শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০২০
মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০২০
সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২০
দশমীতে মন খারাপ
দশমীতে মন খারাপঃ দশমী অমরনাথ কর্মকার ২৬/১০/২০২০
আজ তো স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ সবার। আমার মন খারাপ ভিন্ন কারনে। উৎসব শেষ হয়্রে গেল ব'লে একটুও নয়। এ বছর শুরু আর শেষের মধ্যে প্রভাদই বা কি ছিল? আমার খারাপ লাগছে বিজয়া দশমীতে পারস্পরিক মিলনের করুন অবস্থা দেখে। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে তো এতদিন অনেক কিছুই চলল। কিন্তু কোলাকুলি, প্রণাম, আশির্বাদ এগুলো কি ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সম্ভব। স্পর্শ না থাকলে অনুভূতি অনুপস্থিত। মানুষ রক্ত-মাংসে গড়া। অতএব, স্পর্শ ছাড়া অনুভূতি আসে না। হ্যাঁ, মন দিয়েও অনুভূতির আস্বাদ মেলে। সে তো উচ্চ দর্শন। প্লেটোনিক প্রেম, ইউটোপিয়া এসব সাধারণ ব্যাপার-স্যাপার নয়। কোলে কোলে মিলনের নাম কোলাকুলি। অতএব সোস্যাল মিডিয়ায়, অন লাইনে কোলাকুলি আদৌ সম্ভব নয়। বিদেশ থেকে বাবা ছেলেকে যতই আশির্বাদ করুক ভিডিও কলে, আশির্বাদের হাত তো আর ছেলের মাথায় পড়ে না! কিংবা বাবার পায়ে ছেলের হাতের স্পর্শ পেলে বাবার যে অনুভূতি হয় তা কি ভার্চুয়াল মাধ্যমে সম্ভব? মোটকথা এগুলো মূলত যান্ত্রিকতা, মানবিকতা বা সামাজিকতা কোনটাই নয়। এবছর দশমীতে বাঙালীর এই বঞ্চনা ইতিহাস হয়ে থাকবে। আজ আর বেশি কিছু নয়। করোনার ক্রান্তিকাল অতিক্রম ক'রেআগামী বছর পুজো ফিরে আসুক তার স্বাভাবিক মেজাজে এই শুভ কামনায় সকলকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে এবং আজ লেখা একটি কবিতা দিয়ে শেষ করলামঃ
ভার্চুয়াল ভালোবাসাঃ অমরনাথ কর্মকার
বলছি আমি খোলাখুলি
ভারচুয়াল কোলাকুলি,
আশির্বাদ বা ভালোবাসা
সামাজিক নয়, যান্ত্রিকতায় ঠাসা।
স্পর্শ যদি নাই-ই থাকে
অনুভূতির মূল্যটাকে
কেমন ক'রে করবে স্থির?
কারন, রক্ত-মাংসে মানব শরীর।
রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২০
নবমীতে মন খারাপ
নবমীতে মন খারাপঃ নবমী অমরনাথ কর্মকার ২৫/১০/২০২০
এ বছর যার আসাটাই প্রায় অর্থহীন, অতএব তার
যাওয়া নিয়ে মন খারাপ করা বোধ হয় নিরর্থক। সুতরাং 'যেয়োনা নবমী নিশি' ক'রে মন ভারাক্রান্ত
ক'রে কোন লাভ আছে ব'লে আমার মনে হয় না। বরং উৎসবহীন দুর্গোৎসবের নাম ক'রে গোমড়ামুখে
ঘরবন্দি ছুটি কাটানোর চেয়ে কর্মমুখর হয়ে সময় কাটানো এবছরে বেশি প্রয়োজন - কারন দীর্ঘ
লকডাউনে আর্থিক ক্ষতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে। আজ নবমী ব'লে আনন্দের লয়ে কোন পরিবর্তন
দেখলাম না। সেই ঢিমে তালে চলল দুর্গোৎসব - আনন্দহীন - সেই মুখচ্ছদে মুখ ঢাকা কিছু মানুষের
সুবেশে দলবেঁধে পথ চলা, সংক্রমণের আশঙ্কায় সন্দিগ্ধ চাহনি, রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা অস্থায়ী
খাবারের দোকানে খাওয়ার জন্য বায়না করা শিশুকে বাবার ধমকানি, নিরাশ দোকানি এই অপরিচিত
প্রেক্ষাপট। একটা পুজো মন্ডপে দেখলাম শিশুদের
নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দেখার জন্য দাঁড়িয়ে গেলাম। কবিতা, গানে
শিশুরা বেশ মাতিয়ে রেখেছিল। কিন্তু বাদ সাধল কবিতা আবৃত্তি করতে ওঠা এক শিশু। মুখে
তার মাস্ক। সে সেই অবস্থাতেই আবৃত্তি শুরু করতে উদ্যত। কারো অনুরোধই সে শুনতে চাইছে
না। শেষ পর্যন্ত তার বাবার ধমকানিতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মাস্ক খুলল - তবে আবৃত্তির সঙ্গে
স্পষ্ট শোনা গেল মৃদু কান্নার শব্দ। মন খারাপ হ'ল। না, শুধু ঐ শিশুটির জন্য নয় - সব
শিশুর জন্য। সদ্য পৃথিবীতে এসেই এরা মাতৃভাষার মত শিখছে মুখোশ পরা জীবন যাপন। মন খারাপ
না হয়ে পারে, বলুনতো ? করোনা ভাইরাস যে কত
মানুষের মনস্তত্বে আঘাত হেনেছে তার ইয়ত্তা নেই। প্রসঙ্গত, একটা ঘটনার কথা মনে প'ড়ে
গেল। সে ঘটনার কথা ভাবলে মন খারাপের মাত্রা তীব্রতর হয়ে ওঠে। কয়েক মাস আগে লকডাউনে
গরীব মানুষদের যখন চরম দুরবস্থা তখন খাদ্য সামগ্রি বিতরণের এক অনুষ্ঠানে আমি হাজির
ছিলাম। আমার এক পরিচিত শিক্ষক এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা। সুন্দরবনের এক প্রত্যন্ত
গ্রামে খাদ্য সামগ্রি বিতরণ চলছে। প্রচুর হতদরিদ্র মানুষ সাহায্য পেয়ে তৃপ্তির হাসি
নিয়ে বাড়ি ফিরছে। হঠাৎ সেই শিক্ষক উঠে এসে আমাকে
'এবার আপনি দিন' বলেই সেখান থেকে দ্রুত পায়ে গ্রামের ভেতরে চ'লে গেলেন এবং ফিরে
এলেন সব শেষ হয়ে যাবার পর। প্রথমে ভেবেছিলাম তিনি একদা এই গ্রামেই থাকতেন , তাই হয়ত
পরিচিতদের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। কিন্তু আসল সত্যটা ওনার মুখ থেকে যখন শুনলাম তখন
তার চোখে জল দেখে আমিও কান্না চাপতে পারিনি। আসলে খাদ্যসামগ্রি বিতরণ করতে এক সময় খেয়াল
করলেন তার স্কুলের তার সময়ের হেডমাস্টার লাইনে অপেক্ষা করছেন। জীবনে তিনি আথা নত করেননি
এবং ছাত্রদের সবসময় মাথা উঁচু ক'রে বাঁচার উপদেশ দিয়ে গিয়েছেন। তার সেই হেডমাস্টারকে
লাইনে দেখে তিনি একটা আদর্শের এমন পরাজয় সহ্য করতে পারবেন না বলেই দ্রুত চ'লে গিয়েছেন।
গ্রামের মধ্যে গিয়ে সত্যটাও জেনে এসেছেন। হেডমাস্টারমশায়ের একমাত্র ছেলে মুম্বাই-এ
ছোটখাটো একটা কাজ করত। লক ডাউনে সেই কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আত্মঘাতি হয়েছে। এখন তাই বৃদ্ধ
মাস্টারমশায়ের সংসার অচল। পরিস্থিতির কাছে নীতি, আদর্শের এই অভাবনীয় পরাজয় মেনে নেওয়া
কঠিন। তবুও এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতি আমাদের এমন কিছু শিক্ষা দিল যে শিক্ষা হয়ত আগামী
দিনের পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত হবে। নবমী যাক। দুর্গোৎসব এবছর তাড়াতাড়ি বিদায় নিক - কোন
আক্ষেপ থাকবে না। কিন্তু আগামী বছর এতদিনের আনন্দঘন ঐতিহ্য নিয়ে আসুক এই নিশ্চয়তা পেলেই
আমরা খুশি।
শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২০
অষ্টমীতে মন খারাপ
অষ্টমীতে মন খারাপঃ অষ্টমী অমরনাথ কর্মকার
২৪/১০/২০২০
আজ আর 'মহা' শব্দের সঙ্গে 'অষ্টমী'র সন্ধি
করলাম না। আসলে পুজোর মাহাত্ম বা মহত্ব কোনটাই নেই এবার। আসলে একটা চলমান ঐতিহ্য মাঝপথে
