শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩
সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩
বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩
রাজনীতিতে সাহিত্য
রাজনীতিতে সাহিত্য
অমরনাথ কর্মকার
২৫ বৈশাখ চ'লে গেল । ছুটি ব'লে বাড়িতেই ছিলাম সারাদিন। পাড়ার রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান তীব্র দাবদাহের কারনে দিন পরিবর্তন করেছে। অতএব, টিভি ভরসা। কিন্তু সেখানে রবীন্দ্রনাথকে পাওয়া গেল অন্যভাবে। সারাটাদিন চলল রাজনীতিতে রবীন্দ্রায়নের খবর। আবার শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট ও ম্যাকবেথ চরিত্র নিয়েও চলল দড়ি টানাটানি। অগত্যা বিস্মৃতপ্রায় কলকাতা দূরদর্শণ ভরসা দিল। সেখান থেকেই দেখা গেল জোড়াসাঁকো, শান্তিনিকেতনের অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের চ্যানেল খুলে লাইভ শিলাইদহ উপভোগ করলাম। ছোটবেলার ২৫ বৈশাখে রবীন্দ্রস্মরণের নস্টালজিয়ায় ডুব দিয়ে কিছুটা শীতল হলাম বটে, কিন্তু একটা দুশ্চিন্তা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। যেভাবে সবকিছু ছাপিয়ে রাজনীতির তরজা সর্বত্রগ্রামি হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে বাঙালীর একমাত্র সংস্কৃতি কি শুধুমাত্র রাজনীতি হ'তে চলেছে? আজ সারাদিন রবীন্দ্রজয়ন্তীকে উদ্দেশ্য ক'রে যেভাবে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে রাজনৈতিক লোফালুফি শুরু হ'ল তাতে কাদের রাজনৈতিক সুবিধা হ'ল তার চেয়েও বড় প্রশ্ন রবীন্দ্রনাথ বিদ্যাসাগর এঁরা কি রাজনীতির শীকার হচ্ছেন! না কি রাজনীতিতে সাহিত্যিক কিংবা সাহিত্য নতুন পথের দিশারি ? আবার অনেক সাহিত্যিক, কবি, নাট্যকার, শিল্পীকে ইদানিং প্রত্যক্ষরাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে দেখা যাচ্ছে।
অ্যারিস্টটল বলেছিলেন 'যে কোন মানুষ চারিত্রিকভাবে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রানী'। ব্রেটল্ট ব্রেখট বলেছিলেন 'অশিক্ষিতদের মধ্যে নিকৃষ্ট হচ্ছে সে, যে রাজনৈতিকভাবে অশিক্ষিত। কারন সে বলে না, শোনে না, রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে না। জীবনের মূল্য সে জানে না... '। রাজনীতি যেহেতু জীবনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে এবং জীবন নিয়েই সাহিত্যিকদের কারবার, অতএব, অবধারিতভাবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তি সাহিত্যিকদের স্বাভাবিক প্রবণতা। প্লেটো, অ্যারিস্টটল থেকে শুরু ক'রে অ্যাঞ্জেলী-মার্গারিট অ্যাটউড-এর মত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত পৃথিবীর বহু বিখ্যাত সাহিত্যিক রয়েছেন।
