বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৯
নীতি শিক্ষা আজ খুব জরুরী
নীতি শিক্ষা আজ খুব জরুরী
শিক্ষার সম্পূর্ণতা তখনই যখন শিক্ষা একজন মানুষের কাছে তার সার্বিক বিকাশের
হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়। এই বিকাশ কেবলমাত্র মানসিক নয়, নৈতিক বিকাশও শিক্ষার
অন্তর্ভুক্ত। সামাজিক জীব হিসাবে মানুষের সামাজিক চিন্তনকে প্রভাবিত করা এবং ‘ভুল’
ও ‘ঠিক’-এর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার ক্ষমতা সৃষ্টির প্রয়োজনে, বিশেষতঃ আজকের
নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের চরম দুঃসময়ে নীতিশিক্ষার মৌলিক চাহিদা অনস্বীকার্য।
নীতি শিক্ষা বৈচিত্র্য, সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বহুবচনীয় মূল্যবোধের
শিক্ষা দেয়।
এখন যৌথ পরিবার ভেঙে অণু পরিবারে রূপান্তরের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ
ক’রে শহরাঞ্চলে এই হার মাত্রাতিরিক্ত হারে ক্রমবর্ধমান। প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে
টিকে থাকার তাগিদে ছোটোবেলা থেকেই ছাত্র-ছাত্রীরা পিতা-মাতার উচ্চাশাপূরণের
মারাত্মক চাপের শিকার। শিক্ষার
বানিজ্যিকীকরণ, তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার, গণমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব, বিশ্বায়ন,
বিলাসী জীবন যাপন প্রভৃতির পরিণামে দ্রুততার সাথে মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের অবনমন
ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। নীতিশিক্ষার অপরিহার্যতার মূলগত কারন, নীতি শিক্ষা বৈচিত্রের
সঙ্গে অভিযোজিত হ’তে শেখায়, শেখায় সহনশীলতা, পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন এবং
বহুত্ববাদের মূল্য।
ইংরেজী MORAL শব্দটি ল্যাটিন ‘মস’ (MOS) বা ‘মরিস’ (MORIS) শব্দ থেকে উৎপন্ন যার অর্থ মানুষের রীতি-নীতি এবং আক্ষরিক অর্থ সামাজিক
পরিবেশে মানুষ কিভাবে একসঙ্গে বসবাস করতে পারে। নৈতিক মূল্যবোধ একটি
সর্বাঙ্গসুন্দর সৎ জীবন সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে যেখানে সততা, দায়ীত্বশীলতা,
কর্তব্যপরায়নতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষের শান্তিপূর্ণ
সহাবস্থান ঘটে।
উপযুক্ত পথ-প্রদর্শক না পেলে শিশুরা অতি সহজেই ভালো বা মন্দ যে কোন দিকেই
প্রভাবিত হ’তে পারে। সুতরাং শিক্ষাঙ্গনে নীতিমালা শিক্ষার প্রয়োজন আছে যা সুন্দর
জীবন যাপনে সাহায্য করে এবং পাশাপাশি শিশুকে সমাজের একজন সভ্য হিসাবে সামাজিক
উন্নয়নে সামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জনে সাহায্য করে। শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেই নয়,
সামগ্রিকভাবে সমাজের কল্যাণে আসে এমন নীতি শিক্ষা সর্বস্তরে প্রসারের প্রয়োজন আছে।
শিশুদের জন্য নীতি শিক্ষার পরিকাঠামো এমন হওয়া প্রয়োজন যাতে তারা প্রথমেই ‘ভালো’
