কলেজের সামনে রাস্তার ওপারে
ছোট্ট দোকানটা । কলেজে ঢোকার প্রথম দিনেই টিফিন পিরিয়ডে কয়েকজন বন্ধু আমাকে নিয়ে
গেল দোকানটাতে । সিগারেটে তখন শিক্ষানবিশই বলা চলে । দোকানদারকে মামা ব’লে সম্বোধন
করতে শুনলাম অনেককে । পরে জানলাম তিনি কলেজের ছাত্রদের কাছে বহুদিন আগে থেকেই মামা
হয়ে আছেন । তাঁর এই মামা হয়ে ওঠার ইতিহাস জানার ইচ্ছে হয়েছিল একটু কিন্তু কেউ বলতে
পারেনি । জানিনা বাড়ির কাজের মহিলাকে যেমন পিসি বলতে শেখানো হয়, এর পেছনেও ওরকম
কোন কারন ছিল কি না । মামা কাঠবাঙাল – আমাদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় নিজের ভাষা থেকে
একচুল বিচ্যুত হতেন না । কথাবার্তা ছিল ব্যঙ্গাত্মক । কথার মারপ্যাঁচে একেবারে
জমিয়ে দিতেন সবাইকে – সেইসাথে ছিল রসাত্মক অঙ্গভঙ্গি । এই কারনেই আশপাশে সিগারেট,
লজেন্সের আরও দোকান থাকলেও একমাত্র মামার দোকানেই ছাত্রদের ভিড় লেগে থাকত ।
প্রায় আড়াই দশক আগে কলেজ ছাড়ার
পর থেকে কলেজের রাস্তায় খুব একটা যাওয়া হয় না । মাঝে মাঝে দিনের বেলায় গাড়িতে ওই
রাস্তা দিয়ে গেলে দোকানটাকে দেখার চেষ্টা করি । দোকানটা খোলা থাকতেও দেখি । কিন্তু
দোকাদারের চেহারা দেখে মনে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় – এই কি সেই মামা নাকি অন্য কেউ ।
মামা কি এখনো জীবিত আছে ? চেহারাটা সেই মামার মতই লাগে অনেকটা । নাকি “ভারতবর্ষ”
গল্পের সেই “ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে” ?
আজ একটা কাজে কলেজের কাছে যেতে
হয়েছিল । সিগারেটে এখন আমার আসক্তি নেই । তবুও কেন জানিনা কলেজের কাছে এসে খুব সিগারেট খেতে ইচ্ছে
হ’ল আজ । গেলাম সেই মামার দোকানে । দেখলাম বৃদ্ধ দোকানদার আমাকে ‘আপনি’ সম্বোধনে
বাঙাল ভাষায় কথা বলছেন । সিগারেট ধরিয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে ভদ্রলোকের সঙ্গে নানান কথা
ব’লে বোঝার চেষ্টা করলাম তিনিই সেই মামা কি না । কথা প্রসঙ্গে অতীত আর বর্তমানের
ছাত্রদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের তুলনা উঠে আসল । পরিস্কার হয়ে গেল আমার কাছে, ইনিই
সেই মামা । আড়াই দশক আগেকার আমার পরিচয় দিলে তিনি আমাকে যে চিনতে পারবেন না সেটা
নিশ্চিত জেনেও পরিচয়টা দিলাম । অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ্য করলাম তিনি আমার নামটাও মনে
রেখেছেন । মামাকে আমার মনে রাখা সহজ কিন্তু তাঁর পক্ষে এত বিপুল সংখ্যক ছাত্রদের
নাম মনে রাখা অসম্ভব হওয়াটাই স্বাভাবিক । কিন্তু আমার নামটা তাঁর মনে থাকল কি ক’রে
এই প্রশ্নটাই আমাকে আজ সারাদিন ধ’রে ভাবাচ্ছে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন