শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৯

পেল না সে প্রতিভার দামটা

প্রতিভার কি মূল্য হয় ? মূল্য দিয়ে কি প্রতিভা কেনা যায় ?  এসব প্রশ্নের উত্তরে হয়ত মতে-মতান্তরে চায়ের কাপে তুফান উঠতে পারে। কিন্তু খারাপ লাগে তখনই যখন ডিম দেওয়া বন্ধ ক'রে দেওয়ার পর মুরগিটি খাবার হিসাবে খাবার টেবিলে হাজির হয় ছিন্নভিন্ন হয়ে। সুতরাং প্রতিভা নামক এই মুরগিগুলোর শেষ বয়সের করুন পরিণতি দেখলে মন খারাপ হয়। তার থেকেও বেশি রাগ হয় আমাদের সমাজ ব্যবস্থার ওপর, তাদের ওপর যারা রাজনীতির মুখোশ প'ড়ে নেতাগিরী ক'রে নিজের লোককে পাইয়ে দেবার সামাজিক উন্নয়নে মগ্ন। আজ অফিসে ব'সে এমন একজন অশিতিপর বৃদ্ধের মুখোমুখি হলাম যিনি একদা তাঁর কন্ঠের যাদুতে মোহিত করতে পারতেন মানুষকে। যষ্ঠীতে ভর করে অনেক কষ্টে অফিসের দোতলায় উঠেছিলেন বড়বাবুর সঙ্গে দেখা করতে। উদ্দেশ্য ?  সামান্য দু'আড়াইশ টাকা রিলিফের অর্থ সংগ্রহ। বড়বাবুর ঘর থেকে গানের আওয়াজ শুনে কৌতুহল মেটাতে গিয়ে আমিও নির্বাক শ্রোতা হয়ে পড়লাম। রিলিফের সামান্য কটা টাকা পেয়ে আনন্দে গান গেয়ে শোনালেন অনিল সরকার নামের সুন্দরবনের কচুখালির বয়সের ভারে ন্যুজ্ব এককালের প্রতিভাবান এই গায়ক। দুর্বল ফুসফুসে দম নেওয়া দুষ্কর তবুও গানের মীরে যত্নবান, তবলা হারমোনিয়াম নেই তবুও গানের তাল ঠিক রাখতে মেঝেতে হাতের লাঠি ঠোকা। অবাক হয়ে শুনছিলাম আর ভাবছিলাম প্রতিভার দাম কি শুধু সামান্য সরকারী রিলিফের টাকা? জানতে পারলাম তাঁর ভাগ্যে আজও পর্যন্ত একটা সরকারী ঘর জোটেনি। সাবলীল ইংরিজিতে অনেক জমানো দুঃখের কথা বললেন। আমি ওনাকে ক্যাশিয়ার বাবুর ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে কিছু টাকা হাতে দিয়ে বেরিয়ে সোজা চলে এলাম নিজের ঘরে। তখন চশমার কাচে ঘনীভূত বাষ্পে দৃষ্টি আমার ঝাপসা। বাড়ি ফিরে সেই ছবি কিছুতেই পিছু ছাড়ছিল না। তাই অনেকটা ঘুম বর্জন করে এইটুকু লিখলাম। আসলে  না লিখে পারলাম না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?