শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
ও গানওয়ালা
শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন
বাংলা ভাষার বিশ্বায়নঃঃ অমরনাথ কর্মকার
মাতৃভাষার অধিকার আদায়ে বাঙালী জনগোষ্ঠীর আন্দোলনের সূত্রপাত বেশ প্রাচীন। মানভূমের বাঙালীরা ১৯১২ সালে উপমহাদেশে প্রথম বাংলা ভাষা আন্দোলন শুরু করেন। সেই অনুপ্রেরণা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে আসাম থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে। তারপর সেই ভাষা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে উত্তাল তরঙ্গের আকার ধারণ করল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকার রাজপথে সালাম, জব্বার, বরকতের রক্তের বিনিময়ে বাঙালীর মাতৃভাষা কিভাবে সজীবতা পেল সে ইতিহাস তো সকলেরই জানা। ‘অমর একুশে’ বিশ্ববন্দিত হয়ে বাংলাদেশ বাংলা ভাষাকে সরকারী ভাষার স্বীকৃতি দিয়ে বাঙালীর ভাষার স্বাধীনতার পতাকা সগর্বে প্রতিষ্ঠা করল। আজ যখন প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারী দিনটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস’ হিসাবে বিশ্বময় পালিত হয়, তখন বাঙালী হিসাবে আমাদের বুক গর্বে ভ’রে ওঠে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একটা প্রশ্ন বারংবার উঠে আসে – আমরা বাঙালীরা কি অন্তরের গভীর ভালোবাসা দিয়ে বাংলা ভাষাকে আঁকড়ে ধ’রে রাখতে পারছি ?
বিশ্বে যেখানেই যান বাঙালীর পরিচিতি প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান মাধ্যম তাঁর মুখোচ্চারিত বাংলা ভাষা। শতাব্দী প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্য ভারতীয় তথা বিশ্ব সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। দু-দুটো দেশের জাতীয় সঙ্গীতের ভাষা বাংলা। ভাষার জন্য বাঙালীর বিরল আত্মত্যাগ বিশ্বে বেনজির। অথচ বাংলা ভাষার সাম্প্রতিক প্রবণতা বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে এক বিরাট প্রশ্ন চিহ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে।
ইংরেজি ‘Z’ এর প্রতিবর্ণ বাংলা ভাষায় অনুপস্থিত ব’লে সম্প্রতি ‘জ্৳’ দিয়ে ‘Z’ এর পরিপূরক বাংলা বর্ণ তৈরি হয়েছে। কই ইংরেজি বর্ণমালাতেও ‘ত’-এর প্রতিবর্ণ নেই। কখনোও কি ‘ত’-এর প্রতিবর্ণ সৃষ্টির জন্য ইংরেজদের কখনোও তৎপর হ’তে দেখেছেন ? অনুকরণপ্রিয় হিসাবে এমনিতেই বাঙালীর বদনাম আছে। ভাঙা বাংলায় উচ্চারণ, হিন্দি ইংরেজি মিশিয়ে বাংলা ভাষাকে একটি শংকর ভাষা বানিয়ে মাতৃভাষার মৌলিক্বত্ব বিনাশের কেমন যেন একটা মরিয়া প্রবণতা একশ্রেণির বাঙালীর মধ্যে ইদানিং খুব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বরং বাস্তবটা যদি বিপরীত হ’ত তাহলে বাংলা ভাষার অস্তিত্বের সংকট নিয়ে শঙ্কা হ’ত না। আমরা আগ বাড়িয়ে হিন্দিভাষীর সঙ্গে হিন্দি, ইংরেজিভাষীর সঙ্গে ইংরেজি বলার চেষ্টা করি – তাঁদেরকে কখনোই বাংলা বলানোর উদ্যোগ গ্রহণ করি না। উচ্চশিক্ষার জন্য ইংরেজি বই ছাড়া গত্যন্তর নেই এই বিশ্বাসে উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলা ভাষায় বই লেখার চেষ্টা হয় না। অথচ দেখুন জাপানী-ফরাসিরা উচ্চশিক্ষার জন্য এই আক্ষেপ করে না। এমনকি বাংলাদেশেও সেই চেষ্টা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। বলতে বাধা নেই বঙ্কিম-বিভুতিভূষনরা ক্রমশ অপাংক্তেয় হতে শুরু করেছে।
খুব সহজ ক’রে বললে বলতে হয় বাংলা ভাষার ওপর হিন্দি আর ইংরেজি ভাষার সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে যেন। না, এই সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য হিন্দি বা ইংরেজি ভাষাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। বরং আমরা নিজেরাই বোধ হয় আমাদের মাতৃভাষার ওপর এই ভাষাসন্ত্রাস জারী করার ব্যাপারে আত্মঘাতি – আমাদের অপরিনামদর্শী অনুকরণপ্রিয়তার কারনেই বাংলা ভাষা ক্রমশ তাঁর স্বকীয়তা হারাচ্ছে। একদা ইংরেজ ঔপনিবেশিকতা প্রশাসনিক কাজে ইংরেজির ব্যবহারকে বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা করেছিল। যদিও সর্বত্র তা সার্থকতা পায়নি। স্বাধীন ভারতে প্রশাসনিক কাজে প্রাদেশিক ভাষা ব্যবহারের প্রচলন শুরু হলে বঙ্গের বাঙালীরা প্রশাসনিক কাজে বাংলা ব্যবহারের স্বাধীনতা পেয়েছে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের সরকারী ভাষা এখন বাংলা। সরকারী কাজে বাংলা ব্যবহারে কোন বাধা নেই অথচ আমাদের মধ্যে সার্বিকভাবে বাংলার চেয়ে ইংরেজি ব্যবহারের প্রবনতা রয়েই গেছে। বাংলায় অনেক ইংরেজি শব্দের প্রতিশব্দের অভাবকে দোষ দিতেও আমরা অভ্যস্ত। এখন ইংরেজি শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ আদৌ অপ্রতুল নয়। আসলে আমাদের চেষ্টা নেই – সগর্বে বাঙালীত্ব প্রকাশের তীক্ষ্ণ হাতিয়ার হিসাবে বাংলা ব্যবহারের মানসিকতা এখনোও সেভাবে তৈরি হয়নি। ধরেই নেওয়া হয় বাংলা ভাষার প্রয়োজন সীমাবদ্ধ শুধু সাহিত্যের – শরীরটা যতই বাঙালীর হোক। বাংলা ভাষায় হিন্দি আর ইংরেজির অনুপ্রবেশ বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির গুপ্তঘাতক হিসাবে নীরবে কাজ ক’রে চলেছে আমাদের অজান্তেই। এর পরিণাম যে কি সাঙ্ঘাতিক হতে পারে তা ভাবা যায় না।
আমার এক অধ্যাপক বন্ধু সেদিন আক্ষেপ ক’রে বলেছিলেন ‘বিশ্বায়ন বিশ্বায়ন নিয়ে আমরা হই চই করি অথচ বাঙালী হিসাবে আমরা বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন নিয়ে এতটুকুও ভাবি না’। বাঙালী হিসাবে আমরা বহু কৃতি বাঙালীর দৌলতে বিশ্ববন্দিত, সন্দেহ নেই। কিন্তু বাঙালীর ভাষাকে বিশ্ববন্দিত করতে পারলেই বোধ হয় ষোল কলা পূর্ণ হয়।
