মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০২০
মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০
এভাবেও বেঁচে থাকা যায়
এভাবেও বেঁচে থাকা যায়
অমরনাথ কর্মকার ১৬/০৬/২০২০
মানুষের পেশার কত বৈচিত্র্য ! উচ্চ পদস্থ অফিস
আধিকারিক থেকে দিন-আনা-দিন-খাওয়া দীনমজুর। উদেশ্য মূলত সকলেরই এক। বেঁচে থাকা – জীবনের মৌলিক চাহিদা
পূরণ ক’রে স্বচ্ছন্দে জীবন যাপন। কেউ কেউ স্বছন্দে মসৃণ ভাবে জীবন কাটাতে পারে, আবার কেউ বা হোঁচট খায় – পেশার বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থে বাঁচার মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খায়। তবে
সবাই বেঁচে থাকে – তার মানে উপার্জিত অর্থে দিন গুজরান যাঁদের পক্ষে কষ্টকর তারাও কোন না কোন ভাবে বেঁচে থাকার রসদ
সংগ্রহ করতে সক্ষম – হয়ত তার জন্য তাঁদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে
হয়। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারনে সেই মার্চের শেষ থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত
লকডাউনে সব বন্ধ ছিল। দুশ্চিন্তায় ছিলাম প্রাত্যহিক শ্রমের বিনিময়ে সামান্য
উপার্জনে যাঁদের দিন চলত তাঁদের চলছে কেমন ক’রে ! সরকারী ঘোষণায় জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আবার দোকান বাজার স্বাভাবিক ভাবে
খুলতে শুরু করেছে।
সেই সুবাদে গিয়েছিলাম মাছের বাজারে। গিয়ে দেখি আগের মতই আবার লোকারণ্য। মাছ
কিনলাম। মাছ বাজারের পেছনে মাছ কাটাতে গিয়ে দেখি মাছ কাটার মহিলাদের সংখ্যা
বেড়েছে। আগে মাছ কিনে সোজা বাড়ি নিয়ে যেতাম। আমার মা নিমেষে সেই মাছ, তা ট্যাংরা বা কই-এর মত মারাত্মক কাঁটা যুক্ত মাছ হোক বা অন্য মাছ, কেটে ফেলতেন। বৃদ্ধা মায়ের ভূমিকা আমার স্ত্রীও নিয়েছিলেন কিছুদিন কিন্তু
তারপর সময়াভাবে এবং তার চেয়েও বড় কথা, হাল ফ্যাশানের প্রভাবে
সে পাঠ চুকে গেছে। তাই মাছ কিনে কাটিয়ে আনাটাও নিয়মের আওতাভুক্ত হয়ে গেছে – সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্যয় বৃদ্ধি। যা হোক দেখলাম ওরা আবার স্বমহিমায় বঁটি হাতে প্রস্তুত। পাঁচশ টাকার মাছ কিনে তা কাটাতে
বিশ টাকা দাবি করলে বড়লোক
বাবুটির কাছে তা নাকি ‘গলা কাটা’র সমান। এই সমস্ত গরীব খেটে খাওয়া মহিলারা দূর-দূরান্ত থেকে আসেন
উপার্জনের আশায়, সকালে মাছ কাটার কাজ ছাড়াও অন্য কাজ করেন। হয়ত
এদের স্বামীর উপার্জনে কুলায় না কিংবা স্বামী অসুস্থ বা উপার্জনের অন্য কেউ নেই।
কথা প্রসঙ্গে এদের একজনের কাছ থেকে জেনেছিলাম তাঁর মেয়ের উচ্চ শিক্ষার খরচ জোগাতেই
তিনি এই কাজে লেগেছেন। সৎ পেশায় অর্জিত অর্থের মূল্য বোধ হয় একটু বেশিই। লকডাউনের
পরে মাছ কাটার জন্য মূল্য আগের চেয়ে একটু বেশিই চেয়েছিলেন। পরিস্থিতি কল্পনা ক’রে আমি দাম-দর তো করিইনি বরং ইচ্ছে করেই তাঁর অজান্তে একটু
বেশিই দিয়ে এসেছিলাম। দেখে খুব ভালো লাগল, এত কিছুর পরেও এরা আবার
সেই স্বল্প উপার্জনের পুরোনো পেশায় ফিরে এসেছেন – বাঁচার
তাগিদে। খুশি হলাম দেখে যে এভাবেও বেঁচে থাকা যায় !
এভাবেও বেঁচে থাকা যায়
এভাবেও বেঁচে থাকা যায়
অমরনাথ কর্মকার ১৬/০৬/২০২০
মানুষের পেশার কত বৈচিত্র্য ! উচ্চ পদস্থ অফিস
আধিকারিক থেকে দিন-আনা-দিন-খাওয়া দীনমজুর। উদেশ্য মূলত সকলেরই এক। বেঁচে থাকা – জীবনের মৌলিক চাহিদা
পূরণ ক’রে স্বচ্ছন্দে জীবন যাপন। কেউ কেউ স্বছন্দে মসৃণ ভাবে জীবন কাটাতে পারে, আবার কেউ বা হোঁচট খায় – পেশার বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থে বাঁচার মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খায়। তবে
সবাই বেঁচে থাকে – তার মানে উপার্জিত অর্থে দিন গুজরান যাঁদের পক্ষে কষ্টকর তারাও কোন না কোন ভাবে বেঁচে থাকার রসদ
সংগ্রহ করতে সক্ষম – হয়ত তার জন্য তাঁদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে
হয়। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারনে সেই মার্চের শেষ থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত
লকডাউনে সব বন্ধ ছিল। দুশ্চিন্তায় ছিলাম প্রাত্যহিক শ্রমের বিনিময়ে সামান্য
উপার্জনে যাঁদের দিন চলত তাঁদের চলছে কেমন ক’রে ! সরকারী ঘোষণায় জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আবার দোকান বাজার স্বাভাবিক ভাবে
খুলতে শুরু করেছে।
সেই সুবাদে গিয়েছিলাম মাছের বাজারে। গিয়ে দেখি আগের মতই আবার লোকারণ্য। মাছ
কিনলাম। মাছ বাজারের পেছনে মাছ কাটাতে গিয়ে দেখি মাছ কাটার মহিলাদের সংখ্যা
বেড়েছে। আগে মাছ কিনে সোজা বাড়ি নিয়ে যেতাম। আমার মা নিমেষে সেই মাছ, তা ট্যাংরা বা কই-এর মত মারাত্মক কাঁটা যুক্ত মাছ হোক বা অন্য মাছ, কেটে ফেলতেন। বৃদ্ধা মায়ের ভূমিকা আমার স্ত্রীও নিয়েছিলেন কিছুদিন কিন্তু
তারপর সময়াভাবে এবং তার চেয়েও বড় কথা, হাল ফ্যাশানের প্রভাবে
সে পাঠ চুকে গেছে। তাই মাছ কিনে কাটিয়ে আনাটাও নিয়মের আওতাভুক্ত হয়ে গেছে – সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্যয় বৃদ্ধি। যা হোক দেখলাম ওরা আবার স্বমহিমায় বঁটি হাতে প্রস্তুত। পাঁচশ টাকার মাছ কিনে তা কাটাতে
বিশ টাকা দাবি করলে বড়লোক
বাবুটির কাছে তা নাকি ‘গলা কাটা’র সমান। এই সমস্ত গরীব খেটে খাওয়া মহিলারা দূর-দূরান্ত থেকে আসেন
উপার্জনের আশায়, সকালে মাছ কাটার কাজ ছাড়াও অন্য কাজ করেন। হয়ত
এদের স্বামীর উপার্জনে কুলায় না কিংবা স্বামী অসুস্থ বা উপার্জনের অন্য কেউ নেই।
কথা প্রসঙ্গে এদের একজনের কাছ থেকে জেনেছিলাম তাঁর মেয়ের উচ্চ শিক্ষার খরচ জোগাতেই
তিনি এই কাজে লেগেছেন। সৎ পেশায় অর্জিত অর্থের মূল্য বোধ হয় একটু বেশিই। লকডাউনের
পরে মাছ কাটার জন্য মূল্য আগের চেয়ে একটু বেশিই চেয়েছিলেন। পরিস্থিতি কল্পনা ক’রে আমি দাম-দর তো করিইনি বরং ইচ্ছে করেই তাঁর অজান্তে একটু
বেশিই দিয়ে এসেছিলাম। দেখে খুব ভালো লাগল, এত কিছুর পরেও এরা আবার
সেই স্বল্প উপার্জনের পুরোনো পেশায় ফিরে এসেছেন – বাঁচার
তাগিদে। খুশি হলাম দেখে যে এভাবেও বেঁচে থাকা যায় !
