শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০১৫
শুক্রবার, ১২ জুন, ২০১৫
বুধবার, ২৭ মে, ২০১৫
বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৫
অকৃতদার
অকৃতদারঃ অ.না.ক. ১৪/০৪/২০১৫
স্কুল
ছাড়ার পর অনেকগুলো বছর, বরং বৃহত্তর এককে বললে, বেশ কয়েক দশক কেটে গেছে । স্কুলের
বন্ধুদের মধ্যে আজ কেউ ডাক্তার, কেউ মাস্টার, কেউ উকিল, কেউ করণিক,
আবার কেউ বা বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে গিয়ে নিদ্রাভঙ্গ হয়ে অন্ধকার ছাপাখানার কর্মচারী
। এই দীর্ঘ সময়ে অনেকের সাথে আজও বন্ধুত্ব অটুট, আবার কারো কারো সঙ্গে কালে-ভদ্রে
দেখা হয়। অনেক সময় স্মৃতির অ্যালবাম ঘেঁটে অনেককে চিনে নিয়ে বন্ধুত্ব পুনঃস্থাপন
করেছি । আবার অনেকেই আছে যাদের সেই সময়ের মুখগুলো স্মৃতিতে স্পষ্ট, স্কুল ছাড়ার পর
আজও পর্যন্ত তাদের সঙ্গে দেখা হয়নি । ফেস বুকে তাদের নাম অনুসন্ধান করে অনেককে
পেয়েও গেছি, সামান্য কয়েকজন আছে যাদের সন্ধান আজও পাইনি । আগে কোন বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে দেখা হলে তাদের
বাড়ি যেতাম, কিংবা সে বা তারা আমাদের বাড়ি আসত, হৈ-হুল্লোড় হত । বাইরেও বেড়াতে চলে
যেতাম । এখন সে সুযোগ কম । এখন আর তেমন বান্ধু-বান্ধবের
বাড়ি যাওয়া হয় না । কারন প্রথমত, কাজের চাপে অবকাশের অভাব আর দ্বিতীয়ত, এখন আমি
কিংবা বন্ধু-বান্ধব সকলেই বিবাহিত এবং প্রত্যেকেরই ছেলে-মেয়ে আছে, সংসার আছে । তাই
এখন সম্পর্ক মানে পারিবারিক, ইচ্ছে করলেই যখন তখন দড়ী ছেঁড়া বলদের মত ছুটে পালানো
যায় না । এখন হাড়ে হাড়ে বুঝি – মানুষ দু’রকমের, জীবিত এবং বিবাহিত ।
হারিয়ে
যাওয়া স্কুলের বন্ধুদের কথা বলতে বলতে সংসারে ঢুকে পড়েছিলাম । যা হোক, সেদিন হাওড়া
থেকে ফিরছি । ভিড়ে ঠাসা মিনিবাসে একটা সিটে বসে আছি । হঠাৎ একজনকে কেমন যেন চেনা
চেনা মনে হ’ল । মনে হ’ল স্কুলের সেই চিন্ময় । চিন্ময়ের সঙ্গে লোকটার মুখের অদ্ভুত
মিল । চিন্ময়ের সঙ্গে কোনদিন দেখা না হলেও মাঝে মাঝেই আমি চিন্ময়ের সেই ঘটনাটা
স্ত্রী আর ছেলেকে শোনাই আর ওরা হেসে গড়িয়ে পরে । ক্লাস ইলেভেনে পড়ি তখন । আমাদের
বাংলা শিক্ষক লক্ষ্মী বাবুর অবসর গ্রহণের দিন আসন্ন । বাংলার ম্যাডাম নমিতা
ফাদিকার সকলকে লক্ষ্মী বাবুর জন্য বিদায় সম্বর্ধনা লিখে আনতে বললেন । যার লেখা
সবচেয়ে ভাল হবে সেটাই বিদায় অনুষ্ঠানে পাঠ করা হবে । ম্যাডাম ভীষণ কড়া – অতএব
সকলকেই লিখে আনতে হবে । বাড়ি ফিরে চলতে লাগল ‘বিদায় সম্বর্ধনা’র অনুসন্ধান – কঠিন
