বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৯

গল্প 'কড়া'

কড়া - অ.না.ক. ১০/০৫/২০১৯

প্রায় পঁচিশ বছর পর স্যারের সঙ্গে দেখা হ'ল সামনা সামনি। টিভির পর্দায় কিংবা খবরের কাগজের পাতায় স্যারের ছবি দেখে দেখেই পার হয়ে গেছে পঁচিশটি বছর। গিয়েছিলাম রবীন্দ্রসদনে ভারতের এক বিখ্যাত সেতার বাদকের বাজনা শুনতে। সঙ্গীতের কিছুই বুঝি না, কিন্তু নেহাত সুর আমার কানের ভেতর দিয়ে, কেন জানিনা, মর্মে ঢুকে যায়। তাই ভাল অনুষ্ঠানের লোভ সামলাতে না পেরে সম্ভব হ'লে চলে যাই। অনুষ্ঠান শুরুর মুহূর্তে মঞ্চের রঙিন আলোয় মনে হ'ল তবলা সঙ্গতে রয়েছেন স্যার। সুতরাং পুরো অনুষ্ঠানটায় সেতারের চেয়ে তবলায় বেশী মনোনিবেশ করলাম। প্রাণ জুড়িয়ে গেল। অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই ছুটলাম গ্রীন রুমে স্যারের সঙ্গে দেখা করতে। নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি তখন আমার কাছে অর্থহীন। অবাধেই পৌঁছে গেলাম স্যারের কাছে। আমাকে দেখে চিনতে পেরে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আমার কন্ঠ সেই মুহূর্তে প্রায় রুদ্ধ। কিছুক্ষণ আলাপচারিতার পর আমার ডান হাতটা ধরে আঙুলে হাত দিয়ে বললেন, 'হাতে বেশ কড়া পড়েছে দেখছি। খুব বাজাচ্ছিস নিশ্চয়?' উত্তরে একগাল অস্বচ্ছন্দ মেকি হাসি মুখে এনে বললাম,'স্যার অতিরিক্ত কম্পিউটারে কাজ ক'রে ক'রে কড়া পড়েছে। তবলা তো স্যার কবেই ছেড়ে দিয়েছি।' একসময় আমাকে নিয়ে খুব আশাবাদী ছিলেন। সেই কারনেই বোধ হয় একটু আশাহত হলেন। কিছুক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল ক'রে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। তারপর স্যার ব্যস্ততার প্রবাহে বিদায় নিলেন। আমি নিজেই এতদিন লক্ষ্য করিনি হাতের আঙুলে কড়া পড়েছে। ছোট বেলায় যখন খুব মনোযোগ দিয়ে তবলা শিখতাম তখন প্রায়ই হাতের তালু আর আঙুলগুলো পরখ করতাম কড়া পড়েছে কি না যাচাই করার জন্য। কারন হাতে কড়া পড়লে বুঝতে হবে অনুশীলন ভাল হচ্ছে। এটা ছিল স্যারের অনুশীলনের মাত্রা পরীক্ষা করার পন্থা। আজ আমার হাতের কড়া দেখে মনে হ'ল আমার অনুশীলনের মাত্রা সত্যিই বেড়েছে - তবলার অনুশীলন নয়, যা ছিল আমার এক সময়ের বড় হওয়ার স্বপ্ন, এ অনুশীলন দারিদ্র‍্যের সাথে যুদ্ধ ক'রে বেঁচে থাকার নিরস এবং নিরলস অনুশীলন। আফসোস হয়, যদি হাতের এই কড়াগুলো পড়ত পঁচিশ বছর আগেই!

