মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০২০
শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০
মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০
সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২০
করোনা সংক্রমণ ও ইতিহাসের শিক্ষা
করোনা সংক্রমণ ও ইতিহাসের শিক্ষা - অমরনাথ কর্মকার
বিশ্বময় করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯)
সংক্রমণের ব্যাপকতায় বাংলার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কতকগুলি ইংরেজি শব্দের পরিচিতি ঘটেছে ব্যাপকভাবে। ইংরেজি ভাষায় শব্দগুলো
অতি সাধারণ কিন্তু শব্দগুলির আবির্ভাব,আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে,করোনা ভাইরাসের হাত ধরেই।
অনেকটা ঠেকে শেখার মত। যেমন একদা কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে ‘লকআউট’ শব্দটি
ছিল অতি পরিচিত। কারন কারখানা লকআউট হয়ে মাঝে মাঝেই প্রচুর শ্রমিক কাজ হারান। তবে লকআপ
শব্দটির সঙ্গে আমরা প্রায় সকলেই কম-বেশি পরিচিত কারন পুলিশ আর অপরাধ আমাদের প্রাত্যহিক
জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। করোনা ভাইরাসের দৌলতে জনপ্রিয় হওয়া ‘লকডাউন’ শব্দের অর্থ খুঁজতে
কাউকেই বোধ হয় আর অভিধানের শরণাপন্ন হতে হয় না। কারন ঠেলায় প’ড়ে বাস্তবতার মধ্যে শব্দটির
প্রকৃত অর্থ আমাদের মাথায় ঢুকে গেছে।
তবে লকডাউন, লকআউট, লকআপ শব্দের
পার্থক্য জিজ্ঞেস করলে অনেকেই আমতা আমতা করবেন। না, কাউকে ইংরেজি শেখানো আমার উদ্দেশ্য
নয়, তার জন্য ইংরেজির শিক্ষকমশাইদের অভাব নেই। আসলে লকডাউনে সময় কাটাতে গিয়ে এই চিন্তাভাবনাগুলো
মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ব’লে লিখে ফেললাম। একদম সরল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ‘লকআউট’ হ’ল
কোন স্থানে বা ঘরে বাইরে থেকে কাউকে প্রবেশ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী ক’রে ঐ স্থান
বা ঘর তালাবদ্ধ ক’রে রাখা । যেমন কোন কারখানায় লকআউট ঘোষিত হলে বাইরে থেকে শ্রমিকরা
কারখানায় প্রবেশ করতে পারে না। পক্ষান্তরে, লকডাউন শব্দটি ঠিক বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে।
এক্ষেত্রে অর্থটি হ’ল কোন স্থান বা ঘর থেকে বাইরে আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা। উদ্দেশ্য
ঐ স্থান বা ঘরের মধ্যে নিজেকে তালাবদ্ধ রেখে বাইরের শত্রু থেকে আত্মরক্ষা। বর্তমান
লকডাউনের দিনে শত্রুপক্ষ কে তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। এ এক আণুবীক্ষণিক অদৃশ্য
ভয়ঙ্কর শত্রু। দুটি ক্ষেত্রেই কিন্তু স্থান বা ঘরে অবস্থানকারীরা কেউ
বন্দী নন – শুধু সুরক্ষার কারনে স্বেচ্ছায় বন্দীদশার আবহ প্রস্তুত করা। তবে লকআপে
থাকেন যারা তাদেরকে কোন ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করা হয় বন্দী হিসাবে।
থানায় যাদের যাতায়াত আছে তারা নিশ্চয়ই এব্যাপারে ওয়াকিবহাল। তবে একথাও ঠিক, করোনা
ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করার প্রয়োজনে দীর্ঘ লকডাউন দশায় আমাদের মানসিক
