মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০

এভাবেও বেঁচে থাকা যায়



এভাবেও বেঁচে থাকা যায়
অমরনাথ কর্মকার ১৬/০৬/২০২০
মানুষের পেশার কত বৈচিত্র্য ! উচ্চ পদস্থ অফিস আধিকারিক থেকে দিন-আনা-দিন-খাওয়া দীনমজুর।  উদেশ্য মূলত সকলেরই এক। বেঁচে থাকা জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে স্বচ্ছন্দে জীবন যাপন। কেউ কেউ স্বছন্দে মসৃণ ভাবে জীবন কাটাতে পারে,  আবার কেউ বা হোঁচট খায় পেশার বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থে বাঁচার মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খায়। তবে সবাই বেঁচে থাকে তার মানে উপার্জিত  অর্থে দিন গুজরান যাঁদের পক্ষে কষ্টকর তারাও কোন না কোন ভাবে বেঁচে থাকার রসদ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়ত তার জন্য তাঁদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারনে সেই মার্চের শেষ থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত লকডাউনে সব বন্ধ ছিল। দুশ্চিন্তায় ছিলাম প্রাত্যহিক শ্রমের বিনিময়ে সামান্য উপার্জনে যাঁদের দিন চলত তাঁদের চলছে কেমন করে ! সরকারী ঘোষণায় জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আবার দোকান বাজার স্বাভাবিক ভাবে খুলতে শুরু করেছে।
সেই সুবাদে গিয়েছিলাম মাছের বাজারে। গিয়ে দেখি আগের মতই আবার লোকারণ্য। মাছ কিনলাম। মাছ বাজারের পেছনে মাছ কাটাতে গিয়ে দেখি মাছ কাটার মহিলাদের সংখ্যা বেড়েছে। আগে মাছ কিনে সোজা বাড়ি নিয়ে যেতাম। আমার মা নিমেষে সেই মাছ, তা ট্যাংরা বা কই-এর মত মারাত্মক কাঁটা যুক্ত মাছ  হোক বা অন্য মাছ, কেটে ফেলতেন। বৃদ্ধা মায়ের ভূমিকা আমার স্ত্রীও নিয়েছিলেন কিছুদিন কিন্তু তারপর সময়াভাবে এবং তার চেয়েও বড় কথা, হাল ফ্যাশানের প্রভাবে সে পাঠ চুকে গেছে। তাই মাছ কিনে কাটিয়ে আনাটাও নিয়মের আওতাভুক্ত হয়ে গেছে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্যয় বৃদ্ধি। যা হোক দেখলাম ওরা আবার স্বমহিমায় বঁটি  হাতে প্রস্তুত। পাঁচশ টাকার মাছ কিনে তা কাটাতে বিশ টাকা দাবি করলে বড়লোক
বাবুটির কাছে তা নাকি গলা কাটার সমান। এই সমস্ত গরীব খেটে খাওয়া মহিলারা দূর-দূরান্ত থেকে আসেন উপার্জনের আশায়, সকালে মাছ কাটার কাজ ছাড়াও অন্য কাজ করেন। হয়ত এদের স্বামীর উপার্জনে কুলায় না কিংবা স্বামী অসুস্থ বা উপার্জনের অন্য কেউ নেই। কথা প্রসঙ্গে এদের একজনের কাছ থেকে জেনেছিলাম তাঁর মেয়ের উচ্চ শিক্ষার খরচ জোগাতেই তিনি এই কাজে লেগেছেন। সৎ পেশায় অর্জিত অর্থের মূল্য বোধ হয় একটু বেশিই। লকডাউনের পরে মাছ কাটার জন্য মূল্য আগের চেয়ে একটু বেশিই চেয়েছিলেন। পরিস্থিতি কল্পনা করে আমি দাম-দর তো করিইনি বরং ইচ্ছে করেই তাঁর অজান্তে একটু বেশিই দিয়ে এসেছিলাম। দেখে খুব ভালো লাগল, এত কিছুর পরেও এরা আবার সেই স্বল্প উপার্জনের পুরোনো পেশায় ফিরে এসেছেনবাঁচার তাগিদে। খুশি হলাম দেখে যে এভাবেও বেঁচে থাকা যায় !  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?