বৃহস্পতিবার, ২৮ মে, ২০২০
বুধবার, ২৭ মে, ২০২০
গাছেদের অবরোধ
গাছেদের অবরোধঃ অমরনাথ কর্মকার ২৪/০৫/২০২০
রাস্তা আটকে অবরোধ করতে, জনগণ নয়, গাছও জানে,
মুকও আমাদের অনুভূতির বুকে শব্দহীন আঘাত হানে।
রাস্তা আটকে অবরোধ করতে, জনগণ নয়, গাছও জানে,
মুকও আমাদের অনুভূতির বুকে শব্দহীন আঘাত হানে।
রবিবার, ২৪ মে, ২০২০
আম্ফান ঝড় ও একটি বক
আম্ফান ঝড় ও
একটি বক – অমরনাথ কর্মকার ২৪/০৫/২০২০
‘আম্ফান’ ঝড়ের
ভয়াল মূর্তি এবং তার প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির
পরিমাণ শহরে ব’সে যে টুকু উপলব্ধি
করেছি তা থেকেই আন্দাজ করতে পারছি গ্রাম-গঞ্জের মানুষের দুর্দশার কথা। ঝড় থেমে
গেছে কিন্তু তার ক্ষত এখনও শুকায়নি। থাই শব্দ ‘আম্ফান’-এর আক্ষরিক অর্থ স্বাধীন
চিত্ত, শক্তিশালী প্রভৃতি। আম্ফান যে কতটা স্বাধীনচেতা, মারাত্মক শক্তিশালী তা
আমরা ইতিমধ্যেই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। ২০ মে থেকে আজ অবধি বিদ্যুৎ-বিহীন। সেই
সঙ্গে হাতের মুঠোয় থাকা সর্বক্ষণের বৈদ্যুতিন সঙ্গীটি নির্বাক। বিদ্যুৎবিহীনতায় টিভির পর্দা চিত্রহীন
ক্যানভাস। বাইরের যোগাযোগ বন্ধ। অতএব, এক দম বন্ধ করা পরিস্থিতি। করোনার কঠিন
পরিস্থিতির কথা এ ক’দিন ছিল বিস্মৃতপ্রায়। একটু আগে বিদ্যুতের পুনরাবির্ভাব ঘটল।
হাতের মুঠোয় থাকা সর্বক্ষণের বৈদ্যুতিন সঙ্গীটি সম্পূর্ণ সবাক না হলেও মাঝে মাঝে
তার বুলি ফুটছে। অবশ্য টিভির পর্দা সেই চিত্রহীন ক্যানভাসই রয়ে গেছে, কারন
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে আগামীকালের আগে সেখানে ছবি আসবে না।
এই ঝড় একটা
বাংলা প্রবাদের আক্ষরিক সত্যতা প্রমাণ করতে আমাকে সাহায্য করেছে। প্রবাদটি সকলেরই জানা – ঝড়ে বক মরে,
ফকিরের কেরামতি বাড়ে। এই প্রবাদের সত্যতা
আমরা বাস্তবে হামেশাই দেখে থাকি। স্বাভাবিক ঘটনাকে নিজের কৃতিত্ব ব’লে চালিয়ে
দেওয়ার মানুষ সহজলভ্য। বিশেষ ক’রে বর্তমান রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীরা এরকমভাবে বাহবা
পাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। সে যা হোক, এবার আমার অভিজ্ঞতার কথা বলি। তখন বাইরে
ঝড়ের প্রচন্ড তান্ডব চলছে। অমাবস্যার বিদ্যুৎবিহীন রাতে ঘরে জ্বলছে মোমবাতি, তাও