লকআপ হতে চলেছে অর্থাৎ মানসিকভাবে আমরা নিজেদেরকে বন্দী ভাবতে শুরু করেছি।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে আর
একটি শব্দ বা শব্দবন্ধ ‘সোস্যাল ডিসট্যান্সিং’ অনেকেরই মুখে মুখে ঘুরছে যার বাংলা
প্রতিশব্দ ‘সামাজিক দূরত্ব’। সেই সাথে ‘কোয়ারেন্টিন’ শব্দটিও বাজারে খুব চলছে যার
অর্থ ‘পৃথকীকরণ’।
তবে এই ‘সামাজিক দূরত্ব’ বা
‘শারীরিক দূরত্ব’ বিষয়টি বর্তমান পরিস্থিতিতে বহুচর্চিত হ’লেও সংক্রামক ব্যাধির
সংক্রমণ রোধে ঔষধবিহীন এই পন্থা বহুদিন আগে থেকেই প্রচলিত। মানুষে মানুষে শারীরিক
দূরত্ব বজায় রাখা এবং পারস্পরিক সাক্ষাতের সংখ্যা হ্রাস এই পদ্ধতির মূল মন্ত্র।
এই সামাজিক দূরত্ব তৈরির
প্রয়োজন পৃথিবীর বহু দেশেই ইতিপূর্বে হয়েছে। কুষ্ঠ রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগে
এই রোগের সংক্রমণ রোধের উদ্দেশে অষ্টাদশ শতকে ইতালির অ্যাংকোরা বন্দরনগরীর কাছে ‘দ্য
ল্যাজারিটে অফ অ্যাংকোরা’ নামে একটি কৃত্রিম দ্বীপ প্রস্তুত করা হয় যেখানে মানুষজন
কোয়ারেন্টিনে থাকতেন কুষ্ঠ রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে। তখনও কিন্তু আজকের মতই
মুখ-শরীর ঢেকে রাখা হ’ত। ঐতিহাসিক ইতালিতে করোনা ভাইরাসে যে মৃত্যুর মিছিল চলছে তা
অতীতের সব নজির ছাপিয়ে গেছে। এক করুন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলছে পৃথিবী।
১৯১৬ সালে নিউইয়র্ক শহরে
পোলিও মহামারীর সময় ২৭০০০ জন পোলিও
আক্রান্তদের মধ্যে নিউইয়র্কে ২০০০ জন সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন ৬০০০ জনের
মৃত্যু হয়েছে তখন নিউইয়র্ক শহরের সমস্ত অপেরা হাউস, পার্ক, রেস্তোরা বন্ধ ক’রে
দেওয়া হয়েছিল। বন্ধ করা হয়েছিল সবরকম জমায়েত। ১৯১৮ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জার মহামারীতে
ফিলাডেলফিয়াতে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল। প্রায় ২ লাখ লোকের প্যারেড ও জনসমাগমে
ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ এমনভাবে ছড়িয়েছিল যে প্রায় এক সপ্তাহ হাসপাতালের কোন বেড
খালি ছিল না এবং সাতদিনে ৪৫০০ জনের মৃত্যু ঘটেছিল এই রোগে। এই ঘটনার অব্যবহিত পরেই
সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
২০০৩ সালে সার্স যখন
ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হ’তে শুরু করে তখনও মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব স্থাপনের চেষ্টা
হয়। স্কুল-কলেজ, সিনেমা হল, বাজার, জনসমাগম সবকিছুই বন্ধ ক’রে দেওয়া হয়। সেই সময়
কানাডাতে ‘কম্যুনিটি কোয়ারেন্টিন’ ব্যবহার ক’রে সার্সের সংক্রমণ রোধ করার চেষ্টা
করা হয়েছিল।
এরপর এল ২০২০-এর করোনা
হানা। আমরা এখন সেই করোনার আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। এ এক
কঠিন লড়াই। ইতিহাসের কাছে শিক্ষা নিয়ে আমরা যে লড়াইয়ে নেমেছি তাতে আমাদের বিজয়
কেতন উড়বেই – শুধু সময়ের অপেক্ষা।
মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০২০
রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২০