আর ‘মন্দ’-এর ভেদাভেদ বুঝতে সক্ষম হয়। এক্ষেত্রে বই-এর চেয়েও হাতে-কলমে শিক্ষার
গুরুত্ব অধিক, সামাজিক পরিবেশের ভিন্নতা অনুযায়ী নীতি শিক্ষার ধরণ-ধারনও পৃথক হওয়া
প্রয়োজন।
নীতি শিক্ষার প্রয়োজন জরুরী হয়ে ওঠার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারন হ’ল পৃথিবীর
দ্রুত পরিবর্তন হওয়ার কারনে বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে তৈরি হচ্ছে সংঘাত যেখানে কোন
নির্দিষ্ট বা একক আদর্শ বা নীতির স্থান নেই, এই বৈচিত্র্য আমাদেরকে
কিংকর্তব্যবিমুঢ় ক’রে দিচ্ছে। এই নীতির বিভিন্নতার ব্যবধান ঘোচানো প্রায় অসম্ভব।
সুতরাং এই বিভিন্নতাগুলির ধরণ বোঝা নীতিশিক্ষার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া
প্রয়োজন।
অমরনাথ কর্মকার ১৭/১০/২০১৯
বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৯
সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৯
নবমীতে মন খারাপ – অ.না.ক. ০৭/১০/২০১৯
নবমীতে মন খারাপ –
অ.না.ক. ০৭/১০/২০১৯
'যেও
না নবমী নিশি' হাজার আকুতি সত্ত্বেও নবমীর নিশাবসান হবেই। আসলে এই আকুতির মূল
বক্তব্য উৎসবের আনন্দের
স্থায়ীত্ব আর একটু দীর্ঘ
হ'লে ভাল হ'ত। আমার যেহেতু
পুজো এলেই মন খারাপের রোগ
আছে, অতএব সে আকুতি প্রকাশের
আগ্রহ আমার নেই। তবে নবমীতে আর সকলের ভারাক্রান্ত
মুখের দিকে চেয়ে আমার মন খারাপ হয়।
এ মন খারাপ মূলত
সমবেদনা প্রকাশ। অনেক প্রতিমা দেখেছি এবার। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিমার আদলের পরিবর্তন নিয়ে কেউ খুব একটা মাথা ঘামায় না, বরং থিম নিয়েই সবাই যেন বেশি ভাবিত। রবীন্দ্র সঙ্গীতের
সুর পালটে যাচ্ছে কপি রাইট উঠিয়ে নেওয়ার পর থেকে। পুরোনো
গান রিমেক করা হচ্ছে নতুন আঙ্গীকে। এ সবই আধুনিকতাকে জানান দিতে। আমরা ছোট বেলায় খুব উৎসাহ নিয়ে প্রতিটা প্যান্ডেলের দুর্গা প্রতিমার মুখ-চোখের আদল দেখতাম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। বিশেষ ক'রে অসুর
আর কার্তিকের চেহারা নিয়ে আমাদের মধ্যে সমালোচনার ধুম পড়ে যেত। এখন দুর্গা প্রতিমাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট বিরল
ঘটনা। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরের হরিশ মুখার্জী রোডের দে বাড়ির পুজোতে কিন্তু গত দেড়শ
বছর ধরে অসুরকে দেখা যায় কোট-টাই পড়া ইংরেজের বেশে। এর ব্যাখ্যা স্পষ্ট। অসুররূপী ইংরেজদের
নিধন করেই ভারতবর্ষের স্বাধীনতা এসেছিল। বাংলা ও বাঙালির চিরাচরিত জীবনধারাতে বিশেষ
করে প্রাচীন সমাজের গতানুগতিক রীতিনীতি বদলের ক্ষেত্রে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি অগ্রণী
ভূমিকা পালন করেছিল। প্রিন্স দ্বারকানাথের
স্ত্রী দিগম্বরীদেবী ছিলেন অসামান্যা সুন্দরী এক নারী, কথিত আছে তাঁর আমলে ঠাকুরবাড়ির