এভাবে থমকে যাবে এটা অভাবনীয়। বিজ্ঞানের অগ্রগতি আমাদের জীবনের উপভোগ্যতা বাড়াচ্ছে
অথচ সামান্য একটা আনুবীক্ষণিক বস্তুকে হার মানাতে বিজ্ঞান হিমশিম খাচ্ছে। মুহূর্তে
ধ্বংস করার কত অত্যাধুনিক অস্ত্রের আবিষ্কার হয়েছে অথচ করোনা ভাইরাস নিরাময়ে বিজ্ঞান
এখনো পর্যন্ত ব্যর্থ। ভাবলে মন খারাপ হয়। 'ভার্চুয়াল' ব্যাপারটি যে ক্রমশ সাধারণ মানুষের
মধ্যে বাস্তবায়িত হ'তে শুরু করেছে তার প্রমাণ মিলল আজ - অষ্টমীর অঞ্জলী দেওয়ার সময়।
যেহেতু পুজো মন্ডপে ভীড় করা নিষেধ, তাই অনেককেই দেখলাম অনলাইনে অঞ্জলী দিতে। জীবনে
কি অদ্ভুত পরিবর্তন! অন্তর থেকে মেনে নেওয়া
কঠিন, তবুও নিরুপায় মানুষ। বৈদ্যুতিন পর্দা এখন সামাজিক দর্পণ। আজ অষ্টমীতে মেঘমুক্ত
আকাশ, ঝলমলে প্রকৃতি। কিন্তু উৎসবের ঝলমলানি নেই - নেই আনন্দের উচ্ছ্বাস। বেশিরভাগই
ঘরবন্দী। ঢাকের আওয়াজ কানে আসছে মাঝে মাঝে কিন্তু কেমন যেন ম্লান - সে শব্দে মন খারাপের
সুর। অষ্টমীর সন্ধ্যায় টিভিতে কলকাতার বিভিন্ন বড় পুজোর মন্ডপসজ্জা আর আলোকসজ্জা দেখছিলাম।
দেখছিলাম থিমের বাহার। সবই আছে অথচ কিছুই নেই। জনস্রোতে ভাটা। আসলে বাঙালীর মন ভালো
নেই। সবচে খারাপ লাগে ছোটদের জন্য। এদের আনন্দে বাধা দেওয়ার নির্মমতা অসহনীয় অথচ প্রায়
বলপূর্বক এদের সরল মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে আনন্দের বঞ্চনা। বাইরে পুজো প্যান্ডেল, আলোকসজ্জা,
ঢাকের আওয়াজ অথচ বাচ্চাগুলো ভূতে ভয় পাওয়ার মত করোনা নামক ভাইরাসের ভয়ে গোমড়ামুখে গৃহবন্দি।
এদের দিকে তাকালে সত্যি মন খারাপ হয়।আজ আর নয়। ক’দিন
আগে পুরোনো কর্মস্থল থেকে বদলী হয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছি। সেদিনের সেই মন
খারাপকে কেন্দ্র ক’রে একটা কবিতা লিখেছিলাম। সেই কবিতা দিয়েই অষ্টমী শেষ করছি। শুভ
রাত্রি সবাইকে।
বিষন্ন বিকেলে মন ভালো নেই
......
অমরনাথ কর্মকার ২৫/০৯/২০২০
মন ভালো নেই আজ বিষন্ন
বিকেলে
সকালেও সূর্য হেসেছে
সাদা দাঁত মেলে।
বিকেলে চায়ের রঙটাও কেমন
বেমানান
স্বাদু টোস্ট বিস্কুটও
মনে হয় যেন নিষ্প্রাণ।
দুপুরে আকাশ সাজল কালো
রং দিয়ে,
বিকেলে নিভল আলো বৃষ্টি
এল ঝমঝমিয়ে।
এএক আহত সময়, চায়ের কাপে
ঠোঁট নেই
মোবাইলের সামাজিক মাধ্যমে
ছবি আপলোড নেই
দূরান্তে তোমার বায়বীয়
অবয়ব দৃষ্টিতে ভাসে
অস্তিত্বহীন, তবু সশরীরে
এই বুঝি কাছে আসে।
এখন মন ভালো নেই, ডুবে
আছি গভীর মৌনতায়
কিছু নেই, তবু যেন সব
আছে,ভালো নেই মনটাই।
মনের কোনে আসন পেতেছে
অতিকায় অবয়ব,
বুকের বাঁপাশে জমাট বেঁধেছে
স্নেহ,মায়া সব।
চুমুকহীন ধুমায়িত চা
ক্রমশ শীতল হয়ে যায়,
মনে কোন চাপ নেই, হৃদয়
চঞ্চল নয় উষ্ণতায়।
মনে হয় সবই আছে স্বাভাবিক,
একদম ঠিকঠাক,
তবু মন ভালো নেই, শুধু
ভাবি এই বুঝি দিল ডাক।
বৃষ্টিস্নাত বিষন্ন বিকেলে
বিদ্যাধরীর দিকচক্রবালে
রংধনুটা হারিয়ে গেছে,তবু
ভাবি হাতের নাগালে।
মুখ চাপা সত্য
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?
-
এক লাইনের কাব্যঃ অ.না.ক. ২১/০৩/২০১৭ এক লাইনেও কাব্য হয় দু'লাইনে ছন্দময় ।