সময় এসেছে, বাংলা ভাষার মৌলিকত্ব বজায় রেখে বাংলা ভাষাকে সর্বত্র ব্যবহার করার উদ্যোগ নেওয়া। স্বাধীনচেতা বাঙালীর মুখে, কাগজে-কলমে লেগে থাকুক শুদ্ধ বাংলা – অমর একুশের অনুপ্রেরণায় মাতৃভাষা হয়ে উঠুক বাঙালীর প্রাণের ভাষা, ভাবের ভাষা এবং কাজের ভাষা। বাংলা ভাষা হয়ে উঠুক অন্য ভাষা-ভাষীদের অনুকরনীয় অনুপ্রেরণা। তবেই হবে বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন – বাঙালীর বিশ্বায়ন।
বৃহস্পতিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৯
সল্টলেকের ডায়েরি
সল্টলেকের ডায়েরিঃ অ.না.ক. ১০/০১/২০১৯
এই মুহুর্তে ব'সে আছি সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের ফুটপাতে পুরোনো একটা বাংলা খবরের কাগজ পেতে। ছেলে একটা সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসছে তাই সঙ্গে আসতে হয়েছে। যখন লিখছি তখন দুপুর প্রায় দুটো। চারপাশে বিশাল বিশাল আকাশচুম্বি তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তর। আমার আশপাশে ফুটপাতে সারি সারি খাবারের দোকান। বুকে পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরোচ্ছে সুবেশ তরুন তরুনী। তারুন্য পেরিয়ে প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছানো মহিলাদের মধ্যেও তারুন্য বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা। ওই বয়সের পুরুষদের দেখা, কেন জানিনা, খুব একটা মিলল না। আমি যেখানে ব'সে আছি তার সামনের দোকানে তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের আধুনিক পোষাক-আশাকে সজ্জিত তরুন-তরুনীরা দাঁড়িয়ে চা-সিগারেট খেতে খেতে কথাবার্তা বলছেন। নারী পুরুষ নির্বিশেষে প্রায় সকলের মুখেই সিগারেট। বেশিরভাগ মহিলাকেই দেখলাম সিগারেটের ধোঁয়া আদৌ গিলছেন না। অর্থাৎ ধুমপায়িদের মত নেশাগ্রস্থ নন, অথচ সিগারেট ধরিয়েছেন। হয়ত এটাই তাঁদের মেলামেশার রীতি। অনেককে দেখলাম আমার দিকে তাকাচ্ছেন। সেই সময় আমার চোখ চলে যাচ্ছিল আমার আসন হিসাবে ব্যবহৃত বাংলা খবরের কাগজের দিকে। কারন আমার সন্দেহ হচ্ছিল হয়ত তাঁরা আমার বাংলা কাগজ দেখে আশ্চর্য হয়েছেন। কারন এতক্ষন তাঁদের কথাবার্তায় বাংলার লেশমাত্র কানে আসেনি। প্রায় পুরো কথাবার্তা ছিল ইংরেজিতে, মাঝে মাঝে দু'একটি হিন্দি শব্দ। আশপাশের উঁচু উঁচু আধুনিক অট্টালিকা, সল্টলেকের পরিচ্ছন্ন রাস্তা, সুন্দর সুন্দর গাড়ী আর তার মাঝে অনর্গল ইংরেজী বাক্যালাপ শুনে ভুলেই গেছিলাম যে আমি পশ্চিমবঙ্গে আছি, যতই বঙ্গভঙ্গ হোক, যার সঙ্গে 'বঙ্গ' জড়িয়ে , যে রাজ্যের সরকারী ভাষা বাংলা। মনে হচ্ছিল আমি অন্য কোন দেশে এসে হাজির হয়েছি যেখানে বাঙালী হিসাবে আমি বেমানান, তাই অন্যদের আমার প্রতি এই বিষ্ময়জনিত দৃষ্টিপাত। পরে অবশ্য বুঝলাম আমার দিকে তাঁদের দৃষ্টিপাত আসলে আমাকে ফুটপাতে ব'সে থাকতে দেখে। পাতি বাংলা মাধ্যমে পড়া একজন অতি সাধারণ মানুষ হলেও ইংরেজী 'বাঙালী ইংরেজদের' মত বলতে না পারলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না। এতক্ষন কথোপকথন শুনছিলাম অবাক হয়ে। ইংরেজী শুনতে খারাপ লাগছিল না। কিন্তু খুব খারাপ লাগছিল মাঝে