দুর্গাপুজোর মূর্তি দিগম্বরীদেবীর মুখের আদলে তৈরি করা হত। যদিও পরবর্তীকালে ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার কারনে ঠাকুর পরিবারে দুর্গাপুজো সম্পূর্ণ
বন্ধ হয়ে যায়। খারাপ লাগে, যে দেবীকে ঘিরে এই উৎসব, তাঁর প্রতি মনোনিবেশ না ক’রে
অন্যান্য বিষয়ের প্রতিই উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বেশী। এক সময় পুজোর গান নিয়ে মাতামাতি
হ’ত। এখন আর আলাদা ক’রে পুজোর গান তৈরি হয় না। শিল্পীদের মধ্যেও এই আক্ষেপ শোনা
যায়। তবে, আমাদের একটাই সান্ত্বনা, ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ বাঙালী ছিলেন আর তিনি
অফুরন্ত গান লিখেছিলেন। আজ নবমী – অর্থাৎ দুর্গোৎসবের অন্তিম দিন। আগামীকালই মাটির
প্রতিমা জলে গুলে যাবে। প্রতিমা মাটির। মৃৎশিল্পীর বছরভর অক্লান্ত পরিশ্রম আর তাঁর
শৈল্পিক কুশলতায় তিল তিল ক’রে গড়ে তোলা শিল্প কর্মের সলিল সমাধি হবে দশমীতে। যেহেতু
মৃৎশিল্প তাই বিসর্জনে দুঃখ নেই। আগামী বছর আবার
শিল্পীর কুশলতা প্রকাশ পাবে, তৈরি হবে আর্থিক আনুকূল্য। কিন্তু এই যে থিম-এর
পেছনে বিপুল অর্থ-ব্যয় তার দায়-ভার কিন্তু নিতে হবে আমাদের সকলকেই, ধনী দরিদ্র
নির্বিশেষে । এখানেই আমার আপত্তি। যা হোক, গত কয়েকদিনের রঙিন জীবনের শেষে আবার
ফিরে আসবে সাদা-কালো প্রাত্যহিক জীবন যাপন। এটা মন খারাপের কারন হলেও এটাকে বাস্তব
ধ’রে সারা বছর আনন্দমুখর থাকাটাই হয়ত যুক্তিসঙ্গত। শুভ রাত্রি। কাল দশমীতে আবার
লেখার চেষ্টা করব – এবারের দুর্গাপুজোয় শেষ লেখা। শুভ রাত্রি।
রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৯
অষ্টমীতে মন খারাপ - ০৬/১০/২০১৯
অষ্টমীতে মন খারাপঃ অ.না.ক. ০৬/১০/২০১৯
অষ্টমী আজ।। মন খারাপের তীব্রতা একটু যেন ফিকে হয়েছে। সারাদিন চেষ্টা করেছি মনকে প্রশ্রয় না দিতে। গতকাল আমাকে যেতে হয়েছিল শপিং মলে, বাকী থাকা উপহার কেনার উদ্দেশ্যে। পুজোতে আমি সবাইকে উপহার দিই না - আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যাদের বাস্তবিক অর্থানুকুল্য নেই তাদেরকেই উপহার দেওয়ার চেষ্টা করি আমার সীমিত ক্ষমতার মধ্যে। আমার নিজের জন্য যখন একটা প্যান্ট বাছাই চলছে ততক্ষনাৎ মনে প'ড়ে গেল এক দরিদ্র আত্মীয়ের কথা যার কথা এবার ভাবাই হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমার প্যান্ট কেনা বন্ধ রেখে সেই উপহার কেনা হ'ল। আজ সেই আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে উপহার দিয়ে এসেছি। সেখানে গিয়ে বুঝলাম আমার উপহারটি প্রত্যাশিত ছিল - নইলে এবার পুজো কাটাতে হ'ত পুরোনো পোশাকেই। মন খারাপের মধ্যেই খানিকটা মানসিক তৃপ্তি পেলাম। সত্যি বলতে কি ছোট বেলায়, যখন পুজোতে উপহার পেলে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কথা, আমি আমার আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে সেভাবে উপহার পাইনি, এমনকি ধনী আত্মীয়দের কাছ থেকেও