কতটা পুরু মেপে আমি দেখি না
তবে এটকু বুঝি মোটে আমি মেকি না।
লোক লজ্জার ভয়ে চোখ আমি বুঁজি না।
দাদা আমি সত্যিই রাজনীতি বুঝি না
তাই সবেতেই রাজনীতি খুঁজি না।
সারাটা বছর শুধু মুখের বুলিতে
নোটের পাহাড় জমা হয় ঝুলিতে
ভোটের বাদ্যি ছড়ায় যখন আকাশে বাতাসে
প্রার্থনা করি যাতে রন পায়ে ঘরে লক্ষ্মী আসে।
বিগত বছরের স্থায়ী আবাস ছেড়ে দিয়ে
পরিযায়ী হয়ে বসি সুবিধের জায়গা নিয়ে।
আমি আমার জন্যে লড়ি, অন্যের হয়ে যুঝি না
সত্যি বলছি আমি রাজনীতি একদম বুঝি না
দাদা আমি কোনখানে অহেতুক রাজনীতি খুঁজি না।
বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২১
একুশে আইন
একুশে আইন - অমরনাথ কর্মকার ০৭/০১/২০২১
একথা পরীক্ষিত সত্য যে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেবার প্রবণতা হ্রাস করলে একদিকে যেমন মেয়েদের প্রসবকালীন মৃত্যু হার কমানো সম্ভব, তেমনি অসুস্থ ও অপুষ্ট শিশু জন্মানোর হারও কমবে। পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে ভারতে মহিলাদের প্রসবকালীন মৃত্যু হার প্রতি ১ লক্ষ জনে গড়ে ১৪৫ জন। বিষ্ময়ের হলেও সত্যি যে এদেশে প্রতি বছর জন্ম নেওয়া প্রতি ১০০০ জন শিশুর মধ্যে ৩০ টি শিশু জন্মের ১ বছরের মধ্যে মারা যায় অপুষ্টিজনিত ও অসুস্থতার কারনে। ভারতে মা ও শিশুর এই মৃত্যু হার কিন্তু বিশ্বের সর্বোচ্চ যা খুবই উদ্বেগের।
দেখা গেছে অল্প বয়সে মা হওয়া মেয়েদের মধ্যে রক্তাল্পতায় ভোগার প্রবণতা খুব বেশি। গত কুড়ি বছর ধরে ভারতে এই ধরণের রোগে ভোগা মহিলাদের সংখ্যা একটুও কমেনি বরং তা ক্রমবর্ধমান।
শিক্ষার আলো না পাওয়া, দারিদ্র্য এবং নিরাপত্তাহীনতা – এই সব কারনেই মূলত আমাদের দেশে অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার প্রধানতম কারন। এতদিন আইন ক’রে ১৮ বছরের নীচে মেয়েদের বিয়ে না দেওয়ার চেষ্টা সত্ত্বেও তা পুরোপুরী কার্যকর করা যায়নি এবং আমাদের মত বিশাল জনসংখ্যার তৃতীয় বিশ্বের দেশে তা সম্পূর্ণ কার্যকরী না হওয়াটা স্বাভাবিক কারনেই অসম্ভব।
সম্প্রতি মেয়েদের ন্যুনতম বিয়ের বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর করার আইন পাশ হয়েছে। শিক্ষিত উচ্চবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্তদের মধ্যে কিছুটা হলেও এই আইনের কার্যকারীতা চোখে পড়বে। কিন্ত যে কারনে অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত, দরিদ্র, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষদের মধ্যে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেবার প্রবণতা, সেই কারণগুলির সমাধান না করা পর্যন্ত আইন আইনই রয়ে যাবে। সুতরাং সবার আগে দরকার সকলের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান। আর অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা শিক্ষা পাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে যা মানুষের বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগের পরিপন্থি। বেঁচে থাকার মত অর্থ রোজগারের পেছনে ছুটতে গিয়ে যাদের জীবন জেরবার, তাদের ওপর আইনের বোঝা চাপিয়ে দিলে তা হবে দুর্বিসহ।
বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলিতে ধনী দেশগুলির তুলনায় অনেক কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। দেখা গেছে ভারতে অল্প বয়সে বিয়ে হওয়া মেয়েদের মধ্যে ১৭.৬ শতাংশ নিরক্ষর যাদের বয়স ১৫ থেকে ১৮ বছর। ১৯৯০ সালে চীনে মেয়েদের ও ছেলেদের বিয়ের গড় বয়স যেখানে ছিল যথাক্রমে ২২ ও ২৪ বছর সেখানে ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ২৫ ও ২৭ বছর। এই পরিসংখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় অর্থনৈতিক উন্নতি মানুষের শুভ বুদ্ধিকে উদ্দীপ্ত করার পক্ষে অনেকখানি সহায়তা করে – সেক্ষেত্রে সঠিক আইন কার্যকরী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আসে না।
জাতি সংঘের এক সমীক্ষা জানাচ্ছে, বুলগেরিয়ায় সবচেয়ে বেশি ৩৪ বছর বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয় যেখানে নাইজিরিয়ায় বিয়ে দেওয়া হয় সবচেয়ে কম বয়সে। সেখানে মেয়েদের বিয়ের বয়স ২১ বছর। বিশ্বের সার্বিক পরিসংখ্যান বিচার করলে এবং সমস্ত বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসম্মত যুক্তি বিচার করলে নতুন আইনে মেয়েদের ন্যুনতম বিয়ের বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ করার প্রবর্তন যথেষ্ট যুক্তি সাপেক্ষ, সন্দেহ নেই। কিন্তু তারও আগে প্রয়োজন ছিল প্রতিটি মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান।
মুখ চাপা সত্য
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?
-
এক লাইনের কাব্যঃ অ.না.ক. ২১/০৩/২০১৭ এক লাইনেও কাব্য হয় দু'লাইনে ছন্দময় ।