হাওয়ার দাপটে মাঝে মাঝে নিভু নিভু হয়ে পড়ছে। একটি জানলার একটি পাল্লা খোলা রেখেছি
মাত্র, বাকী সব নিরাপত্তার কারনে বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। বাইরে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার
– সঙ্গে বজ্র-বিদ্যুৎহীন ঝঞ্ঝা। হঠাৎ খোলা জানালার বাইরে চোখে পড়ল বেশ বড় একটা
ধবধবে সাদা বস্তু। আমার ছেলে তো ভয়েই অস্থির। কিন্তু সেই ভয়কে আরোও বহুগুণ বাড়িয়ে
দিয়ে মুহূর্তে সেই সাদা বস্তুটি জানলা টপকে ঢুকে পড়ল ঘরে। দেখা গেল সেটা একটা
বিশাল আকারের সাদা বক। তার ঠোঁটের আকার দেখে ভয় পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। ছেলে
ততক্ষণে অন্য ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। স্ত্রী ভয় পেলেও অর্ধাঙ্গীনির ভূমিকা পালন
করতে আমাকে সঙ্গ দিল।বকটি তখন কাকভেজা, থুড়ি কাঁঠালের আমসত্ত্ব হয়ে গেল। বকটির
সর্বাঙ্গ তখন সম্পূর্ণ ভেজা। সামান্যতম উড়তেও অক্ষম। ঘরের ভেতরেই বিশাল ডানা মেলে
এপাশ ওপাশ ছুটতে শুরু করল। আমার অবশ্য এ ব্যাপারে অত ভয়-ডর নেই। বড় একটা ঝুড়ি
জোগাড় করে চাপা দিলাম অনেক কষ্টে। তার আগে মোবাইল ফোনে ঘরে ঢোকা সেই বকের একটা
ভিডিও ধারণ করলাম। বাড়ির অনেকে বলেছিল বকের মাংস নাকি খুব সুস্বাদু।আমি এসবে কান
দিইনি। পরদিন সকালে বকটিকে উঠোনে ছেড়ে দেওয়া হ’ল। দুগ্ধ-ধবল দুটি ডানা প্রসারিত
ক’রে উড়ে গেল তার পুরোনো আশ্রয় খুঁজে নিতে, বিচ্ছিন্ন পরিজনদের সাথে মিলিত হ’তে।
মনে পেলাম এক অদ্ভুত প্রশান্তি। ঝড়ের তান্ডবে নিরাশ্রয় একটা পাখিকে মৃত্যুর হাত
থেকে রক্ষা ক’রে তাকে আবার তার আশ্রয়ে ফিরিয়ে দেবার আমার এই কেরামতিতে আমি গর্বিত।
ফকিরের কেরামতিতে আমার বিশ্বাস নেই, কিন্তু আমার এই কেরামতিও বাংলা এই প্রবাদটিকে
আক্ষরিক অর্থেই সত্য প্রমাণিত করেছে। বকটা উড়িয়ে দেবার সময়কার ভিডিও ধারণ করতে
ভুলে গেছি। অবশ্য তার প্রয়োজনও নেই, কারন এই দৃশ্য মনে আমার ধরাই থাকবে
আজীবন।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
মুখ চাপা সত্য
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?
-
এক লাইনের কাব্যঃ অ.না.ক. ২১/০৩/২০১৭ এক লাইনেও কাব্য হয় দু'লাইনে ছন্দময় ।