বুধবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

গুজব

গুজবঃ অমরনাথ কর্মকার ১৩/০২/২০১৯

গুজব কেবল গুজবই,
সত্যিকারের তো আর নয়
তবে কেন দিচ্ছ কান ?
অকারনে শুধু পাচ্ছ ভয় ?

কিছু মানুষ এই সমাজে
তিলকে বানায় তাল,
শূন্য মাথার এসব মানুষ
ক্ষতিকর চিরকাল।

গুজবে ভয় না পেয়ে
বরং বের কর  খুঁজে
ছড়াচ্ছে গুজব যারা
থেকো না মুখ  বুজে।

রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

জলপানি

জলপানি  - অ.না.ক. ১০/০২/২০১৯

যখন জল পিপাসায়
বুক ফেটে যায়,
হিন্দু তখন পানি খেয়েই
তৃষ্ণা মেটায়।
যখন পানির তৃষ্ণায়
প্রাণ যায় যায়
মুসলমানে জল খেয়েই
খুব তৃপ্তি পায়।
জল ও পানি ভিন্ন নয়
আমরা সবাই জানি
জলও নয়, পানিও নয়
নাম হোক 'জলপানি'।

শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

যাবার বেলা কান্না পেল

যাবার বেলায় কান্না পেল
চোখের জলে শান্ত হ'ল শোক,
কয়েকটা দিন চলবে এমন
গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েই মুছে নেব চোখ।
                       
               অ.না.ক. ১০/০২/২০১৯

ও গানওয়ালা

খুব ছোট্টবেলা থেকে এঁদের দেখে আসছি রাস্তা-ঘাটে, মেলায়। সেই সময় এঁদের দেখে খুব বিষ্মিত বোধ করতাম, বাস্তবিক এখনোও বিষ্ময় বোধ হয়। তবে সেই বোধের পার্থক্য ঘটেছে এখন। আমি বলছি 'সেই বেহালা বাজানো লোকটা'র কথা। আজ বাড়ির সামনে দিয়ে তাঁকে যেতে দেখে কৌতুহল হ'ল খুব। মাথার ঝুড়িতে 'খেলনা' বেহালা। আর তাঁর হাতে যে বেহালাটি, তাতে তিনি সুর তুলছেন 'ও টুনির মা.. '। আমার ছেলেও উৎসাহী।  অতএব বৃদ্ধ সেই বেহালা বিক্রেতা এবং বাদককে ডাকা হ'ল। স্ত্রীর ইচ্ছেয় তিনি বাজিয়ে শোনালেন 'বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িত গেলাম.. '। ছেলের জিজ্ঞাস্য ছিল ' এঁরা কি স্বরলিপি মেনে বাজায়'। জানা গেল, আসলে বিক্রি করতে খরিদ্দার আকর্ষণের উদ্দেশ্যে  দীর্ঘদিনের চেষ্টায় তাঁদেরকে এই 'খেলনা' বেহালা বাজানো শিখতে হয়েছে কোন প্রথাগত শিক্ষা ছাড়াই। ছোটবেলায় এদের বাজনা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতাম, মনে হ'ত  এঁরা কি বিরাট গুনের অধিকারী। এখনও সেই ধারনাই পোষন করি। তখন আর্থিক ব্যাপারটা বুঝিনি। এখন বুঝতে পারি দারিদ্রের কারনে সামান্য অর্থ রোজগারের প্রয়োজনে তাঁদেরকে কি অধ্যাবসায় আর দক্ষতা দিয়ে 'খেলনা' বেহালায় সুর তোলা শিখতে হয়েছে। এই সময় যদি তাঁরা অন্য কাজে ব্যয় করতেন তাহলে হয়ত এই দারিদ্র  থেকে মুক্তি মিলত। মনে হ'ল আমাদের কাছে যেটিকে খেলনা মনে হচ্ছে তাঁদের কাছে এটি মোটেই খেলনা নয়। ইচ্ছে করেই দামদর না ক'রে তাঁর চাওয়া মূল্যেই একটা বেহালা ('খেলনা' শব্দটা ব্যবহার করলাম না) কিনে ফেললাম ছেলের জন্য। ছেলে তারের যন্ত্র একটু-আধটু বাজাতে জানে। কিন্তু প্রাথমিক চেষ্টায় এই বেহালা বাজানো তার কাছে অসম্ভব মনে হ'ল। সুতরাং বেহালা বাদক ওই বৃদ্ধের অসাধারণ গুনের প্রশংসায় ছেলেও পঞ্চমুখ। ইচ্ছে হচ্ছিল  তাঁকে ডেকে বলি 'ও গানওলা, আর একটা গান গাও...'। কিন্তু 'সেই বেহালা বাজানো লোকটা' ইতিমধ্যেই 'চলে গেছে গান শুনিয়ে'।

শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন

বাংলা ভাষার বিশ্বায়নঃঃ অমরনাথ কর্মকার

মাতৃভাষার অধিকার আদায়ে বাঙালী জনগোষ্ঠীর আন্দোলনের সূত্রপাত বেশ প্রাচীন। মানভূমের বাঙালীরা ১৯১২ সালে উপমহাদেশে প্রথম বাংলা ভাষা আন্দোলন শুরু করেন। সেই অনুপ্রেরণা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে আসাম থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে। তারপর সেই ভাষা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে উত্তাল তরঙ্গের আকার ধারণ করল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকার রাজপথে সালাম, জব্বার, বরকতের রক্তের বিনিময়ে বাঙালীর মাতৃভাষা কিভাবে সজীবতা পেল সে ইতিহাস তো সকলেরই জানা। ‘অমর একুশে’ বিশ্ববন্দিত হয়ে বাংলাদেশ বাংলা ভাষাকে সরকারী ভাষার স্বীকৃতি দিয়ে বাঙালীর ভাষার স্বাধীনতার পতাকা সগর্বে প্রতিষ্ঠা করল। আজ যখন প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারী দিনটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস’ হিসাবে বিশ্বময় পালিত হয়, তখন বাঙালী হিসাবে আমাদের বুক গর্বে ভ’রে ওঠে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একটা প্রশ্ন বারংবার উঠে আসে – আমরা বাঙালীরা কি অন্তরের গভীর ভালোবাসা দিয়ে বাংলা ভাষাকে আঁকড়ে ধ’রে রাখতে  পারছি ? 
বিশ্বে যেখানেই যান বাঙালীর পরিচিতি প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান মাধ্যম তাঁর মুখোচ্চারিত বাংলা ভাষা। শতাব্দী প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্য ভারতীয় তথা বিশ্ব সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। দু-দুটো দেশের জাতীয় সঙ্গীতের ভাষা বাংলা। ভাষার জন্য বাঙালীর বিরল আত্মত্যাগ বিশ্বে বেনজির। অথচ বাংলা ভাষার সাম্প্রতিক প্রবণতা বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে এক বিরাট প্রশ্ন চিহ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে। 
ইংরেজি ‘Z’ এর প্রতিবর্ণ বাংলা ভাষায় অনুপস্থিত ব’লে সম্প্রতি ‘জ্৳’ দিয়ে ‘Z’ এর পরিপূরক বাংলা বর্ণ তৈরি হয়েছে। কই ইংরেজি বর্ণমালাতেও ‘ত’-এর প্রতিবর্ণ নেই। কখনোও কি ‘ত’-এর প্রতিবর্ণ সৃষ্টির জন্য ইংরেজদের কখনোও তৎপর হ’তে দেখেছেন ? অনুকরণপ্রিয় হিসাবে এমনিতেই বাঙালীর বদনাম আছে। ভাঙা বাংলায় উচ্চারণ, হিন্দি ইংরেজি মিশিয়ে বাংলা ভাষাকে একটি শংকর ভাষা বানিয়ে মাতৃভাষার মৌলিক্বত্ব বিনাশের কেমন যেন একটা মরিয়া প্রবণতা একশ্রেণির বাঙালীর মধ্যে ইদানিং খুব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বরং বাস্তবটা যদি বিপরীত হ’ত তাহলে বাংলা ভাষার অস্তিত্বের সংকট নিয়ে শঙ্কা হ’ত না। আমরা আগ বাড়িয়ে হিন্দিভাষীর সঙ্গে হিন্দি, ইংরেজিভাষীর সঙ্গে ইংরেজি বলার চেষ্টা করি – তাঁদেরকে কখনোই বাংলা বলানোর উদ্যোগ গ্রহণ করি না। উচ্চশিক্ষার জন্য ইংরেজি বই ছাড়া গত্যন্তর নেই এই বিশ্বাসে উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলা ভাষায় বই লেখার চেষ্টা হয় না। অথচ দেখুন জাপানী-ফরাসিরা উচ্চশিক্ষার জন্য এই আক্ষেপ করে না। এমনকি বাংলাদেশেও সেই চেষ্টা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। বলতে বাধা নেই বঙ্কিম-বিভুতিভূষনরা ক্রমশ অপাংক্তেয় হতে শুরু করেছে। 