মাঝে। কারন দু'একজন তরুণীকে দেখলাম নির্দ্বিধায় কথার মাঝে গালাগালি দিয়ে যাচ্ছে ঠিক যেমন অনেকে কথায় কথায় 'ব'যুক্ত শব্দের খিস্তি ব্যবহার করে। আমাকে ইংরেজীতে নিরক্ষর পাতি বাঙালি ভেবেই হয়ত খিস্তি দিতে দ্বিধা বোধ করেনি। ঘটনাটা আমার কাছে বেশ উপভোগ্যই ছিল এতক্ষন। বাংলা ভাষার এই পরিণতি নিয়ে সারাদিন বাজার গরম। হায় হায় না ক'রে নিজেরা বাংলাকে বেশি বেশি ক'রে ব্যবহার করার চেষ্টা করলেই যথেষ্ট। যেমন এই লেখাতে আমি যতটা সম্ভব বাংলা শব্দ ব্যবহারের চেষ্টা করছি। মায়ের ভাষাকে আসলে ভোলা যায় না। এতক্ষণ উপভোগ করছিলাম। কিন্তু আকষ্মিক একটা ঘটনা এতক্ষণের উপভোগ্যতায় জল ঢেলে দিল। এক তরুণী তখন অনর্গল ইংরেজীর ফোয়ারা সহকারে ধুমপানে মশগুল। একটা ফোন এল। কানে দিয়েই তিনি প্রায় কাঁদো কাঁদো স্বরে পরিষ্কার ঢাকাইয়া বাংলায় কথোপকথন শুরু করলেন। বুঝতে পারলাম বাড়িতে হঠাৎই কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এটাও বুঝতে বাঁকি রইল না যে বাংলা মরেনি, মরেও না, শুধু মোড়ক পালটায়।
এই মুহুর্তে ব'সে আছি সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের ফুটপাতে পুরোনো একটা বাংলা খবরের কাগজ পেতে। ছেলে একটা সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসছে তাই সঙ্গে আসতে হয়েছে। যখন লিখছি তখন দুপুর প্রায় দুটো। চারপাশে বিশাল বিশাল আকাশচুম্বি তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তর। আমার আশপাশে ফুটপাতে সারি সারি খাবারের দোকান। বুকে পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরোচ্ছে সুবেশ তরুন তরুনী। তারুন্য পেরিয়ে প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছানো মহিলাদের মধ্যেও তারুন্য বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা। ওই বয়সের পুরুষদের দেখা, কেন জানিনা, খুব একটা মিলল না। আমি যেখানে ব'সে আছি তার সামনের দোকানে তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের আধুনিক পোষাক-আশাকে সজ্জিত তরুন-তরুনীরা দাঁড়িয়ে চা-সিগারেট খেতে খেতে কথাবার্তা বলছেন। নারী পুরুষ নির্বিশেষে প্রায় সকলের মুখেই সিগারেট। বেশিরভাগ মহিলাকেই দেখলাম সিগারেটের ধোঁয়া আদৌ গিলছেন না। অর্থাৎ ধুমপায়িদের মত নেশাগ্রস্থ নন, অথচ সিগারেট ধরিয়েছেন। হয়ত এটাই তাঁদের মেলামেশার রীতি। অনেককে দেখলাম আমার দিকে তাকাচ্ছেন। সেই সময় আমার চোখ চলে যাচ্ছিল আমার আসন হিসাবে ব্যবহৃত বাংলা খবরের কাগজের দিকে। কারন আমার সন্দেহ হচ্ছিল হয়ত তাঁরা আমার বাংলা কাগজ দেখে আশ্চর্য হয়েছেন। কারন এতক্ষন তাঁদের কথাবার্তায় বাংলার লেশমাত্র কানে আসেনি। প্রায় পুরো কথাবার্তা ছিল ইংরেজিতে, মাঝে মাঝে দু'একটি হিন্দি শব্দ। আশপাশের উঁচু উঁচু আধুনিক অট্টালিকা, সল্টলেকের পরিচ্ছন্ন রাস্তা, সুন্দর সুন্দর গাড়ী আর তার মাঝে অনর্গল ইংরেজী বাক্যালাপ শুনে ভুলেই গেছিলাম যে আমি পশ্চিমবঙ্গে