মনে হতেই পারে, রাজনীতি আর সাহিত্যকে একপাত্রে রাখা ঠিক নয়। কারন সাহিত্য নান্দনিক, কিন্তু রাজনীতি নানান কৌশল আর জটিলতায় পূর্ণ। এই যুক্তি মেনে নিলে রাজনীতি আর সাহিত্যকে পৃথক করা গেলেও এই দুটিকে পরস্পর সম্পর্কহীন ক'রে তোলা অসম্ভব। কারন এই দুটি বিষয়ই নিবিড়ভাবে জীবনের সাথে সম্পর্কিত। একদা রাজসভায় কবি-সাহিত্যিক নিযুক্ত থাকতেন যাঁদের কীর্তি মোটেই কম নয়, বরং বলা যায় সাহিত্যে বহুকালই রাজার পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনীয়তা ছিল, পুঁজির যোগ না থাকলে সাহিত্যের অবকাশ ঘটে না, বাক্যস্ফূর্তি অবিরাম হয় না—এটি মধ্যযুগে যেমন সত্য ছিল, আজও সমান সত্য হয়ে আছে।রাজনীতি প্রভাবিত করে জীবনকে এবং ব্যক্তিজীবনেও সেই প্রভাব আলোড়ন সৃষ্টি করে। রাজনীতি ব্যক্তিজীবনকে কখনো সমৃদ্ধ করে, আবার সঙ্কটাপন্নও করে কখনো।
একদা রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন, জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ‘নাইট’ ত্যাগ করেছিলেন। নজরুল 'ধুমকেতু' দিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। এছাড়াও সেই হিসাবে এই সাহিত্যিকদের উদ্দেশ্য মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর মত - মানুষের উন্নয়ন। সেই হিসাবে রাজনীতি আর সাহিত্যিক মিলেমিশে একাকার।
বস্তুগত কল্যাণ বা উন্নয়ন রাজনীতির মূল লক্ষ্য। অপরদিকে মানুষের মনোজগতের কল্যাণ বা উন্নয়ন সাহিত্যের মূল লক্ষ্য। এই দিক বিবেচনায় সাহিত্য ও রাজনীতির ক্ষেত্র ভিন্ন। মানুষের জীবনে জাগতিক ও মনোজাগতিক উভয় ক্ষেত্রেই উৎকর্ষ সাধন প্রয়োজন। কুরাজনীতি যখন সাধারণ মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তখন সাহিত্য আপামর সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করার শিক্ষা দেয়। অবশ্য সাহিত্য এ ব্যাপারে সব সময় যে সফল হয় তাও নয়। তখন সাহিত্যের ওপর আস্থা হারায় মানুষ। মানুষের প্রতি সাহিত্যের দায় অনেক। বর্তমান সাহিত্যের একটি বড় অংশ সেই দায় মাথায় নেওয়ার কথা ভাবে না, অন্তত রাজনীতির খবরে ঢাকা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তা সহজে প্রতিফলিত হয় না। ফলে নান্দনিকতার চর্চা কখনো কখনো গৌণ হতে দেখা যাচ্ছে। তাই সাহিত্যে এখন গ্রামের সৌন্দর্যের বদলে গ্রামের মানুষের দৈন্যের চিত্র ফুটে ওঠে। প্রকৃতির অনাবিল রূপের বদলে পরিবেশ দূষণের চিত্র ফুটে ওঠে। ফুল-পাখি-প্রজাপতির বদলে জীব জগতের ইকোসিস্টেম রক্ষার আকুতি ফুটে ওঠে। এভাবেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবতার ভিত্তিতে বদলে যায় সাহিত্য এবং সেই সাহিত্য দর্পণের মত চলমান রাজনীতি ও রাজনীতির অবক্ষয়কে প্রতিফলিত করে । তাই মানবকল্যাণের স্বার্থেই চলমান রাজনীতির সাথে সাহিত্যের ইতিবাচক সম্পর্ক জরুরি। আজকাল রাজনৈতিক নেতাদের মুখে অহরহ কবি-সাহিত্যিকদের নাম বা তাঁদের সৃষ্ট চরিত্রের নাম কিংবা তাঁদের লেখনির উদ্ধৃতি যে ভাবে উঠে আসছে তাতেই প্রমাণিত হচ্ছে রাজনীতির সঙ্গে সাহিত্যের বাঁধন কতটা শক্ত। এর ইতিবাচক প্রভাব সমাজ বা ব্যক্তিগত জীবনে কতটা সুফল দেয় এখন সেটাই দেখার।
শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৩
শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৩
শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩
মুখ চাপা সত্য
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?
-
এক লাইনের কাব্যঃ অ.না.ক. ২১/০৩/২০১৭ এক লাইনেও কাব্য হয় দু'লাইনে ছন্দময় ।