সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

যন্ত্রণার জল

যন্ত্রণার জল – অমরনাথ কর্মকার ২০/০৯/২০২১ বৃষ্টি যে লেপ্টে যাওয়া শাড়ির মত আমাদের অঙ্গে এভাবে জড়িয়ে যাবে ভাবিনি। রোদ্দুরও যে এতটা বিরতি নেবে জানা ছিল না। ছোট বেলায় বৃষ্টির আভাস পেলে অদ্ভুত অনুভূতি হ’ত। তখন বৃষ্টির শব্দ ভাসিয়ে নিয়ে যেত কল্পনার রাজ্যে। এখনো কল্পনার অবসান হয়নি। তবে ছোটবেলার কল্পনার সঙ্গে এখনকার কল্পনার বিস্তর ফারাক। এখন মেঘ করলেই আগাম কল্পনায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা । গতকাল রাতে যখন বৃষ্টি শুরু হ’ল, আশঙ্কার মেঘ জমা হতে শুরু করল মনে এবং সকাল হতেই সেই আশঙ্কা সত্যি হ’ল – ঘরে জল ঢুকল। দ্রুত চেষ্টায় কিছু জিনিস জলের হাত থেকে রক্ষা করতে পারলাম, কিছু পারলাম না। যেমন ল্যাপটপটাকে কোনরকমে বাঁচালাম বটে,, খাটের তলায় রাখা আবেশচুল্লিটাকে (ইনডাকশান ওভেন) কোনভাবেই রক্ষা করা গেল না। গত রাতে বৃষ্টির মাদকতায় যখন কবিতা আসছিল মনে তখন দুর্ভোগের উদ্বেগ বারবার সেই কবিতাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছিল। কল্পনা আর বাস্তবের দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত বাস্তবেরই জয় হ’ল এবং ঘুম ভেঙে দেখলাম জল থৈ থৈ ঘর। কোনোরকমে দুপুরের সংক্ষিপ্ত আহার খিচুরি ও মাছভাজা – তাও আবার টেবিলে নয় বিছানায় থালা হাতে নিয়ে গলাধকরণ। খাটে বসেই কাটছে দিন। বাড়ছে উদ্বেগের পারদ। এই বিপর্যয়ের সময়ে রোমান্টিকতা স্পর্শ করছে না মন, আসছে না বর্ষামঙ্গল, রবীন্দ্রনাথ উধাও। এখন চোখে শুধু যন্ত্রণার জল – জল-যন্ত্রণা। তবুও স্বভাবসিদ্ধ বাঙালীর মত এত যন্ত্রণার মধ্যেও এসে গেল কয়েক লাইন - যখন দেখ মেঘ করেছে খুব তুমি তখন আনন্দে দাও ডুব ভাব তুমি এবার বৃষ্টি হবে অনেকক্ষণ আমার কাছে মন খারাপের বিজ্ঞাপণ।

রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

শিক্ষক হ'তে পারিনি

পড়িয়েছি - শিক্ষক হ'তে পারিনি অমরনাথ কর্মকার ০৫/০৯/২০২১ 'শিক্ষক দিবস' চ'লে গেল আজ। ছাত্র পড়িয়েই আমার ছাত্র-জীবনের শেষ দিকে আমার শিক্ষকের মাইনে দিয়েছি। বেকারত্বের জ্বালাও জুড়িয়েছি অনেক দিন। সঙ্গে ছিল নিজের জানাটাকে অন্যের মধ্যে সঞ্চালনের প্রতি আগ্রহ। প্রতিবছরই 'শিক্ষক দিবস' এলে আমার ফেলে আসা অতীতের শিক্ষকদের স্মরণ করি আমার অদক্ষ লেখনিতে। তাঁদের অনেকেই আজ আকাশের ধ্রুব তারা - অলক্ষ্যে আমার পথপ্রদর্শক। জীবনের প্রতিষ্ঠা বলতে সাধারণত যা বোঝায় তা আমি পাইনি। আবার কিছুই পাইনি তাও নয়। সাধারণভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকায় হয়ত অসুবিধা নেই। তবে আজ একটা জিনিস স্পষ্ট হ'ল - আমি ছাত্র পড়িয়েছি বটে, শিক্ষক হ'তে পারিনি। আমার ছাত্র-ছাত্রীরা আজ অনেকেই প্রতিষ্ঠিত, হাতে গোনা দু'একজন বাদ দিলে অনেকেই আমাকে ভুলে গেছে। ভোলারই কথা কারন তারা অর্থের বিনিময়ে আমার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছে, বলা ভাল শিক্ষা কিনেছে। অতএব, শিক্ষক- ছাত্রের এই ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কই আজকের দিনে বাস্তব। বিক্রেতার কাছে ক্রেতা লক্ষ্মী। আর ক্রেতার কাছে বিক্রেতার মূল্য নগন্য। অনেক দুঃখ নিয়ে কথাগুলো লিখলাম। আজ আমার এক বন্ধুর মুখেও একই আক্ষেপ শুনলাম। একসময় প্রাইভেট টিউশানিতে ওর ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। ও দুঃখ করেছে - আর আমি আমার দুঃখ লিখেই ফেললাম। আসলে মনটা স্বাধীন - হা হা ক'রে বিকট আওয়াজে হাসতে পারে, বুক ফাটিয়ে কাঁদতেও পারে। সে আওয়াজ কেঊ শোনে না - শোনে আমার হৃদয়।

শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

শিক্ষায় আমাদের কাল ও বর্তমান

শিক্ষার আমাদের কাল ও বর্তমান অমরনাথ কর্মকার ০৫/০৯/২০২১ শিক্ষক দিবস'-এর দিনে আমাদের সময়ের শিক্ষা আর বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান সম্পর্কে আকাশ-পাতাল ভাবতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেললাম। শেষ পর্যন্ত সব বাদ দিয়ে এক্কেবারে প্রাথমিক এবং জলজ্যান্ত ফারাকটা পেয়ে গেলাম। আমাদের হাতে খড়ি হ'ত কালো শ্লেটের ওপর পেন্সিলের সাদা রঙে বর্ণমালা লিখে। তারপর প্রাথমিক ইস্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে দু'এক বছর অতিক্রম করার পর হাতে উঠত খাতা আর কাঠের পেন্সিল। খাতা-পেন্সিল হাতে উঠতেই মনে মনে বড় হয়ে যাবার শিহরন জাগানো অনুভূতি হ'ত। তখন নার্সারি, কিন্ডার গার্টেন এসব ছিল কি না আমাদের জানা ছিল না, কারন তখন আমাদের মত গ্রামের নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে থেকে শহুরে উচ্চবিত্তদের শিক্ষা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব ছিল না। যাই হোক আমাদের সেই শ্লেট-পেন্সিল এখন জাদুঘরের প্রদর্শনী। এখন খাতা-কলমেই বর্ণমালা শেখা শুরু। তাও অ-আ-ক-খ কতিপয় দারিদ্রপীড়িত বা বাংলাভাষার অনুরাগী মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বেশিরভাগই প্রথম থেকেই বাংলা বর্ণমালা বর্জন ক'রে ইংরেজী মাধ্যমে পড়ার উদ্দেশ্যে A-B-C-D'র প্রতি মনোযোগী। সে যাই হোক, মূল ব্যাপার হ'ল আমাদের সময়ে লেখা শুরু হ'ত কালোর ওপরে সাদা দিয়ে, এখন শুরু হয় সাদার ওপরে কালো বা নীল দিয়ে। স্কুলেও আমরা মাস্টারমশাইদের দেখতাম (কালো) ব্ল্যাক বোর্ডে সাদা চক দিয়ে লিখতে। এখনোও অনেক স্কুল-কলেজে সেই পদ্ধতিই চালু আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এখন আর ব্ল্যাক বোর্ড নেই, তার পরিবর্তে সাদা বোর্ড আর তার ওপরে লেখা হয় মার্কার কলমের কালো, নীল (বা অন্য রঙের) কালি দিয়ে। মোদ্দা কথা, আগে কালোর ওপরে সাদা দিয়ে লেখা শুরু হ'ত, এখন হয় সাদার ওপরে কালো দিয়ে। এই পার্থক্য খুঁজে পাবার পর একটা যুক্তি খাড়া করার ইচ্ছে জাগছে। তাহলে কি আমাদের সময়ে অন্ধকার সমাজকে আলোর পথে উত্তরণই শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল? সেই কারনেই কি তাহলে কালো শ্লেটে পেন্সিলের সাদা বর্ণে লেখা শুরু হ'ত? আর এখন ঠিক তার বিপরীত! বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপট বিচার করলে আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার মাথায় উদ্ভুত যুক্তিকে অগ্রাহ্য করতে পারছি না। যেভাবে সামাজিক অবক্ষয় বর্তমানে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে তা আমার যুক্তিকেই সমর্থন করে। অর্থাৎ সাদার ওপরে পড়ছে কালো বা অন্য কোনও রঙ। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা আগের চেয়ে ভালো না খারাপ এসব বিতর্কে গিয়ে লাভ নেই, সেসব ভাবার জন্য শিক্ষাবিদরা রয়েছেন। আমি শুধু শিক্ষার সঙ্গে সমাজের রসায়ন নিয়ে ভাবছি। আজ শিক্ষক দিবসে শিক্ষকদের কথা ভাবার পরিবর্তে এই সব হ-য-ব-র-ল চিন্তা ভাবনা মাথায় এসে গেল। শিক্ষকরা তাঁদের যথাযথ মর্যাদা পান - এই আশা রাখি।

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?