নয়। তখন পুজোতে দুঃখ হ’ত। সেই দিনগুলোর কথা পুজো এলে খুব মনে পড়ে। মন খারাপ হয়। তাই পুজো এলে আমি তাদেরই উপহার দিই যারা আমার সামান্য উপহারে আনন্দিত হয়। না পাওয়ার দুঃখ ভুলতে দানই সবচে’ ভাল দাওয়াই – আমি এই তত্ত্বে বিশ্বাসী। পুজোর উপহারের কথা যখন উঠলই তখন একটা কথা খুব মনে হচ্ছে, পুজোতে উপহার হিসাবে শুধু নতুন পোষাক কেন, অন্য অনেক উপহারও তো দেওয়া যেতে পারে। হয়ত প্রথাগত পরম্পরার কারনে এর ব্যতিক্রম ঘটে না, কিন্তু প্রথা তো ভাঙাই যায়। জানা যায় দ্বারকানাথের কাছ থেকে প্রত্যেক পুজোতেই ঠাকুরবাড়ির মেয়ে-বউ উপহার পেতেন এক শিশি দামী সুগন্ধী, খোঁপায় দেওয়ার সোনা বা রুপোর ফুল, কাচের চুড়ি আর নতুন বই। আজ রাস্তায় চলতে চলতে সেই বাচ্চা ছেলেটার কথা খুব মনে পড়ছিল গত বছর পুজোতে যাকে দেখেছিলাম উৎসবের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে বুদবুদ তৈরির যন্ত্র বিক্রি করছে জীর্ণ পোশাকে। আর তারই সমবয়সীরা নতুন পোশাকে তার কাছে হাজির ক্রেতার ভূমিকায়। ছেলেটার জন্য মন খারাপ হ'ল। মনে মনে সান্ত্বনা পাবার চেষ্টা করলাম, হয়ত তার বাবার অসুখ সেরেছে। এবছর নিশ্চয় সে নতুন পোশাকে ঠাকুর দেখছে আনন্দ নিয়ে। লক্ষ্য ক'রে দেখেছি এখন ভিক্ষাবৃত্তি অনেকটাই কমেছে। কিন্তু এবার পুজোয় কিছু মানুষকে দেখলাম ভিক্ষা চাইতে, চেহারায় বা পোশাকে আদৌ তাদেরকে ভিখারী বলে মনে হবে না।প্রকৃত আর ভন্ডের পার্থক্য বোঝা যত কঠিন হচ্ছে, প্রকৃত অসহায়রা তত বঞ্চিত হচ্ছে। গত দু’দিন পুজো প্যান্ডেলে ঘুরতে ঘুরতে অনেক জায়গায় পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ে নানান প্রচার দেখেছি। বিশেষ ক’রে জল সংরক্ষণ ও প্লাস্টিক বর্জন বিষয়ে। জানিনা এই সচেতনতা কতটা কার্যকরী। পুজো যেমন বছরে একবার আসে, জানিনা মানুষ ঐ একদিনের জন্যই সচেতন হয় কি না। অথচ রাস্তার ধারের পৌরসভার টাইম কলের পানীয় জল দিনের পর দিন অকারনে ড্রেনে যাচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জন বলতে আমরা জানছি প্লাষ্টিকের ব্যাগ পরিহার করা। অথচ পুজো প্যান্ডেলের বাইরে পসরা সাজিয়ে বিক্রি হচ্ছে বাচ্চাদের প্লাস্টিকের খেলনা। এই ধরনের খেলনা বা প্লাস্টিকের দ্রব্য তৈরি বন্ধ করার সরকারী উদ্যোগ সেভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না । উৎসব উৎসবের মত পালিত হোক, এর সঙ্গে নানান বিষয় মিশিয়ে দুর্গাপুজোর মৌলিকত্ব নষ্ট ক’রে তাকে জটিল করার আমি ঘোর বিরোধী। অষ্টমীর রাস্তায় ভীড়ের দাপটে পথ চলা কঠিন, তাই আশপাশের কয়েকটা প্যান্ডেল ঘুরে বাড়ি ফিরে এসেছি। ঘরের বোকা বাক্সটা তো রয়েইছে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর জন্য।মন খারাপ এখন লঘুতর। উৎসব প্রায় শেষের দিকে। কাল নবমী – আবার লিখব এই আশা নিয়ে আপাতত বিছানায়।
শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৯
সপ্তমীতে মন খারাপ ০৫/১০/২০১৯