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৯

পেল না সে প্রতিভার দামটা

প্রতিভার কি মূল্য হয় ? মূল্য দিয়ে কি প্রতিভা কেনা যায় ?  এসব প্রশ্নের উত্তরে হয়ত মতে-মতান্তরে চায়ের কাপে তুফান উঠতে পারে। কিন্তু খারাপ লাগে তখনই যখন ডিম দেওয়া বন্ধ ক'রে দেওয়ার পর মুরগিটি খাবার হিসাবে খাবার টেবিলে হাজির হয় ছিন্নভিন্ন হয়ে। সুতরাং প্রতিভা নামক এই মুরগিগুলোর শেষ বয়সের করুন পরিণতি দেখলে মন খারাপ হয়। তার থেকেও বেশি রাগ হয় আমাদের সমাজ ব্যবস্থার ওপর, তাদের ওপর যারা রাজনীতির মুখোশ প'ড়ে নেতাগিরী ক'রে নিজের লোককে পাইয়ে দেবার সামাজিক উন্নয়নে মগ্ন। আজ অফিসে ব'সে এমন একজন অশিতিপর বৃদ্ধের মুখোমুখি হলাম যিনি একদা তাঁর কন্ঠের যাদুতে মোহিত করতে পারতেন মানুষকে। যষ্ঠীতে ভর করে অনেক কষ্টে অফিসের দোতলায় উঠেছিলেন বড়বাবুর সঙ্গে দেখা করতে। উদ্দেশ্য ?  সামান্য দু'আড়াইশ টাকা রিলিফের অর্থ সংগ্রহ। বড়বাবুর ঘর থেকে গানের আওয়াজ শুনে কৌতুহল মেটাতে গিয়ে আমিও নির্বাক শ্রোতা হয়ে পড়লাম। রিলিফের সামান্য কটা টাকা পেয়ে আনন্দে গান গেয়ে শোনালেন অনিল সরকার নামের সুন্দরবনের কচুখালির বয়সের ভারে ন্যুজ্ব এককালের প্রতিভাবান এই গায়ক। দুর্বল ফুসফুসে দম নেওয়া দুষ্কর তবুও গানের মীরে যত্নবান, তবলা হারমোনিয়াম নেই তবুও গানের তাল ঠিক রাখতে মেঝেতে হাতের লাঠি ঠোকা। অবাক হয়ে শুনছিলাম আর ভাবছিলাম প্রতিভার দাম কি শুধু সামান্য সরকারী রিলিফের টাকা? জানতে পারলাম তাঁর ভাগ্যে আজও পর্যন্ত একটা সরকারী ঘর জোটেনি। সাবলীল ইংরিজিতে অনেক জমানো দুঃখের কথা বললেন। আমি ওনাকে ক্যাশিয়ার বাবুর ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে কিছু টাকা হাতে দিয়ে বেরিয়ে সোজা চলে এলাম নিজের ঘরে। তখন চশমার কাচে ঘনীভূত বাষ্পে দৃষ্টি আমার ঝাপসা। বাড়ি ফিরে সেই ছবি কিছুতেই পিছু ছাড়ছিল না। তাই অনেকটা ঘুম বর্জন করে এইটুকু লিখলাম। আসলে  না লিখে পারলাম না।
প্রতিভার কি মূল্য হয় ? মূল্য দিয়ে কি প্রতিভা কেনা যায় ?  এসব প্রশ্নের উত্তরে হয়ত মতে-মতান্তরে চায়ের কাপে তুফান উঠতে পারে। কিন্তু খারাপ লাগে তখনই যখন ডিম দেওয়া বন্ধ ক'রে দেওয়ার পর মুরগিটি খাবার হিসাবে খাবার টেবিলে হাজির হয় ছিন্নভিন্ন হয়ে। সুতরাং প্রতিভা নামক এই মুরগিগুলোর শেষ বয়সের করুন পরিণতি দেখলে মন খারাপ হয়। তার থেকেও বেশি রাগ হয় আমাদের সমাজ ব্যবস্থার ওপর, তাদের ওপর যারা রাজনীতির মুখোশ প'ড়ে নেতাগিরী ক'রে নিজের লোককে পাইয়ে দেবার সামাজিক উন্নয়নে মগ্ন। আজ অফিসে ব'সে এমন একজন অশিতিপর বৃদ্ধের মুখোমুখি হলাম যিনি একদা তাঁর কন্ঠের যাদুতে মোহিত করতে পারতেন মানুষকে। যষ্ঠীতে ভর করে অনেক কষ্টে অফিসের দোতলায় উঠেছিলেন বড়বাবুর সঙ্গে দেখা করতে। উদ্দেশ্য ?  সামান্য দু'আড়াইশ টাকা রিলিফের অর্থ সংগ্রহ। বড়বাবুর ঘর থেকে গানের আওয়াজ শুনে কৌতুহল মেটাতে গিয়ে আমিও নির্বাক শ্রোতা হয়ে পড়লাম। রিলিফের সামান্য কটা টাকা পেয়ে আনন্দে গান গেয়ে শোনালেন অনিল সরকার নামের সুন্দরবনের কচুখালির বয়সের ভারে ন্যুজ্ব এককালের প্রতিভাবান এই গায়ক। দুর্বল ফুসফুসে দম নেওয়া দুষ্কর তবুও গানের মীরে যত্নবান, তবলা হারমোনিয়াম নেই তবুও গানের তাল ঠিক রাখতে মেঝেতে হাতের লাঠি ঠোকা। অবাক হয়ে শুনছিলাম আর ভাবছিলাম প্রতিভার দাম কি শুধু সামান্য সরকারী রিলিফের টাকা? জানতে পারলাম তাঁর ভাগ্যে আজও পর্যন্ত একটা সরকারী ঘর জোটেনি। সাবলীল ইংরিজিতে অনেক জমানো দুঃখের কথা বললেন। আমি ওনাকে ক্যাশিয়ার বাবুর ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে কিছু টাকা হাতে দিয়ে বেরিয়ে সোজা চলে এলাম নিজের ঘরে। তখন চশমার কাচে ঘনীভূত বাষ্পে দৃষ্টি আমার ঝাপসা। বাড়ি ফিরে সেই ছবি কিছুতেই পিছু ছাড়ছিল না। তাই অনেকটা ঘুম বর্জন করে এইটুকু লিখলাম। আসলে  না লিখে পারলাম না।

মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০১৯

ভোটের ছড়া

ভোটের ছড়া - অ. না.ক. ২৬/০৩/২০১৯

ভোট এসেছে জোট বেঁধেছে
যতরকম মিথ্যে আছে সব,
প্রতিশ্রুতির বন্যা আনার
এ যেন এক মহোৎসব।
এখন ভোট চাইতে প্রার্থী হাজির
তোমার-আমার ঘরে বারংবার
পরে তারই পায়ে তেল মাখাতে
জনগণের পাত্র হবে উজার। 
হ্যান কারেঙ্গা ত্যান কারেঙ্গা
কথার মালা ভাল্লাগে না আর ,
ঢের শুনেছি মিথ্যে প্রতিশ্রুতি
শুনতে শুনতে জীবন জেরবার।
ভোটটা দেব আমার মতে
কাজ করাটাই আসলে যার ধর্ম,
সুতরাং কাজ হবে না যতই পড়
প্রতিশ্রুতির অলিক অচল বর্ম।
ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়েছে
সাতটি দশক হয়েছে পার,
প্রতিশ্রুতির ঝড়ঝাপটায়
এগিয়েছে সে কতটুকু আর ?

বুধবার, ৬ মার্চ, ২০১৯

আমরা দু'জন শাজাহান-মমতাজঃ অ.না.ক.

আমরা দু'জন মহার্ঘ্য ফ্ল্যাটে সাজাহান মমতাজ
যে মাঠে আমরা প্রেমে মজতাম
প্রোমোটর তার বুঝেছিল দাম
সেখানেই ওঠা বহুতলে আমরা বাসিন্দা আজ ।

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?