খুব ছোট্টবেলা থেকে এঁদের দেখে আসছি রাস্তা-ঘাটে, মেলায়। সেই সময় এঁদের দেখে খুব বিষ্মিত বোধ করতাম, বাস্তবিক এখনোও বিষ্ময় বোধ হয়। তবে সেই বোধের পার্থক্য ঘটেছে এখন। আমি বলছি 'সেই বেহালা বাজানো লোকটা'র কথা। আজ বাড়ির সামনে দিয়ে তাঁকে যেতে দেখে কৌতুহল হ'ল খুব। মাথার ঝুড়িতে 'খেলনা' বেহালা। আর তাঁর হাতে যে বেহালাটি, তাতে তিনি সুর তুলছেন 'ও টুনির মা.. '। আমার ছেলেও উৎসাহী। অতএব বৃদ্ধ সেই বেহালা বিক্রেতা এবং বাদককে ডাকা হ'ল। স্ত্রীর ইচ্ছেয় তিনি বাজিয়ে শোনালেন 'বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িত গেলাম.. '। ছেলের জিজ্ঞাস্য ছিল ' এঁরা কি স্বরলিপি মেনে বাজায়'। জানা গেল, আসলে বিক্রি করতে খরিদ্দার আকর্ষণের উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিনের চেষ্টায় তাঁদেরকে এই 'খেলনা' বেহালা বাজানো শিখতে হয়েছে কোন প্রথাগত শিক্ষা ছাড়াই। ছোটবেলায় এদের বাজনা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতাম, মনে হ'ত এঁরা কি বিরাট গুনের অধিকারী। এখনও সেই ধারনাই পোষন করি। তখন আর্থিক ব্যাপারটা বুঝিনি। এখন বুঝতে পারি দারিদ্রের কারনে সামান্য অর্থ রোজগারের প্রয়োজনে তাঁদেরকে কি অধ্যাবসায় আর দক্ষতা দিয়ে 'খেলনা' বেহালায় সুর তোলা শিখতে হয়েছে। এই সময় যদি তাঁরা অন্য কাজে ব্যয় করতেন তাহলে হয়ত এই দারিদ্র থেকে মুক্তি মিলত। মনে হ'ল আমাদের কাছে যেটিকে খেলনা মনে হচ্ছে তাঁদের কাছে এটি মোটেই খেলনা নয়। ইচ্ছে করেই দামদর না ক'রে তাঁর চাওয়া মূল্যেই একটা বেহালা ('খেলনা' শব্দটা ব্যবহার করলাম না) কিনে ফেললাম ছেলের জন্য। ছেলে তারের যন্ত্র একটু-আধটু বাজাতে জানে। কিন্তু প্রাথমিক চেষ্টায় এই বেহালা বাজানো তার কাছে অসম্ভব মনে হ'ল। সুতরাং বেহালা বাদক ওই বৃদ্ধের অসাধারণ গুনের প্রশংসায় ছেলেও পঞ্চমুখ। ইচ্ছে হচ্ছিল তাঁকে ডেকে বলি 'ও গানওলা, আর একটা গান গাও...'। কিন্তু 'সেই বেহালা বাজানো লোকটা' ইতিমধ্যেই 'চলে গেছে গান শুনিয়ে'।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন