অষ্টমীতে মন খারাপঃ অ.না.ক. ০৬/১০/২০১৯
অষ্টমী আজ।। মন খারাপের তীব্রতা একটু যেন ফিকে হয়েছে। সারাদিন চেষ্টা করেছি মনকে প্রশ্রয় না দিতে। গতকাল আমাকে যেতে হয়েছিল শপিং মলে, বাকী থাকা উপহার কেনার উদ্দেশ্যে। পুজোতে আমি সবাইকে উপহার দিই না - আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যাদের বাস্তবিক অর্থানুকুল্য নেই তাদেরকেই উপহার দেওয়ার চেষ্টা করি আমার সীমিত ক্ষমতার মধ্যে। আমার নিজের জন্য যখন একটা প্যান্ট বাছাই চলছে ততক্ষনাৎ মনে প'ড়ে গেল এক দরিদ্র আত্মীয়ের কথা যার কথা এবার ভাবাই হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমার প্যান্ট কেনা বন্ধ রেখে সেই উপহার কেনা হ'ল। আজ সেই আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে উপহার দিয়ে এসেছি। সেখানে গিয়ে বুঝলাম আমার উপহারটি প্রত্যাশিত ছিল - নইলে এবার পুজো কাটাতে হ'ত পুরোনো পোশাকেই। মন খারাপের মধ্যেই খানিকটা মানসিক তৃপ্তি পেলাম। সত্যি বলতে কি ছোট বেলায়, যখন পুজোতে উপহার পেলে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কথা, আমি আমার আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে সেভাবে উপহার পাইনি, এমনকি ধনী আত্মীয়দের কাছ থেকেও নয়। তখন পুজোতে দুঃখ হ’ত। সেই দিনগুলোর কথা পুজো এলে খুব মনে পড়ে। মন খারাপ হয়। তাই পুজো এলে আমি তাদেরই উপহার দিই যারা আমার সামান্য উপহারে আনন্দিত হয়। না পাওয়ার দুঃখ ভুলতে দানই সবচে’ ভাল দাওয়াই – আমি এই তত্ত্বে বিশ্বাসী। পুজোর উপহারের কথা যখন উঠলই তখন একটা কথা খুব মনে হচ্ছে, পুজোতে উপহার হিসাবে শুধু নতুন পোষাক কেন, অন্য অনেক উপহারও তো দেওয়া যেতে পারে। হয়ত প্রথাগত পরম্পরার কারনে এর ব্যতিক্রম ঘটে না, কিন্তু প্রথা তো ভাঙাই যায়। জানা যায় দ্বারকানাথের কাছ থেকে প্রত্যেক পুজোতেই ঠাকুরবাড়ির মেয়ে-বউ উপহার পেতেন এক শিশি দামী সুগন্ধী, খোঁপায় দেওয়ার সোনা বা রুপোর ফুল, কাচের চুড়ি আর নতুন বই। আজ রাস্তায় চলতে চলতে সেই বাচ্চা ছেলেটার কথা খুব মনে পড়ছিল গত বছর পুজোতে যাকে দেখেছিলাম উৎসবের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে বুদবুদ তৈরির যন্ত্র বিক্রি করছে জীর্ণ পোশাকে। আর তারই সমবয়সীরা নতুন পোশাকে তার কাছে হাজির ক্রেতার ভূমিকায়। ছেলেটার জন্য মন খারাপ হ'ল। মনে মনে সান্ত্বনা পাবার চেষ্টা করলাম, হয়ত তার বাবার অসুখ সেরেছে। এবছর নিশ্চয় সে নতুন পোশাকে ঠাকুর দেখছে আনন্দ নিয়ে। লক্ষ্য ক'রে দেখেছি এখন ভিক্ষাবৃত্তি অনেকটাই কমেছে। কিন্তু এবার পুজোয় কিছু মানুষকে দেখলাম ভিক্ষা চাইতে, চেহারায় বা পোশাকে আদৌ তাদেরকে ভিখারী বলে মনে হবে না।প্রকৃত আর ভন্ডের পার্থক্য বোঝা যত কঠিন হচ্ছে, প্রকৃত অসহায়রা তত বঞ্চিত হচ্ছে। গত দু’দিন পুজো প্যান্ডেলে ঘুরতে ঘুরতে অনেক জায়গায় পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ে নানান প্রচার দেখেছি। বিশেষ ক’রে জল সংরক্ষণ ও প্লাস্টিক বর্জন বিষয়ে। জানিনা এই সচেতনতা কতটা কার্যকরী। পুজো যেমন বছরে একবার আসে, জানিনা মানুষ ঐ একদিনের জন্যই সচেতন হয় কি না। অথচ রাস্তার ধারের পৌরসভার টাইম কলের পানীয় জল দিনের পর দিন অকারনে ড্রেনে যাচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জন বলতে আমরা জানছি প্লাষ্টিকের ব্যাগ পরিহার করা। অথচ পুজো প্যান্ডেলের বাইরে পসরা সাজিয়ে বিক্রি হচ্ছে বাচ্চাদের প্লাস্টিকের খেলনা। এই ধরনের খেলনা বা প্লাস্টিকের দ্রব্য তৈরি বন্ধ করার সরকারী উদ্যোগ সেভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না । উৎসব উৎসবের মত পালিত হোক, এর সঙ্গে নানান বিষয় মিশিয়ে দুর্গাপুজোর মৌলিকত্ব নষ্ট ক’রে তাকে জটিল করার আমি ঘোর বিরোধী। অষ্টমীর রাস্তায় ভীড়ের দাপটে পথ চলা কঠিন, তাই আশপাশের কয়েকটা প্যান্ডেল ঘুরে বাড়ি ফিরে এসেছি। ঘরের বোকা বাক্সটা তো রয়েইছে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর জন্য।মন খারাপ এখন লঘুতর। উৎসব প্রায় শেষের দিকে। কাল নবমী – আবার লিখব এই আশা নিয়ে আপাতত বিছানায়।