আছি, যতই বঙ্গভঙ্গ হোক, যার সঙ্গে 'বঙ্গ' জড়িয়ে , যে রাজ্যের সরকারী ভাষা বাংলা। মনে হচ্ছিল আমি অন্য কোন দেশে এসে হাজির হয়েছি যেখানে বাঙালী হিসাবে আমি বেমানান, তাই অন্যদের আমার প্রতি এই বিষ্ময়জনিত দৃষ্টিপাত। পরে অবশ্য বুঝলাম আমার দিকে তাঁদের দৃষ্টিপাত আসলে আমাকে ফুটপাতে ব'সে থাকতে দেখে। পাতি বাংলা মাধ্যমে পড়া একজন অতি সাধারণ মানুষ হলেও ইংরেজী 'বাঙালী ইংরেজদের' মত বলতে না পারলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না। এতক্ষন কথোপকথন শুনছিলাম অবাক হয়ে। ইংরেজী শুনতে খারাপ লাগছিল না। কিন্তু খুব খারাপ লাগছিল মাঝে মাঝে। কারন দু'একজন তরুণীকে দেখলাম নির্দ্বিধায় কথার মাঝে গালাগালি দিয়ে যাচ্ছে ঠিক যেমন অনেকে কথায় কথায় 'ব'যুক্ত শব্দের খিস্তি ব্যবহার করে। আমাকে ইংরেজীতে নিরক্ষর পাতি বাঙালি ভেবেই হয়ত খিস্তি দিতে দ্বিধা বোধ করেনি। ঘটনাটা আমার কাছে বেশ উপভোগ্যই ছিল এতক্ষন। বাংলা ভাষার এই পরিণতি নিয়ে সারাদিন বাজার গরম। হায় হায় না ক'রে নিজেরা বাংলাকে বেশি বেশি ক'রে ব্যবহার করার চেষ্টা করলেই যথেষ্ট। যেমন এই লেখাতে আমি যতটা সম্ভব বাংলা শব্দ ব্যবহারের চেষ্টা করছি। মায়ের ভাষাকে আসলে ভোলা যায় না। এতক্ষণ উপভোগ করছিলাম। কিন্তু আকষ্মিক একটা ঘটনা এতক্ষণের উপভোগ্যতায় জল ঢেলে দিল। এক তরুণী তখন অনর্গল ইংরেজীর ফোয়ারা সহকারে ধুমপানে মশগুল। একটা ফোন এল। কানে দিয়েই তিনি প্রায় কাঁদো কাঁদো স্বরে পরিষ্কার ঢাকাইয়া বাংলায় কথোপকথন শুরু করলেন। বুঝতে পারলাম বাড়িতে হঠাৎই কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এটাও বুঝতে বাঁকি রইল না যে বাংলা মরেনি, মরেও না, শুধু মোড়ক পালটায়।
মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৮
রবিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৮
চেয়ারহীন শ্রেণিকক্ষের প্রাসঙ্গিকতা
চেয়ারহীন শ্রেণিকক্ষের প্রাসঙ্গিকতা
অ.না.ক. ২৮/১০/২০১৮
ক্লাসরুমে এখন থেকে শিক্ষকের জন্য কোন চেয়ার থাকবে না।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা দপ্তরের সাম্প্রতিক এই নির্দেশিকাকে কেন্দ্র ক’রে
শিক্ষা মহলে নানান বিতর্ক শুরু হয়েছে। শিক্ষকের দাঁড়িয়ে পড়ানোর স্বপক্ষে এবং
বিপক্ষে যুক্তির ঝড় উঠতে শুরু করেছে শিক্ষক মহলে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ক্লাসে
শিক্ষকের জন্য চেয়ার না রাখার পেছনে কি যুক্তি আছে আবার এর বিপক্ষের যুক্তিই বা
কি।
প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা হয়ত জানেন চেয়ারে ব’সে পড়ানোর
সময় ক্লাসের বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষকের পড়ানোর প্রতি মনোযোগ আকর্ষণের কৌশল। কিন্তু একথা ঠিক যে চেয়ারে ব’সে পড়ানোর সময়
পেছনের দিকের বা কোন এক বা একাধিক বিশেষ অঞ্চলে উপবিষ্ট ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষকের
দৃষ্টিগোচর না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বলতে বাধা নেই, পড়া না করা, ফাঁকিবাজ,
দুষ্টুমিতে সিদ্ধহস্ত ছেলেমেয়েদের মধ্যেই পেছনের বেঞ্চে বা শিক্ষকের দৃষ্টির আড়ালে
বসার প্রবণতার সেই ট্র্যাডিশন আজও সমানে চলেছে। উদ্দেশ্য অবশ্যই শিক্ষকের চোখকে
ফাঁকি দিয়ে শিক্ষকের পড়ানোকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দুষ্টুমি করা বা পড়ায় ফাঁকি
দেওয়া। সুতরাং ক্লাসে শিক্ষকের বসার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা না থাকলে পড়ানোর সময় শিক্ষকের
দৃষ্টি সমস্ত ক্লাসের ওপর নিবদ্ধ থাকতে বাধ্য এবং হাঁটা-চলার মাধ্যমে শিক্ষক
প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর একেবারে কাছে পৌঁছে যেতে পারেন যার ফলশ্রুতিতে শিক্ষকের
পড়ানোর প্রতি ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ আকর্ষণ করানোর সুযোগ বাড়ে। আরোও বড় ব্যাপার হ’ল মনস্তত্বের বিচারে, দাঁড়িয়ে
কথা বললে শরীরী ভাষার সঙ্গে বক্তব্যের সাবলীলতা বাড়ে যা শ্রোতার দৃষ্টি আকর্ষণ
করার কাজে বেশি কার্যকরি হয়। সম্ভবত সেই কারনেই কোন আলোচনা সভায়, বক্তৃতা মঞ্চে
দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখার রীতি প্রচলিত। এমনিতেই অনেক শিক্ষক আছেন যাঁরা পড়ানোর সময়
ক্লাসে একটুও বসেন না, দাঁড়িয়ে বা ধীর পদক্ষেপে ক্লাসময় পায়চারী করতে করতে
শিক্ষাদানে অভ্যস্ত। আমাদের সময় কোন কোন শিক্ষককে দেখেছি ক্লাসে এসে পড়ানো বাদ
দিয়ে চেয়ারে ব’সে আরাম ক’রে ঘুমিয়ে নিতেন। এমনকি কাউকে দিয়ে ঘাড় মাথা টিপিয়ে
নিতেন। ততক্ষণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চলত নিচু স্বরে গল্প, আড্ডা, দুষ্টুমি। এখনকার
স্কুলগুলিতে এরকম শিক্ষক থাকাটাও অসম্ভব নয়। ক্লাসে চেয়ার না থাকলে শিক্ষকের এই
ধরনের প্রবনতা থেকে ১০০ শতাংশ মুক্তি মিলবে।
দাঁড়িয়ে পড়ানোর যথেষ্ট সঙ্গত বিপক্ষ যুক্তিও রয়েছে। শিক্ষক
দির্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে পড়ানোর পর ক্লান্ত বোধ করতেই পারেন, বিশেষ ক’রে বয়স্ক শিক্ষক বা
গর্ভবতী শিক্ষিকার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটা আদৌ অস্বাভাবিক নয়। কিংবা কিছুক্ষণ পড়ানোর
পরে শিক্ষক ছাত্রদেরকে কিছু কাজ দিলেন ক্লাসে করার জন্য। সেই সময়টুকু শিক্ষক সম্পূর্ণ
দাঁড়িয়ে বা চলালচল ক’রে কাটাবেন তার যৌক্তিকতা কোথায় ? সে্ক্ষেত্রে শিক্ষক তাঁর
চেয়ার সরিয়ে সুবিধামত জায়গায় ব’সে নজরদারী করতেই পারেন। কিন্তু ক্লাসে যদি চেয়ারই
না থাকে তাহলে শিক্ষকের কাছে এ এক বড় বিপদের কারন। তাহলে কি হাঁটুর সমস্যা আছে বা
বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে শারীরিক অসুবিধা বোধ করেন এমন শিক্ষকদের শিক্ষকতা ছেড়ে
দেওয়ার দিন আসন্ন ? আমাদের রাজ্যে একজন শিক্ষককে প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ টি ক্লাস নিতে