করোনার লকডাউনে মানসিক উদ্বেগ
করোনার লকডাউনে মানসিক
উদ্বেগঃ অমরনাথ কর্মকার ০৫/০৪/২০২০
৭০ বছরের বৃদ্ধা
ভিক্ষে ক’রে পাওয়া অতিরিক্ত ভাত শুকিয়ে রাখছেন পরে ফুটিয়ে ভাত রান্না করবেন ব’লে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা যখন গৃহবন্দী সেই সময়ের অতি সাম্প্রতিক চিত্র
এটা। ইতিহাসে আমরা অনেক মন্বন্তর, মহামারীর কথা পড়েছি। বাবা-ঠাকুরদার মুখেও এইসব
অভিজ্ঞতার গল্প শুনেছি। আমাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে জঙ্গলে ঘেরা বিশাল একটা
জায়গা ছিল। চারপাশে ঘনবসতি অথচ ওখানে
জঙ্গল। ঠাকুরদার কাছে শুনেছিলাম ঐ জায়গায় নাকি একদা চল্লিশ-পঞ্চাশটি পরিবারের বাস
ছিল। একবার কলেরা মহামারীর আকার নিয়েছিল। ওখানে কোন এক পরিবারে কলেরা সংক্রমিত
হবার পর তা আশপাশের পরিবারগুলোতে ছড়াতে থাকে, যার ফলে ওই এলাকার প্রায় সবকটি
পরিবারের অধিকাংশ মানুষই মারা যায়। ঠাকুরদা গল্প করতেন, পাড়ার লোকের তখন বিরামহীনভাবে
মৃতদেহ সৎকার করেছেন। ঠাকুরদা নিজেও ছিলেন সেই কাজে। চার-পাঁচ রাত জেগে একের পর এক
মৃতদেহ পুড়িয়েছেন। কারন একটি চিতা জ্বলতে জ্বলতেই খবর আসছে এক বা একাধিক মৃত্যুর।
একটু বড় হয়ে আমরা কৌতুহলে ঐ জঙ্গলে ঢুকেছি অনেকবার। ভেতরে বিশাল একটা পুকুর ছিল।
শুনেছিলাম ওই পুকুরের জল থেকেই নাকি কলেরার সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। এখন অবশ্য সে জঙ্গল
উধাও, তার ওপর দাঁড়িয়ে আছে আবাসন।
বিজ্ঞানের এই চরম উন্নতির
দিনেও করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) বিশ্বময় যে মহামারীর ত্রাস সৃষ্টি করেছে তা ইতিহাসে কোনদিন ঘটেনি।প্রকৃতির
কাছে মানুষকে এতটা অসহায় হ’তে মানব সভ্যতা বোধ হয় কখনো দেখেনি, বিজ্ঞান যখন সবেমাত্র
হামাগুড়ি দিতে শিখেছে, এমনকি তখনোও না। প্রকৃতির
কাছে মানুষের অসহায়ত্ব আছে সন্দেহ নেই, কিন্তু বিজ্ঞানের চূড়ান্ত অগ্রগতির দিনে মানুষ
প্রকৃতির খামখেয়ালীপনাকে যে ভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে বর্তমান পরিস্থিতি কিন্তু মানুষের
মনে অন্য শঙ্কার জন্ম দিচ্ছে। কোথাও যেন সন্দেহ থেকে যাচ্ছে বিজ্ঞান পারবে তো এই পরিস্থিতিকে
জয় করতে ? আর মন্বন্তর ! করোনা ভাইরাসের এই মহামারী ঠেকাতে মানুষকে যেভাবে গৃহবন্দী
থাকতে হচ্ছে তাতে খাদ্য সঙ্কট যে কি ভয়ানক বিপদ বয়ে আনবে তার ‘অশনি সংকেত’এখনই আন্দাজ
করা যাচ্ছে। শুনেছি ইতালিতে মৃত্যু-মিছিল এমনভাবে ক্রমবর্দ্ধমান যে মানুষের কাছে অর্থ
অর্থহীন হয়ে পড়ছে – সেখানে নাকি মানুষ উপার্জিত অর্থ নর্দমায় ফেলে দিচ্ছে। জীবনের জন্য
এই লড়াই লড়তে গিয়ে বেঁচে থাকার রসদে টান পড়তে বাধ্য। তখন মন্বন্তরের ঠেলা সামলাতে গিয়ে
তৈরি হবে আর এক ভয়ানক পরিস্থিতি। এক মাসের গৃহবন্দী দশায় প্রচুর মানুষ কর্মহীন। সরকারী
সহায়তায় এখন হয়ত চ’লে যাচ্ছে। যাদের অর্থ আছে তারা এখনও অর্থের বিনিময়ে
রসদ যোগাড় করছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত হয় তাহ’লে খাদ্যের মজুত শেষ হ’তে
বাধ্য। তখন অর্থহীন হয়ে পড়বে নোটের বান্ডিল। সে দিন পাশের বাড়ির প্রায় শ’ ছুঁই
ছুঁই এক বৃদ্ধের মুখে তাঁর দুর্ভিক্ষ দেখার অভিজ্ঞতা শুনছিলাম। কোন বাড়ি থেকে
ধোঁয়া উঠতে দেখলেই অভুক্ত মানুষ হামলা করত সেই বাড়িতে।
লকডাউনে ঘরে ব’সে টেলিভিশনে
বা ইন্টারনেটে চীন, ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, জার্মানীর মত চিকিৎসাবিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলিতে কাতারে কাতারে মানুষের মৃত্যুর খবর
পাচ্ছি আর ক্রমেই উদ্বেগের মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে মনে। প্রথমত, বেঁচে থাকার অনিশ্চয়তা।
উদ্বেগ বাড়ছে নিজের দেশকে নিয়ে। উন্নত দেশগুলোর দশা যদি এই রকম করুণ হয়, তাহলে
আমাদের দেশে এরকম ব্যাপক সংক্রমণ শুরু হ’লে কি হাহাকার পড়বে সেই পরিণাম চিন্তা ক’রে
শিউরে উঠছি। প্রায় দু’সপ্তাহ হ’ল সরকারী নির্দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে
সবাই ঘরবন্দী থাকছি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনে। কর্মক্ষেত্রে যাওয়া নেই, অত্যাবশ্যকীয়
প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোনো নেই। রাস্তায় গাড়ী নেই, ট্রেন বন্ধ, সবাই বিচ্ছিন্ন। ভাগ্যিস
মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, টেলিভিশন চ্যানেল চালু আছে ! নইলে মানসিক অবসাদেই ইতিমধ্যে
অনেক মানুষ পটল তুলতেন। দিন-আনা দিন-খাওয়া মানুষদের উপার্জন বন্ধ, ব্যবসা লাটে। এর
মধ্যে যদি মহামারী আর দুর্ভিক্ষের সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু হয় তাহলে পরিস্থিতি কোনদিকে
গড়াবে সেই ভেবে মানসিকভাবে আধমরা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন আমার মত হয়ত অনেকেই।
আমাদের ভারতবর্ষ ইতিমধ্যে অনেকগুলো
দুর্ভিক্ষ দেখে ফেলেছে। ১১৭৬ বঙ্গাব্দে ঘটে যাওয়া ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ হয়েছিল মূলত
অতিবৃষ্টি ও বন্যার করাল গ্রাসে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারনে। দুর্ভিক্ষের কবলে পড়া বাংলার
অভিজ্ঞতাও কম নয়। ১৯৪৩ সালে ঘটা পঞ্চাশের মন্বন্তরে প্রায় ৩০ লাখ বঙ্গবাসী অনাহারে
মারা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান বার্মা (বর্তমান মায়ানমার)দখল ক’রে নেওয়ার
পর এদেশে বার্মা থেকে চাল আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ভারতে জেঁকে বসা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক
শাসক সেনা ও যুদ্ধ কর্মীদের জন্য বিপুল খাদ্য মজুত ক’রে রাখে। এছাড়া জাপান ভারত আক্রমণ
করতে পারে এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে ব্রিটিশ সরকার নৌকা, গোরুর গাড়ী প্রভৃতি পরিবহণ
বন্ধ ক’রে দেয়। ফলে দেখা দেয় খাদ্যের হাহাকার। দরিদ্র জনসাধারণ অভুক্ত থেকে ধুঁকে ধুঁকে
মরে। সে ইতিহাস বড় করুণ। বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশ যেমন চীন, রাশিয়া, ভিয়েতনামও ইতিপূর্বে
দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে যে মহামারী শুরু