সপ্তমীতে মন খারাপ ০৫/১০/২০১৯
পুজো এলেই মন খারাপ হয়। এর থেকে বেরোনোর কোন পথ খুঁজে পাইনি আজও। আসলে কেন জানিনা উৎসবের জনারণ্যে নিজেকে বড্ড নিঃসঙ্গ লাগে। আজ সপ্তমী। প্রিয়জনদের আবদার মেটানো আর সামাজিকতার খাতিরে বেরিয়েছিলাম প্যান্ডেল দেখতে, রংবাহারী আধুনিক আলোকসজ্জা দেখতে। তার চেয়েও সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু 'থিম' দেখার আগ্রহ ছিল বেশি। মন খারাপ লাগছিল এই ভেবে যে, যে দেবীর আরাধনা ঘিরে এই উৎসব তাঁর প্রসঙ্গ, তাঁর মূর্তির সৌন্দর্য নিয়ে কোন আলোচনাই অনুপস্থিত। কেবল প্যান্ডেলের কারুকার্য আর থিম এগুলোই প্রায় সবার মুখে মুখে। বারবার মনে হচ্ছিল এগুলোর জন্য তো পৃথক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে - দুর্গা পুজো কেন? তাতে কি দেবীকে ছোট করা হচ্ছে না! জানি একান্ত এই ব্যক্তিগত মতামত গ্রহণযোগ্য হবে না। আমাদের ছোট বেলায় আলোকসজ্জা পুজো মন্ডপের অন্যতম আকর্ষণের বিষয় ছিল ঠিকই কিন্তু বেশ মনে আছে সবার মুখে মুখে ফিরত কোন প্যান্ডেলে দুর্গার মুখ কেমন হয়েছে, কোথায় অসুরের চেহারাটা মন কেড়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রসঙ্গত ব'লে রাখি আমি আধুনিকতায় বিশ্বাসী কিন্তু আধুনিকতার সাথে প্রাসঙ্গিকতার মেল বন্ধন না থাকলে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য হয় না আমার কাছে। এসব দেখে শুনেই মন খারাপ হয়, সহস্র মানুষের ভিড়েও নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে হয়। আমাদের পাড়ার এক প্যান্ডেলের সামনে দেখলাম পুজো কমিটির তরফ থেকে গরীবদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণের অনুষ্ঠান চলছে। মঞ্চে একে একে ডাকা হচ্ছে বস্ত্র গ্রহণের উদ্দেশ্যে। দেখলাম আমাদের পাড়ার লালু মাথা নিচু করে মঞ্চে উঠে আবার মাথা নিচু করেই বস্ত্র হাতে নেমে দ্রুত মিশে গেল মানুষের ভিড়ে। বুঝতে বাকী রইল না ও লজ্জা পেয়েছে। লালু ভীষন মেধাবী ছাত্র। ওর দারিদ্রের কথা মুখ ফুটে কখনও বলতে শুনিনি। লেখাপড়ার জন্য পাড়া থেকে আমরা নিয়মিত অর্থ সাহায্য করি। মনটা খারাপ হ'ল। বস্ত্র বিতরণ কি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে পুজো প্যান্ডেলে হাজার হাজার মানুষের সামনেই করতে হবে! দরিদ্রের কি লাজ লজ্জা নেই? এসব ভেবে লাভ হবে না জানি, তবুও মনে খোঁচা দেয়। পরিণতি মন খারাপ। মন খারাপ হলে সময় যেন দীর্ঘায়িত হয় - সময় ধার নেওয়ার মত পাশে কাউকে পাই না ব'লে কলমকে সঙ্গী করি। শেষে কবিতায় চার লাইন -
মন খারাপে মন না দিয়ে
খুলে রাখি বুকের বোতাম,
ঠান্ডা বাতাস হুড়মুড়িয়ে
ঢুকলে আমি স্নিগ্ধ হতাম।
