চুম্বনঃ অ.না.ক. ০৫/০৫/২০১৮
৫ ফেব্রুয়ারী
আন্তর্জাতিক চুমু দিবস। বোধ হয় অনেকেই সেটা জানেন। চুমুক দেওয়া অনুপান, তাতে
তৃষ্ণা মেটে, পেটও ভরে। আর চুম্বনে পেট না ভরলেও মন ভরে। সভ্য সমাজে স্নেহ,
ভালোবাসা, শ্রদ্ধা প্রকাশের প্রথা হিসাবে দুই ঠোঁটের স্পর্শের সাহায্যে চুম্বন
প্রচলিত। সংস্কৃত “চুম্বন” শব্দ থেকে বাংলায় “চুমু” বা “চুমা” কথাটি এসেছে। প্রাচীন গ্রিসে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পন্থা
হিসাবে ওষ্ঠ, হস্ত ও পদ চুম্বনের প্রথা প্রচলিত ছিল। হোমারের রচনা থেকে এগুলি জানা
যায়। বাৎস্যায়নের কামসূত্রে বিভিন্ন প্রকার চুম্বনের উল্লেখ আছে। যৌনতার নির্বাচন
তত্ত্ব নিয়ে গবেষণাকালে চার্লস ডারউইন লক্ষ্য করেছিলেন সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে
মেয়েরা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি সাবধানী এবং খুঁতখুঁতে। রবার্ট ট্রাইভার্সের গবেষণা
মূলত এই ‘নারী অভিরুচি’র দিকচিহ্ন। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মাত্র এক মিনিটের চুম্বনে প্রায় ২৬
ক্যালরি শক্তিক্ষয় হয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ডায়েট কন্ট্রোল না ক’রে দিনে গোটাকয়েক চুমু
খাওয়ার অভ্যেস করতে পারলে অনায়াসে অতিরিক্ত ক্যালরি ঝরিয়ে ফেলতে পারেন। তবে সে
চুম্বন হতে হবে প্রগাঢ়।
ইক্কাচাই ও লাকসানা
নামে থাইল্যান্ডের প্রেমিক যুগল টানা ৪৬ গন্টা ২৪ মিনিট চুমু খেয়ে সম্প্রতি বিশ্ব
রেকর্ড ক’রে ফেলেছেন। মনোবিজ্ঞানী উইন্ডি হিলের গবেষণা থেকে জানা যায় চুম্বনের পরে
শরীরের কর্টিসল হর্মোনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, এই কর্টিসল
হর্মোন মানসিক চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। সুতরাং মানসিক চাপ কমাতে চুম্বনের
উপকারিতা প্রশ্নাতীত - একেবারে টনিকের মত।
তবে চুম্বনের অপকারিতার কথা শুনলে একটু মর্মাহতও হতে পারেন। যেহেতু চুম্বনের সময়ে
মুখে লালার প্রবাহ বেড়ে যায় তাতে মুখ, মাড়ি ও দাঁতের ওপর পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে।
মুখের স্বাস্থ্য ভাল থাকলে ব্যাকটিরিয়া ভাইওরাসের আক্রমণ থেকে লালা শরীরকে
সুরক্ষিত রাখে। সুতরাং মনে রাখতে হবে, চুম্বনে অংশগ্রহণকারী দু’জনের স্বাস্থ্যই ভাল থাকা
জরুরী।
“তবে মুখানি তুলিয়া
চাও/সুধীরে মুখানি তুলিয়া চাও!/নীরবে একটি চুম্বন দাও,/গোপনে একটি চুম্বন দাও!” এটি রবীন্দ্রনাথের “গোলাপবালা” কবিতার পংক্তি। ভাল ক’রে ভাবুন এর মধ্যে একটা
নীরবতা আছে, আছে গোপনীয়তাও। না, সর্বক্ষেত্রে নয়, প্রেমিক-প্রেমিকার চুম্বনের জন্য
নিভৃত পরিবেশ প্রয়োজন কারন সেখানে যৌনতার অবধারিত উপস্থিতি। সেই জন্যে রয়েছে
পার্ক, লেক কিংবা নির্জন স্থান। দাঁত আছে বলেই যেখানে সেখানে বত্রিশ পাটি উন্মোচন
করা শোভা পায় না। আমরা পোশাক পড়ে সভ্য হয়েছি। ইচ্ছে করলেই উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়ানো
যায় কিন্তু তাতে অর্জিত সভ্যতাকে অপমান করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রদ্ধা
জ্ঞাপনে, ভালোবাসার প্রকাশে, স্নেহ প্রদর্শনের জন্য চুমু খাওয়ার যে রীতি তা আমাদের
সভ্যতার পরিচায়ক। কিন্তু যৌনতার অভিব্যক্তি যে চুম্বনে উপস্থিত তা প্রকাশ্যে আনা
আমাদেরকে বোধ হয় ফিরিয়ে নিয়ে যায় আদিম সভ্যতায়।
তবে বলা প্রয়োজন
পুরুষের কাছে নারীর ঠোঁট সবচেয়ে আকর্ষণীয়। চুম্বনের বৈজ্ঞানিক নাম ফিলেমাটোলজি। আর
চুম্বনের ভীতিকে বলে ফিলেমাটোফোবিয়া। সিগারেট খাওয়ার মত আপনার চুমু খাওয়াতে কারোর
কোন আপত্তি থাকবে না, তবে একটু প্রচলিতে প্রথা মেনে চলাই বোধ হয় উচিৎ। হয়ত ‘এখানে ধুমপান করা নিষেধ’ এই জাতীয় কিছু সতর্কবাণী লেখা
কোথাও থাকে না, তবুও ...... । তবে চুম্বনের মাহাত্ম অপরিসীম। ফরাসী স্থপতি অগাস্টি
রডিনের বিখ্যাত স্থাপত্যকর্ম ‘The Kiss’ এখনও বিশ্ববাসীকে
মোহিত করে।