কঠিন দাঁত ভাঙা শব্দ ব্যবহারের প্রচেষ্টা । চিন্ময়ও এ বই সে বই ঘেঁটে লেখার চেষ্টা
করেছে । বাংলা বিষয়ে চিন্ময়ের ভীষণ ভীতি । ওর বাংলা ভাষা-জ্ঞান নিয়ে ম্যাডামের
ক্লাসে ওকে প্রায়ই ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ শুনতে হয় । তাই ইচ্ছে না থাকলেও চিন্ময়কে বিদায় সম্বর্ধনা
লিখতে হ’ল এবং জমাও দিল ঠিক সময়ে । তবে জমা দেওয়ার পরে ও বেশ গর্বের সঙ্গেই বলেছিল,
দারুন লিখেছি, দাদু স্কুলের হেড মাস্টার ছিল । দাদুকে বলার সঙ্গে সঙ্গে দাদু এমন
সুন্দর লিখে দিল না ! দেখে নিস ম্যাডামও অত সুন্দর লিখতে পারবেন না । ম্যাডাম
খাতাগুলো সংগ্রহ করে বাড়ি নিয়ে গেলেন । বলে গেলেন পরদিন সবার লেখা ক্লাসে পড়ে
শোনাবেন এবং তখনই ঠিক হবে কার লেখা বিদায় অনুষ্ঠানের দিনে মঞ্চে পড়া হবে । যথারীতি
পরদিন বাংলা ক্লাসের অপেক্ষায় উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করছি । ম্যাডাম ক্লাসে এসে একে
একে সবার লেখা পড়ে শোনাতে লাগলেন । ক্লাসের ফার্স্ট বয়ের লেখা পড়ার পর ম্যাডাম
সন্তুষ্ট হতে পারলেন না । তখনও অনেকের লেখা পড়া বাকি । ফার্স্ট বয়ের লেখা পছন্দ না
হওয়ায় সবাই এবার চিন্ময়ের লেখা শোনার অপেক্ষায় রইল । কারন সবাই জানে চিন্ময়ের
প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক দাদু ওটা লিখে দিয়েছে । কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হ’ল চিন্ময় সেদিন
ক্লাসে অনুপস্থিত । অবশেষে চিন্ময়ের খাতা । ম্যাডামের মুখে হাসি । সবাই ধরেই নিল
চিন্ময় ফাটাফাটি লিখেছে । ম্যাডামের হাসির আসল কারন এবার স্পষ্ট হ’ল । চিন্ময়
লিখেছে, লক্ষ্মী বাবু আজীবন অকৃতদার ছিলেন । ক্লাসে হাসির ফোয়ারা । লক্ষ্মী বাবুর
ছ ছ’টি ছেলে, তাদের মধ্যে একজন আবার এই স্কুলেরই করণিক । অকৃতদার শব্দটি চিন্ময়ের
খুব পছন্দ হয়েছিল, তাই দাদুর কাছে শব্দটির অর্থ যাচাই না করেই নির্দ্বিধায় লিখে ফেলেছিল
শব্দটা । অবশ্য পরিণাম তাকে ভোগ করতে হয়নি ক্লাসে অনুপস্থিত থাকার কারনে । পরে
জেনেছিলাম লেখা জমা দেওয়ার পরে চিন্ময় অকৃতদার শব্দটির অর্থ উদ্ধার করেছিল এবং
পরদিন ক্লাসে হাজির না থাকার কারন মূলত সেটিই ।
একসময় ঠিক
করলাম একবার ভদ্রলোককে ডেকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করব । সেই মত আসন ছেড়ে আস্তে আস্তে
এগিয়ে এলাম ভদ্রলোকের কাছে । দেখলাম ভদ্রলোক শিয়ালদার টিকিট কাটলেন । মত পালটে ঠিক
করলাম, আমার গন্তব্যও যখন শিয়ালদা, তখন শিয়ালদা নেমেই না হয় জিজ্ঞাসা করবো পরিচয় ।
শিয়ালদা নেমে ভদ্রলোকের কাছে যেতেই, একবার আমার মুখের দিকে তাকালেন ভদ্রলোক ।
তারপর আচমকা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “কিরে তুই অশোক না ?” ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে
থতমত খেয়ে গেলেও পরক্ষণেই সামলে নিয়ে চিন্ময়কে নিয়ে চললাম চা খেতে । চিন্ময়ের এক
মুখ দাড়ি । অনেক কথা হ’ল । প্রায় তিন দশকের ব্যবধানে দেখা । সুতরাং জিজ্ঞাস্য
অজস্র । কিন্তু সময় কম । কোথায় থাকিস, কি করিস ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে শেষ করে,
ঠিকানা, মোবাইল নম্বর বিনিময় করে বিদায় নেবার আগে বললাম বৌ-ছেলেমেয়েকে নিয়ে কবে
আসছিস আমাদের বাড়ি ? আসার আগে একটা ফোন করিস । চিন্ময় বলল, “অবশ্যই যাব, তবে একা”।
“কেন, একা কেন? পরিবার নিয়ে আয়, দারুন আনন্দ হবে”, আমি বললাম ।
চিন্ময়
এবার গম্ভীর গলায় বলল, “মানে বুঝেই বলছি, আমি অকৃতদার” ।
বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৫
এইচ এইচ মুনরো রচিত ‘দি ওপেন উইন্ডো’ অবলম্বনে গল্প
সাকি (এইচ এইচ মুনরো) রচিত ‘দি
ওপেন উইন্ডো’ অবলম্বনে গল্পঃ অ না ক ০৮/০৪/২০১৫
বছর পনেরর
মেয়েটি বলল,“মিঃ নাটেল, পিসিমা এক্ষুনি নিচে নামবেন, এই ফাঁকে আসুন আমরা একটু
গল্পসল্প করতে থাকি”।
ফ্রামটন
নাটেল একটু অপ্রস্তুত বোধ করল । সে এখানকার কাউকেই চেনে না । না চেনারই কথা,
এক্কেবারে গ্রাম্য পরিবেশ । যে ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে এমনকি তাকেও সে
চেনে না । একমাত্র বোনের লেখা সেই চিঠিটাই তার ভরসা । বোন বলেছিল, সে এখানকার যাকে
যাকে চেনে প্রত্যেককে সে চিঠি লিখে দিচ্ছে । বোন আরও বলেছিল, “প্রত্যেকের সঙ্গে
দেখা করবি আর মিশবি, না হ’লে তোর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে”।
তা যাই
হোক, কিছুক্ষণ চুপ ক’রে থাকার পর মেয়েটি বলল, “এখানকার কাউকে চেনেন-টেনেন?”
“না, না” ফ্রামটন
বলল, “বছর চারেক আগে আমার বোন এখানে এসেছিল একবার । তখন ওর সঙ্গে যাদের যাদের দেখা
হয়েছিল তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্যেই সে চিঠি লিখে দিয়েছে দেখা করার জন্যে । তাদের
মধ্যে তোমার পিসিমার নামে চিঠিও আছে । তাই আমি ...”
“তার মানে
আপনি পিসিমা সম্বন্ধে কিছুই জানেন না ?”, মেয়েটি প্রশ্ন করল ।
“একেবারে
জানিনা যে তা নয়, নাম ঠিকানাটা জানি”।
“সেই
দুঃখজনক ঘটনাটা মানে সেই বিয়োগান্তক ঘটনাটাতো ঘটেছিল তিন বছর আগে”, ঝাঁঝিয়ে উঠে
মেয়েটি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ।
“ট্রাজেডি!”,
বিস্মিত হ’ল ফ্রামটন । এমন একটা ভরপুর শান্তির পরিবেশে দুর্ঘটনা আবার কি ঘটতে পারে
!