হয় এবং বিরতিহীন ভাবে ৩-৪টি ক্লাস অনেক শিক্ষককেই নিতে হয়। সুতরাং এতটা দীর্ঘ সময়
একটানা দাঁড়িয়ে পড়ানো একজন সুস্থ শিক্ষকের পক্ষেও কতটা সম্ভবপর তা নিয়ে যথেষ্ট
প্রশ্নচিহ্ন আছে। আরোও একটি আপাত গুরুত্বহীন কথাও বলা জরুরী। একজন পুরুষ শিক্ষক
পড়ানোর সময় যদি ক্রমাগত ছাত্রীদের কাছে দাঁড়ান তাহলে ছাত্রীদের কাছে তা অস্বস্তির
কারন হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয় মোটেই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্রবহমান প্রথাকে রাতারাতি পাল্টে ফেলার আকষ্মিক
নির্দেশে শিক্ষক মহলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠাটা স্বাভাবিক। নিঃসন্দেহে শিক্ষাব্যবস্থায়
আধুনিকতা এসেছে, এসেছে শিক্ষণের বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি, অনেক প্রগতিশীল দেশে তার
প্রয়োগও হচ্ছে। ক্লাসে শিক্ষকের জন্য চেয়ার না রাখার যৌক্তিকতা হয়ত এই কারনেই
প্রাসঙ্গিক। কিন্ত আমাদের দেশে তা প্রয়োগের হটকারী সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিসঙ্গত তা
নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
ক্লাস থেকে শিক্ষকের চেয়ারকে রাতারাতি নির্বাসনে না পাঠিয়ে
চেয়ার রেখেই শিক্ষককে দাঁড়িয়ে পড়ানোর নির্দেশ জারি করলে হয়ত সাপও মরে লাঠিও ভাঙে
না। প্রয়োজনে শিক্ষক বসবেন, কিন্তু সাধারণভাবে তাকে দাঁড়িয়েই পড়াতে হবে এবং তা
নজরদারী করবেন প্রধান শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্ত কেউ, প্রাথমিকভাবে এমন নিয়ম চালু করলে
হয়ত পদক্ষেপটা হবে অনেকটা মসৃণ।
অমরনাথ কর্মকার
বুধবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৮
সোমবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৮
মরু প্রেমিকা
সহকর্মী প্রিয় মানসের (মানস নন্দী) মিশর ভ্রমনকে উদ্দেশ্য ক'রে লেখাঃ
মরু প্রেমিকাঃ অ.না.ক.২৩/১০/২০১৮
তবুও মেলে জলজ্যান্ত জীবন চারপাশে।
তপ্ত বালির ক্রুদ্ধ তাপ, নেই এতটুকু ছায়া,
পিরামিডের মৃত্যুপুরী ঠাসা মমির লাশে,
বেদুইনকে বিভ্রান্ত করে মরীচিকার মায়া।
তবুও মেলে জলজ্যান্ত জীবন চারপাশে।
মরীচিকার দর্পণে জলের অলীক আভাস,
দুস্তর, দুর্গম, তবুও আমার প্রেমিকা সে
কাঁটা আছে,তবু আছে জলভরা ক্যাকটাস।
মরু প্রেমিকাঃ অ.না.ক.২৩/১০/২০১৮
তবুও মেলে জলজ্যান্ত জীবন চারপাশে।
তপ্ত বালির ক্রুদ্ধ তাপ, নেই এতটুকু ছায়া,
পিরামিডের মৃত্যুপুরী ঠাসা মমির লাশে,
বেদুইনকে বিভ্রান্ত করে মরীচিকার মায়া।
তবুও মেলে জলজ্যান্ত জীবন চারপাশে।
মরীচিকার দর্পণে জলের অলীক আভাস,
দুস্তর, দুর্গম, তবুও আমার প্রেমিকা সে
কাঁটা আছে,তবু আছে জলভরা ক্যাকটাস।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
মুখ চাপা সত্য
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?
-
এক লাইনের কাব্যঃ অ.না.ক. ২১/০৩/২০১৭ এক লাইনেও কাব্য হয় দু'লাইনে ছন্দময় ।