মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

পুজোর আগে আবার মনখারাপ



আবার   মনখারাপ  শুরু  হয়েছে  হবেনা হবেনা করেও গতকাল ছোটদের জন্য পুজোর নতুন পোশাক কিনেছি উত্সবে  ওদের  হাসি মুখ দেখতে বড়দের জন্য যে একেবারে কিনিনি তা নয়, তবে তা নিছকই প্রথা বজায় রাখার তাগিদে, পকেটের করুন দশাকে হাসিমুখ দিয়ে চেপে রেখে  :: সরকারের চাকুরিজীবিদের কাছে 'পুজোর বোনাস' শব্দটা বিলুপ্তপ্রায়  যেটুকু আছে তাতে বাড়ির গ্যাস সরবরাহকারী আর পৌরসভার ময়লা সাফায়কারীর  মত  কয়েকজনকে  'বোনাস' দিতেই শেষ হয়ে যায় আর মাস মাইনের টাকাটা মাস শেষ হওয়ার অনেক আগেই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে  'মহার্ঘ ভাতা' এই অবাস্তব (অর্থহীন বলা  ঠিক  হবে  না ) শব্দটা কেন যে পশ্চিমবাংলার বাংলা অভিধানে আজ রাখা  হয়েছে তার কারণ খুঁজে পাইনা না, মনখারাপ এসব কারণে নয় পরিবেশে পুজোর স্পষ্ট প্রকাশ - আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি  অফিস যাওয়ার পথে ট্রেনের কামরায় খোস মেজাজে 'পুজো মার্কেটিং' নিয়ে যখন গল্পে মগ্ন, ১২-১৩ বছরের ছেলেটাকে দেখলাম অন্য  দিনের মতই লজেন্সের বয়াম হাতে রসাত্মক মন্তব্য সহকারে লজেন্স বিক্রি করতে করতে এদিকে এগিয়ে আসতে ' দু'টাকায় না হবে বাড়ি, না হবে গাড়ি, না হবে  বৌদির লাল টুকটুকে শাড়ি  খেয়ে যান লজেন্স আনারস, যত চুষবেন তত রস' . পুজোর আগে বিক্রি বাড়ার আশায় দেখলাম ওর বয়ামটা বেশ বড় আর লজেন্সের বৈচিত্রও বেশি  শিশুশ্রম বন্ধ করার জন্য খবরের  কাগজে, টিভি চ্যানেলে প্রতিনিয়ত কত প্রচার, কাগুজে  মাঘের মত কত আইনি  হুঙ্কার, কিন্তু পুজোর আগে নতুন পোশাক পাবার   প্রতিশ্রুতি যে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সামনে নেই, আমাদের মত তথাকথিত মানবিক মুখের দিকে তাকিয়ে তারা আমাদের কাছে দুটো পয়সার বিনিময়ে শুধু লজেন্স বিক্রি করতে চায়  পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে সেই ছোট্ট ছেলেটাকে বেশ কয়েকদিন ধরে দেখছি সন্ধ্যাবেলা মুখে ফু  দিয়ে  বুদবুদ তৈরির যন্ত্র বিক্রি করতে   জানে পুজোর বাজার করতে যাওয়া ছোট ছোট  ছেলে-মেয়েরা ওর খেলনাটা দেখে বাবা-মা'  কাছে বায়না করবে - যেটা তার স্বাভাবিক উপলব্ধির অন্তর্গত যদিও  তার সেই উপলব্ধিগুলো পাথরচাপা দেওয়া  শিশুশ্রম নিরোধক আইন থাকে বইয়ের পাতায়, টিভির বিজ্ঞাপনে, নেতার  ভাষণে আর আমাদের সন্তানতুল্য ওই শিশু গুলো আমাদের 'মানবিক' মুখের দিকে তাকিয়ে আমাদের করুণাপ্রার্থী হয়ে প্রমান করে দেয় আমরা কতটা অমানবিক  অফিসে গিয়ে দেখি একদল বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ভিঁড় করেছেন  পুজোর আগে তাদের বার্ধ্যক্য কিংবা বিধবা ভাতা পাবেন কিনা জানতে  তাদের মধ্যে কেউ আছেন অশীতিপর, কেউ চোখে দেখতে পারেন না, আবার কেউ বা হাঁটতে -চলতে  প্রায় অক্ষম না, এরা কোনো বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা নন, বৃদ্ধাশ্রমে থাকার সঙ্গতিও নেই, সামান্য সরকারী সাহায্যের প্রতিশ্রুতি এদের আশান্বিত করে  এদের করুন মুখের দিকে তাকিয়ে আসন্ন পুজোর আনন্দ মাটি  হয়ে যায় নিজের মাকে সদ্য  কিনে দেওয়া  নতুন শাড়িটা আর সত্তরোর্ধ ওই বৃদ্ধার পরনের ময়লা জীর্ণ শাড়িটার মধ্যে কন্ট্রাস্ট খুঁজতে গিয়ে মন খারাপ হয়ে যায় ভীষন  প্রতি বছর পুজোর ঠিক আগে এরকমই মন খারাপ হয়  মনে মনে আশা করি উত্সবের দিনগুলো যেন খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়  এর চেয়ে কাজের চাপে থাকলে এই মনখারাপগুলো অন্তত মনের মধ্যে ঢোকার  চান্স পাবে না
, না, , ২৩/০৯/২০১৪, মহালয়া

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?