পুজো এলেই মন খারাপ হয়। এর থেকে বেরোনোর কোন পথ খুঁজে পাইনি আজও। আসলে কেন জানিনা উৎসবের জনারণ্যে নিজেকে বড্ড নিঃসঙ্গ লাগে। আজ সপ্তমী। প্রিয়জনদের আবদার মেটানো আর সামাজিকতার খাতিরে বেরিয়েছিলাম প্যান্ডেল দেখতে, রংবাহারী আধুনিক আলোকসজ্জা দেখতে। তার চেয়েও সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু 'থিম' দেখার আগ্রহ ছিল বেশি। মন খারাপ লাগছিল এই ভেবে যে, যে দেবীর আরাধনা ঘিরে এই উৎসব তাঁর প্রসঙ্গ, তাঁর মূর্তির সৌন্দর্য নিয়ে কোন আলোচনাই অনুপস্থিত। কেবল প্যান্ডেলের কারুকার্য আর থিম এগুলোই প্রায় সবার মুখে মুখে। বারবার মনে হচ্ছিল এগুলোর জন্য তো পৃথক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে - দুর্গা পুজো কেন? তাতে কি দেবীকে ছোট করা হচ্ছে না! জানি একান্ত এই ব্যক্তিগত মতামত গ্রহণযোগ্য হবে না। আমাদের ছোট বেলায় আলোকসজ্জা পুজো মন্ডপের অন্যতম আকর্ষণের বিষয় ছিল ঠিকই কিন্তু বেশ মনে আছে সবার মুখে মুখে ফিরত কোন প্যান্ডেলে দুর্গার মুখ কেমন হয়েছে, কোথায় অসুরের চেহারাটা মন কেড়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রসঙ্গত ব'লে রাখি আমি আধুনিকতায় বিশ্বাসী কিন্তু আধুনিকতার সাথে প্রাসঙ্গিকতার মেল বন্ধন না থাকলে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য হয় না আমার কাছে। এসব দেখে শুনেই মন খারাপ হয়, সহস্র মানুষের ভিড়েও নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে হয়। আমাদের পাড়ার এক প্যান্ডেলের সামনে দেখলাম পুজো কমিটির তরফ থেকে গরীবদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণের অনুষ্ঠান চলছে। মঞ্চে একে একে ডাকা হচ্ছে বস্ত্র গ্রহণের উদ্দেশ্যে। দেখলাম আমাদের পাড়ার লালু মাথা নিচু করে মঞ্চে উঠে আবার মাথা নিচু করেই বস্ত্র হাতে নেমে দ্রুত মিশে গেল মানুষের ভিড়ে। বুঝতে বাকী রইল না ও লজ্জা পেয়েছে। লালু ভীষন মেধাবী ছাত্র। ওর দারিদ্রের কথা মুখ ফুটে কখনও বলতে শুনিনি। লেখাপড়ার জন্য পাড়া থেকে আমরা নিয়মিত অর্থ সাহায্য করি। মনটা খারাপ হ'ল। বস্ত্র বিতরণ কি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে পুজো প্যান্ডেলে হাজার হাজার মানুষের সামনেই করতে হবে! দরিদ্রের কি লাজ লজ্জা নেই? এসব ভেবে লাভ হবে না জানি, তবুও মনে খোঁচা দেয়। পরিণতি মন খারাপ। মন খারাপ হলে সময় যেন দীর্ঘায়িত হয় - সময় ধার নেওয়ার মত পাশে কাউকে পাই না ব'লে কলমকে সঙ্গী করি। শেষে কবিতায় চার লাইন -
মন খারাপে মন না দিয়ে
খুলে রাখি বুকের বোতাম,
ঠান্ডা বাতাস হুড়মুড়িয়ে
ঢুকলে আমি স্নিগ্ধ হতাম।
মন খারাপ হ'লে
মন খারাপ হ'লে - অ..না.ক ০৫/১০/২০১৯
মন খারাপে মন না দিয়ে
খুলে রাখি বুকের বোতাম,
ঠান্ডা বাতাস হুড়মুড়িয়ে
ঢুকলে আমি স্নিগ্ধ হতাম।
মন খারাপে মন না দিয়ে
খুলে রাখি বুকের বোতাম,
ঠান্ডা বাতাস হুড়মুড়িয়ে
ঢুকলে আমি স্নিগ্ধ হতাম।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
মুখ চাপা সত্য
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?
-
এক লাইনের কাব্যঃ অ.না.ক. ২১/০৩/২০১৭ এক লাইনেও কাব্য হয় দু'লাইনে ছন্দময় ।