বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৩

বিষয় আলু



                      বিষয় আলু : অমরনাথ কর্মকার
সম্প্রতি আলুর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে রাজ্য তোলপাড় । আলু দুর্মূল্য তো  বটেই, সেই সাথে বাজারে আলুর আকাল । ইতিপূর্বে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মুরগীর মূল্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ক্রেতাসাধারণ মুরগী বনে গিয়েছিলেন । তারপর পেঁয়াজ নিয়ে চলল তরজা  । তবে মহার্ঘ হলেও এটি লভ্য । এবার আলু । বাঙালীর আলুবিহীন জীবন অকল্পনীয় । আলুময় ব্যঞ্জন বাঙালীর রান্নার বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য – ঝালে ঝোলে অম্বলে সর্বত্র আলুর অবধারিত উপস্থিতি । আলুর দোষ কী সে সম্বন্ধে ধারণা থাক বা না থাক আলুর গুনাগুণ যে কি বাঙালী মাত্রেই সে সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল । কিন্তু বাজার থেকে আলুর আকষ্মিক অন্তর্ধ্যানের ফলে ভোজনবিলাসী বাঙালীর মাথায় হাত । আলুহীন বাঙালীর চোখের সামনে এখন আলুহীন অন্ধকার । কিছুদিন আগে আলু অগ্নিমূল্য ছিল । তবুও কম হলেও হেঁসেলে তার প্রবেশ ছিল । মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আলুর অহেতুক মজুতদারী এবং উচ্চমূল্যে আলু বিক্রি বন্ধ করার কড়া সরকারী পদক্ষেপ নেওয়ার সাথে সাথেই পড়ে গেল আলুর আকাল । একসময় মহার্ঘ্য  পেঁয়াজের পরিবর্তে স্যলাডে আপেল ব্যবহৃত হতে দেখা গেছে । কিন্তু আলুর বিকল্প ? আলুবখরা নিশ্চয়ই নয় । একবার ভাবুন তো রসনা রসসিক্ত করা বিরিয়ানি খাচ্ছেন অথচ তাতে ডুমো ডুমো আলু অনুপস্থিত – অথবা ইলিশ মাছ ভাজা কিংবা ডিমের অমলেট সহযোগে খিচুরি খেতে বসেছেন অথচ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও খিচুরিতে একটি আলুর টুকরোও পেলেন না – কেমণ লাগবে ? দিন আনা দিন খাওয়া হতদরিদ্র বাঙালীর সবচেয়ে সস্তার খাবার ‘আলুভাতে ভাত’ও কি তবে জুটবে না ? না হয় বাঙালীর একটু বেশিই আলুপ্রীতি আছে – এব্যাপারে আলুর দোষ নেই – হ’লই বা দোষটা আমাদের রসনার – তাই ব’লে এই বঞ্চনা !  আর শুধু বাঙালীই বা কেন দক্ষিনের মশলা ধোসা কিংবা মহারাষ্ট্রের পাউভাজিতেও তো আলুর রমরমা ব্যবহার । ভ্যানগঘের লেখা থেকে জানা গেছে সেকালে ফ্রান্সেও আবসিনিয়ে মদের সঙ্গে আলুর তৈরি খাবারের প্রচলন ছিল । আর বাংলা বা ইংলিশের সঙ্গে আলুভাজার (আদরের নাম পটেটো চিপস) চাট না হলে নেশাখোরদের নেশাটাই জমে না । এই আলুআখ্যানের উদ্দেশ্য আলুসর্বস্ব বাঙালীর আসন্ন আলুবিহীন অন্ধকার আলুনী জীবনের আলুবিলাপ । মন্বন্তরের সময় দেখা গেছে মানুষকে শাক-পাতা, মেটে আলু খেয়ে বেঁচে থাকতে । এখন বাজারে গিয়ে দেখবেন সব্জির উচ্চমূল্যের কারনে বাজারে প্রচুর বিকোচ্ছে মেটে আলু, মান-কচু । মনে পড়ে যাচ্ছে সত্যজি রায়ের ‘অশনি সংকেত’-এর কথা ।
আলুর এহেন আলুলায়িত পরিস্থিতিতে সবচেয়ে আনন্দে আছেন বোধহয় রক্তে শর্করা-সমৃদ্ধ মানুষজন । এই পরিস্থিতিতে আলুর দোষ প্রচার করতে তাঁরা আনন্দ পাচ্ছেন যথেষ্ট । রক্তে শর্করা বৃদ্ধির পেছনে সত্যিই যদি আলুর দোষ থেকে থাকে তবে বর্তমান প্রেক্ষিতে চিকিসকদেরও মাথায় হাত ।
তবে আশা করা যায় এই পরিস্থিতির পরিবর্তন আসতে বেশি দেরি নেই । এই আশা রেখে আসুন একসঙ্গে জয়ধ্বনি দিই ‘জয় বাবা আলুনাথ’ ।
---------০০--------

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?