খুব সহজ ক’রে বললে বলতে হয় বাংলা ভাষার ওপর হিন্দি আর ইংরেজি ভাষার সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে যেন। না, এই সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য হিন্দি বা ইংরেজি ভাষাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। বরং আমরা নিজেরাই বোধ হয় আমাদের মাতৃভাষার ওপর এই ভাষাসন্ত্রাস জারী করার ব্যাপারে আত্মঘাতি – আমাদের অপরিনামদর্শী অনুকরণপ্রিয়তার কারনেই বাংলা ভাষা ক্রমশ তাঁর স্বকীয়তা হারাচ্ছে। একদা ইংরেজ ঔপনিবেশিকতা প্রশাসনিক কাজে ইংরেজির ব্যবহারকে বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা করেছিল। যদিও সর্বত্র তা সার্থকতা পায়নি। স্বাধীন ভারতে প্রশাসনিক কাজে প্রাদেশিক ভাষা ব্যবহারের প্রচলন শুরু হলে বঙ্গের বাঙালীরা প্রশাসনিক কাজে বাংলা ব্যবহারের স্বাধীনতা পেয়েছে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের সরকারী ভাষা এখন বাংলা। সরকারী কাজে বাংলা ব্যবহারে কোন বাধা নেই অথচ আমাদের মধ্যে সার্বিকভাবে বাংলার চেয়ে ইংরেজি ব্যবহারের প্রবনতা রয়েই গেছে। বাংলায় অনেক ইংরেজি শব্দের প্রতিশব্দের অভাবকে দোষ দিতেও আমরা অভ্যস্ত। এখন ইংরেজি শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ আদৌ অপ্রতুল নয়। আসলে আমাদের চেষ্টা নেই – সগর্বে বাঙালীত্ব প্রকাশের তীক্ষ্ণ হাতিয়ার হিসাবে বাংলা ব্যবহারের মানসিকতা এখনোও সেভাবে তৈরি হয়নি। ধরেই নেওয়া হয় বাংলা ভাষার প্রয়োজন সীমাবদ্ধ শুধু সাহিত্যের – শরীরটা যতই বাঙালীর হোক। বাংলা ভাষায় হিন্দি আর ইংরেজির অনুপ্রবেশ বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির গুপ্তঘাতক হিসাবে নীরবে কাজ ক’রে চলেছে আমাদের অজান্তেই। এর পরিণাম যে কি সাঙ্ঘাতিক হতে পারে তা ভাবা যায় না। 
আমার এক অধ্যাপক বন্ধু সেদিন আক্ষেপ ক’রে বলেছিলেন ‘বিশ্বায়ন বিশ্বায়ন নিয়ে আমরা হই চই করি অথচ বাঙালী হিসাবে আমরা বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন নিয়ে এতটুকুও ভাবি না’। বাঙালী হিসাবে আমরা বহু কৃতি বাঙালীর দৌলতে বিশ্ববন্দিত, সন্দেহ নেই। কিন্তু বাঙালীর ভাষাকে বিশ্ববন্দিত করতে পারলেই বোধ হয় ষোল কলা পূর্ণ হয়। 
সময় এসেছে, বাংলা ভাষার মৌলিকত্ব বজায় রেখে বাংলা ভাষাকে সর্বত্র ব্যবহার করার উদ্যোগ নেওয়া। স্বাধীনচেতা বাঙালীর মুখে, কাগজে-কলমে লেগে থাকুক শুদ্ধ বাংলা – অমর একুশের অনুপ্রেরণায় মাতৃভাষা হয়ে উঠুক বাঙালীর প্রাণের ভাষা, ভাবের ভাষা এবং কাজের ভাষা। বাংলা ভাষা হয়ে উঠুক অন্য ভাষা-ভাষীদের অনুকরনীয় অনুপ্রেরণা। তবেই হবে বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন – বাঙালীর বিশ্বায়ন।

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?