হয়ে গেছে বিশ্বময় দ্রুত তা থেকে মুক্তি না মিললে বিশ্বব্যাপী যে দুর্ভিক্ষ নেমে আসার
সম্ভাবনা রয়েছে তা হবে ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম। এমনকি দেখা দিতে পারে সভ্যতার সঙ্কট।
পৃথিবীতে সংক্রামক রোগের কারনে
সৃষ্ট মহামারীর অনেক ইতিহাস আছে। ৪৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এথেন্সে টাইফয়েডের মত মহামারীতে
মৃত্যু হয়েছিল সে দেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষের। ৫৪১ খ্রিষ্টাব্দে জাস্টিনিয়ান প্লেগ,
একাদশ শতাব্দীতে ইউরোপে কুষ্ঠ রোগের মহামারী, ১৩৫০ সালের ‘দ্য ব্ল্যাক ডেথ’ বুবোনিক
প্লেগ (ব্যাকটিরিয়া), ১৬৬৫ সালের ‘দ্য গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন’, ১৮১৭ সালে ঘটা রাশিয়ার
কলেরা মহামারী, ১৮৫৫ সালের তৃতীয় প্লেগ মহামারী, ১৮৮৯ সালের রাশিয়ান ফ্লু, ১৯১৮ সালের
স্প্যানিশ ফ্লু, ১৯৫৭ সালের এশিয়ান ফ্লু, ১৯৮১ সালের এইচ আই ভি/এইডস এই সব মহামারীতে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানি
ঘটেছিল ঠিকই কিন্তু সংক্রমণের পরিধি এতটা ব্যাপক ছিল না। পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ দেশেই
করোনা ভাইরাস মারণ থাবা বসিয়েছে। এর আগে ঘটা মহামারীগুলিকে সময়ের নিরিখে বিচার করলে
দেখা যাবে তখন জনসংখ্যার অনুপাতে খাদ্যের যোগান যথেষ্ট ছিল। বর্তমান সময়ে বিশ্বময় যে
বিপুল জনসংখ্যা তাতে মহামারীর নিকৃষ্ট রুপ দেখা দিলে দুর্ভিক্ষের আকারও হবে ভয়ঙ্করতম।
প্রশ্ন অন্যত্র। বিজ্ঞানের অগ্রগতির
বেগ যে ভাবে ত্বরান্বিত হয়ে চলেছে, মাঝপথে কোন কারনে তার গতি ব্যহত হ’লে আমরা এক ধাক্কায়
পিছিয়ে পড়ব অনেকটাই। শুধু বিজ্ঞান নয়, অর্থনীতি, রাজনীতি সব পিছিয়ে যাবে। অদূর ভবিষ্যতে
নিশ্চয়ই করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হবে, যেমনটি আগে হয়েছে, প্রতিদিন হাজার
হাজার মানুষের মৃত্যুও থেমে যাবে দ্রুত, হাহাকার থেমে যাবে, কিন্তু ততদিনে ক্ষতি হয়ে
যাবে অনেকখানি।
বিজ্ঞান মানব সভ্যতায় উন্নতির
বেগ দিয়েছে কিন্তু মানুষকে যান্ত্রিকতায় অভিযোজিত ক’রে আবেগহীন ক’রে দিয়েছে। আজ আমরা পরস্পরের মধ্যে আবেগহীন সামাজিক দূরত্ব তৈরি
ক’রে ঘরবন্দী আছি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করার লক্ষ্যে। কতদিন এভাবে চলবে তাও
নির্দিষ্ট ক’রে বলা কঠিন। পিছিয়ে পড়েও যদি জীবন বাঁচে, তবে নিয়ম না ভেঙে নিয়ম মেনে
চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারন বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতি এদের অনেক ঊর্ধে জীবনের মূল্য।
তবে বিজ্ঞানের ওপর বিশ্বাসে
ভর ক’রে আশায় আছি। খুব শীঘ্রই সঙ্কট মোচনের উপায় আবিষ্কৃত হবে এই আশা আমার মত সকলেই
করুন আর মেনে চলুন সরকারী নির্দেশ।
বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০২০
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
মুখ চাপা সত্য
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?
-
এক লাইনের কাব্যঃ অ.না.ক. ২১/০৩/২০১৭ এক লাইনেও কাব্য হয় দু'লাইনে ছন্দময় ।