মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর, ২০২১

সপ্তমীতে মনখারাপ ১২/১০/২০২১

সপ্তমীতে মনখারাপ ; অমরনাথ কর্মকার ১২/১০/২০২১ - পূজোয় মন খারাপ না বলে আজ একটু ঘুরিয়ে বলি বরং – মন খারাপের পুজো । সপ্তমীতে উৎসবের মেজাজ সপ্তমেই ছিল । গতকাল অর্থাৎ ষষ্ঠীতেও আকাশের মুখ ছিল গোমড়া। আজ সপ্তমীতে সেই গোমরা মুখে হাসির ঝিলিক দেখে পুজোর আনন্দ মাটি হওয়ার শঙ্কা কাটিয়ে উৎসবমুখরতা প্রকট হতে শুরু করেছিল । তাই জীবনের উৎসব থেকে উৎসবের জীবন একটু অন্য মাত্রা পাক এই আশায় প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে যখন জনস্রোত, আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত চারদিক – তারই মধ্যে ঘোষিত হয়েছে আবহাওয়া দপ্তরের অশনি সংকেত – অষ্টমী থেকে দশমী দক্ষিণবঙ্গে হবে বৃষ্টিপাত । সুতরাং এবার শুধু আমার নয় – সমস্ত বাঙ্গালীর মন খারাপ । সন্ধ্যেয় বেরিয়েছিলাম রাস্তায়। কয়েকটা পুজো প্যান্ডেলে লক্ষ্য করলাম অন্যবারের মত এবার আড়ম্বরের আতিশয্য নেই। করোনার অতিমারির প্রভাবে অর্থনৈতিকভাবে বিপন্ন মানুষের কথা ভেবে পুজো কমিটিগুলোর এই সিদ্ধান্তকে মনে মনে সাধুবাদ জানাতে গিয়ে বিষন্ন মন কিছুটা প্রসন্ন হ’ল। আরোও খুশি হব যদি পুজো কমিটিগুলো কিছুটা অর্থ করোনায় বা সাম্প্রতিক বন্যার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের উপকারে কাজে লাগায়। আমার মন খারাপ কিন্তু অন্যদের দিকে তাকিয়ে তাঁদের মানসিক অবস্থা আন্দাজ করার চেষ্টা করতে তো আর অসুবিধা নেই ! কম বয়সী, বিশেষ ক’রে স্কুল পড়ুয়াদের মুখে পুজোর স্বাভাবিক আনন্দ যেন সেভাবে প্রকাশ পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজহীন নিঃসঙ্গ ভার্চুয়াল জীবনযাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ায় উৎসবের আনন্দ উদযাপনেও কেমন যেন যান্ত্রিকতার প্রভাব। আসলে ওদেরও মন খারাপ আমার মতই, পার্থক্য একটাই – ওদের মন খারাপের নির্দিষ্ট কারন আছে, আমার ক্ষেত্রে কারন অজানা । মনোবিজ্ঞানে বিষণ্ণতা বা মনখারাপ মূলত মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি। আবার অনেকে বলেন এটা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি – পরিবেশ একে প্রভাবিত করে। যেমন বিকেলে মেঘ করলে কারো কারো মন খারাপ হয়। আজ একটা বিষয় পড়ে অবাক হ’লাম। মন খারাপ বা বিষন্নতারও নাকি উপকারিতা আছে। সাধারণভাবে আমরা দেখি, যখন আমরা মন খারাপ করে বসে থাকি তখন ফেলে আসা কোন দিনের বা বিশেষ কোন সময়ের কথা স্পষ্টভাবে মনে ভাসে। পুরোটাই জীবন্ত লাগে, সময়গুলো আবার ফিরে পাওয়ার ইচ্ছাও হয়। কিন্তু মন ভাল থাকলে স্মৃতি আমাদের খুব কমই মনে পড়ে! ফুরফুরে মেজাজে থাকা অবশ্যই আমাদেরকে চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনায় মনোযোগী করে এবং বিষণ্ণতা সেগুলোকে স্মৃতিতে ভালোভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে! এবং ভালোভাবে লক্ষ্য ক’রে দেখেছি পুজোর এই মন খারাপের সময় আমার ফেলে আসা অতীতের আবছায়া স্মৃতিগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে। স্পষ্ট ভেসে ওঠে খুব ছোটবেলায় হারানো আমার অন্ধ ঠাকুমার মুখ, পুজোর সময় ঠাকুমার আঁচল থেকে পয়সা চুরি আরোও কত কি। তাহলে পুজোতে আমার এই অকারন বিষন্নতা পরোক্ষে আমার উপকারেই লাগছে। অবশ্য এই উপকারিতার কথা জানার পরেও মন কিন্তু এতটুকুও প্রসন্ন হয়নি। কাল অষ্টমী, অর্থাৎ দুর্গাপুজোর পরিসমাপ্তি ক্রমশ কাছে আসছে আর তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ক্রমশ কমছে মন খারাপের তীব্রতা। কাল অষ্টমীতে আবার শব্দ ছড়ানোর ইচ্ছে নিয়ে আপাতত শুভরাত্রি।

সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১

ষষ্ঠীতে মনখারাপ ১১/১০/২০২১

পুজো এলেই প্রতিবছর মন খারাপ হ’তে শুরু করে। এই প্রবণতা আমার সেই ছোটবেলা থেকেই। বলা যায় আমার অবচেতনেই এই অদ্ভুত মানসিকতা গড়ে উঠেছে আমার। ইতিপূর্বে আমি বুহুবার বলেছি এর পেছনে আগাম কোন কারন থাকে না, বরং এই মন খারাপের মধ্যেই মন খারাপ করা বিষয়গুলো মনের দরজায় আঘাত হেনে মনকে আরও খারাপ ক’রে দেয়। ষষ্ঠী থেকে দশমী – প্রতি বছর নিয়ম ক’রে আমি ‘পুজোয় মনখারাপ’-এর বৃত্তান্ত লিখে থাকি – এবারও যাতে তার ব্যত্যয় না হয় তাই লিখছি অতিক্রান্ত ষষ্ঠীর মাঝরাত্রে। ষষ্ঠীতে মনখারাপ ১১/১০/২০২১ – শুনেছি মনখারাপ হ’লে কবি বা লেখকের কলম ভাল চলে। রবীন্দ্রনাথ কলেরায় অকাল প্রয়াত পুত্র শমীন্দ্রনাথকে দাহ ক’রে বাড়ি ফিরে গান রচনা করেছিলেন। এত বড় শোকের মধ্যেও রবীন্দ্রনাথ পেরেছিলেন কলম ধরতে, কারন তিনি রবীন্দ্রনাথ, অথচ আজ আমার সামান্য মনখারাপেই লেখার ইচ্ছে প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলাম। অনেক কষ্টে শেষমেশ মাঝ রাতে কলম ধরলাম। কিন্তু এলোমেলো ভাবনাগুলো সাজিয়ে তোলা বড্ড দুরূহ মনে হচ্ছে। করোনায় বিগত বছরে বহু মানুষের অস্তিত্ব এখন ঘরের দেওয়ালে ফ্রেমবন্দি। কত মানুষ কর্মহীন, কত স্বচ্ছল জীবন বেঁচে থাকার তাগিদে সাহায্যপ্রার্থী। তারই মধ্যে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের প্রলয় নাচন। তবুও উৎসবের স্বাভাবিকতা ক্রমশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারী বিধিনিষেধে শিথীলতা, জানিনা করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের রক্তচক্ষু থেকে আমাদের বাঁচাতে পারবে কি না। টিভিতে দেখছি বুর্জ খলিফা দেখতে শহরে কাতারে কাতারে মানুষ, সামাজিক দূরত্ব সেখানে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের কাছে গো হারা। আর জানলা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি আমাদের পাড়ারই একদা উচ্চপদে চাকরি করা বেসরকারী সংস্থার কর্মী করোনায় কাজ হারিয়ে ফুচকার গাড়ি নিয়ে চলেছেন ষষ্ঠীর দিনে ফুচকা বিক্রি করতে। দুই ছবির কনট্রাস্ট মনের আকাশ মেঘলা ক’রে দিল। মেঘের কথা যখন উঠল তখন এবারের বৃষ্টিতে আমাদের করুণ বানভাসি পরিস্থিতির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে - ঘরের জল বেরোলেও রাস্তায় গোড়ালি-গভীর জল। কি লিখব মাথায় আসছিল না তাই স্ত্রীর পরামর্শে মাথা হালকা করা এবং পকেট ফাঁকা করার উদ্দেশ্যে বাজারের দিকে পা বাড়ালাম প্যান্ট গুটিয়ে। ‘বছরে তিরিশ বার চিত্রাঙ্গদা আর শ্যামা শাপমোচনের অশ্রুমোচন …’ সত্যিই ভালো লাগে না। কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে শারদ সন্ধ্যায় আলোকিত উৎসবের পরিবেশে মাইকে যে গানগুলো ভেসে আসছিল, মনে হ’ল এই পরিবেশে এমন গানের বিকল্প নেই। বিষন্নতার মধ্যেও কন্ঠ মেলাচ্ছিলাম অজান্তেই। কাতারে কাতারে মানুষ চলেছে – অধিকাংশেরই মুখচ্ছদ নেই – মুকচ্ছদের আড়ালে বিউটি পার্লার থেকে অর্থ ব্যয়ে মেক-আপ করা মুখের সৌন্দর্য পাছে হারিয়ে যায় সম্ভবত সেই কারনেই অনেকে মুখচ্ছদ পরেননি। এসব দেখে এক ভয়ংকর আগামীর কল্পনা মাথায় আসছিল। এসব ভেবে শুধু শুধু মন খারাপ করার কোন মানে হয় না। লাগাতার বৃষ্টির কারনে কি না জানিনা, এবারে রাস্তায় খেলনা, বেলুন ইত্যাদি বিক্রি করার লোকজন খুব একটা চোখে পড়ল না। গতবারের সেই ছেলেটাকে খোঁজার চেষ্টা করলাম – পেলাম না। জানিনা ওর মা সুস্থ হয়েছেন কি না কিংবা উল্টোটা ! জানা হ’ল না। আসলে আনন্দের উচ্ছ্বাসে কষ্টগুলো যখন কর্ণগোচর হয় না, তখন উপেক্ষিত হয় আনন্দ, কষ্টগুলোও থাকে অধরা। আমার ক্ষেত্রেও মন খারাপের কারন বোধহয় তাই, আবার অন্য কিছুও হতে পারে। মুশকিল হ’ল মন খারাপের কারন কিছুতেই নির্দিষ্ট করতে পারি না। আজ মনখারাপ নিয়েই শুতে গেলাম। শুভ রাত্রি। আগামী কাল সপ্তম সুরে কিছু লিখব আশা করি।

সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

যন্ত্রণার জল

যন্ত্রণার জল – অমরনাথ কর্মকার ২০/০৯/২০২১ বৃষ্টি যে লেপ্টে যাওয়া শাড়ির মত আমাদের অঙ্গে এভাবে জড়িয়ে যাবে ভাবিনি। রোদ্দুরও যে এতটা বিরতি নেবে জানা ছিল না। ছোট বেলায় বৃষ্টির আভাস পেলে অদ্ভুত অনুভূতি হ’ত। তখন বৃষ্টির শব্দ ভাসিয়ে নিয়ে যেত কল্পনার রাজ্যে। এখনো কল্পনার অবসান হয়নি। তবে ছোটবেলার কল্পনার সঙ্গে এখনকার কল্পনার বিস্তর ফারাক। এখন মেঘ করলেই আগাম কল্পনায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা । গতকাল রাতে যখন বৃষ্টি শুরু হ’ল, আশঙ্কার মেঘ জমা হতে শুরু করল মনে এবং সকাল হতেই সেই আশঙ্কা সত্যি হ’ল – ঘরে জল ঢুকল। দ্রুত চেষ্টায় কিছু জিনিস জলের হাত থেকে রক্ষা করতে পারলাম, কিছু পারলাম না। যেমন ল্যাপটপটাকে কোনরকমে বাঁচালাম বটে,, খাটের তলায় রাখা আবেশচুল্লিটাকে (ইনডাকশান ওভেন) কোনভাবেই রক্ষা করা গেল না। গত রাতে বৃষ্টির মাদকতায় যখন কবিতা আসছিল মনে তখন দুর্ভোগের উদ্বেগ বারবার সেই কবিতাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছিল। কল্পনা আর বাস্তবের দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত বাস্তবেরই জয় হ’ল এবং ঘুম ভেঙে দেখলাম জল থৈ থৈ ঘর। কোনোরকমে দুপুরের সংক্ষিপ্ত আহার খিচুরি ও মাছভাজা – তাও আবার টেবিলে নয় বিছানায় থালা হাতে নিয়ে গলাধকরণ। খাটে বসেই কাটছে দিন। বাড়ছে উদ্বেগের পারদ। এই বিপর্যয়ের সময়ে রোমান্টিকতা স্পর্শ করছে না মন, আসছে না বর্ষামঙ্গল, রবীন্দ্রনাথ উধাও। এখন চোখে শুধু যন্ত্রণার জল – জল-যন্ত্রণা। তবুও স্বভাবসিদ্ধ বাঙালীর মত এত যন্ত্রণার মধ্যেও এসে গেল কয়েক লাইন - যখন দেখ মেঘ করেছে খুব তুমি তখন আনন্দে দাও ডুব ভাব তুমি এবার বৃষ্টি হবে অনেকক্ষণ আমার কাছে মন খারাপের বিজ্ঞাপণ।

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?