একটা খোলা
জানালা, যেটা দিয়ে সোজা লনে চলে যাওয়া যায়, দেখিয়ে মেয়েটি বলল, “আপনি হয়ত জানলাটা
খোলা দেখে অবাক হচ্ছেন – অক্টোবরের বিকেলে জানলা খোলা থাকাটা একটু আশ্চর্যের বৈকি”।
“এ বছর
অবশ্য এই সময়টা একটু গরমই আছে”, ফ্রামটন জানাল । “কিন্ত এই জানলার সঙ্গে সেই
দুঃখজনক ঘটনার কি কোন সম্পর্ক-টম্পর্ক আছে নাকি ?”
একটু ধরা
গলায় মেয়েটি বলতে শুরু করল, “তিন বছর আগে এই জানলা দিয়েই আমার পিসেমশাই আর দুই
কাকা শিকার করতে বেরিয়েছিল । কিন্তু জলা
পেরোতে গিয়ে তারা সকলেই কাদায় ডুবে যায় । তাদের কাউকেই আর খুঁজে পাওয়া যায়নি” ।
মেয়েটি বলল, “সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার কি জানেন, পিসিমা আজও বিশ্বাস করেন যে তারা
নিশ্চয় ফিরে আসবে, যে কোন দিন ফিরে আসবে । এমনকি ওদের সঙ্গী যে বাদামী রঙের
স্পেনিয়াল কুকুরটি কাদায় ডুবে গিয়েছিল, সেটাও নির্ঘাত ফিরে আসবে একদিন । শুধু তাই নয়, পিসিমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই জানলা
দিয়েই তারা ফিরে আসবে । তাই অন্ধকার না হওয়া পর্যন্ত পিসিমা প্রতিদিন জানলাটা খুলে
রাখেন । পিসিমা এখনও আমাকে শোনান ওরা কিভাবে রওয়ানা দিয়েছিল, কিভাবে ঝোলানো ছিল
পিসেমশাইয়ের হাতের সাদা ওয়াটারপ্রুফটা, পিসিমার ছোট ভাই, মানে আমার কাকা, কিভাবে হেঁড়ে গলায়
গান গাইছিল সব । জানেন, আমি পিসিমার এই গল্পগুলো শুনি আর আতঙ্কে কেঁপে উঠি, সত্যিই
যদি কোনদিন দেখি ওরা জানলা দিয়ে ফিরে আসছে !” কথাগুলো বলতে বলতে মেয়েটি কেমন যেন
শিউরে উঠল । ফ্রামটন ঘাবরে গিয়ে মেয়েটিকে কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় ঘরে প্রবেশ
করলেন সেই ভদ্রমহিলা ।
“ভেরা
নিশ্চয়ই এতক্ষণ মজা করছিল?”, ভদ্রমহিলা বললেন ।
“ও চমৎকার
মেয়ে”, ফ্রামটন বলল ।
“ওরা
এক্ষুনি ফিরবে এবং এখান দিয়েই । তারপর কার্পেটটা কাদায় মাখামাখি করবে । বোঝেনই তো
ছেলেদের যা স্বভাব !” কথাগুলো বলার পরে আবার অনর্গল বর্ণনা শুরু করলেন শীতকালে
শিকারে গেলে কি ধরণের হাঁস পাওয়া যায় ইত্যাদি ইত্যাদি । ফ্রামটন প্রসঙ্গান্তরে
যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগল, কিন্তু সে দেখল অন্য কোন দিকে ভদ্রমহিলার লক্ষ্য নেই,
তিনি ক্ষণে ক্ষণে খোলা জানলাটার দিকে তাকাচ্ছেন ।
“আসলে
ডাক্তারের নির্দেশমতো আমার সম্পূর্ণ বিশ্রামের প্রয়োজন আর সেই সঙ্গে যে কোন ধরণের মানসিক
উত্তেজনা থেকে দূরে থাকা দরকার” ভদ্রমহিলার কথার প্রবাহ একটু স্থিমিত হলে ফ্রামটন
ভদ্রমহিলাকে কথাগুলো শোনাতে পারল । ফ্রামটন কিছুতেই বুঝে উঠতে পারল না একজন
সম্পূর্ণ অপরিচিত ভদ্রমহিলাকে সে কি করে বোঝাবে যে যাদের কোনদিনই ফিরে আসার
সম্ভাবনা নেই তাদের যাত্রার খুঁটিনাটি বিবরণ কতটা অপ্রাসঙ্গিক ।
ফ্রামটনের
কথাটা শুনতে পেয়ে মিসেস স্যাপলটন হাল্কাভাবে বললেন, “তাই নাকি?” হাঁই তোলা আটকাতে
যেমন আওয়াজ হয়, মিসেস স্যাপলটনের কথাটা অনেকটা সে রকমই শোনাল । তারপরই আকস্মিকভাবে
তাঁর চোখে মুখে ফুটে উঠল উজ্জ্বলতা । অবশ্য তা ফ্রামটনের বক্তব্যের কারনে নয় ।
মিসেস
স্যাপলটন চিৎকার করে উঠলেন, “যাক বাবা, শেষ পর্যন্ত তাহলে ওরা ফিরল, একেবারে ঠিক
সময়ে । যাই, ওদের জন্য চা ক’রে আনি”।
ঘটনার
আকস্মিকতায় ফ্রামটন মুহূর্তে আতঙ্কিত হলেও সহানুভূতির দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকাল
। আতঙ্কে ভরা দুচোখ মেলে মেয়েটি তাকিয়ে আছে সেই জানলাটার দিকেই । ফ্রামটনও এবার
দৃষ্টি ফেরাল সেই দিকেই ।
ফ্রামটন
দেখতে পেল বিকেলের পড়ন্ত আলোর আবছায়ায় তিনটি ছায়ামূর্তি যেন এদিকেই এগিয়ে আসছে ।
তাদের পায়ের কাছে চলমান ছোট্ট একটা স্পেনিয়াল । আবছায়ায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সবার হাতে বন্দুক,
তাদের মধ্যে একজনের কাঁধে একটা সাদা কোট । ওদের মধ্যে কে যেন হেঁড়ে গলায় আবার গানও
ধরল ।
এবার
ফ্রামটন তার ছড়িটা উঁচিয়ে ধরল । মুহূর্তে শোনা গেল বাইরে নুরি পাথর থেকে ভেসে আসা
তার পালিয়ে যাওয়ার শব্দ ।
“আমরা
ফিরে এসেছি”, জানলা দিয়ে ঘরে ঢুকে জানিয়ে দিল সেই ভদ্রলোক যার কাঁধে শোভা পাচ্ছিল সেই
কোটটা । কিন্তু আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, “আমরা ঢোকার আগেই কেউ একজন পালিয়ে গেল
বোধ হয় ! সে কে ?”
মিসেস
স্যাপলটন জবাব দিলেন, “মিঃ নাটেল নামের একজন । অদ্ভুত ধরণের মানুষ, কেবল নিজের
শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে কথা বলছিল । তোমরা আসছ দেখে ভূত দেখার মত পালিয়ে গেল, একবার
বলে যাবার মত সৌজন্য পর্যন্ত দেখাল না”।
“বোধ হয়
কুকুরটাকে দেখে ভয় পেয়েছে”, মেয়েটা মন্তব্য করল । “লোকটা বলেছিল কুকুরে তার ভীষণ
ভয় । একবার নাকি একপাল কুকুর ওকে তাড়া করে নদীর ধারের এক গোরস্থানে নিয়ে তুলেছিল
। সেখানে নতুন খোঁড়া এক কবরের ভিতরে ঢুকে
তাকে নাকি সারারাত কাটাতে হয়েছিল কারন কুকুরেরা তাকে চারদিক দিয়ে রাতভর ঘিরে রেখেছিল
। এমন ঘটনার সম্মুখীন হওয়া একজন মানুষের পক্ষে কুকুর দেখে ভয় পাওয়া অত্যন্ত
স্বাভাবিক”।
চটজলদি
গল্প ফাঁদা মেয়েটির একটা মস্ত গুণ ।
শনিবার, ২১ মার্চ, ২০১৫
অবসরের রুপান্তর
অবসরের রুপান্তরঃ অ.না`ক. ২১/০৩/২০১৫
অসিতবাবু একজন দক্ষ এবং কর্তব্যপরায়ণ ব্যাঙ্ক কর্মচারী ।
তাঁর স্বভাব যেমন নম্র তেমনি ভদ্র । সহকর্মীদের সঙ্গে স্বভাবতই তাঁর সম্পর্ক
অত্যন্ত নিবিড় । তাছাড়াও অসিতবাবুর আর একটি সুপ্ত প্রতিভা আছে । তিনি একজন প্রতিভাবান
লেখক এবং কবি । কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততায় নিয়মিত না হলেও মাঝে মাঝেই তিনি লেখেন এবং
তাঁর লেখা বেশ প্রশংসিত । অসিতবাবুর মত এমন একজন সহকর্মী আর মাত্র কয়েক দিন বাদেই
কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নেবেন এ খবর পাওয়া মাত্রই অফিসে প্রায় সকলের মনেই বিষণ্ণতা
নেমে এসেছে । এমনকি স্বয়ং ম্যানেজারবাবু একজন আন্তরিক, অতীব ভদ্র ও সুদক্ষ
সহকর্মীকে হারানোর দুশ্চিন্তায় বেশ হতাশাগ্রস্থ । অবশেষে অসিতবাবুর অবসর গ্রহণের
দিন উপস্থিত হল । ব্যাঙ্কের সভাকক্ষে আয়োজন করা হয়েছে বিদায় সম্বর্ধনা । সকলের মুখ
থমথমে । কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হ’ল অসিতবাবুর মুখে বিষণ্ণতার চিহ্নমাত্র নেই ।
বরং তাঁর মুখে স্পষ্ট দৃশ্যমান প্রশান্তির হাসি । বক্তৃতা শুরু হ’ল । চলল
অসিতবাবুকে নিয়ে নানান স্মৃতিচারণা । বক্তার চোখে জল । উপবিষ্ট সহকর্মীদের ঘন ঘন
রুমালে চোখ মোছা । ব্যতিক্রম একমাত্র অসিতবাবু – যাকে নিয়ে এত কান্ড । তখনও তাঁর
মুখে স্মিত হাসির স্পষ্ট রেখা । এবার অসিতবাবুর বলার পালা । বক্তব্যে তিনি
পরিস্কার করে দিলেন তাঁর হতাশ না হবার গুঢ়
কারণ। আসলে অবসরের পরে তিনি পুরোদমে শুরু করতে চান তাঁর লেখার কাজ – এতদিন যা তিনি
করতে পারেননি । তিনি বুঝিয়ে দিলেন ষাটোর্ধ বয়স মানে কর্মধারার গতি পরিবর্তন ।
মূলতঃ অবসর বলে কিছু হয় না । যে কেউ ষাটের পরে তার অপূর্ণ শখকে পরিপূর্ণতা দিতে
ব্যস্ত সময় কাটাতে পারেন । প্রথাগত অবসর নিয়ে অকারণ বিষণ্ণতার কোন মূল্য দিতে তিনি
নারাজ । একারনেই মনে তার নিরন্তর প্রফুল্লতা । করতালিতে সভাকক্ষ ভরে উঠল । সবার
চোখে জল – তবে এবার তার কারণ বিষণ্ণতা নয় – আনন্দধারা ।
বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ, ২০১৫
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
মুখ চাপা সত্য
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?
-
এক লাইনের কাব্যঃ অ.না.ক. ২১/০৩/২০১৭ এক লাইনেও কাব্য হয় দু'লাইনে ছন্দময় ।